ইতিহাস– নবম শ্রেণি – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর (দ্বিতীয় পর্ব)
আগের পর্বে আমরা ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদ বনাম গণতান্ত্রিক আদর্শের সংঘাত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই পর্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি ও সোভিয়েত রাশিয়ার সংঘাত নিয়ে আলোচনা করবো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম অপ্রত্যাশিত ঘটনা জার্মানির রাশিয়া আক্রমন। রাশিয়ার সাথে জার্মানির অনাক্রমতা চুক্তি থাকা সত্ত্বেও ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ২২শে জুন হিটলারের জার্মানি রাশিয়া আক্রমণ করে, জার্মানির রাশিয়া আক্রমন ‘অপারেশন বারবারোসা’ নামে পরিচিত।
হিটলার কেন রাশিয়া আক্রমণ করেন?
হিটলার যে-সময় ইংল্যান্ড আক্রমণ করেছিলেন, সেই একই সময়ে রাশিয়া আক্রমণ করেন। তার দুটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একসাথে যুদ্ধ করা মোটেই হটকারী সিদ্ধান্ত ছিল না। হিটলার রাশিয়ায় আক্রমণের জন্য ১৯৪০ সাল থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন এবং বিরাট সেনাবাহিনী, যুদ্ধ বিমান এবং অস্ত্র নিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করেন।
জার্মানির, রাশিয়া আক্রমণের আরো কিছু সুস্পষ্ট কারণ ছিল –
প্রথমত, রাশিয়ার সাথে অনাক্রমতা চুক্তি থাকলেও হিটলার রাশিয়াকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতেন না, তিনি মনে করতেন রাশিয়ার দিক থেকে যে-কোনো সময় আক্রমণ হতে পারে। তাই রাশিয়া দখল করে তিনি নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন।
দ্বিতীয়ত, রাশিয়া দখল করলে আফগানিস্থানের মধ্য দিয়ে ভারত আক্রমণ করা যাবে, ভারত আক্রমণ করলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য অস্থির হয়ে পড়বে।
তৃতীয়ত, হিটলার রাশিয়ার সামরিক শক্তি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলেন না। তিনি মনে করেছিলেন খুব সহজেই জার্মান সেনা রাশিয়া দখল করতে পারবে।
চতুর্থত, রাশিয়ার প্রাকৃতিক এবং খনিজ সম্পদ দখল এবং লেবেনস্রাউম নীতি হিটলারকে রাশিয়া আক্রমণের জন্য অনুপ্রাণিত করে।
অপারেশন বারবারোসা কি?
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ২২শে জুন ভোর চারটে জার্মান সেনা বাহিনী রাশিয়ার সীমানায় প্রবেশ করে এবং বারবারোসা অভিযান শুরু হয়।
জার্মান সেনার লাগাতার আক্রমণের ফলে রুশ সেনা পিছু হাটতে শুরু করে। প্রথম ছয় মাসের মধ্যে জার্মানরা রাশিয়ার প্রায় ৮,০০,০০০ বর্গ কিমি অধিকার করে নেয়।
রাশিয়া প্রধান স্তালিন জার্মান বাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য পোড়ামাটি নীতির প্রয়োগ করেন। অর্থাৎ রুশ বাহিনী পথের সকল সেতু, বাড়ি ধ্বংস, শস্য এবং পানীয় জল নষ্ট করতে করতে পিছু হটতে থাকে। এর ফলে জার্মান বাহিনীর মধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দেয়।
ইতিমধ্যে রাশিয়ায় শীতকাল শুরু হলে জার্মানবাহিনী আরো প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়।
রাশিয়ার রেড আর্মির ক্রমাগত গেরিলা আক্রমণের ফলে নাৎসি বাহিনী পিছু হটতে শুরু করে।
লেলিনগ্রাদের অবরোধ
সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ার দুটি প্রধান শহর ছিল মস্কো এবং লেলিনগ্রাদ। মস্কো রাশিয়ার রাজধানী হলেও, ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে লেলিনগ্রাদ ছিল অগ্রগণ্য।
তাই জার্মানপ্রধান হিটলার মস্কো দখলের আগে, লেলিনগ্রাদ শহর ধ্বংসের আদেশ দিয়েছিলেন। জার্মান বাহিনী লেলিনগ্রাদ আক্রমন করলে, রাশিয়ান সেনা জার্মান বাহিনিকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয় এবং লেলিনগ্রাদ নগরকে কেন্দ্র করে অবরোধ গড়ে তোলে।
এই অধ্যায়ের ভিডিও ক্লাস ↓
রুশ সেনার সাথে সাহায্য করতে প্রায় ৩০ লক্ষ নাগরিক এগিয়ে আসে। সারা শহরের চারিপাশে বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। রুশ সেনার অসামান্য দক্ষতা এবং নাগরিকদের প্রচেষ্টায় জার্মান বাহিনীকে শহরের বাইরে আটকে রাখে।
খাবার এবং অস্ত্রের অভাবে লেলিনগ্রাদের মানুষ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে মনে করে জার্মান বাহিনী শহর অবরোধ করে এবং লেলিনগ্রাদের সঙ্গে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। প্রায় ৯০০ দিন এই অবরোধ চলে, অবশেষে রুশ বাহিনী লেলিনগ্রাদকে জার্মান কবল থেকে মুক্ত করে।
ইতিমধ্যে ১৯৪২ সালের ১৭ই জুলাই থেকে শুরু হয় বিখ্যাত স্টালিনগ্রাদের যুদ্ধ। রুশ বাহিনী এবং শহরবাসীর দক্ষতায় বহু রক্ত ক্ষয়ের পর জার্মান বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। জার্মান বাহিনীর এই পরাজয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
অপারেশন বারবারোসা ১২৯ বছর আগে নেপোলিয়ন রাশিয়া আক্রমণ করেন এবং পরাজিত হন, নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণ তার পতনের অন্যতম একটি কারণ ছিল। সেই একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আমরা জার্মান – রাশিয়ার যুদ্ধে দেখতে পাই, এই যুদ্ধে জার্মানির পতন হিটলারের পতন ত্বরান্বিত করে।
দ্বিতীয় পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
IX-His-6-b