ইতিহাস – দশম শ্রেণি – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (পর্ব – ৩)
ঔপনিবেশিক বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ নিয়ে আলোচনা দেখে নাও এই ভিডিও থেকে↓
গত পর্বে আমরা ঔপনিবেশিক বাংলায় বিজ্ঞানের বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই পর্বে আমরা ঔপনিবেশিক বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ সম্পর্কে জানবো।
বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ
দেশ শাসনের প্রয়োজনে ঔপনিবেশিক সরকারকে বিভিন্ন অঞ্চলে রাস্তা, সেতু, রেলপথ, খাল, বন্দর ইত্যাদি নির্মাণ করতে হত। এই কর্মযজ্ঞের জন্য যত সংখ্যক দক্ষ কারিগর ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কাজে কাজেই ব্রিটিশ সমীক্ষকদের সহায়ক হিসেবে কিছু দেশীয় দক্ষ কর্মচারীর প্রয়োজন পড়ল। মূলতঃ ভারতীয়দের ন্যূনতম কারিগরি সংক্রান্ত জ্ঞান প্রদানের জন্যেই ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে ভারতে সরকারি উদ্যোগে একাধিক প্রযুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
এদের মধ্যে রুরকির টমসন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (১৮৪৯), ক্যালকাটা কলেজ অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (১৮৫৬), ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (১৯১৫) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য নাম।
তবে ইচ্ছা থাকলেও এই সময়ে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের সরকারের কোনো উচ্চপদে চাকরি লাভের উপায় ছিল না। তারা শ্বেতাঙ্গ সমীক্ষকদের অধীনেই কাজ করতে বাধ্য থাকত।
কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ‘ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ প্রণয়নের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ দেখা যায়। এই ধরণের প্রতিষ্ঠানে প্রথামাফিক বিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি প্রযুক্তি ও কারিগরি বিদ্যাও প্রদান করা হত। এই উদ্দেশ্যে ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, স্যার তারকনাথ পালিত এবং স্যার রাসবিহারী ঘোষের উদ্যোগে কলকাতার রাজাবাজারে বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই প্রতিষ্ঠান ‘কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ’ বা ‘রাসবিহারী শিক্ষা প্রাঙ্গণ’ নামে পরিচিত।
জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ও বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ লগ্ন থেকে পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতি ভারতীয়দের আনুগত্য বৃদ্ধি করার জন্য ব্রিটিশ সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে একাধিক প্রতিক্রিয়াশীল নীতি গ্রহণ করে। ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড কার্জনের উদ্যোগে ‘বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ প্রণয়ন করে শিক্ষানীতি নির্ধারণে ভারতীয়দের বক্তব্যের গুরুত্ব হ্রাস করা হয়। ফলে অনিচ্ছাসত্ত্বেও ভারতীয়দের সরকার প্রণীত পাঠ্যক্রমেই সন্তুষ্ট থাকতে হত। একমাত্র বিকল্প ছিল বিদেশে উচ্চশিক্ষা করা যা সে আমলের নিরিখে ছিল অত্যন্ত অসুবিধাজনক।
এই লর্ড কার্জনের আমলেই ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ হয়।
স্বভাবতই জাতীয়তাবোধ সম্পন্ন যুবকেরা ক্ষুব্ধ হয় এবং ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামই হয় যায় ‘গোলদীঘির গোলামখানা’।
এই পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অরবিন্দ ঘোষ, রাজা সুবোধ চন্দ্র মল্লিক, ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর মত কয়েকজন প্রথিতযশা বাঙালি ব্যক্তিত্ব একটি জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুভব করেন।
UPDATE: পড়া মনে রাখার সেরা উপায়↓
অবশেষে জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বের অর্থানুকুল্যে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ ও ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ঘোষিত উদ্দেশ্যগুলি ছিল জাতীয় আদর্শ অনুযায়ী বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের নৈতিকশিক্ষা প্রদান করা। এই প্রতিষ্ঠানের শুভকামনার্থে রাজা সুবোধ চন্দ্র মল্লিক এক লাখ টাকা দান করেন।
তারকনাথ পালিতের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘সোসাইটি ফর দ্য প্রোমোশন অফ টেকনিক্যাল এডুকেশনে’র কল্যাণে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে জুলাই যাদবপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
পরবর্তীকালে এই সংস্থাটি জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সঙ্গে মিশে যায় (১৯১০)। স্বাধীনতার পর এই প্রতিষ্ঠানটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে (২৪শে ডিসেম্বর, ১৯৫৫)। বর্তমানে এটি পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের একটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি এখানে এখন কলা ও মানববিদ্যারও চর্চা হয়।
পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রকৃতি ও সীমাবদ্ধতা
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখক পরিচিতি
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এম ফিল পাঠরত রাতুল বিশ্বাস। ইতিহাসচর্চার পাশাপাশি লেখা-লিখিতেও সমান উৎসাহী রাতুল।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X_hist_5c