editorial-jump-03-08-19
Editorial (সম্পাদকীয়)

চাইছি তবু, পারছি না!

আজ পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে। পরীক্ষায় নম্বর ভালো তো হয়ই নি বরং ফেল করা থেকে একটুর জন্য বেঁচে গেছে বান্টি।

স্কুল শেষে সবাই মিলে একসাথে হেঁটে বেরিয়ে আসছে। সাইকেলটা পাশে নিয়ে বান্টির পাশে হাটছিল গোপাল। গোপালের মন – মেজাজ খারাপ। বহু চেষ্টা করেও কিছুতেই ভালো রেজাল্ট হচ্ছে না। বাড়িতে জুতো ছাড়া প্রায় সবকিছুরই স্বাদ পাওয়া হয়ে গেছে। ক্লাস নাইনের পরীক্ষাতেও ভালো রেজাল্ট হল না, আজ কপালে যে কি আছে কে জানে!

আর এই যে বান্টি, ফেল করতে করতে বেঁচেছে। কিন্তু তার মনে ফুর্তি কত! শিস্‌ দিতে দিতে হাঁটছে, ঠিক যেন পরীক্ষায় সোনার মেডেল পেয়েছে। খুব রাগ হয় গোপালের। হাত ঘুরিয়ে বান্টির মাথায় এক চাঁটি মারে গোপাল।

রেগে গিয়ে বান্টি বলে – মারলি কেন?

গোপাল দাঁত খিচিয়ে বলে – এত ফুর্তি কিসের? আর কটা নম্বর কম হলে তো ক্লাস নাইনে আরো এক বছর থাকতে হত। তাহলে এত আনন্দ তোর আসছে কোথা থেকে? বাড়িতে কিছু বলে না তোকে?

বান্টি একটা সর্বজ্ঞানী মার্কা হাসি হেসে বলে – বলে না আবার! খুব বলে, রোজ বলে।

কিন্তু বললেই শুনতে হবে এইরকম কোথাও লেখা আছে নাকি? পড়াশোনা মানুষে করে? স্যারেরা ক্লাসে কি সব অং-বং-চং বলে, নিজেরাই বলে আর নিজেরাই বোঝে। প্রথম প্রথম আমিও বোঝার চেষ্টা করতাম। তবে এখন বুঝেছি পড়াশোনা করার থেকে মোবাইলে পাব্‌জি খেলা ঢের সহজ ও ভালো।


[আরো পড়ুন – পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট চাই, কিন্তু কিভাবে?]

ভাবছেন বান্টি একটা বাজে বখে যাওয়া ছেলে?

নাকি ভাবছেন ওর বাবা – মায়ের বান্টিকে নিয়ে কোন চিন্তা নেই বা ওনারা বান্টিকে শাসন করতে পারেন না।

একটু তলিয়ে ভেবে দেখুন, সব বাবা-মায়েরাই তাদের সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত হন। তারা সবাই চান তাদের সন্তান ভালো ভাবে পড়াশোনা করে জীবনে সফল ভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াক। ভবিষ্যতের রাস্তা যে কতটা কঠিন তা বাবা-মায়েদের থেকে ভালো আর কেই বা জানেন। কেন যে বান্টিরা কথা শোনে না, নিজেরা নিজেদের পায়ে কুড়ুল মেরে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যায়।

কেন জানেন?

ধরুন আপনাকে একটা কাজ করতে দেওয়া হল, যা কিভাবে করতে হবে আর কেন করতে হবে, তা আপনি জানেন না। অথচ আপনাকে সেই কাজটিই রোজ করতে বলা হচ্ছে। আপনার কেমন লাগবে?

ভালো লাগবে না নিশ্চয়ই। হয়তো প্রথম প্রথম আপনি আপনার সাধ্য মতো কাজটি করার চেষ্টা করবেন এবং অসফল হবেন। কারণ আপনি জানেন না যে কেন এবং কিভাবে আপনি কাজটা করবেন। তাই কিছুদিন পর সেই কাজ করা আপনি ছেড়ে দেবেন বা বান্টির মতো অন্য কোন সহজ কাজের দিকে এগিয়ে যাবেন।

এটাই রোজ প্রতিনিয়ত হচ্ছে আমাদের চারিপাশে।

সব বাবা-মায়েরাই চায় যে তাদের সন্তানরা খুব ভালো রেজাল্ট করুক। দারুণ কেরিয়ার বানাক কিন্তু শুধুমাত্র সঠিক গাইডেন্স এবং পড়াশোনার সঠিক পদ্ধতি না মানার ফলে তারা পিছিয়ে পড়ছে প্রতিদিন। এই অবস্থা থেকে কিন্তু সন্তানদের মুক্তি দিতে পারেন একমাত্র তাদের অভিভাবকরাই কারণ তারাই পারেন সন্তানদের আসল সমস্যা বুঝে তার সমাধান করতে।

তাই আজই সন্তানকে জিজ্ঞেস করুন যে ও ঠিক মত পড়া বুঝতে পারছে তো?

ওর কোথাও অসুবিধা হচ্ছে না তো। যদি হয়, তাহলে তা সাধ্যমত ঠিক করার চেষ্টা করুন। কাল যেন ও কোনভাবেই দ্বিতীয় বান্টি না হয়ে ওঠে।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –