standard Time
WB-Class-9

দ্রাঘিমারেখা ও সময় পরিবর্তন

শ্রেণিঃ নবম | বিষয়: ভূগোল । অধ্যায় – ভূপৃষ্টে কোন স্থানের অবস্থান নির্ণয় (পর্ব – দুই)

দ্রাঘিমারেখা কাকে বলে?

পৃথিবীর অবস্থানগুলি ঠিকভাবে জানার জন্য আরেকটি রেখা হল দ্রাঘিমারেখা। এই দ্রাঘিমারেখাগুলি প্রত্যেকটি উত্তর মেরু থেকে শুরু করে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত। অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার মধ্যে পার্থক্য আমরা পূর্বের পর্বে আলোচনা করেছি এছাড়া আমরা আলোচনা করেছি যে যে রেখাটি মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে বা মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সেটি হল মূল মধ্যরেখা।

Longitude
নিরক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা [সৌজন্যে – Wikipedia]

দ্রাঘিমারেখার মান নির্ণয় পদ্ধতি-

দ্রাঘিমারেখার মানও আমরা নির্ণয় করি কেন্দ্রের সাথে তার কৌনিক দূরত্বের উপর। এটিও কেন্দ্রের সাথে যে কোণ তৈরি করে তার উপর নির্ভর করেই আমরা দ্রাঘিমা রেখাগুলির মান নির্ধারণ করি।


JUMP ম্যাগাজিনে প্রকাশিত লেখাগুলির বিনামূল্যে WhatsApp আপডেট পান।?


দ্রাঘিমারেখার বৈশিষ্ট্য-

  1. প্রতিটি দ্রাঘিমারেখাই হল অর্ধবৃত্তাকার।
  2. প্রতিটি উত্তর মেরু থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ মেরুতে শেষ।
  3. একটি নির্দিষ্ট দ্রাঘিমারেখা বরাবর হাটা শুরু করলে আমরা একসঙ্গে তিনটি তাপবলয়ের তাপমাত্রা দেখতে পাবো।
  4. প্রতিটি দ্রাঘিমারেখার একটি নির্দিষ্ট সময়ে দিন ও রাত্রি একত্রে সংঘটিত হয়।
  5. একমাত্র নিরক্ষরেখার কাছেই প্রত্যেকটি দ্রাঘিমার মধ্যেকার দূরত্ব 111km হয়। কিন্তু পৃথিবী যেহেতু বৃত্তাকার তাই দ্রাঘিমা উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ক্রমশও দূরত্ব কমতে থাকে।
  6. সব কয়েকটি দ্রাঘিমারেখায় শুরু এবং শেষ স্থানটি একটি নির্দিষ্ট।
  7. দ্রাঘিমারেখা অনুযায়ী কোনো স্থানের সময় নির্ণয় করা হয়।
  8. মূলমধ্যরেখা থেকে পূর্বে গেলে সময় বৃদ্ধি হয় এবং পশ্চিমে গেলে ধীরে ধীরে সময় কমতে থাকে।
  9. একটি দ্রাঘিমারেখা থেকে আরেকটি দ্রাঘিমারেখার মধ্যে সময়ের পার্থক্য হল 4মিনিট।
  10.  পৃথিবীতে মোট দ্রাঘিমারেখার সংখ্যা হল 360টি।
  11.  একমাত্র 180-এর দ্রাঘিমারেখাটি অতিক্রম করলে সময়, তারিখ ও দিন পরিবর্তন হয় বলে এই লাইনটিকে বলা হয় International date & date line (1884- সালে এই declaration দেওয়া হয়)।
  12.  প্রত্যেকটি গোলার্ধে 180টি দ্রাঘিমারেখা রয়েছে।

world-map

দ্রাঘিমারেখার সাথে সময়ের পরিবর্তনের সম্পর্ক-

আমার জানলাম দ্রাঘিমার সাহায্যে আমরা সময় নির্ণয় করি, এই সময়ের পরিবর্তন কিভাবে হয় যেটা নিম্নলিখিতভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে।

draghima-rekhar-onko

একটি অঙ্কের মাধ্যমে বর্ণনা করা যেতে পারে।

দ্রাঘিমারেখার অঙ্ক; উদাহরণ একঃ ধরা যাক, মূলমধ্যরেখায় (0°) তে অর্থাৎ London-এ স্থানীয় সময় হল দুপুর 12টা এবার ধরে নেওয়া যায় একটি স্থান হল ‘A’ যার দ্রাঘিমা হল 20°E তাহলে সেই জায়গার স্থানীয় সময় কী হবে?

আমরা জানি যে, দ্রাঘিমারেখা পূর্বদিকে গেলে সর্বদা সময় বৃদ্ধি হয়, অর্থাৎ এই দুটি স্থানের মধ্যে দ্রাঘিমার পার্থক্য হল: (20° – 0°) = 20°

আমরা জানি, 1° দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সময়ের পার্থক্য হয় 4 মিনিট।

20° দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সময়ের পার্থক্য হয় 4 x 20 মিনিট = 80 মিনিট = 1 ঘণ্টা 20 মিনিট

London-এ সময় দুপুর 12টা তখন ‘A’ তে 1 ঘণ্টা 20 মিনিট এগিয়ে থাকবে। সুতরাং A-এ স্থানীয় সময় হল: (12টা + 1 ঘণ্টা 20 মিনিট) = 1:20 pm

দ্রাঘিমারেখার অঙ্ক; উদাহরণ দুইঃ অপরদিকে যদি স্থান B(20°W) – অবস্থিত হয় তাহলে আমরা London –এর সাপেক্ষে যদি স্থানীয় সময় নির্ধারন করি তাহলে তার অংকটি হবে নিম্নরূপ –

আমরা জানি যে, দ্রাঘিমারেখা পশ্চিমদিকে গেলে সর্বদা সময় কমে যায়? এই দুটি স্থানের ক্ষেত্রে দ্রাঘিমার পার্থক্য হল (20° – 0°) = 20°

1° জন্য সময়ের পার্থক্য হয় 4 মিনিট

সুতরাং, 20° জন্য সময়ের পার্থক্য হয় = 4×20 = 80 মিনিট বা 1 ঘণ্টা 20 মিনিট London-এ দুপুর  12টা এবং স্থির B-এর সময় 1 ঘণ্টা 20 মিনিট, পিছিয়ে থাকবে (স্থানটি পশ্চিমে অবস্থিত বলে)

B-এর স্থানীয় সময় হবে (12টা – 1 ঘণ্টা 20 মিনিট) = 10:40


[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – ভৌতবিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – জীবনবিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – গণিত ]

দ্রাঘিমারেখার অঙ্কগুলি করার সময় কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে।

১। দুটি স্থান যদি বিপরীত গোলার্ধে অবস্থিত হয় তাহলে দুটি স্থানের দ্রাঘিমার পার্থক্য জানার জন্য দুটি স্থানের দ্রাঘিমার মান দুটি যোগ করতে হয়।

২। দুটি স্থান যদি এই গোলার্ধে অবস্থিত হয় তাহলে দ্রাঘিমার পার্থক্য জানার জন্য দুটি স্থানের দ্রাঘিমার অন্তর প্রথমে নির্ধারণ করতে হয়।

৩। পূর্বদিকে কোনো স্থান অবস্থিত হলে সময় সর্বদা এগিয়ে থাকবে।

৪। পশ্চিমে অবস্থিত হলে সময় সর্বদা পিছিয়ে থাকবে।

৫। রাত 12টার পর কোনো স্থানের স্থানীয় সময় হলে তার দিন ও তারিখ দুটিই পরিবর্তন হবে ।

Dateline-animation-3deg-borderonly-180px.gif
[সৌজন্যে – Wikipedia]
এই ধরণের অঙ্কগুলি করতে গিয়ে কয়েকটি নতুন ধরনে শব্দের সাথে পরিচিত হয়েছি। যেমন – ক) স্থানীয় সময়  (Local Time) খ) Standard Time

Local time/স্থানীয় সময়- কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের উপর দিয়ে যে দ্রাঘিমারেখাটি প্রবাহিত হয়, আমরা যদি সেই স্থানের সময় নির্ধারণ ওই দ্রাঘিমারেখা সাপেক্ষে করি তাহলে তাকে স্থানীয় সময় বলে।


[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – বাংলা | নবম শ্রেণি – ইতিহাস | নবম শ্রেণি – ভূগোল]

Standard time

একটি দেশের উপর দিয়ে বহু সংখ্যক দ্রাঘিমারেখা প্রবাহিত হয়েছে এবং যদি প্রতিটি দ্রাঘিমারেখার সাপেক্ষে সময় নির্ধারণ করি তাহলে একটি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় দেখাবে। ফলে বিভিন্ন ধরণের অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে।

তাই এই অসুবিধা দূর করার জন্য যে দ্রাঘিমারেখাটি একটি দেশের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয় তার ভিত্তিতেই আমরা ওই দেশের সময় নির্ধারণ করি। একে বলে Standard time যেমন – Indian Standard time নির্ধারিত হয় 82°30E দ্রাঘিমারেখা দ্বারা। এটি Allahabad-এর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

-World_Time_Zones_Map
বিশ্বের বিভিন্ন Time Zone [সৌজন্যে – Wikipedia]

কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু অসুবিধার সৃষ্টি হতে দেখা গেল।

যেমন দেশগুলি আয়তনে বৃহৎ সেইগুলিতে একটি মাত্র Standard time হলে কিছু অসুবিধার সৃষ্টি হল। দেখা গেলে যে, Russia এর মতো বড় দেশগুলিতে এলে জায়গাতেই দিন এর সময়ও রাতের সময় দেখা যাচ্ছে । তাই এই সমস্যা দূর করার জন্য কিছু কিছু বড় দেশগুলি বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হল, তাই এই দেশগুলিতে একাধিক Standard time দেখা যায়। যেমন – Russia এর 11টি, ব্রাজিলে 5টি Standard time রয়েছে।

russia-time-zone
রাশিয়ার বিভিন্ন time zone

মনে রাখতে হবেঃ

International Date & time line:- 180°-এর দ্রাঘিমারেখাটি International date ও time line বলে পরিচিত। এই লাইনটি সোজা নয় এবং এই লাইনটি সম্পূর্ণ জলের উপর দিয়ে টানা হয়েছে কারন এই লাইনটি মাধ্যমে আমরা পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করি। লাইনটি অতিক্রম করে পূর্বে গেলে সময় তারিখ দুটির বৃদ্ধি হয় এবং পশ্চিমে গেলে সময় ও তারিখ দুটিই হ্রাস পায়। এখন যদি একটি দেশের মধ্য দিয়ে এই লাইনটি প্রবাহিত হলে সেই দেশে একটি দিনে দিন দুটি সময় হয়ে যাবে। তাই এই সমস্যা দূর করার জন্য 180°-এর লাইনটি প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে টানা হয়েছে।

International_date_line
লাল দাগটি হল International Date Line [সৌজন্যে – Wikipedia]
পরবর্তী পর্ব → ভু-গাঠনিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

IX-Geo-3.2

Sayantani Bhaduri
কলকাতার জুলিয়ান ডে বিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষিকা সায়ন্তনীর ছোটবেলা থেকেই ভূগোলের সাথে আত্মিক যোগাযোগ। পড়াশোনার পাশাপাশি নতুন নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো ও পাহাড় চড়ার আনন্দ উপভোগ করতে খুব ভালোবাসেন সায়ন্তনী।