অপূর্ব চরিত্র আলোচনা পথের দাবী
প্রশ্ন-উত্তর

অপূর্ব চরিত্র আলোচনা | পথের দাবী

ইতিহাসদশম শ্রেণি – পথের দাবী

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত পথের দাবী পাঠ্যাংশের অন্যতম চরিত্র হল অপুর্ব। আলোচ্য পাঠ্যাংশে স্বল্প পরিসরে অপূর্বর চরিত্রটি রুপায়িত হয়েছে। আমরা কয়েকটিভাগে এই চরিত্রটি বিশ্লেষণ করবো।


এই প্রশ্ন – উত্তর আলোচনাটি পথের দাবী আলোচনার অন্তর্গত। পথের দাবী রচনাংশটি ভালোভাবে বুঝে নাও → পথের দাবী সম্পূর্ণ আলোচনা


দেশপ্রেমী

অপূর্ব একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমী। পরাধীন ভারতের দুঃখ যন্ত্রণা সে বোঝে। তাই বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিককে পুলিশ যখন সর্বশক্তি দিয়ে খোঁজে, অপূর্বের মন তখন ভারাক্রান্ত হয়। রূপকথার নায়কের মতো, বিপ্লবী সব্যসাচীর প্রতি ফুটে ওঠে প্রগাঢ় শ্রদ্ধা। তার পরিচিত পুলিশ কর্তা কাকার থেকেও অপরিচিত সব্যসাচী মল্লিককে তার অনেক বেশি নিজের বলে মনে হয়। অপূর্বের কথায় –

“আমি তাঁকে কাকা বলি, আমাদের তিনি আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষী। কিন্তু তাই বলে আমার দেশের চেয়ে তো তিনি আপনার নন। বরঞ্চ, যাকে তিনি দেশের টাকায়, দেশের লোক দিয়ে শিকারের মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছেন তিনি ঢের বেশি আমার আপনার”

jump magazine smart note book

প্রতিবাদী

অপূর্ব মধ্যবিত্ত সংসারে শিক্ষিত ও সংস্কৃতিসম্পন্ন বাঙালি যুবক। তার মধ্যে আমরা প্রতিবাদী সত্ত্বার প্রভাব দেখতে পাই। তার বন্ধু রামদাশকে বলা একটি ঘটনায় আমরা জানতে পারি যে কোন একসময় বিনাকারণে বিদেশী ছেলেরা তাকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দেয়, এবিষয়ে অপূর্ব সাহেব ষ্টেশনমাস্টারকে অভিযোগ জানাতে গেলে, কেবলমাত্র দেশী লোক হওয়ার কারণে তার অভিযোগ না নিয়ে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। এই যন্ত্রনা অপূর্ব ভুলতে পারে না। তার কথায় –

“- তার লাঞ্চনা এই কালো চামড়ার নীচে কম জ্বলে না তলয়ারকর! এমন তো নিত্য – নিয়তই ঘটছে, – আমার মা, আমার ভাই – বঙ্কে যারা এই – সব সহস্র কোটি অত্যাচার থেকে উদ্ধার করতে চায় তাদের আপনার বলে ডাকবার যে দুঃখই থাক আমি আজ থেকে মাথায় তুলে নিলাম।”

বিচক্ষন

পাঠ্যাংশে একটি অভিযোগ জানাতে গিয়ে থানায় অপুর্ব যখন সব্যসাচি ওরফে গিরীশ মহাপাত্রকে খুব গভীরভাবে নিরীক্ষণ করে। তার পোষক – পরিচ্ছদ, স্বাস্থ্যের বিবরণ, এমনকি তার মাথার তীব্র ‘নেবু তেলের গন্ধ’ ইত্যাদি কিছুই তার পর্যবেক্ষণ থেকে বাদ যায় না। পাঠ্যাংশে অনুযায়ী –

“ইহার আপাদমস্তক অপূর্ব বারবার নিরীক্ষণ করিয়া কহিল, কাকাবাবু, এ লোকটিকে আপনি কোন কথা জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দিতে পারেন।”

jump magazine smart note book

কৃতজ্ঞতাবোধ সম্পন্ন

অপূর্বর নিজের ঘরে চুরি হয়েছিল। তার উপরের ঘরের খ্রিস্টান মহিলা চোর তাড়িয়ে না দিলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি হতে পারতো। এই ঘটনা তার বন্ধু তলওয়ারকরকে বলার সময় ঐ মহিলা সম্পর্কে বার বার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তার নিজের কথায় –

“সে চোর তাড়াইয়া দরজায় নিজের তালা বন্ধ করিয়াছে, আমি বাসায় পৌছিলে চাবি খুলিয়া দিয়া অনাহুত আমার ঘরে ঢুকিয়া ছড়ানো জিনিষপত্র গুছাইইয়া দিয়াছে, সমস্ত ফর্দ করিয়া কি আছে আর কি গেছে তার এমন নিখুঁত হিসাব করিয়া দিয়াছে যে বোধ হল তোমার মত পাস – করা অ্যাকাউন্টেন্টের পক্ষেও বিস্ময়কর। বাস্তবিক, এমন তৎপর, এতবড়ো কার্যকুশলা মেয়ে আর যে কেহ আছে তা মনে হয় না হে তলওয়ারকর!”

রসিক

অপূর্বর রসবোধের পরিচয় আমরা পাই তার সাথে তলওয়ারকরের কথোপকথনের সময়। অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ এবং তার গাঁজার কলকে আবিষ্কারের ইতিহাস তাকে মজার ছলে বলে। লেখকের কথায় –

“- বর্ণনা করিতে করিতে তাহার উৎকট হাসির বেগ কোন মনে সংবরণ করিয়া …”

এটা ছাড়াও গিরীশ মহাপাত্র সম্পর্কে কয়েকটি মন্তব্যে তার সহজ – সরল রসিকমনের পরিচয় আমরা পাই।

এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

X_Ben_pather-dabi-apurbo-choritro