prthibir chador ozone copy
Madhyamik Study (পড়াশোনা)

বায়ুমণ্ডলের গঠন ও ওজোন স্তর

শ্রেণি – দশম বিষয়: ভৌতবিজ্ঞান । অধ্যায়: পরিবেশের জন্য ভাবনা |

সৌরজগতের যে কটি গ্রহ বর্তমান, আমাদের জ্ঞাতব্যের মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই প্রাণ আছে।

এই পৃথিবীতে প্রাণ থাকার পেছনে প্রচুর প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে, যেমন সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব, আহ্নিক ও বার্ষিক গতি, দিনের দৈর্ঘ্য, ঋতু পরিবর্তন ইত্যাদি। এই সকল কারণের মধ্যে অন্যতম হল আমাদের বায়ুমণ্ডল ও বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত বিভিন্ন গ্যাস। অন্যান্য গ্রহেও বায়ুমণ্ডল রয়েছে, কিন্তু সেখানে হয় প্রচুর ঠান্ডা, নয় প্রচুর গরম।এছাড়াও কিছু গ্রহের বায়ুমণ্ডল দাহ্য, কিছুক্ষেত্রে বায়ু এতই লঘু যে শ্বাস- প্রশ্বাসের সহায়ক নয়, আবার কোথাও বায়ুর চাপ খুবই বেশি, কোথাও খুবই কম। কিন্তু পৃথিবীতে বায়ুমণ্ডলে যা যা উপাদান রয়েছে প্রত্যেকটিই আমাদের সৃষ্টিরহস্যের ব্যখ্যা দেয়।

বায়ুমণ্ডলের গঠন

পৃথিবীর বায়ুর মূল উপাদানগুলি হলো নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন।

এছাড়াও আছে আর্গন, কার্বন ডাই অক্সাইড, ওজোন ইত্যাদি। জলীয় বাষ্পও থাকে, তবে তা তাপমাত্রা ও স্থানভেদে ভিন্ন হয়। সেই কারণেই এক স্থানের আবহাওয়া অন্যস্থানের থেকে আলাদা হয়, কিন্তু সে অন্য প্রসঙ্গ। আর বাকি গ্যাসীয় উপাদানের অংশীদারী কেবলমাত্র উচ্চতাভেদে পরিবর্তিত হয়। সেই কারণে বায়ুমণ্ডলে কতকগুলি স্তরের সৃষ্টি হয়েছে, যেমন ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, ওজোনোস্ফিয়ার (স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের অংশ), মেসোস্ফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ার, এক্সোস্ফিয়ার (শেষ দুটি মিলিয়ে আয়োনোস্ফিয়ার) বা ম্যাগনেটোস্ফিয়ার।

এই প্রত্যেক স্তরে বায়ু লঘু থেকে লঘুতর হয় আর উপাদানভেদে কখন তাপমাত্রা বাড়ে আবার কখনও কমে। উচ্চতার সাথে তাপমাত্রা কমাটাই স্বাভাবিক, কিন্তু যদি তাপমাত্রা বাড়ে তখন সেটিকে ‘temperature inversion’ বলা হয়।

 

পৃথিবীর বায়ুমন্ডল (সৌজন্যে Zhabska T.S )

এদের মধ্যে সবথেকে নিচের দুটি স্তর হল ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার। ট্রপোস্ফিয়ারের মধ্যেই মূলত জীবমণ্ডল অবস্থিত এই ট্রপোস্ফিয়ার বা শান্তমন্ডলে জলীয় বাষ্প এবং স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোনের আধিক্য দেখা যায়।  এই দুটি স্তরেই আমাদের নিত্য কাজকর্মের কারণে সবথেকে বেশি দূষণ ঘটে।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

ট্রপোস্ফিয়ারের জলীয়বাষ্প নিজের সমান আয়তনের বায়ুর থেকে হালকা হওয়ায় বায়ুমণ্ডল আর্দ্র হলে, বায়ুর চাপ কমে যায়। আবার যে সমস্ত অঞ্চলে মাটি তাপ শোষণ করে ও দ্রুত তাপ বিকিরণ করে (যেমন – মরু অঞ্চল বা পাথুরে উষ্ণ ও শুষ্ক মালভুমি) সেই সমস্ত অঞ্চলসংলগ্ন বায়ু আয়তনে প্রসারিত হয়ে হালকা ও লঘু হয়ে যায়, ফলে নিম্নচাপ বলয়ের সঞ্চার ঘটে।

তার ফলে ঠান্ডা ভারী বায়ু সেই দিকে ধেয়ে আসে, এইভাবে গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকালে বায়ুপ্রবাহ হয়। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার মাটির থেকে 10 কিলোমিটার উঁচুতে হওয়ার কারণে ওখানে এইভাবে বায়ুর সঞ্চালন হয়না।

বায়ুমণ্ডলের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন। নাইট্রোজেন অপেক্ষাকৃত নিষ্ক্রিয় গ্যাস।

[জেনে রাখো, পৃথিবীতে জীবনের সঞ্চার (DNA ও প্রোটিনের মুখ্য উপাদান N]।

অক্সিজেন অপেক্ষাকৃত সক্রিয়, শ্বাসপ্রশ্বাস ও শক্তির মুক্তি ঘটাতে সাহায্য করে। এই অক্সিজেনের দুটি রূপভেদ, ডাই অক্সিজেন (O2) এবং ওজোন (O3)। প্রথমটি জারণ এবং দহনের দ্বারা আমাদের বৃদ্ধিতে (বড়ো হতে) ও পরিপক্কতায় (বুড়ো হতে) সাহায্য করে।

পৃথিবীর ‘চাদর’ (ওজোন স্তর)

এই ওজোন স্তর সূর্য্যরশ্মির মধ্যে থাকা অতিবেগুনি রশ্মি (আল্ট্রাভায়োলেট) শোষণ করে ক্রমাগত O2 ও পুনরায় ওজোনে পরিণত হয়ে চলেছে। তার ফলে আমরা ওই অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারছি।  তাই সাধারণভাবে শুধুমাত্র আমাদের বোঝার ও মনে রাখার জন্য, এই স্তরকে বলা যেতে পারে আমাদের ‘পৃথিবীর চাদর’।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলিগণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

কিন্তু আজ আমাদের কাজকর্মের জন্য এই ওজোন স্তরে ছিদ্র তৈরী হয়েছে।

NO, NO2 ও ক্লোরিন গ্যাসের মতো কিছু অক্সিজেনের সমধর্মী গ্যাস আমরা পরিবেশে প্রতিনিয়ত ছেড়ে দিচ্ছি, যেগুলো ওই স্তরে গিয়ে ওজোনের সাথে বিক্রিয়া করে O2 থেকে O3 হতে দিচ্ছে না। তার ফলে সেখানে চিরস্থায়ী ছিদ্র তৈরী হয়ে যাচ্ছে। Chlorofluorocarbon (CFC) মতো ক্ষতিকর গ্যাস তো আরো বেশি ক্ষতি করে চলেছে, কারণ এর সাথে ওজোনের বিক্রিয়া একবার শুরু হলে আর শেষ হয় না  তার ফলে এই ছিদ্র ক্রমাগত বেড়েই চলেছে বেড়েই চলেছে।

মহাকাশযান থেকে পৃথিবীর উপরিভাগের চিত্র (সৌজন্যে নাসা)

ওজোন ছাড়া এরকম আরো গ্রীনহাউস গ্যাসগুলি হলো CO2, NO2, Methane, CFC এবং জলীয় বাষ্প। এরা কেউকেউ বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিক উপাদান নয় আবার কেউ অনেক কম পরিমানে থাকে (CO2– 0.03%, জলীয় বাষ্প – 0.2-1%)।

আমাদের কাজকর্মের জন্য এদের পরিমান বায়ুমণ্ডলে বেড়েই চলেছে আর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উষ্ণায়নও।

[আবার দিনের বেলায় পৃথিবীর বুকে সূর্য থেকে আগত ক্ষুদ্রাকৃতি তাপতরঙ্গ প্রবেশ করতে পারলেও, রাতের বেলায় পৃথিবীর থেকে প্রতিফলিত অপেক্ষাকৃত বৃহৎ তাপ তরঙ্গ গ্রিন হাউস গ্যাসের চাদরে আটকে পরছে তাই পৃথিবীর উষ্ণতায় ভারসাম্য থাকছে। তাই গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে।]

ফসিল জ্বালানী (কয়লা বা পেট্রল বা স্বাভাবিক গ্যাস-মিথেন, প্রোপেন, পেন্টেন) থেকে CO2 ও জলীয় বাষ্প, গবাদি পশুর বর্জ্য ও পেট থেকে মিথেন, অটোমোবাইল থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড, কুলিং মেশিন থেকে CFC ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা বায়ু প্রতিনিয়ত বায়ু দূষণ করছি।

air-pollution
বায়ুমন্ডলের উপর আমাদের অত্যাচার

এদের মধ্যে যেগুলি জলে দ্রাব্য, সেগুলি সমুদ্রে দ্রবীভূত হয়ে জলের অম্লত্ব বাড়ায়। তার ফলে সামুদ্রিক জীবন বিপন্ন হচ্ছে, প্রজনন চক্র ও খাদ্যশৃঙ্খল ধসে পড়ছে, জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। গরমকালে উষ্ণতা বাড়ছে, বৃষ্টিযুক্ত দিন কমে গেছে, অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির পর্যায়বর্তীতা বেড়ে গেছে, মেরু অঞ্চলের বরফ ও পাহাড় চূড়ায় বরফ বেশি গলছে, শীতে চূড়ান্ত ঠান্ডার প্রকোপ দেখা দিচ্ছে, অকালবৃষ্টি, ধস ও বন্যা নিয়মিত হয়ে উঠছে।

সবথেকে বড়ো কথা, আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে বেড়ে ওঠা গাছপালা ও পশুপাখির জীবনশৈলীতে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। কম ফসল ফলা,সব্জির মূল্যবৃদ্ধি, জলের হাহাকারে চাষীর মৃত্যু, মেরুদেশে প্রজাতির বিলুপ্তি, খাদ্যশৃংখলে ভাঙ্গন মানব সভ্যতাকে এক বিরাট প্রশ্ন চিহ্নের সামনে এনেছে।

আমরা কিভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস বেরোনো (কার্বন ডাইঅক্সাইড) কমাতে পারি? বলতে পারবে?

আশার আলো:

সম্প্রতি নাসার বৈজ্ঞানিকেরা লক্ষ্য করেছেন, বিশ্বব্যাপী CFC ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞার কারনে ওজন স্তরের ছিদ্র ক্রমে ভরাট হচ্ছে। 2005 সালের নিরিখে 2016 সালে অন্তত ২০ শতাংশ ক্ষয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে।

নিচের প্রশ্নগুলো জানো কিনা? উত্তর জানলে, কমেন্ট বক্সে লিখে তা সবাইকে জানাও!

  1. আমাদের মাথার ওপর 10 কিলোমিটার ঘন বায়ু আছে. সেই বায়ুর ঘনত্ব 1.275 কেজি প্রতি ঘন মিটার। পৃথিবীর টান 9.8 মিটার প্রতি বর্গসেকেন্ডে হলে মাথার ওপর চাপ প্রতি বর্গমিটারে কত?
  2. জানো কি? আয়োনোস্ফিয়ারে তাপমাত্রা inversion কেন হয়?
  3. বৃষ্টিপাত হওয়ার সময় আগত বায়ু জল কথা থেকে পায়?
  4. রূপভেদ কাকে বলে? আর কোন মৌলের রূপভেদ সম্বন্ধে তুমি জানো? তারা কি কি?
  5. আমরা কিভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস বেরোনো (কার্বন ডাইঅক্সাইড) কমাতে পারি?

সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

X_Psc_1

2 Replies to “বায়ুমণ্ডলের গঠন ও ওজোন স্তর

    1. আপনাকে ধন্যবাদ!
      আমাদের সব POST নিয়মিত WhatsApp এর মাধ্যমে পেতে WhatsApp SUBSCRIPTION চালু করতে পারেন। এর জন্য এই পেজটি ভিসিট করুন http://bit.ly/JUMP_WhatsApp .

Comments are closed.