ভূগোল – নবম শ্রেণি – আবহবিকার (পঞ্চম অধ্যায়)
আগের পর্বে আমরা জেনেছি আবহবিকার ও ক্ষয়ীভবন সম্পর্কে। এই পর্বে আমরা আবহবিকারের প্রকারভেদের মধ্যে যান্ত্রিক আবহবিকার সম্পর্কে আলোচনা করবো।
আবহবিকার প্রক্রিয়াটিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
● যান্ত্রিক আবহবিকার
● রাসায়নিক আবহবিকার
● জৈব আবহবিকার
যান্ত্রিক আবহবিকার
যান্ত্রিক আবহবিকার হল শিলার ভৌত রূপের পরিবর্তন। এই আবহবিকার আমরা দেখে সহজেই বুঝতে পারি। আর্দ্রতা, উষ্ণতা, জীবজন্তু ইত্যাদির মাধ্যমে শিলার আকারের পরিবর্তন ঘটলে তাকে ভৌত বা যান্ত্রিক আবহবিকার বলা হয়। এই আবহবিকারের উষ্ণতার পরিবর্তন, শিলাস্তরের উপর প্রসূত চাপের তারতম্য, আর্দ্রতার পরিবর্তন এছাড়া জীবজগৎ দ্বারা বিভিন্ন কার্যাবলীর মাধ্যমে ভূমিরূপের শিলাস্তর যান্ত্রিকভাবে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে থাকে বলে একে যান্ত্রিক আবহবিকার বলা হয়।
“The disintegration of rocks without chemical changes is referred to as mechanical or physical weathering.”
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবন বিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
যান্ত্রিক আবহবিকার মাধ্যমে শিলাস্তর ভৌত বা যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে থাকে। শুষ্ক জলবায়ুতে এই প্রকার আবহবিকার বেশি দেখা যায়।
যান্ত্রিক আবহবিকারকে প্রক্রিয়ার তারতম্যে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
● উষ্ণতার প্রভাবে
(ক) প্রস্তর চাঁই খন্ডিকরন
(খ) শল্কমোচন
(গ) ক্ষুদ্র কণা বিশরণ
● তুষার ক্রিয়া
(ক) তুহিন খন্ডীকরণ
● ভারমুক্ত প্রসারণ
● কলয়েড উৎপাটন
● জৈবিক কার্যাবলী
প্রস্তর চাঁই খন্ডিকরন
আমরা সবাই জানি ধাতুর তাপের দ্বারা সংকোচন প্রসারণ ঘটে। ঠিক একইভাবে তাপ দ্বারা শিলাস্তর সংকোচিত এবং প্রসারিত হয়ে থাকে। শিলার উপরের আবরণ স্বাভাবিকভাবেই তার দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। ফলে এই স্তর তাপের প্রভাবে সংকোচিত এবং প্রসারিত হয়। কিন্তু সেই তুলনায় শিলাস্তরের অভ্যন্তরভাগ সেই ভাবে তাপ দ্বারা প্রভাবিত হয় না। শিলার উপর এবং অভ্যন্তরভাগের সংকোচন-প্রসারণের হারের এই তারতম্যের জন্য শিলাস্তরে অসম্ভব পীড়নের সৃষ্টি হয়।
এরফলে শিলাস্তরের উপরিভাগ এবং অভ্যন্তরের মধ্যে অনেক অনুভূমিক এবং উলম্ব ফাটল সৃষ্টি হয়। কালক্রমে ফাটল বরাবর শিলাস্তরগুলি চৌকাকৃতিভাবে একে অপরের থেকে আলগা হয়ে যায়। বড় বড় প্রস্তর চাঁই-এর আকারে শিলাস্তরগুলি একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলে একে প্রস্তর চাঁই খন্ডিকরন বা বিচ্ছিন্নকরণ বলা হয়। উদাহরণ – পাঁচমারি থেকে জটাশঙ্কর যাওয়ার পথে দু’ধারে বেলেপাথরের বিশাল বিশাল চাঁই এভাবেই পাহাড়ের গা থেকে খসে পড়ে আছে।
শল্কমোচন
আমরা জানি পেঁয়াজের খোসাকে শুদ্ধ বাংলায় শল্ক বলা হয়। বাজার থেকে পেঁয়াজ আনলে কয়েকদিন পর দেখা যায় পেঁয়াজের উপরে স্তরটি আলগা হয়ে উঠে আসে ও সেই সাথে পরের কয়েকটি স্তরও আলগা হয়ে যায়। উষ্ণ ও শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চলে একইভাবে যখন সমান ভৌত ধর্ম বিশিষ্ট শিলাস্তর অবস্থান স্থান করে তখন শিলাস্তরের বাইরের আবরণটি তাপ দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। শিলার বাইরের এই স্তরটি দিনের বেলা তাপ শোষণ করে প্রসারিত হয় এবং রাতের বেলা তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হয়। শিলার বাইরের স্তর এবং ভিতরের সংকোচন-প্রসারণের এই তারতম্যের জন্য শিলাস্তরে অসম পীড়নের সৃষ্টি হয়।
এইভাবে শিলাস্তরের বহির্ভাগটি পেঁয়াজের খোসার মতো মূল শিলাস্তর থেকে আলগা হয়ে পড়ে। এই প্রক্রিয়ায় শিলাস্তরের কোণ গুলি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে যায় এবং শিলা গোলকার আকৃতি ধারণ করে। শিলাস্তরের বহির্ভাগটি এভাবে পেঁয়াজের খোসার মতো আলগা হয়ে যায় বলে এই ধরনের আবহবিকার শল্কমোচন বলা হয়। এই ধরনের আবহবিকার গ্রানাইট শিলাস্তরে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এইজন্যেই গ্রানাইট শিলা গঠিত পাহাড়ের মাথাগুলি গোল আকৃতির হয়।
উদাহরণ: জব্বলপুরে গ্রানাইট শিলা গঠিত পাহাড়গুলি দেখতে গোলাকৃতি এমনকি পাহাড় থেকে খসে পড়া পাথরগুলোকেও দেখতে গোলাকার হয়ে থাকে।
জব্বলপুরের ‘ব্যালেন্স রক’টি হল এই প্রক্রিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
ক্ষুদ্র কণা বিশরন
একাধিক খনিজ পদার্থ দ্বারা গঠিত শিলাস্তরের শিলা ও খনিজগুলির সংকোচন-প্রসারণের হারের তারতম্যের জন্য শিলাস্তরে প্রবল পীড়নের সৃষ্টি হয় এরফলে শিলা মধ্যস্থ খনিজগুলি সশব্দে মূল শিলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, এই প্রক্রিয়াকে ক্ষুদ্র কণা বিশরন বলা হয়।
সূর্যাস্তের পর যখন মরুভূমির তাপমাত্রা যখন কমতে থাকে তখন বন্দুকের গুলির মত এই শিলা ফাটার শব্দ শোনা যায়। গ্রানাইট জাতীয় আগ্নেয় শিলা এবং সংঘাত পাললিক শিলায় এই প্রকারের আবহবিকারের প্রাধান্য দেখা যায়।
তুহিন খন্ডীকরণ
উচ্চ অক্ষাংশের শীতল জলবায়ু অঞ্চলে বা উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে দিনের বেলায় বরফ গলা জল শিলাস্তরের অবস্থিত ফাটলের মধ্যে প্রবেশ করে। রাতে যখন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায় তখন শিলাস্তরের ফাটলের মধ্যস্থিত এই জল জমে বরফে পরিণত হয় এবং আয়তনে বেড়ে যায়। এই জমে যাওয়া বরফ ফাটলের দেওয়ালে প্রবল চাপের সৃষ্টি করে আবার দিনের বেলায় সেই বরফ গলে গিয়ে শিলার ফাটলের দেওয়ালের চাপ হ্রাস করে।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
বরফের কেলাসনের প্রভাবে শক্তি তৈরি হয় তার প্রতি বর্গ সেন্টিমিটার শিলাস্তরে 2000 কেজি শক্তি প্রয়োগ করতে পারে। এইভাবে দিবারাত্রির জলের ভৌত অবস্থা পরিবর্তনের জন্য শিলাস্তরে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টির ফলে শিলাস্তরের ফাটল ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এইভাবে ক্রমান্বয়ে একসময় শিলাস্তরটি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। তুষারের মাধ্যমে শিলাস্তরের এই চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়াকে তুহিন খন্ডীকরণ বলা হয়।
পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → রাসায়নিক ও জৈবিক আবহবিকার
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
IX-geo-5-b