saloksogsles-part-2
WB-Class-9

ক্লোরোপ্লাস্টের গঠন এবং সালোকসংশ্লেষের আলোকদশা

নবম শ্রেণীজীবনবিজ্ঞান | তৃতীয় অধ্যায় – জৈবনিক প্রক্রিয়া (সালোকসংশ্লেষ) – দ্বিতীয় পর্ব

আমরা আগের পর্বে জেনেছি যে সালোকসংশ্লেষের মুখ্য স্থান হল ক্লোরোপ্লাস্ট।

এবার আমরা জানবো কিভাবে ক্লোরোপ্লাস্ট গঠিত হয়?

এটি একটি দ্বিপর্দাবিশিষ্ট অঙ্গাণু, যার বাইরের পর্দাকে বলা হয় বহিঃপর্দা এবং ভেতরের পর্দাকে বলা হয় অন্তঃপর্দা।

Chloroplast
ক্লোরোপ্লাস্টের গঠন 1- বহিঃপর্দা 2- ‘পেরিপ্লাস্টিডিয়াল প্লেস 3- অন্তঃ পর্দা ৪ – স্টোমাটা 5- থাইলাকয়েড লুমেন 6- থাইলোকয়েড পর্দা 7- গ্রাণা 8- থাইলাকয়েড ল্যামেলি 9- স্টার্চ 10- রাইবোজোম 11- প্লাস্টিডিয়াল DNA 12- প্লাস্টোগ্লোবিউল

এই বহিঃপর্দা এবং অন্তঃপর্দার মধ্যে যে স্থান থাকে তাকে বলা হয় ‘পেরিপ্লাস্টিডিয়াল প্লেস’

ক্লোরোপ্লাস্ট সৃষ্টির সময় অন্তঃপর্দাগুলি কোশের ভিতরে প্রবেশ করে ‘ল্যামেলি’ সৃষ্টি করে। এই ‘ল্যামেলি’ পরবর্তীকালে একটি চ্যাপ্টা উপবৃত্তাকার থলির মত অংশ সৃষ্টি করে। একে বলা হয় ‘থাইলাকয়েড’

গ্রাণা: থাইলাকয়েড গুলো একে ওপরের উপর সজ্জিত হয়ে যে গঠন সৃষ্টি করে, তাঁকে ‘গ্রাণা’ বলা হয়।

আবার গ্রাণাগুলি যে চ্যাপ্টা পর্দাবৃত নালী দিয়ে যুক্ত থাকে তাকে ‘ল্যামেলি বা ফ্লেট’ বলে।

থাইলাকয়েড ও ল্যামেলীর মধ্যে বিভিন্ন রঞ্জক পদার্থ, এনজাইম, বাহক পদার্থ, প্রোটিন, ATPase সজ্জিত থাকে।

কোয়ান্টাজোম কাকে বলে?

ক্লোরোপ্লাস্টের থাইলাকয়েডের মধ্যে গোলাকার দানার মত যে পদার্থ দেখা যায় এবং যেখানে সালোকসংশ্লেষের আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয় তাকে কোয়ান্টাজোম বলে।

মনে রাখা ভালোঃ কোয়ান্টাজোমকে সালোকসংশ্লেষীয় একক বলা হয়।


আরো পড়ুন – সালোকসংশ্লেষকে অঙ্গার আত্তীকরণ বলে কেন?

সালোকসংশ্লেষের রঞ্জকতন্ত্রঃ

সালোকসংশ্লেষে সাধারণত এই দুই ধরণের রঞ্জকতন্ত্র দেখা যায়।

রঞ্জকতন্ত্র এক বা Photosystem I – এই প্রকার রঞ্জকতন্ত্রের কেন্দ্রে P700 থাকে যা 700nm এর বেশী আলোকতরঙ্গদৈর্ঘ্যে কাজ করে।

রঞ্জকতন্ত্র দুই বা Photosystem II – এই প্রকার রঞ্জকতন্ত্রের কেন্দ্রে P680 থাকে যা 680nm আলোকতরঙ্গদৈর্ঘ্যের ক্ষেত্রে কাজ করে।

সালোকসংশ্লেষের দশা বা পর্যায়

আমরা জানি সালোকসংশ্লেষের পর্যায় বা দশা দুটি দশায় বিভক্ত 1) আলোক দশা বা আলোক রাসায়নিক দশা  এবং 2) আলোক নিরপেক্ষ দশা বা অন্ধকার দশা বা জৈব সালোক সালোকসংশ্লেষ দশা



সালোকসংশ্লেষের আলোকদশা

ধাপে ধাপে দেখা যাক সালোকসংশ্লেষের আলোকদশায় কি কি ঘটনা ঘটে।

(1) সৌরশক্তির আবদ্ধকরণ

সূর্যালোকের ফোটন কণার শক্তি কোয়ান্টোজোম মধ্যস্থ রঞ্জক (ক্লোরোফিল a বা ক্লোরোফিল b) দ্বারা শোষিত হয়।

(2) ক্লোরোফিলের সক্রিয়করণ

সূর্যালোকের ফোটন কণা কোয়ান্টোজোম দ্বারা শোষিত হলে ক্লোরোফিল সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং ক্লোরোফিল থেকে ইলেকট্রন বিচ্যুত হয়।


[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – বাংলা | নবম শ্রেণি – ইতিহাস | নবম শ্রেণি – ভূগোল]

(3) ফোটোলাইসিস বা হিল বিক্রিয়া

সূর্যালোকের ফোটন কণা মাটি থেকে শোষিত জলকে হাইড্রোজেন আয়ন এবং হাইড্রোক্সিল আয়নে ভেঙ্গে দেয়। বিজ্ঞানী রোবিন হিল এটা প্রমাণ করেন তাই এই বিক্রিয়াকে হিল বিক্রিয়া বলা হয়। আর এই ঘটনাকে বলা হয় ফোটোলাইসিস । Photo  অর্থাৎ light বা আলো আর lysis অর্থাৎ breaking down বা ভেঙ্গে যাওয়া।

ফোটোলাইসিসের সংজ্ঞায় আমরা বলতে পারি

সূর্যালোকের ফোটন কণা দ্বারা জলের বিশ্লেষণকে বলা হয় ফোটোলাইসিস। যার ফলে জল বিশ্লিষ্ট হয়ে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) এবং হাইড্রোক্সিল আয়ন (OH-) উৎপন্ন করে।

photolysis

 


[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – ভৌতবিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – জীবনবিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – গণিত ]

(4) অক্সিজেন (O2) নির্গমন

আলোকদশাতেই অক্সিজেনের নির্গমন ঘটে। ফোটোলিসিসে উৎপন্ন হাইড্রোক্সিল আয়ন থেকেই উৎপন্ন হয় অক্সিজেন।

4H2O →  4H+ + 4OH

4OH– 4e = 4OH

4OH = 2H2O + O2

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সালোকসংশ্লেষে নির্গত অক্সিজেনের উৎস হল জল।

(5) ফসফোরীভবন

সালোকসংশ্লেষের আলোকদশায় উচ্চশক্তি সম্পন্ন ফসফেট বন্ধনী তৈরী হয়। অ্যাডিনোসিন ডাইফেট, অজৈব ফসফরাসের যুক্ত হয়ে উচ্চশক্তি বিশিষ্ট অ্যাডিনোসিন ট্রাই ফসফেট তৈরি হয়, ATP সিন্থেজ এঞ্জাইমের সহায়তায়।

ADP~Pi=ATP

ps1etran
[সৌজন্যে – hyperphysics.phy]

ফসফোরীভবন দু রকম হতে পারেঃ-

আবর্তকার ফটোফসফোরাইলেশন ও অনাবর্তকার ফটোফসোরাইলেশন

আবর্তকার ফটোফসফোরাইলেশন

যে ফসফোরীভবনে ফটো সিস্টেম ১ থেকে নির্গত ইলেকট্রন বিভিন্ন ইলেকট্রন দ্বারা বাহিত হবার পর পুরনায় আবার ফটো সিস্টেম ১ এই ফিরে আসে তাকেই বলা হয়, আবর্তকার ফটোফসফোরাইলেশন।

অনাবর্তকার ফটোফসোরাইলেশনঃ

যে পদ্ধতিতে আলোক রশ্মি দ্বারা উদ্দিপীত জল থেকে ইলেকট্রন নির্গত হয় এবং ফটোসিস্টেম ১ এবং ফটোসিস্টেম ২ তে বিভিন্ন ইলেকট্রন বাহক দ্বারা বাহিত হয়ে NADPH এবং ATP উতপ্নন্য করে এবং অক্সিজেন নির্গমন ঘটে তাকে অনাবর্তকার ফটোফসোরাইলেশন বলে।

(6) বিজারিত NADP+ গঠন

এটা থাইলকয়েড আবরণীর মধ্যে তৈরী হয় যাতে সহজেই স্ট্রোমাতে গিয়ে পরবর্তী অন্ধকারদশায় অংশ গ্রহণ করতে পারে। NADP+ ইলেকট্রন এবং প্রোটন (H+) গ্রহণ করে বিজারিত হয়ে NADPH তৈরী করে ।

NADP+ + H+ + 2e = NADPH

আলোকদশায় উৎপন্ন ATP এবং NADPH অন্ধকার দশায় ব্যবহৃত হয়।

পরবর্তী পর্ব → সালোকসংশ্লেষের অন্ধকার দশা


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

IX-LSc-3b