ভৌতবিজ্ঞান – নবম শ্রেনি – অধ্যায়: দ্রবণ (প্রথম পর্ব)
আমরা আগের শ্রেণিতে মিশ্রণ পড়ে এসেছি।
দ্রবণ অধ্যায়টির আলোচনা শুরুর আগে মিশ্রণ সম্পর্কে আমাদের কিছু কথা জানতেই হবে, মিশ্রণকে সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়, যথা –
- সুষম মিশ্রণ
- বিষম মিশ্রণ
যখন কোনো মিশ্রনের যে কোনো অংশ থেকে ঐ মিশ্রণ নিয়ে বিশ্লেষণ করলে, দেখা যায় উপাদানগুলির অনুপাত সর্বদা ধ্রুবক তখন তাকে সুষম মিশ্রণ বলে।
সুষম মিশ্রণের উদাহরণ – ধরা যাক, জলে চিনি মিশ্রিত করা হল, যদি 100 গ্রাম জলে, 5 গ্রাম চিনি মিশ্রিত করে তার থেকে 21 গ্রাম নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়, দেখা যাবে তাতে জলের ভাগ 20 গ্রাম ও চিনির ভাগ 1 গ্রাম। মিশ্রণটি সুষম হওয়ার কারণে 100/5 এর অনুপাতও যা হবে, 20/1 এর অনুপাতও তাই হবে।
অপরদিকে বিষম মিশ্রণে এই অনুপাত নির্দিষ্টভাবে ধার্য্য করা থাকে না। বিষম মিশ্রণের যেকোনো অংশ থেকে যেমন খুশি পরিমাণ নিয়ে বিশ্লেষণ করলে ভিন্ন সময়ে ভিন্ন অনুপাত দেখা যায়। যদিও সে অনুপাত গড় অনুপাতের কাছাকাছি মানে হতে পারে কিন্তু তা সর্বদা একই হবে এমনটি নয়।
যেমন সমুদ্রতীরে বালিতে নুন মিশে থাকে। একমুঠো বালি (মনে করো, 50 গ্রাম) নেওয়া হল, দেখা গেল তাতে 30 গ্রাম বালি রয়েছে। অর্থাৎ, নুন ছিল 20 গ্রাম। অনুপাত 30 : 20 বা 3 : 2। আবারও বালি কিছুটা নেওয়া হল, প্রথমে দেখা গেল 60 গ্রাম বালি তাতে আছে। জল শুস্ক করে দেখা গেল তাতে 40 গ্রাম বালি রয়েছে।
এখানেও নুনের পরিমাণ সেই 20 গ্রাম যা জলে দ্রবীভূত হয়ে গেছে। অতঃএব বালি ও নুনের অনুপাত এখানে 40 : 20 বা 4 : 2, যা আগের থেকে আলাদা। অর্থাৎ নুন বালির মিশ্রণ বিষম প্রকৃতির।
এর কারণ সুষম মিশ্রণ হতে গেলে, উপাদানগুলির মধ্যে পারষ্পরিক আকর্ষণ থাকতে হবে। যেমন জলের O এর সাথে চিনির H-এর আকর্ষণ, আবার জলের H-এর সাথে চিনির O এর আকর্ষণ। বালি ও নুনের মধ্যে এরকম কোনো আকর্ষণ কিন্তু ছিল না। তাই তারা সুষম ভাবে মিশ্রিত হতে পারেনি।
এই সুষম মিশ্রণ ও বিষম মিশ্রণকে দুইভাগে ভাগ করা যায়।
১. দ্রবণ ও ২. কলয়েড।
এর মধ্যে বিষম মিশ্রণকে আমরা ৩. সাসপেনশন (প্রলম্বন) বলতে পারি।
এই তিনটির মধ্যে মূল পার্থক্য মূলত দুটি ক্ষেত্রে পাওয়া যায়।
ক. উপাদানের অণুর আকারে
খ. মিশ্রণ তৈরী হওয়া ও পৃথক করার পদ্ধতিতে।
বিজ্ঞাপন
কলয়েডীয় মিশ্রণের সংজ্ঞা
দুই বা তার বেশি উপাদানের মধ্যে যে উপাদানের পরিমাণ কম সেই অনুগুলির আকার (ব্যাস) 1 থেকে 1000 ন্যানোমিটার অর্থাৎ 10-4 থেকে 10-7 সেন্টিমিটারের মধ্যে থাকলে সেই মিশ্রণটিকে কলয়েডীয় মিশ্রণ বলা হয়।
উদাহরণঃ দুধ একটি কলয়েড। এর মধ্যে অবস্থিত ফ্যাট ও প্রোটিনের অণুগুলি দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে না, বরং তড়িদাহত ঋণাত্মক কণা হয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমরা সেই কণাগুলিকে দেখতে পাই, তাই দুধ সাদা লাগে।
দ্রবণের সংজ্ঞা
অনুগুলি 10-7 বা তার কম আকারের হলে সেই উপাদানটিকে মিশ্রণটির মধ্যে আলাদা করে চেনা বা দেখা সম্ভব হয় না। তখন তাকে দ্রবণ বলা হয়। কলয়েড বা দ্রবণ উভয় ক্ষেত্রেই অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণের উপাদানটি সুষম ভাবেই মিশ্রণে ছড়িয়ে থাকে। কিন্তু দ্রবণে দুটি উপাদানের মধ্যে একটি-র দশাই দেখা যায়, কিন্তু কলয়েডে উভয় উপাদানের বৈশিষ্ট্যই দেখা যায়।
উদাহরণঃ নুন জল বা চিনি জল হলো দ্রবণ। এগুলো হয় আয়নে ভেঙে (নুনের ক্ষেত্রে) বা হাইড্রোজেন বন্ধনীর মাধ্যমে দ্রবীভূত হয়. এগুলির আকার এতই ছোট হয় যে আলো এতে প্রতিফলিত বা বিচ্ছুরিত হতে পারে না। ফলে এর অস্তিত্বও অনুভূত হয়না।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
সাসপেনশন বা প্রলম্বনের সংজ্ঞা
যে মিশ্রণে উপাদানের অনুগুলির আকার 10-4 সেন্টিমিটারের থেকে বড় হওয়ার কারণে হয় সেটি অধঃক্ষিপ্ত হয় নয়তো সেগুলিকে সহজ ভৌত পদ্ধতিতে পৃথক করা সম্ভব হয়। এর ফলে, গোটা মিশ্রণ জুড়ে এর অনুপাত সুষম থাকে না।
উদাহরণঃকাদা জল একটি প্রলম্বন। কাদাজলের পাত্রকে কিছুক্ষন স্থিরভাবে রেখে দিলে কাদামাটি অধঃক্ষিপ্ত হয় আর স্বচ্ছ জল উপরে রয়ে যায়।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবন বিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
সাসপেনশন, কলয়েড এবং দ্রবণের মধ্যে পার্থক্য
ধর্ম | সাসপেনশন | কলয়েড | দ্রবণ |
আকার | 10-4 সেমি-র বেশি। | 10-4-10-7 সেমির মধ্যে। | 10-7 সেমি-র কম। |
দশা | উভয় দশা দৃশ্যমান। | উভয় দশা দৃশ্যমান। | একটি দশা দৃশ্যমান। |
বিস্তার | বিষম – তরল বা গ্যাসীয় মাধ্যমে অধঃক্ষেপণ হয়। | সুষম – অধঃক্ষেপণ হয়না, কিন্তু বিস্তৃত দশা দৃশ্যমান। | সুষম- বিস্তৃত দশা অদৃশ্য। |
টিন্ডাল এফেক্ট | আছে, সাময়িক। | আছে, স্থায়ী। | নেই। |
ব্রাউনিয়ান গতি | নেই। | আছে। | আছে তবে বোঝা যায় না। |
পৃথকীকরণ | ভৌত পদ্ধতিতে সাধারণ ফিল্টার পেপার, কাপড় বা মেমব্রেনের সাহায্যে পৃথক করা যায় | অর্ধভেদ্য পর্দা লাগে | ফিল্টার করা যায় না। পাতন, কেলাসন ইত্যাদি পদ্ধতিতে পৃথক করা যায়। |
তড়িৎ বা চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাব | চুম্বকের দ্বারা উপাদান পৃথক হয়। মিশ্রণটির ওপর সম্পূর্ণভাবে প্রভাব নেই। | মিশ্রণটির তড়িৎ ক্রিয়া বর্তমান। | আয়নীয় ও অতিধ্রুবীয় মিশ্রণ তড়িৎ পরিবহন করে, বাকিরা নয়। |
পরবর্তী পর্ব → কলয়েডের ধারণা ।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
-
IX-PS-4.3-a