শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: বিজ্ঞান । অধ্যায় – মানুষের খাদ্য ও খাদ্য উৎপাদন (তৃতীয় পর্ব)
আগের পর্বে আমরা জেনেছি উদ্ভিদজাত খাদ্য চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে। এই পর্বে আমরা প্রাণীজ খাদ্য চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করবো।
প্রাণীজাত খাদ্য নিয়মিত যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়ার জন্য সেই সব প্রাণীদের প্রতিপালন ও প্রজননের ব্যবস্থা করাকে পশুপালন বলে।
মৌমাছি
মৌমাছি এক প্রকার সমাজবদ্ধ জীব। এদের সমাজে রানি, পুরুষ এবং কর্মী বা শ্রমিক এই তিন রকম মৌমাছি দেখা যায়। শ্রমিক মৌমাছি তাদের বসবাসের জন্য মৌচাক তৈরী করে। একটি মৌচাকে একটি রানি, কয়েকটি পুরুষ এবং অনেক কর্মী বা শ্রমিক মৌমাছি থাকে।
পুরুষ মৌমাছির সাথে প্রজননের পর রানি মৌমাছি সেই মৌচাকে ডিম পাড়ে।
শ্রমিক মৌমাছি মৌচাক পাহারা দেয়, রানি ও পুরুষ মৌমাছির সেবা করে, ফুল থেকে রেণু আহরণ করে মধু ও মোম তৈরী করে, রানি মৌমাছির সন্তানদের পালন করে। এই মধু আর মোম পাবার জন্য মৌমাছি পালন করা হয়।
শ্রমিক মৌমাছি তাদের শরীরে বর্তমান মোমগ্রন্থি থেকে ক্ষরিত পদার্থের সাহায্যে মৌচাক তৈরী করে। এই মৌচাকে অনেক ষড়ভূজ প্রকোষ্ঠ থাকে। শ্রমিক মৌমাছি ফুল থেকে রেণু ও মধু সংগ্রহ করে নিজ শরীরের মধ্যে সঞ্চয় করে। এই সঞ্চিত মধুর সাথে তাদের লালারসের মিশ্রণ ঘটে এবং তার ফলে সঞ্চিত মধুতে বর্তমান শর্করার কিছু পরিবর্তন ঘটে। এরপর শ্রমিক মৌমাছি এই মিশ্রণকে মৌচাকের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠে সঞ্চয় করে। প্রকোষ্ঠগুলিতে তারা নিজেদের ডানা দিয়ে ক্রমাগত বাতাস দেয়, যার ফলে সঞ্চিত তরলের জলীয় অংশ বাষ্প হয়ে যায় এবং ঘন মধু সৃষ্টি হয়।
এই মধু আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রচুর গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ থাকার কারণে মধু অত্যন্ত পুষ্টিকর। এছাড়া মধুতে ভিটামিন A,C, B-কমপ্লেক্স ছাড়াও Na, Ca, P, Fe প্রভৃতি খনিজ পদার্থ, অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে।
মৌমাছির জীবনচক্র
মৌমাছির জীবনচক্রে মোট চারটি ধাপ বা দশা থাকে। সেগুলি হল- ডিম, লার্ভা, পিউপা ও পূর্ণাঙ্গ মৌমাছি। পুরুষ মৌমাছির সাথে মিলনের পরে রানি মৌমাছি ডিম পাড়ে। সেই ডিম ফুটে বের হয় লার্ভা। এই লার্ভা কিছুদিন পরে পিউপা- তে পরিণত হয়। এরপর পিউপাগুলি পরিণত হয়ে পূর্ণাঙ্গ রুপ নেয়।
মৌমাছি পালন
বিজ্ঞানসম্মত ও কৃত্রিম পদ্ধতিতে মৌমাছি প্রতিপালন করে মধু ও মোমের চাহিদা মেটাবার পদ্ধতিকে মৌমাছি পালন বা মৌচাষ বলা হয়। ভারতে দেশীয় এবং আধুনিক দুই পদ্ধতিতে মৌমাছি পালন করা হয়।
দেশীয় পদ্ধতিতে মৌমাছি পালন এই পদ্ধতিতে প্রকৃতপক্ষে মৌমাছি পালন করা হয় না। প্রাকৃতিকভাবে গাছের ডাল বা কোন বাড়ির দেওয়ালে থাকা মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। আগুন বা ধোঁয়া দিয়ে চাক থেকে মৌমাছিগুলিকে প্রথমে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর চাক ভেঙে মধু সংগ্রহ করা হয়।
এই পদ্ধতিতে চাক থেকে পাওয়া মধুর পরিমাণ কম হয় এবং তা পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা থাকে না। এছাড়া এই সব চাক থেকে মৌমাছিরা যেহেতু বিভিন্ন প্রকার ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু সঞ্চয় করে, তাই মধুর গুণাগুণ ও নিশ্চিত বা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
আধুনিক পদ্ধতিতে মৌমাছি পালন
এই পদ্ধতিতে দেশীয় পদ্ধতির অসুবিধা গুলি দূর করা সম্ভব হয়। এই পদ্ধতিতে কৃত্রিম উপায়ে মৌচাক তৈরী করে তার মধ্যে রানি মৌমাছি রেখে দেওয়া হয়। কয়েক দিনের মধ্যে অনেক মৌমাছি সেই কৃত্রিম মৌচাকে এসে জমা হয়, এবং তারা মৌচাকে মধু সংগ্রহ করতে শুরু করে।
এই মৌচাকের কাছে আম, জাম, পেয়ারা, সরষে প্রভৃতির চাষ থাকলে ভাল। কারণ কাছে এই সব গাছ পেলে মৌমাছিরা সেই সব গাছ থেকে মধু দ্রুত সংগ্রহ করতে পারবে। পরে বিশেষ প্রকার যন্ত্র ব্যবহার করে মৌচাক থেকে এই মধু নিষ্কাশন করে সংগ্রহ করা হয়।
মাছ
মাছ, শামুক, ঝিনুক, চিংড়ি প্রভৃতি চাষ করার পদ্ধতিতে Fisheries বলা হয়। মানুষের খাদ্য তালিকায় মাছের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণীজ প্রোটিন ছাড়াও অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ফ্যাটি অ্যাসিড আমরা মাছ থেকে পাই। এছাড়াও মাছ থেকে Na, K, Ca, P, Mg প্রভৃতি খনিজ লবণ এবং ভিটামিন A, C, D ও B-কমপ্লেক্স থাকে।
মাছ উৎপাদনের ব্যবস্থা অনুসারে মাছ চাষকে
• সংগ্রহভিত্তিক বা capture
• পালনভিত্তিক বা culture
এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
• সংগ্রহভিত্তিক (capture)
এই পদ্ধতিতে খুব বড় জলাশয় বা নদ- নদী থেকে মাছ ধরা হয়। এখানে মাছ পালন বা চাষ করা হয় না।
• পালনভিত্তিক (culture) এই পদ্ধতিতে পুকুর, খাল, বিল, ভেড়ি প্রভৃতি স্থানে মাছের চারা ছেড়ে মাছ পালন করা হয়।
মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্র অনুসারে মাছ চাষকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়-
• অন্তর্দেশীয় বা Inland
এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রকার জলাশয় বা নদী থেকে মাছ সংগ্রহ করা হয়। অন্তর্দেশীয় মাছ চাষকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
(a) স্বাদু বা মিষ্টি জলের অর্থাৎ Fresh water এর মাছ।
(b) অল্প লবণাক্ত জল বা Brackish water এর মাছ।
• সামুদ্রিক (Narine) এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন সাগর বা উপসাগর থেকে মাছ ধরা হয়। এই সামদ্রিক মাছ সংগ্রহকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
(a) Coastal বা উপকূলীয় মাছ।
(b) Deep sea বা গভীর সমুদ্রের মাছ।
মিষ্টি জলে বসবাসকারী যে সব অস্থিযুক্ত মাছের মাথায় কোন আঁশ থাকে না, দেহের ভিতরে পটকা থাকে এবং অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র ও চোয়ালে দাঁত থাকে না সেই সব মাছকে কার্প (Carp) বলা হয়।
রুই, কাতলা, মৃগেল, পুঁটি প্রভৃতি। এদের নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়-
দেশী কার্প বা Indigenous carp
এগুলি হল দেশীয় মাছ। আকার অনুসারে এদের নিম্নলিখিত দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
মেজর কার্প (Major caep) – আকারে বড় এই মাছগুলি সাধারণভাবে বদ্ধ জলে ডিম পাড়ে না। এর বৃদ্ধি খুব দ্রুত হয় এবং এদের ব্যবসায়িক চাহিদাও বেশী। রুই, কাতলা, মৃগেল প্রভৃতি এই প্রকার মাছ।
মাইনর কার্প (Minor carp) – আকারে ছোট এই মাছগুলি সাধারণ ভাবে বদ্ধ জলে ডিম পাড়ে। এই ধরণের মাছের ব্যবসায়িক চাহিদা অপেক্ষাকৃত কম এবং এদের বৃদ্ধিতে সময় তুলনামূলক বেশী লাগে। পুঁটি, বাটা এই প্রজাতির মাছ।
বহিরাগত কার্প বা Exotic carp – এগুলির দেশীর মাছ নয়, এদের বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। কিন্তু এরা এদেশের জলবায়ুতে বৃদ্ধি ও প্রজননে সক্ষম হয়। গ্রাস কার্প বা মেমো রুই, আমেরিকান রুই প্রভৃতি এই ধরনের মাছ।
মাছ চাষ – মাছ চাষ মূলত দুটি পর্যায় থাকে- ডিম পোনা সংগ্রহ, এবং ডিম পোনা থেকে পূর্নাঙ্গ মাছ সৃষ্টি।
ডিম পোনা সংগ্রহ- এই কাজ প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক পদ্ধতিতে এবং কৃত্রিম পদ্ধতিতে দুই ভাবে করা যায়।
প্রাকৃতিক/ স্বাভাবিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ
আষাঢ়- শ্রাবণ মাস হল মাছের প্রজনন ঋতু। এই সময় রুই, কাতলা, মৃগেল প্রভৃতির স্ত্রী মাছগুলি অগভীর জলে ডিম পাড়ে। একই সময় পুরুষ মাছ শুক্রাণু ত্যাগ করে। শুক্রাণু গুলি ওই ডিমের সাথে মিলিত হবার প্রক্রিয়াকে নিষেক বলে। যে ডিমগুলিতে শুক্রাণুর মিলন ঘটে তাদের নিষিক্ত ডিম বলা হয়। এই ডিমের সাথে শুক্রাণুর মিলনের ফলে নিষিক্ত ডিম থেকে যে ডিম পোনা সৃষ্টি হয় সেগুলিকে এবং নিষিক্ত ডিমকে মাছ চাষিরা জাল দিয়ে ছেঁকে হাঁড়িতে সংগ্রহ করে।
অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান | ভূগোল
কৃত্রিম পদ্ধতিতে মাছ চাষ
এই পদ্ধতিতে ডিম পোনা সংগ্রহ করা অপেক্ষাকৃত সহজ নয়। এই পদ্ধতিতে মাছের পিটুইটারি গ্রন্থির নির্মাস দিয়ে সুস্থ সবল মাছদের ইনজেকশন দেওয়া হয়। এর ফলে স্ত্রী মাছ ডিম ও পুরুষ মাছ শুক্রাণু নিঃসরণ করে, যাদের মিলনে ডিম পোনা তৈরী হয়।
ডিম পোনা থেকে পূর্নাঙ্গ মাছ সৃষ্টি- সংগ্রহ করা নিষিক্ত ডিমগুলিকে যে বিশেষ পুকুরে রেখে ডিম পোনা তৈরী করা হয় সেই পুকুরকে হ্যাচারি বলে। এরপর এই ডিম পোনাকে আঁতুড় পুকুরে রাখা হয়, সেখানে ডিম পোনা থেকে ধানি পোনা তৈরী হয়। এরপর পালন পুকুরে এই ধানি পোনা রেখে দেওয়া হয়, যা থেকে ক্রমে চারা পোনা তৈরী গত। চারাপোনাকে এরপর সঞ্চয়ী পুকুরে রেখে প্রতিপালন করে পূর্নাঙ্গ মাছের রূপ দেওয়া হয়।
মিশ্র মাছ চাষ
সব মাছ জলের একই স্তরে বাস করে না। দেখা যায় যে মৃগেল ও কমন কার্প পুকুরের জলের নীচের স্তরে থাকে। অন্যদিকে সিলভার কার্প ও কাতলা মাছ জলের উপরের স্তরে এবং রুই ও গ্রাস কার্প মাছ জলের মাঝের স্তরে বাস করে। ফলে এই মাছগুলিকে সহজেই একই পুকুরের চাষ করা যায় এবং এদের বৃদ্ধিও ভালো হয়। কারণ ভিন্ন ভিন্ন স্তরে বাস করার ফলে এদের মধ্যে কোন খাদ্য সমস্যা হয় না।
রুই, কাতলা, মৃগেল এই তিন প্রকার দেশীয় মাছ একসঙ্গে একই পুকুরে চাষ করা হলে তাকে মিশ্র মাছ চাষ বলা হয়।
আবার এই তিন ধরনের দেশীয় মাছের সঙ্গে যদি তিন প্রকার বহিরাগত কার্পও একই পুকুরে চাষ করা হয় তাহলে তাকে Polyculture বা নিবিড় মিশ্র চাষ বলা হয়।
ময়লা জলে মাছ চাষ
ময়লা জল বলতে বিভিন্ন বাড়ী ও কলকারখানা থেকে বের হওয়া বর্জ্যযুক্ত কালো রঙের জলকে বোঝায়। এই জল শোধন করে তাতে মাছ চাষ করা যায়। এই ময়লা জলে বিভিন্ন অজৈব পদার্থ থাকে, যা অজৈব সারের মত কাজ করে। এর ফলে জলে ফসফরাস ও নাইট্রোজেন বৃদ্ধি পায় এবং তার জন্য ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন নামক জীব, যা মাছের প্রাথমিক খাদ্য, প্রচুর বৃদ্ধি পায়। এর ফলে জলে জুল্যাঙ্কইন ও অন্যান্য বিভিন্ন পোকামাকড় তৈরী হয়, এবং এরাও মাছের খাদ্য হয়। সুতরাং বাইরে থেকে এই জলে আর কৃত্রিম খাদ্য দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
পোলট্রি
হাঁস, মুরগি প্রভৃতি পাখি, যাদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে, তাদের পোলট্রি পাখি বলা হয়। পোলট্রি পাখি হিসাবে মুরগির মাংস ও ডিমের প্রচুর চাহিদা আছে। এই মাংস ও ডিম আমাদের শরীরে প্রোটিনের চাহিদা অনেকটা পূরণ করে। মুরগির মাংস মানব শরীরের জন্য ভাল, কারণ এতে ক্ষতিকর ফ্যাট অপেক্ষাকৃত কম থাকে। এছাড়া মুরগির মাংস আমাদের শরীরে Fe, P, K প্রভৃতি মৌল, A, B- কমপ্লেক্স D, E এর মত ভিটামিন ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ করে।
অর্থনৈতিক উপযোগিতার উপর নির্ভর করে মুরগিকে নিম্নলিখিত তিন ভাগে ভাগ করা যায়-
i. Laying breed বা ডিম উৎপাদনকারী
এই জাতীয় মুরগি প্রচুর ডিম পড়ে এবং এই ডিমের জন্যই এদের পালন করা হয়। যেমন- লেগহর্ন।
ii. Table breed বা মাংস উৎপাদনকারী
দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া এইসব মুরগি শুধুমাত্র মাংসের জন্য পালন করা হয়। যেমন- ব্রামা, আসিল প্রভৃতি।
iii. Dual breed বা উভয়গুণ সম্পন্ন
এই প্রজাতির মুরগি থেকে যথেষ্ট পরিমাণ মাংস ও ডিম উভয়ই পাওয়া যায়। যেমন- রোড আইল্যান্ড বেড়, নিউ হ্যাম্পস্পায়ার প্রভৃতি।
ওজন অনুসারে মুরগিদের নিম্নলিখিত দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
ক। Light breed বা হালকা জাত মুরগি- এই প্রকার মুরগির ওজন 2-3 kg এর মধ্যে হয়। যেমন- লেগহর্ন মুরগি।
খ। Heavy breed বা ভারী জাত মুরগি- এই ধরনের মুরগির ওজন 3 kg এর বেশী হয়। ব্রামা, আসিল প্রভৃতি এই প্রকার মুরগি।
এছাড়া ডিমে তা দেবার প্রকৃতি অনুসারে মুরগিকে আরও দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
(ক) সিটার- যে সব মুরগি ডিমে তা দেয় তাদের সিটার (sitter) মুরগি বলে। যেমন- ব্রামা, কোচিন প্রভৃতি।
(খ) নন–সিটার (Non- Sitter)- এই প্রকার মুরগি ডিমে তা দেয় না। যেমন- লেগহর্ন।
এছাড়া মাংসের চাহিদা মেটাতে ব্রয়লার নামক এক বিশেষ সংকর প্রজাতির মুরগি ব্যবহার করা হয়। কার্নিশ জাতের পুরুষ মুরগি ও সাদা প্লামউইথ জাতের স্ত্রী মুরগির মিলনে সৃষ্ট এই সংকর প্রজাতির মুরগি খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়। এরা 5-7 সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি করার মতন ওজনে পৌঁছে যায়, যেখানে স্বাধীন ভাবে পালিত মুরগিদের 12-16 সপ্তাহ সময় লাগে।
মুরগি পালন
মুরগি পালনের বিভিন্ন আধুনিক পদ্ধতি আছে যা বিভিন্ন পোলট্রিতে ব্যবহার করা হয়। এই সব পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক ভাবে মুরগি পালন করা হয়।
• ব্যাটারি খাঁচায় মুরগি পালন পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে প্রতি মুরগির জন্য ঢালু মেঝে যুক্ত একটি ছোট খাঁচা থাকে যেখানে মুরগিটি বসতে বা দাঁড়াতে পারে। খাঁচার বাইরে মুরগির খাবার আর জলের পাত্র রাখা থাকে। খাঁচাগুলি ছোট হবার কারণে মুরগিরা বিশেষ নড়াচড়া করতে পারে না, আর তাই এদের শক্তিও বিশেষ খরচ হয় না। ফলে এরা না খাদ্য গ্রহণ করে তার বেশীর ভাগই দেহ গঠন এবং ডিম তৈরীর কাজে লাগে। খাঁচার মেঝে ঢালু হবার কারণে মুরগি ডিম পড়লে সেই ডিম গড়িয়ে এসে খাঁচার বাইরে জমা হয়।
• ডিপ- লিটার পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে আলো বাতাস মুক্ত ঘরের মেঝেতে প্রথমে চুন ও ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়। এরপর এই মেঝেতে বিচালি অর্থাৎ ছোট করে কাটা খড়, কাঠের গুড়ো, শুকনো পাতা, আম ভূট্টা প্রভৃতির খোসা পুরু করে ছড়ানো হয়। একে লিটার বলে। এই ডিপ- লিটার ঘরের বাইরে মুরগির খাদ্য ও জলের পাত্র রাখা হয়। মুরগিরা ঘরের শিকের ফাঁক দিয়ে মাথা বের করে ওই খাদ্য ও জল খায় এবং ঘরের মধ্যের নির্দিষ্ট স্থানে ডিম পাড়ে।
পর্ব সমাপ্ত।
লেখিকা পরিচিতিঃ
বিজ্ঞান স্নাতক এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষিতা নন্দিতা বসুর পেশা শিক্ষকতা।তিনি বই পড়তে বড় ভালোবাসেন। কাজের ফাঁকে, অবসরে, বাসে ট্রামে তো বটেই, শোনা যায় তিনি নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও বই পড়তে পারেন।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
VIII_science_14c