jib-boichitro
Madhyamik

জীববৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ

জীবনবিজ্ঞানদশম শ্রেণি – জীববৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ [Jib boichitro o songrokhon]

আগের পর্বে আমরা পরিবেশ ও মানবজনসমষ্টি নিয়ে আলোচনা করেছি, এই পর্বে আমরা জীববৈচিত্র্য নিয়ে আলোচনা করবো।

জীববৈচিত্র্য কাকে বলে?

পরিবেশে বা বাস্তুতন্ত্রে উপস্থিত জিনগত, প্রজাতিগত এবং বাস্তুতান্ত্রিক বিভিন্নতাকে জীববৈচিত্র্য বলে।


jump magazine smart note book


জীববৈচিত্র্যের প্রকারভেদ

জীববৈচিত্র্য সাধারণত তিন প্রকার।

ক) জিনগত বৈচিত্র্য

কোনো প্রজাতির মধ্যে উপস্থিত জিন এবং জিন সংমিশ্রণের বিভিন্নতাকে জিনগত বৈচিত্র্য বলে। এই জিনগত বৈচিত্র্যের ফলেই একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত জীবের পরস্পরের ফিনোটাইপ আলাদা হয়।

খ) প্রজাতিগত বৈচিত্র্য

দুটি বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে যে বৈচিত্র্য বা বিভিন্নতা দেখা যায়, তাকে প্রজাতিগত বৈচিত্র্য বলে।

গ) বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য

একটি বিস্তৃত অঞ্চলের মধ্যে বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্র এবং সেই বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন জীবের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, একে বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলে।

জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব

ক) খাদ্য উৎপাদন

জীববৈচিত্র্যের ফলে পরিবেশে বিভিন্ন রকম জিনের সংমিশ্রণ ঘটে এবং নতুন বৈশিষ্ট্যের সঞ্চার হয়। ফলে প্রতিকূল পরিবেশে অর্থাৎ বন্যা, খরা, প্যাথোজেন আক্রমণ প্রতিরোধী শস্যের সৃষ্টি করা সম্ভব হয়।

খ) ওষুধ প্রস্তুতি

ভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য বিভিন্ন গাছ থেকে সংগ্রহ করে, তা দিয়ে ওষুধ তৈরি করা হয়।

গ) বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা

বাস্তুতন্ত্রে উদ্ভিদ উৎপাদক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ঘ) জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ

জীববৈচিত্র্য জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে অনেকাংশে সাহায্য করে।

ঙ) পরাগমিলন

জীববৈচিত্র্যের আধিক্যের ফলে বিভিন্ন পতঙ্গ, পাখি ইত্যাদি পরাগমিলনে সাহায্য করে।

চ) অর্থনৈতিক গুরুত্ব

খাদ্য শস্য থেকে শুরু করে, গৃহ ও আসবাবপত্র তৈরি, কাগজ, মুক্তো, সিল্ক প্রভৃতি নানান বিষয়ে আমরা পরিবেশের উপর নির্ভরশীল।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

অতিবৈচিত্র্যশালী দেশ এবং জীব বৈচিত্র্যের হটস্পট

অতিবৈচিত্র্যশালী দেশ

এখনো পর্যন্ত প্রায় 1.9 মিলিয়ন প্রজাতির অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই 1.9 মিলিয়ন প্রজাতির মধ্যে গৃহপালিত পশু, পাখি, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত নয়।

পৃথিবীতে এখনো পর্যন্ত মোট 17টি অতিবৈচিত্র্যশালী দেশ আছে। পৃথিবীর সমগ্র জীব বৈচিত্র্যের 70% এই 17টি দেশে উপস্থিত। এই দেশগুলি হল: ইউনাইটেড স্টেট অফ আমেরিকা, মেক্সিকো, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু, ভেনেজুয়েলা, ব্রাজিল, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো, আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস, পাপুয়া নিউগিনি, চীন ও অস্ট্রেলিয়া।


jump magazine smart note book


ভারত-অতিবৈচিত্র্যশালী দেশ

বিভিন্ন প্রকার জলবায়ু, উচ্চতা এবং বাস্তুতন্ত্রের বৈচিত্র্যের জন্য ভারতবর্ষ অধিক জীববৈচিত্র্য সম্পন্ন। পৃথিবীর প্রায় 7.7 ভাগ জীববৈচিত্র্য ভারতে অবস্থিত।

ভারতের উত্তর পূর্ব হিমালয় এবং পশ্চিমঘাট বনাঞ্চল, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জসহ দক্ষিণ – পশ্চিম ভারতের গুজরাট, তামিলনাড়ুর সামুদ্রিক প্রবাল প্রাচীরে অধিকাংশ জীববৈচিত্র্য দেখা যায়।

2009 সালে ভারতীয় জীববৈচিত্র্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে প্রায় 46000 এর বেশি উদ্ভিদ পাওয়া যায়, যা পৃথিবীর বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রজাতির 11%।

ভারতের প্রায় 91212 এর বেশি প্রাণী প্রজাতি দেখা যায়, যা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাণী প্রজাতির প্রায় 7.43%।

জীব বৈচিত্র্যের হটস্পট

পৃথিবীর যে ভৌগলিক অঞ্চলে অধিক সংখ্যায় আঞ্চলিক প্রজাতি বা স্থানীয় অর্থাৎ এনডেমিক প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস করে, যাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে এবং তাদের দ্রুত সংরক্ষণের প্রয়োজন আছে, সেই সকল অঞ্চলকে হটস্পট বলে।

জীববৈচিত্র্যের হ্রাস

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবেশের ওপর তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে শুরু করে। জীববৈচিত্র্য হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ হল ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা। যে সমস্ত কারণের জন্য জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায় সেগুলি হল-

ক) জীবের বাসস্থান ধ্বংস

খ) পরিবেশ দূষণ

গ) শিকার এবং চোরাশিকার

ঘ) বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশ

ঙ) বিশ্ব উষ্ণায়ন


দশম শ্রেণির অন্যান্য বিভাগগুলি পড়ুন –ভৌতবিজ্ঞান | গণিত | জীবনবিজ্ঞান

জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ

যে পদ্ধতিতে বৈজ্ঞানিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের নির্দিষ্ট ব্যবহারের মাধ্যমে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা হয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তা রক্ষিত হয়, তাকে জীব জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ বলে।

i) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশে উদ্ভিদ এবং প্রাণী পরস্পরের মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়।

ii) বিরল প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণের ফলে তা সম্পূর্ণ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পায়।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতি

সাধারণত দু’রকম পদ্ধতির মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা হয়। যথা – ক) ইনসিটু সংরক্ষণ  খ) এক্স সিটু সংরক্ষণ

ক) ইনসিটু সংরক্ষণ (In-situ conservation)

নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণকে ইনসিটু সংরক্ষণ বলে। প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবের সংরক্ষণ করা হয় বলে একে ইনসিটু সংরক্ষণকে “On-site conservation” বলে।

জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, সংরক্ষিত বন, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ইত্যাদির মাধ্যমে ইনসিটু সংরক্ষণ করা হয়।

খ) এক্স সিটু সংরক্ষণ (Ex-situ conservation)

নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশের বাইরে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণকে এক্স সিটু সংরক্ষণ বলে। যেমন চিড়িয়াখানা (Zoo Garden), বোটানিক্যাল গার্ডেন (Botanical Garden), ক্রায়ো সংরক্ষণ (Cryopreservation), বীজ ব্যাঙ্ক (seed bank) ইত্যাদি।

অধ্যায় সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

X-Lsc-5d