কম্পিউটার – একাদশ শ্রেণি – প্রথম অধ্যায় – প্রথম পর্ব
কম্পিউটার প্রথম তৈরী হবার পর থেকে নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম তৈরীর পর থেকে কম্পিউটারের যন্ত্রাংশগুলির নানা উন্নতি, বিভিন্ন নতুন যন্ত্রাংশ তৈরী প্রভৃতির মাধ্যমে কম্পিউটার ধীরে ধীরে আধুনিক কম্পিউটারে রূপ নিয়েছে। শুরু থেকে আজকের আধুনিক কম্পিউটার তৈরীর বিবর্তনের এই দীর্ঘ সময়কে পাঁচটি প্রজন্মে ভাগ করা হয়।
First generation বা প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার
1942 থেকে 1955 সালের মধ্যে ব্যবহৃত কম্পিউটারগুলিকে প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার বলা হয়। ENIAC, EDVAC, EDSAC প্রভৃতি প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ।
এই কম্পিউটারগুলিতে মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হত।
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
a) এই প্রজন্মের কম্পিউটারের মূল উপাদান ছিল ভ্যকুয়াম টিউব।
b) ইনপুট ও আউটপুটের জন্য পাঞ্চকার্ড ব্যবহার করা হত।
c) এগুলি আকারে খুব বড় হত। একটি কম্পিউটার রাখতে একটি ঘর প্রয়োজন হত।
d) প্রাথমিক সংরক্ষণের জন্য ম্যাগনেটিক ড্রাম আর স্থায়ী সংরক্ষণের জন্য পাঞ্চকার্ড ব্যবহার করা হত।
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের সুবিধা
a) এই কম্পিউটারগুলির গঠন ছিল তুলনামূলক সরল প্রকার।
b) এই সময়ের অন্যান্য যন্ত্রের তুলনায় দ্রুত কাজ করতে পারত।
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের অসুবিধা
a) বিরাট আকার কম্পিউটারগুলি চালাবার জন্য প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন হত।
b) ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহারের ফলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। ফলে এই কম্পিউটার চালানোর জন্য শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জরুরী ছিল।
c) কম্পিউটারের কাজের গতি ছিল খুবই কম।
d) এই কম্পিউটার গুলির দ্বারা ফল প্রকাশ ক্ষমতা ছিল ভীষণ নিম্ন মানের।
Second generation বা দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার মূলত 1956 থেকে 1964 সালের মধ্যে ব্যবহার হত। IBM-7000, IBM-1620 প্রভৃতি দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ।
এই দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলিতে FORTRAN, COBOL, BASIC প্রভৃতি হাই লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়।
এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলিতে ভ্যাকুয়াম টিউবের বদলে ব্যবহার করা হত ট্রানজিস্টর নামক একটি উন্নতমানের ইলেকট্রনিক যন্ত্র। এটির আকার ভ্যাকুয়াম টিউবের তুলনায় অনেক কম এবং তাপ অনেক কম উৎপন্ন হত।
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
a) এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলিতে মূল যন্ত্রাংশ হল ট্রানজিস্টার।
b) পাঞ্চকার্ড ও ম্যাগনেটিক টেপের মাধ্যমে ইনপুট দেওয়া হয়।
c) আউটপুটের জন্য পাঞ্চকার্ড ও কাগজ ব্যবহার করা হত।
d) এই কম্পিউটারগুলিতে তথ্য সংরক্ষণের জন্য ম্যাগনেটিক টেপ ব্যবহার করা হত।
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের সুবিধা
a) এই কম্পিউটারগুলির আকার প্রথম প্রজন্মের তুলনায় ছোট ছিল।
b) এগুলি চালাবার জন্য অপেক্ষাকৃত কম বিদ্যুৎশক্তি প্রয়োজন হত।
c) উৎপন্ন তাপের পরিমাণ প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার অপেক্ষা কম ছিল।
d) কাজের গতি প্রথম প্রজন্ম অপেক্ষা বেশী ছিল এবং দাম অপেক্ষাকৃত কম ছিল।
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের অসুবিধা
a) নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন হত।
b) এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলিতে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োজন ছিল।
c) প্রথম প্রজন্মের তুলনায় এই কম্পিউটার গুলির অপেক্ষাকৃত জটিল ছিল।
d) এই কম্পিউটারগুলির আকার প্রথম প্রজন্মের তুলনায় ছোট হলেও এগুলি কিন্তু বহনযোগ্য ছিল না।
Third generation বা তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার
তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলি 1965 থেকে 1970 সালের মধ্যে ব্যবহার হত।IBM-360, CDC-1700 প্রভৃতি তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ।
এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলিতে ট্রানজিস্টারের পরিবর্তে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের (IC) ব্যবহার শুরু হয়। এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলিতে স্মল স্কেল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (SSIC) ও মিডিয়াম স্কেল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (MSIC) ব্যবহার করা হত।
এই কম্পিউটারগুলিতে টাইম শেয়ারিং অপারেটিং সিস্টেম এবং PASCAL, FORTRAN প্রভৃতি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার হত।
একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer
তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
a) এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলিতে প্রধান যন্ত্রাংশ হিসাবে Integrated Circuit এর ব্যবহার শুরু হয়।
b) এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলিতে input এর জন্য keyboard এবং output এর জন্য monitor এর ব্যবহার শুরু হয়।
c) তথ্য সংরক্ষণের জন্য magnetic disk এর ব্যবহার শুরু হয়।
d) এই প্রজন্ম থেকে কম্পিউটারগুলি time sharing বা সময় বিভাজন পদ্ধতির মাধ্যমে একই সময়ে একাধিক কাজ সম্পন্ন করত।
একাদশ শ্রেনি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল
তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের সুবিধা
a) আগের প্রজন্মের তুলনায় কম্পিউটারগুলির আকার অনেক ছোট ও বহনযোগ্য ছিল।
b) IC ব্যবহারের ফলে অনেক কম তাপ উৎপন্ন হত।
c) বিদ্যুৎ শক্তির খরচ অনেক কম হত।
d) আগের প্রজন্মের তুলনায় কম্পিউটারগুলির দাম অনেক কম ছিল।
e) এই প্রজন্মের কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক বেশী ছিল।
তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের অসুবিধা
a) এই প্রজন্মের কম্পিউটারের গঠন আগের প্রজন্মের তুলনায় অনেক জটিল ছিল।
b) শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজন হত।
Fourth generation বা চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার
1971 থেকে 1985 সালের মধ্যে চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার ব্যবহার হত।DEC 10, IBM 4341, STAR 1000 প্রভৃতি চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ।
এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলিতে LISC (লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট) ও VLSIC (ভেরি লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট) ব্যবহার করা হত। তৃতীয় প্রজন্মে ব্যবহৃত IC উন্নত হয়ে এই LSIC ও VLSIC তৈরী হয়।
এই কম্পিউটারগুলিতে C, C++, 4GL (SQL) প্রভৃতি ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়।
চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
a) এই প্রজন্ম থেকে microprocessor technology এর ব্যবহার শুরু হয়।
b) কম্পিউটার তৈরী ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ আগের প্রজন্মগুলির থেকে কম।
c) তথ্য সংরক্ষণের জন্য ম্যাগনেটিক ডিস্ক ও পরে অপটিক্যাল স্টোরেজ ব্যবহার শুরু হয়।
d) output এর জন্য monitor এর সাথে printer, speaker প্রভৃতি ব্যবহার শুরু হয়।
চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের সুবিধা
a) শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের কোন প্রয়োজনীয়তা আর থাকল না।
b) কম্পিউটার গুলির দাম আগের থেকে কম হয়ে সাধারণের আয়ত্তে এসে গেল।
c) বিদ্যুৎ শক্তির খরচ আরও কমে গেল।
d) অধিক দ্রুতগতিতে নির্ভরযোগ্য ফলাফল পাওয়া সম্ভব হল।
e) উৎপন্ন তাপের পরিমাণ অনেক কমে গেল।
চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের অসুবিধা
a) এই প্রজন্মের কম্পিউটারের গঠন আগের প্রজন্মগুলির তুলনায় অনেক জটিল।
b) LSIC ও VLSIC তৈরীর জন্য উন্নত মানের প্রযুক্তির প্রয়োজন।
c) কম্পিউটারগুলির যে সব software ব্যবহার হয় সেগুলি অত্যন্ত জটিল।
একাদশ শ্রেণি থেকে → বাংলা | ইংরাজি
Fifth generation বা পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার
1985 সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত কম্পিউটারগুলিকে পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার বলা হয়।IBM SP/2, PARAM 1000 প্রভৃতি পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ।
চতুর্থ প্রজন্মের সাথে পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের খুব বেশী তফাত দেখা যায় না। এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলিতে মূল যন্ত্রাংশ হিসাবে ULISC (আলট্রা লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট) ব্যবহার হয়। PROLOG, LISP প্রভৃতি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলির ব্যবহার হয়। Desktop, Laptop, Notebook, Ultrabook, Chromebook প্রভৃতি এই প্রজন্মের কম্পিউটার।
পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
a) কম্পিউটার গুলিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা Artificial Intelligence (AI) ব্যবহার শুরু হয়।
b) এই প্রজন্মে input এর জন্য keyboard, Mouse, Joystick প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়।
c) output এর জন্য LCD বা LED monitor এর সাথে printer, speaker, Projector প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়।
d) এই প্রজন্মে প্রধান যন্ত্রাংশ হিসাবে ULSIC ব্যবহার করা হয়।
e) Parallel Processing ব্যবহার হয়।
পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের সুবিধা
a) এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলি অনেক দ্রুতগতি সম্পন্ন এবং একই সাথে একাধিক কাজ সম্পন্ন করতে পারে।
b) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ফলে এই প্রজন্মের কম্পিউটার নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে এবিষয়ে এখনও উন্নতি করার কাজ চলছে।
c) Parallel Processing ব্যবহৃত হয় বলে এই কম্পিউটারগুলি সমান্তরালভাবে বহু কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়।
d) শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কোন প্রয়োজন নেই।
পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের অসুবিধা
a) এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলির গঠন অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও জটিল।
b) বিভিন্ন জটিল software ও high level language ব্যবহার করা হয়।
পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → ডিজিটাল কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা