poscimbonger-nodnodi
WB-Class-9

পশ্চিমবঙ্গের নদনদী

ভূগোলনবম শ্রেণি – পশ্চিমবঙ্গ (চতুর্থ পর্ব)।

গত পর্বে আমরা আলোচনা করেছিলাম পশ্চিমবঙ্গের ভূ-প্রকৃতি সম্পর্কে এই পর্বে আমাদের আলোচনার বিষয় পশ্চিমবঙ্গের নদনদী।

পশ্চিমবঙ্গ নদীমাতৃক রাজ্য।

এই রাজ্যের বিভিন্ন নদনদীর মধ্যে গঙ্গা ও তার শাখা ভাগীরথী-হুগলী, তিস্তা, মহানন্দা ,জলঢাকা, দামোদর, কংসাবতী, রূপনারায়ণ, অজয়, জলঙ্গী, কালিন্দী, পিয়ালী, মাতলা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য নদী প্রবাহিত হয়েছে।

গঙ্গা নদী এই রাজ্যের প্রায় মধ্যভাগ বরাবর প্রবাহিত হয়েছে।

সাধারণত গঙ্গানদীর উত্তর অংশের নদনদীকে উত্তরবঙ্গের নদনদী এবং দক্ষিণ অংশের নদনদীকে দক্ষিণবঙ্গের নদনদী বলে।

উত্তরবঙ্গের নদনদীগুলি সবই বরফগলা জলে পুষ্ট এবং দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত নদনদীগুলি বৃষ্টির জলে পুষ্ট।


পশ্চিমবঙ্গের নদনদী সম্পর্কিত আলোচনা দেখে নাও এই ভিডিও থেকে↓


পশ্চিমবঙ্গের নদনদীর প্রকারভেদ

নদীর উৎসস্থান, জলের উৎস, প্রবাহের দিক ইত্যাদি বিষয়গুলিকে লক্ষ্য রেখে পশ্চিমবঙ্গের নদনদীকে সাধারণত পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –

(ক) গঙ্গা ও তার শাখা ভাগীরথী-হুগলী
(খ) উত্তরবঙ্গের নদনদী
(গ) ভাগীরথীর পশ্চিমদিকের নদীসমূহ
(ঘ) ভাগীরথীর পূর্বদিকের নদীসমূহ
(ঙ) সুন্দরবন অঞ্চলের নদীসমূহ

(ক) গঙ্গা ও তার শাখা ভাগীরথী-হুগলী

পশ্চিমবঙ্গের প্রায় মধ্যভাগে মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার সীমানা বরাবর গঙ্গা নদী অতি সামান্য অংশের মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে।
গাড়োয়াল হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন ভাগীরথী ও অলকানন্দা হিমবাহ থেকে উৎপন্ন অলকানন্দা দেবপ্রয়াগের নিকট মিলিত হয়ে গঙ্গা নাম ধারণ করে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে।

মুর্শিদাবাদ জেলায় ধুলিয়ানের নিকট ভগবানগোলায় এই নদী দুটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে।

প্রধান ভাগটি পদ্মা নামে পূর্ব দিকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং অপর ভাগটি প্রথমে ভাগীরথী ও পরে হুগলী নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে সাগরদ্বীপের নিকট বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।

১) ভাগীরথী-হুগলী

ভাগীরথী-হুগলী পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নদী। মূর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে নবদ্বীপ-মায়াপুর পর্যন্ত ২২০ কিমি বিস্তৃত অংশটি ভাগীরথী নামে পরিচিত। এই অংশে জোয়ারের জল প্রবেশ করে না।

এই নদীর দক্ষিণাংশ তথা নবদ্বীপ-মায়াপুর থেকে মোহনা পর্যন্ত প্রায় ২৮০ কিমি বিস্তৃত অংশটির নাম হুগলী।

সাধারণত ভাগীরথী নদীর নীচের অংশে যেখানে জোয়ার ভাটা খেলে সেই অংশকে হুগলী নদী বলে।

হুগলী নদীর উপর সূর্যাস্তের শোভা (Shuma Talukdar, Licensed under, CC BY-SA 4.0)

দক্ষিণবঙ্গের নদনদীগুলিকে আবার দুভাগে ভাগ করেছে-

A) ভাগীরথীর পশ্চিমদিকের নদী
B) ভাগীরথীর পূর্বদিকের নদী।

(খ) উত্তরবঙ্গের নদ নদী

উত্তরবঙ্গের নদনদীগুলি প্রায় সবই উত্তরের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল হতে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এইসব নদীর অধিকাংশই বরফ গলা জলে পুষ্ট।
এই নদীগুলি পার্বত্য অঞ্চলে গভীর গিরিখাত সৃষ্টি করে তরাই- ডুয়ার্স অঞ্চলের কাছে চওড়া হয়ে গেছে।

উত্তরবঙ্গের উল্লেখযোগ্য নদীগুলি হল-

i) তিস্তা

তিস্তা নদী সিকিমের জেমু হিমবাহ থেকে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

তিস্তা উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম নদী।

তিস্তাকে উত্তরবঙ্গের ত্রাসের নদী বলা হয়।

তিস্তার উপনদী

রংপো্, রঙ্গিত, লিশ, চেল প্রভৃতি।

শিলিগুড়ির নিকট তিস্তা নদী (Joydeep, Licensed under, CC BY-SA 4.0)

(ii) মহানন্দা

এই নদী দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে দার্জিলিং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহ জেলার ওপর দিয়ে এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে গঙ্গা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

মহানন্দার উপনদী

মেচি, বালাসন, পুনর্ভবা, আত্রাই প্রভৃতি।

(iii) জলঢাকা

সিকিমের দিচু ও লিচু নদীর মিলিত প্রবাহ জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

জলঢাকার উপনদী

মূর্তি, দুধুয়া, মুজনাই প্রভৃতি।

(iv) তোর্সা

তিব্বত ও ভুটান সীমান্তের চুম্বি উপত্যকায় উৎপন্ন তোর্সা কোচবিহারের ওপর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে যমুনার সাথে মিলিত হয়েছে।
কালজানি, গদাধর তোর্সার উপনদী।


[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – বাংলা | নবম শ্রেণি – ইতিহাস | নবম শ্রেণি – ভূগোল]

(v) সঙ্কোশ

ভুটানের পুনাখা পর্বতমালা থেকে সৃষ্ট সঙ্কোশ নদী উত্তরবঙ্গের পূর্বতম নদী। এই নদীকে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের সীমারেখা ধরা হয়। এটি ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত হয়েছে।

(গ) মালভূমি অঞ্চলের নদনদী বা বৃষ্টির জলে পুষ্ট নদী

দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব নদীই হয় ভাগীরথী-হুগলির উপনদী, না হয় শাখা নদী। এইসব নদী বৃষ্টি ও প্রস্রবনের জলে পুষ্ট।
এই নদীগুলির নদীখাত অগভীর ও প্রশস্ত। প্রবল বর্ষায় নদীগুলিতে প্রায়শই বন্যা দেখা যায় এবং নদীগুলির গতিপথ পরিবর্তনের হার অধিক।

১) দামোদর

ঝাড়খণ্ডের পালামৌ জেলার খামারপোত পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই উলুবেড়িয়ার কাছে ভাগীরথী-হুগলী নদীতে মিশেছে। এই নদী মালভূমি অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নদী। বরাকর এই নদীর প্রধান উপনদী।
এছাড়া অন্যান্য উপনদীগুলি হল – কোনার, বোকারো, আয়ার প্রভৃতি।

দামোদর পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী।

দামোদর নদের চিত্র

২) অজয়

ঝাড়খন্ডের দুমকা থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী কাটোয়ার কাছে ভাগীরথীতে মিশেছে।হিংলো, কুনুর-এর উপনদী।

৩) ময়ূরাক্ষী

ঝাড়খন্ডের বৈদ্যনাথ ধামের ত্রিকূট পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে কালনার কাছে ভাগীরথী-হুগলি নদীতে মিশেছে।

ম্যাসাঞ্জোর বাঁধ ময়ূরাক্ষী নদীর ওপর তৈরি হয়েছে।

এর বামতীরের উপনদী হল ব্রাহ্মণী ও দ্বারকা এবং ডানতীরের উপনদী হল বক্রেশ্বর ও কোপাই।

৪) সুর্বণরেখা

এই নদীটি ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অতি সামান্য অংশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ওড়িশার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।

৫) রূপনারায়ণ

দ্বারকেশ্বর ও শিলাই নদীর মিলিত প্রবাহকে রূপনারায়ন বলে। পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে গেঁয়োখালির কাছে হুগলী নদীতে মিশেছে।

৬) হলদী

কাঁসাই ও কেলেঘাই নদীর মিলিত প্রবাহকে হলদী নদী বলে। এই নদী ভাগীরথী-হুগলী নদীতে মিশেছে।

ঘ) ভাগীরথীর পূর্বদিকের নদীসমূহ

ভাগীরথীর পূর্ব দিকের নদীসমূহ বৃষ্টির জলে পুষ্ট। এদের অধিকাংশই বর্তমানে জলশূন্য হয়ে বা মজে গেছে। নদীগুলি মজে যাওয়ায় প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দেয়।

ভাগীরথীর পূর্বপাশে মূর্শিদাবাদ, নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার মধ্য দিয়ে গঙ্গা, পদ্মা থেকে নির্গত বহু শাখা নদী পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদীগুলি মিশেছে ভাগীরথীতে।

এদের মধ্যে ভৈরভ ও জলঙ্গি নদী মিশে গিয়ে জলঙ্গি নাম নিয়ে ভাগীরথীতে মিশেছে। আবার মাথাভাঙ্গা নদীটির একটি শাখা চূর্ণী নাম নিয়ে ভাগীরথীতে মিশেছে এবং অপর শাখাটি ইছামতী নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে কালিন্দীর সাথে মিলিত হয়েছে।

এই অঞ্চলের একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য নদী হল বিদ্যাধরী। এদের অধিকাংশই বর্তমানে মজে গেছে।


[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – ভৌতবিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – জীবনবিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – গণিত ]

ঙ) সুন্দরবন অঞ্চলের নদীসমূহ

সুন্দরবন অঞ্চলে অসংখ্য খাঁড়ি ও নদী দেখা যায়। এগুলি জোয়ারের জলে পুষ্ট। এগুলি প্রতেকটিই শাখা নদী ও মূল নদী থেকে বিচ্ছিন্ন। প্রত্যেকটি নদীই পরস্পরের সাথে যুক্ত।
মাতলা, গোসাবা, পিয়ালি, ঠাকুরাণ, হাড়িয়াভাঙা, সপ্তমুখী, জামিরা রায়মঙ্গল প্রভৃতি নদীগুলি উল্লেখযোগ্য।

চতুর্থ পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু

এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

IX-Geo-8d