rasayonik-joibik-abohobikar
WB-Class-9

রাসায়নিক ও জৈবিক আবহবিকার

ভূগোলনবম শ্রেণি – আবহবিকার (পঞ্চম অধ্যায়)

আগের পর্বে আমরা জেনেছি যান্ত্রিক আবহবিকার সম্পর্কে। এই পর্বে আমরা আবহবিকারের প্রকারভেদের মধ্যে রাসায়নিক ও জৈবিক আবহবিকার সম্পর্কে আলোচনা করবো।

লোহা, চুনাপাথর প্রভৃতি খনিজ দ্বারা গঠিত শিলাস্তর বায়ু, আবহাওয়া মন্ডলের জল জলীয়বাষ্প অক্সিজেন ইত্যাদি সংস্পর্শে এসে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায় এবং শিলা মধ্যস্থ খনিজগুলি তাদের ভৌত এবং রাসায়নিক ধর্ম পাল্টে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খনিজ সৃষ্টি করে শিলাস্তরকে বিয়োজিত করে। এভাবেই বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, জলীয়বাষ্প প্রভৃতি শিলা মধ্যস্থ খনিজের সাথে বিক্রিয়া করে এবং তাদের কাঠিন্য কমিয়ে দিয়ে বিয়োজিত করে।


নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলিগণিত | জীবন বিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে শিলার মূল খনিজগুলি কোন খনিজ কণায় পরিণত হয় এবং নতুন ধরনের খনিজ সৃষ্টি করে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শিলাস্তর বিয়োজিত হয়ে এক প্রকার খনিজ থেকে অন্য প্রকার খনিজে রূপান্তরিত হয় বলে একে রাসায়নিক আবহবিকার বলা হয়।

আর্থার হোমস এর মতে, “the alteration and solution of rocks by chemical processes are referred to as chemical weathering.”

রাসায়নিক আবহবিকার বিভিন্নভাবে হতে পারে সেগুলো নিম্নে আলোচিত হল।

জারণ

শিলাস্তরের খনিজগুলি যখন বাতাসে অক্সিজেনের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে পরিবর্তিত হয় তখন তাকে জারণ (Oxidation)বলা হয়। ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত লোহা, অ্যাম্ফিবোল, পাইরক্সিন ও বায়োটাইট জাতীয় খনিজের উপরে জারণ প্রক্রিয়া কার্যকর হয়। লোহা যখন প্রকৃতিতে যখন ফেরাস অক্সাইড রূপে থাকে তা অত্যন্ত কঠিন হয় কিন্তু লোহা অক্সিজেনের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে ফেরিক অক্সাইডে পরিণত হয় যা সহজেই ভেঙে অপসারিত হয়। শিলার মধ্যে ফেরাস অক্সাইড ফেরিক অক্সাইডে পরিণত হলে শিলায় মরচে পড়ে।

4FeO(ফেরাস অক্সাইড) + 3H2O (জল) + O2(অক্সিজেন) —–> 2Fe2O3, 3H2O (ফেরিক অক্সাইড)

অঙ্গার যোজন

ক্যালশিয়াম কার্বনেট বা চুনাপাথরের সাথে কার্বন ডাই অক্সাইড বিক্রিয়া করে ক্যালশিয়াম বাই কার্বনেটে পরিণত হয় যা সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এই প্রক্রিয়াকে কার্বনেশন বা অঙ্গার যোজন বলা হয়। আর্দ্র কার্স্ট অঞ্চলে কার্বনিক অ্যসিড চুনাপাথর বা ক্যালশিয়াম কার্বনেটের সাথে বিক্রিয়া করে ক্যালশিয়াম বাই কার্বনেট তৈরি করে যা সহজেই জলে দ্রবীভূত হয়ে অপসারিত হয়।

H2O(জল) +CO2(কার্বন ডাই অক্সাইড) ——> H2CO3( কার্বনিক অ্যাসিড)
H2CO3 + CaCO3 (চুনাপাথর)——> Ca(HCO3)2(ক্যালশিয়াম বাই কার্বনেট)

জলযোজন

শিলার মধ্যে অবস্থিত খনিজ গুলি জলের অনু শোষণ করে শিলার যে ভৌত পরিবর্তন ঘটায় তাকেই জলযোজন (Hydration) বলা হয়। জলযোজনের ফলে শিলা আয়তনে বেড়ে যায় ফলে শিলাস্তর নমনীয় ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। ক্যালশিয়াম সালফেটের সাথে জলের অনু(H2O) যুক্ত হয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে জিপসামে পরিণত হয়। এটি একটি তাপদায়ী উভমুখী প্রক্রিয়া।

CaSO4(ক্যালশিয়াম সালফেট) + 2H2O ⇐======> CaSO4, H2O (জিপসাম)

আর্দ্র বিশ্লেষণ

জলযোজনের বিপরীত ধর্মী প্রক্রিয়া হল আর্দ্র বিশ্লেষণ। আর্দ্র বিশ্লেষণের ফলে যেমন খনিজের সাথে জল যুক্ত হয় এই ক্ষেত্রে শিলার খনিজের মধ্যে থাকা জল খনিজ থেকে পৃথক হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ায় শিলার মধ্যে থাকা জল হাইড্রোজেন (H+) এবং হাইড্রোক্সিল (OH+) আয়নে ভেঙে দেয় এবং শিলার পরিবর্তন ঘটায়। এই বিক্রিয়াকে আর্দ্রবিশ্লেষন বলা হয়। যেমন ফেল্ডসপার ও অভ্রতে আর্দ্র বিশ্লেষণ সবথেকে বেশি ঘটে। অর্থক্লেজ ফেল্ডসপার এর মধ্যে থাকা জলের আয়নগুলি পৃথক হয়ে খনিজের বিক্রিয়া ঘটিয়ে অ্যালুমিনোসিলিসিক অ্যাসিড ও পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড লবণে পরিণত হয়।

KAlSi3O8 (অর্থক্লেজ ফেল্ডসপার)+ HOH (জল)——-> HAlSi3O8 (অ্যালুমিনোসিলিসিক অ্যাসিড) + KOH (পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড)


নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

জৈবিক আবহবিকার

আবহবিকার এর আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান ছাড়াও শিলার জৈব রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটানোর জন্য জীবজগৎ অর্থাৎ উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান এর উপস্থিতিতে প্রাণী ও উদ্ভিদের যে ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে তাকে জৈব আবহবিকার বলা হয়।

“The disintegration of rocks by biological process is referred to as biological weathering.”

জৈব আবহবিকার দুইভাবে ঘটে।

ক। উদ্ভিদ দ্বারা

মাটির ভিতরে উদ্ভিদের শিকড়ের বৃদ্ধির সময় সিলস্তরে ফাটল ধরে এবং মাটির কণাগুলোর স্থানচ্যুতি ঘটে। আবার যখন উদ্ভিদ মারা যায় তখনই তাদের পাতা, শিকড় ও ডালপালা পচে গিয়ে বিভিন্ন জৈব যৌগ যেমন হিউমাস ও কিছু জৈব অ্যাসিড যেমন হিউমিক অ্যাসিড, অ্যাসিটিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে। এই সমস্ত অ্যাসিড গুলি শিলার রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে সাহায্য করে। এছাড়া প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় গাছের শিকড় কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে এবং এই মুক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড মাটিতে থাকা জলে দ্রবীভূত হয় এবং কার্বনিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। যা শিলার বিয়োজন ঘটায়।

খ। প্রাণীর দ্বারা

বিভিন্ন প্রাণী যেমন ইদুর, বনবিড়াল, প্রেইরি কুকুর প্রভৃতি নখ এবং দাঁত যুক্ত প্রাণী এছাড়া কেঁচো, পিঁপড়ে প্রভৃতি পতঙ্গ গোষ্ঠীর প্রাণী মাটির ভিতরে বসবাস করে এবং নিচের মাটি উপরে তুলে আনে। এভাবে এক একক জমিতে প্রায় দেড় লক্ষ প্রাণী প্রায় 15 টন মাটি তুলে ফেলতে সক্ষম উন্নত প্রাণী হিসেবে মানুষ খনি থেকে খনিজ উত্তোলন, রাস্তা তৈরি, কৃষিকাজ প্রভৃতি অর্থনৈতিক কাজের মাধ্যমে মাটির ভৌত পরিবর্তন ঘটায় এবং মাটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করে।

পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী অধ্যায় – দুর্যোগ ও বিপর্যয়


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

X-geo-5-c