শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: বিজ্ঞান । অধ্যায় – পদার্থের গঠন (দ্বিতীয় পর্ব)
এই অধ্যায়ের আগের পর্বে আমরা পরমাণু ও অনুর ধারণা নিয়ে আলোচনা করেছি। এই পর্বে আমরা পদার্থের দুটি অবস্থা নিয়ে আলোচনা করব।
পদার্থের অবস্থা
পদার্থের চিহ্নযোগ্য বা চেনার উপযুক্ত বিভিন্ন অবস্থাকেই পদার্থের অবস্থা বলা হয়।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা পদার্থের কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয় এই তিন রকম অবস্থা দেখতে পাই।
পদার্থের স্বাভাবিক অবস্থাসমূহ
প্রকৃতপক্ষে পদার্থের চারটি স্বাভাবিক অবস্থা আছে। সেগুলি হল: কঠিন, তরল, গ্যাসীয় এবং প্লাজমা। এছাড়াও কৃত্রিমভাবে পদার্থের আরও কিছু অবস্থা সৃষ্টি করা যায়। এই কৃত্রিম অবস্থাগুলি কেবলমাত্র চরম পরিস্থিতিতে পাওয়া যায়।
উপরের চারটি স্বাভাবিক অবস্থার বাইরে কৃত্রিমভাবে তৈরি পদার্থের পঞ্চম অবস্থা হল Bose–Einstein condensates।
প্রাপ্ত কৃত্রিম অবস্থাগুলি ছাড়াও পদার্থের আরও কিছু অবস্থা সম্ভব বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, তবে সেই অবস্থাগত এখনও তত্ত্বগতভাবে সীমাবদ্ধ।
পদার্থের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে তাদের কঠিন, তরল, গ্যাসীয় প্রভৃতি অবস্থায় ভাগ করা হয়।
আমাদের চারপাশে থাকা বাড়ি, চেয়ার, টেবিল, লোহা, কাচ, জল, বালি, পাথর, মাটি সবই পদার্থ। সব পদার্থেরই কিছু ওজন আছে এবং তা কিছুটা স্থান দখল করে থাকে।
কঠিন পদার্থ কাকে বলে?
যে সব পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে এবং বল প্রয়োগ দ্বারা আকার পরিবর্তন করতে চাইলে যে পদার্থ বাধা দেয় তাকে কঠিন পদার্থ বলা হয়। ইট, কাঠ, চেয়ার, টেবিল, পাথর, মাটি প্রভৃতি কঠিন পদার্থের উদাহরণ।
কঠিন পদার্থের অনুগুলি ঘন সন্নিবিষ্টভাবে পরস্পরের কাছাকাছি অবস্থান করে। অনুগুলি মধ্যে ফাঁক খুব কম থাকে। পদার্থের অন্যান্য অবস্থার তুলনায় কঠিন অবস্থায় অনুগুলি অনেক বেশী সুশৃঙ্খলভাবে দেখতে পাওয়া যায়।
পদার্থের কঠিন অবস্থার বৈশিষ্ট্য
a) কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে।
b) কঠিন পদার্থের অনুগুলি সুশৃঙ্খলভাবে কাছাকাছি অবস্থান করে।
c) কঠিন পদার্থের অনুগুলির মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল সর্বাধিক হয়।
d) কঠিন পদার্থের অনুগুলি স্থির অবস্থায় থাকে। এদের স্থানান্তর ও আবর্তন গতি থাকে না।
e) কঠিন পদার্থের অণুর কম্পন গতি দেখা যায়। অর্থাৎ অনুগুলি একই স্থান থেকে কাঁপতে পারে।
f) কঠিন পদার্থের ঘনত্ব খুব বেশী হয়।
g) কঠিন পদার্থের দৃঢ়তা বেশী হয়। এর ফলে যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করলে কঠিন পদার্থ ভেঙে যেতে পারে।
h) চাপ প্রয়োগে কঠিন পদার্থের সংকোচন হয় না বা চাপ হ্রাস করলে প্রসারণ হয় না।
i) তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে কঠিন পদার্থের আয়তন সামান্য বৃদ্ধি পায় এবং তাপমাত্রা হ্রাসে আয়তন সামান্য হ্রাস পায়।
অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান
তরল পদার্থ কাকে বলে?
যে সব পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নেই, যখন যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের আকার গ্রহণ করে, তাকে তরল পদার্থ বলা হয়। জল, তেল, মধু, দুধ প্রভৃতি তরল পদার্থের উদাহরণ।
তরল পদার্থের অনুগুলির মধ্যে কঠিন পদার্থের তুলনায় অনেক বেশী ফাঁক থাকে। এরফলে অনুগুলি নড়াচড়া করতে পারে। এই কারণে এক বাটি জলে এক ফোঁটা তরল কালি ফেলা হলে দেখা যায় যে কালির ফোঁটা আস্তে আস্তে জলের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ বাদে দেখা যায় যে কালির ফোঁটা সম্পূর্ণ ভাবে জলে মিশে গেছে।
পদার্থের তরল অবস্থার বৈশিষ্ট্য
a) তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন থাকলেও কোন নির্দিষ্ট আকার নেই।
b) তরল পদার্থের অনুগুলির মধ্যের দূরত্ব কঠিনের চেয়ে বেশী এবং এরা কঠিনের অণুর মত অত সুশৃঙ্খল ভাবে থাকে না।
c) তরল পদার্থের অণুর কম্পন, আবর্তন ও স্থানান্তর গতি আছে। অর্থাৎ অনুগুলি কাঁপতে, ঘুরতে বা পাক খেতে এই অন্য স্থানে যেতে পারে।
d) তরলের অণুর কম্পন, আবর্তন ও স্থানান্তর গতি কঠিনের চেয়ে বেশী, কিন্তু গ্যাসীয় পদার্থের চেয়ে কম হয়।
e) তরল পদার্থ চাপ প্রয়োগে সামান্য সঙ্কুচিত হয়।
f) তরল পদার্থের অনুগুলির মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের পরিমাণ কঠিন পদার্থের তুলনায় কম হয়।
g) তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে তরল পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং এই আয়তন বৃদ্ধির পরিমাণ কঠিন পদার্থের তুলনায় বেশী হয়।
পর্ব সমাপ্ত।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখিকা পরিচিতিঃ
বিজ্ঞান স্নাতক এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষিতা নন্দিতা বসুর পেশা শিক্ষকতা।তিনি বই পড়তে বড় ভালোবাসেন। কাজের ফাঁকে, অবসরে, বাসে ট্রামে তো বটেই, শোনা যায় তিনি নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও বই পড়তে পারেন।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করতে ভুলো না।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা