poscimbonger-jolobayu
WB-Class-9

পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু

ভূগোলনবম শ্রেণি – পশ্চিমবঙ্গ (পঞ্চম পর্ব)।

গত পর্বে আমরা আলোচনা করেছিলাম পশ্চিমবঙ্গের নদনদী সম্পর্কে এই পর্বে আমাদের আলোচনার বিষয় পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু।

পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর মধ্যে বৈচিত্রতা লক্ষ্য করা যায়।।পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু হল উষ্ণ-আর্দ্র ক্রান্তীয় মৌসুমি প্রকৃতির।দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলার পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া সমগ্র পশ্চিমবঙ্গেই এই ধরনের জলবায়ু দেখা যায়।


পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা দেখে নাও এই ভিডিও থেকে ↓


মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য

১) পশ্চিমবঙ্গের গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল – দুটি বিপরীত ঋতু পর্যায় লক্ষ্য করা যায়।

২) এখানে গ্রীষ্মকাল বেশি স্থায়ী, শীতকাল অপেক্ষাকৃত কম।

৩) বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, শীতকালে বৃষ্টিপাত তেমন হয় না।

৪) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল উচ্চতার কারনে উষ্ণতা বেশ কম এবং দক্ষিণ -পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে।

৫) পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের বৃষ্টিপাত খুবই কম এবং উষ্ণতার পরিমাণ বেশী।

৬) মৌসুমি বায়ু আগমনের সময় সমুদ্র থেকে প্রচুর বায়ু বয়ে নিয়ে আসে।

৭) মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের বৃষ্টিপাত অসম ও অনিশ্চিত।

পশ্চিমবঙ্গের ঋতুবৈচিত্র্য

সাধারনভাবে পশ্চিমবঙ্গের চারটি ঋতু দেখা যায়। এগুলি হল-গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল, শরৎকাল, ও শীতকাল। গ্রীষ্মকাল শুরুর আগের সময়কে বসন্তকাল বলে। আর শীতকাল শুরুর আগের সময়কে হেমন্তকাল বলে।

গ্রীষ্মকাল ( মার্চ থেকে মে মাস)

উষ্ণতা

মার্চ মাস থেকে পশ্চিমবঙ্গে গরম পড়তে শুরু করে এবং এপ্রিল-মে মাস করে উষ্ণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।এই সময় গড় উষ্ণতা থাকে প্রায় 30˚C থেকে 35˚C। মালভূমি অঞ্চলে প্রায় 45˚C কাছাকাছি থাকে উষ্ণতা।
পুরুলিয়ায় সবথেকে বেশী গরম পড়ে।

উপকূল অঞ্চলে সমুদ্রের প্রভাবের জন্য উষ্ণতা খুব বেশী হয় না, মাএ 25˚C থেকে 30˚C । পার্বত্য অঞ্চলে উচ্চতার জন্য উষ্ণতা বেশী হয় না। দর্জিলিং-এর পার্বত্য অঞ্চলে এই সময় উষ্ণতা থাকে 15˚C থেকে 18˚C পর্যন্ত।

ঝড় ও বৃষ্টি

গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না।প্রচন্ড গরমের জন্য মাঝে চৈত্র-বৈশাখ মাসে নিম্মচাপের সৃষ্টি হয়।এর ফলে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে অপরাহ্নের পর প্রবল ঝড় ও বজ্র-বিদুৎ সহ বৃষ্টিপাত হয়। একে কালবৈশাখী বলে।

বর্ষাকাল বা মৌসুমী বায়ুর আগমন কাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর)

উষ্ণতা

গ্রীষ্মকালে অধিক উষ্ণতার জন্য উত্তর-পশ্চিম ভারতে গভীর নিম্মচাপের সৃষ্টি হয়। এই সময় গড় উষ্ণতা থাকে 30˚C থেকে 35˚C।

বৃষ্টিপাত

উত্তর-পশ্চিম ভারতের নিম্মচাপের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে যে আর্দ্র বায়ু ভারত মহাসাগরের অন্তরগত আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তাকে মৌসুমী জলবায়ু বলে।
এই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে।জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই আর্দ্র মৌসুমী বায়ু উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে বাধা পেয়ে উত্তরবঙ্গে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। পরে এই বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টিপাত হয়।

পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে বৃষ্টিপাতের বন্টন

পশ্চিমবঙ্গের বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্য

১) আর্দ্র মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উত্তরবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলে ও পর্বতের পাদদেশে সবচেয়ে বেশী বৃষ্টিপাত হয়, প্রায় 350- 450cm।

২) উত্তর থেকে দক্ষিণে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ কমে যায়। দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি সমভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকে প্রায় 250-350cm।


[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – বাংলা | নবম শ্রেণি – ইতিহাস | নবম শ্রেণি – ভূগোল]

৩)উত্তরবঙ্গের বাকি সমভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকে 200-250cm।

৪)দক্ষিণবঙ্গের বদ্বীপ অঞ্চলে 150-200cm, রাঢ় অঞ্চলে 100-150cm বৃষ্টিপাত হয়।

৫)উপকূল অঞ্চলে সামুদ্রিক প্রভাবে বৃষ্টিপাত কিছুটা বেশি হয়, প্রায় 200-250cm।

৬)পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত সবথেকে কম হয়, প্রায় 50- 150cm।

৭)বর্ষাকালে পশ্চিমবঙ্গে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকে 175cm।

৮)জলপাইগুড়ি বক্সা-ডুয়ার্স অঞ্চলে বৃষ্টিপাত সবচেয়ে বেশি হয়।প্রায় 450cm।

৯)পুরুলিয়ায় সবথেকে কম বৃষ্টিপাত হয়। প্রায় 75cm।

শরৎকাল (অক্টোবর-নভেম্বর)

উষ্ণতা

সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকে সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে দিকে ক্রমশ সরে যায়। ফলে উত্তর পশ্চিম ভারতের নিম্মচাপ দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই পশ্চিমবঙ্গে উষ্ণতার পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে প্রায় 30˚C।

ঝড় ও বৃষ্টি

এই ঋতুতে বৃষ্টিপাত তেমন হয় না।আবহাওয়া থাকে বেশ আরামদায়ক। বঙ্গোপসাগরে এই সময় মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়।এই ঝড়কে আশ্বিনের ঝড় বলে।এই সময় সামান্য বৃষ্টিপাত হয়।


[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – ভৌত বিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – জীবন বিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – গণিত ]

শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি)

উষ্ণতা

নভেম্বর মাসের শেষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের উষ্ণতার পরিমাণ বেশ কমে যায়।সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধের মকরক্রান্তি রেখার ওপর কিরণ দেওয়ার ফলে উত্তর গোলার্ধের উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। এই সময় উত্তর পূর্ব দিক থেকে শীতল ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়।একে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু বলে।

এই বায়ুর প্রভাবে উষ্ণতা বেশ কমে যায়। অধিক উচ্চতার জন্য দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে উষ্ণতার পরিমাণ খুব কম হয়, প্রায় 2˚C-8˚C।কখনও কখনও দার্জিলিং-এ বরফ পড়ে।পর্বতের শৃঙ্গগুলি সব বরফে ঢেকে যায়।

  • দক্ষিণবঙ্গে উষ্ণতা কিছুটা বেশী হয়, প্রায় 10˚C থেকে 16˚C
  • উপকূল অঞ্চলে সমুদ্রের প্রভাবে উষ্ণতা কিছুটা বেশি থাকে, প্রায় 15˚C-20˚C।
  • পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে রুক্ষ ভূমিভাগের জন্য উষ্ণতা বেশ কমে যায়।এই অঞ্চলে উষ্ণতা থাকে প্রায় 6˚C- 10˚C

বৃষ্টিপাত

শীতকালে পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাত তেমন হয় না। উত্তর -পূর্ব মৌসুমি বায়ু স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে শীতকাল প্রায় শুষ্ক থাকে।তবে মাঝে মাঝে উত্তর- পশ্চিম ভারতের নিম্মচাপযুক্ত ঝোড়ো আবহাওয়া প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের ওপর পড়ে ও সামান্য বৃষ্টিপাত হয়।একে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা বলে।

পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য

পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে শিলিগুড়ি মহকুমা বাদে সমগ্র দার্জিলিং জেলা এবং জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর অংশে পার্বত্য অঞ্চল দেখা যায়। এই অঞ্চলের জলবায়ু পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে আলাদা।

এখানকার জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

১) দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির পার্বত্য অঞ্চল বেশ উঁচু বলে এখানে গ্রীষ্মকাল ও শীতকালে উষ্ণতা বেশ কম হয়।

২) সাধারনভাবে এই পার্বত্য অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে গড় উষ্ণতা থাকে 15˚C- 18˚C। ফলে এই সময়ও শীতবস্ত্রের প্রয়োজন হয়।

৩) শীতকালে এই অঞ্চলের উষ্ণতা বেশ কম হয়। প্রায় 2˚C-8˚C। কখনও কখনও বরফও পড়ে।এর মধ্যে সান্দাকফু সবথেকে শীতলতম স্থান।

৪) পার্বত্য অঞ্চলে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশী বৃষ্টিপাত হয়। কারণ এখানে দার্জিলিং হিমালয়ের দক্ষিণ ঢালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটায়। প্রায় ৩৫০ সেমি থেকে ৪৫০ সেমি।

৫)শীতকালে পার্বত্য অঞ্চলে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না এবং শরৎকালে ও গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া খুব মনোরম থাকে।

পঞ্চম পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → পশ্চিমবঙ্গের স্বাভাবিক উদ্ভিদ


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতি

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী মোনালিসা মাইতি। পড়াশোনার পাশাপাশি বই পড়তে এবং গান গাইতে ভালোবাসেন মোনালিসা।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

IX_Geo_8.e