ইতিহাস – দশম শ্রেণি – সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (পর্ব – ৩)
গত পর্বে আমরা সভা সমিতির যুগ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই পর্বে আমরা সাহিত্য ও চিত্রশিল্পে জাতীয়তাবোধের বিচার ও বিশ্লেষণ সম্পর্কে জানবো।
জাতীয়তাবোধ কি তা বুঝতে হলে সবার আগে তোমাদের বুঝতে হবে যে জাতীয়তাবাদ ও জাতীয়তাবোধের মধ্যে কি পার্থক্য। জাতীয়তাবাদ মূলতঃ এক ধরণের মতাদর্শ যার সঙ্গে নিজের জাতিকে বড় করে দেখার বা দেখানোর তাগিদ বর্তমান। যখন এই মতাদর্শের প্রয়োগ অন্যান্য জাতিসত্তার অস্তিত্বের পক্ষে বিপজ্জনক হয় ওঠে তখন তাকে উগ্র জাতীয়তাবাদ বলে। বিংশ শতকের ইউরোপে জার্মানি, ইতালির মত দেশ উগ্র জাতীয়তাবাদের রাস্তায় হেঁটেছিল।
অন্যদিকে জাতীয়তাবোধ হল জাতি-ধর্ম-ভাষা নির্বিশেষে এক ঐক্যের অনুভূতি। এই অনুভূতি অঞ্চল ও সংস্কৃতির বেড়াজাল টপকে মানুষে মানুষে মেলবন্ধন রচনার জন্য আবশ্যিক। যেসব দেশ একসময় ইউরোপীয় দেশগুলোর উপনিবেশ হিসেবে থেকেছে সেখানে জাতীয়তাবোধের বিকাশ একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। ইউরোপীয় সংস্কৃতির অভিঘাতে এইসব দেশের মানুষের মধ্যে অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে যে সংবেদনের উদ্রেক হয়, তার অনিবার্য ফল ছিল সাহিত্য সংস্কৃতির জগতে জাতীয়তাবোধের অনুশীলন। এই অনুশীলনকে একধরনের সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের (cultural nationalism) অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
এই সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের বিকাশে যেসকল বাঙালি তথা ভারতীয়ের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল তাদের সম্পর্কেই আজ তোমাদের বলব।
বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদী ভাবনা
শুধু আধুনিক বাংলা গদ্যরীতির জনক হিসেবেই নন, বাংলা ভাষাকে জাতীয়তাবোধের বিকাশের হাতিয়ার করে গড়ে তোলার পিছনেও বঙ্কিমচন্দ্রের কৃতিত্বই সর্বাধিক। বঙ্কিম ইতিহাস সচেতন মানুষ ছিলেন।
তাঁর রচিত ‘দুর্গেশনন্দিনী’, ‘রাজসিংহ’, ‘দেবী চৌধুরানী’ প্রভৃতি ঐতিহাসিক উপন্যাস কালক্রমে কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছে।
তাঁর জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা ছিল ভাষানির্ভর। তিনি বিশ্বাস করতেন, বাঙালির হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করতে গেলে আগে ইতিহাস চেতনার প্রয়োজন। তাঁর সাহিত্যচর্চা অনেকাংশেই ছিল ইতিহাসবোধ বিস্তার করার সাধনা।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
তবে ভাষানির্ভর এই সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। বঙ্কিমচন্দ্রের কাছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ছিল একে অপরের পরিপূরক। অথচ তাঁর সাহিত্য রচনার ভাষা ছিল বাংলা, যা বস্তুত একটি আঞ্চলিক ভাষা। বুঝতেই পারছ, তাঁর জন্য ভাষা ও উদ্দেশ্যের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করা জরুরি ছিল। তাই তিনি হিন্দুধর্মকে ভারতীয় জাতিসত্তার মুখ্য আধার হিসেবে তুলে ধরলেন। এই হিন্দুধর্ম কিন্তু কোনো সংকীর্ণ আচারের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ধর্মমত নয়। কৃষ্ণ চরিত্র রচনায় পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোকে বঙ্কিম হিন্দুধর্মের একটি ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন।
বঙ্কিমচন্দ্রের যেসব উপন্যাসে তাঁর জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা প্রতিফলিত হয়েছে ‘আনন্দমঠ’ তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
আনন্দমঠ
ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহের পটভূমিকায় রচিত ‘আনন্দমঠ’ ঊনবিংশ শতাব্দীর জাতীয়তাবাদের বিকাশে সহায়তা করেছিল। এই উপন্যাসে দেশকে ‘মা’ বলে কল্পনা করা হয়েছে। এখানে দেশমাতৃকার তিনটি রূপ তুলে ধরা হয়েছে – মা যা ছিলেন অর্থাৎ মায়ের জগদ্ধাত্রী মূর্তি, মা যা হয়েছেন অর্থাৎ মায়ের কালিমা মূর্তি এবং মা যা হবেন অর্থাৎ মায়ের দশভূজা মূর্তি।
আসলে এই তিনটি রুপকল্প ভারতের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে ব্যক্ত করে। অর্থাৎ প্রাক ঔপনিবেশিক যুগের সমৃদ্ধিশালী ভারতের গায়ে ঔপনিবেশিক শোষণ কালিমা লেপন করেছে। পাপী শাসকদের উপযুক্ত শাস্তিবিধানের মধ্যে দিয়েই ভারত ভবিষ্যতে এক মহাশক্তিধর দেশে পরিণত হবে।
এই উপন্যাসটি পড়লে তোমরা বুঝতে পারবে কেন সাহিত্য একাধারে একটি বিশেষ সময়ের সমাজের আয়না আবার একইসঙ্গে ভবিষ্যত পথেরও দিশারী।
এই আনন্দমঠ উপন্যাসের ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি ছিল অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের প্রেরণার উৎসস্থল।
ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসটির একটি সুদূরপ্রসারি ভূমিকা ছিল। দেশকে মাতৃরূপে বন্দনা করার যে আহ্বান এই উপন্যাসে রয়েছে তা একদল তরতাজা যুবককে ব্রিটিশদের বিরূদ্ধে মরনপণ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আনন্দমঠের ‘সন্তানদল’ অনুশীলন সমিতির মত বিপ্লবী সংগঠনকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। বীণা দাশ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের মত বিপ্লবী নারীরা এই উপন্যাস থেকেই দেশের জন্য আত্মবলিদান করার সাহস অর্জন করেছিলেন।
বিবেকানন্দের জাতীয়তাবাদী ভাবনা
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ কেবল রাজনৈতিকভাবে ভারতকে গ্রাস করেনি। জেমস মিলের মত সাম্রাজ্যবাদী তাত্ত্বিকরা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে সভ্যতার সারণিতে ভারতবর্ষ ইংল্যান্ডের মত দেশের চেয়ে বহু যোজন পিছিয়ে রয়েছে। এই ঔপনিবেশিক দম্ভকে চুরমার করতে যে ধরনের বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন ছিল তাই ভারতবর্ষ খুঁজে পেয়েছিল নরেন্দ্রনাথ দত্তের মধ্যে, গণমানসে স্বামী বিবেকানন্দ নামেই যাঁর অধিক প্রসিদ্ধি।
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত শিকাগো বিশ্ব ধর্মমহাসম্মেলনে হিন্দুধর্মের উদারতা ও সহনশীলতার আদর্শ প্রচার করে তিনি ভারতকে গৌরবান্বিত করেছিলেন।
তাঁর গুরু শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রচারিত লোকধর্মের আদর্শকে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক আকার দিয়েছিলেন। তোমাদের মধ্যে যারা রামকৃষ্ণ মিশনের কাজকর্মের সঙ্গে পরিচিত তারা জানবে, হিন্দুধর্মের মৌলিক আদর্শের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হলেও এটি মূলতঃ একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’য় বিশ্বাসী বিবেকানন্দ ছিলেন ‘মানুষ গড়ার ধর্মের’ প্রবর্তক।
স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রামকৃষ্ণ মিশন নিয়ত সেই ধর্মেরই পালন করে চলেছে। বিবেকানন্দের পূর্ণাঙ্গ রচনা কমই আছে। তার মধ্যে ‘বর্তমান ভারতে’ তাঁর আদর্শ ও জীবনবোধ সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।
বর্তমান ভারত
ভারত ও ভারতবাসীর দুর্বলতাগুলো ধরিয়ে দেবার পাশাপাশি ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থে স্বামী বিবেকানন্দ আপামর ভারতবাসীকে জাতীয়তাবোধে বলীয়ান হয়ে জেগে ওঠার ডাক দিয়েছেন। এই লেখাটি প্রথমে রামকৃষ্ণ মিশনের পাক্ষিক পত্রিকা ‘উদ্বোধনে’ প্রবন্ধাকারে প্রকাশিত হয়। বিবেকানন্দের কাছে জাতীয়তাবাদের অর্থ ছিল দেশের মানুষকে ভালোবাসা। ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থে তিনি তাই এই দেশপ্রেমেরই জয়গান করেছেন।
এই গ্রন্থে বিবেকানন্দ প্রাচীনকাল থেকে এই দেশের প্রজাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শক্তির অভাবকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। গণরাজ্যের যুগে স্বায়ত্তশাসনের অস্তিত্ব থাকলেও বিবেকানন্দের মতে, তার বিকাশ সেভাবে হতে পারেনি। তিনি মনে করতেন, আধ্যাত্মিক উন্নতির মাধ্যমে আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে না আস্তে পারলে এই একতার শক্তি অর্জন করা সম্ভবপর নয়। এছাড়াও এতে রয়েছে পুরোহিততন্ত্র থেকে রাজতন্ত্র হয়ে ঔপনিবেশিক শাসন পর্যন্ত ভারতের যাত্রার বর্ণনা। বিবেকানন্দের ধারণা ছিল, এই যাত্রাপথের অবশ্যম্ভাবী পরিণতিস্বরূপ ঔপনিবেশিক আমলে শাসনদন্ড বৈশ্যদের হাতে আসবে।
খেয়াল কর, রাজতন্ত্রের পেশীবলনির্ভরতার ধনতন্ত্রের যুগে এসে অর্থবলনির্ভরতায় পর্যবসিত হওয়ার স্বাভাবিক ঐতিহাসিক প্রক্রিয়াকে কিভাবে বিবেকানন্দ ভারতের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করেছেন। আসলে বিবেকানন্দ ছিলেন ভারতাত্মার মূর্ত প্রতীক। নিজের ভারতীয় সত্তাকে পূর্ণরূপে উপলব্ধি না করতে পারলে কি কেউ বলতে পারে – “হে বীর, সাহস অবলম্বন কর, সদর্পে বল – আমি ভারতবাসী…. তুমিও কটিমাত্র বস্ত্রাবৃত হয়ে সদর্পে ডাকিয়া বল – ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ।”
ঊনবিংশ বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ ছিল সামাজিক টানাপোড়েনের যুগ। সমাজসংস্কার আন্দোলন, পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার, ব্রাহ্ম আন্দোলন ইত্যাদি ঘটনা বাঙালি সমাজকেও তুমুল আলোড়িত করেছিল।
এমতাবস্থাতেও বিবেকানন্দ কিন্তু শাশ্বত ভারতীয় সমাজেরই বন্দনা করে গেছেন – “ভারতের সমাজ আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের বারাণসী; বল ভাই – ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ।”
ভারতীয়দের মধ্যে বিদ্যমান অনুকরণপ্রিয়তা ও পরমুখাপেক্ষীতা ছিল বিবেকানন্দের দুচোখের বিষ। তাঁর আয়ত চোখের তীব্র চাহনি ও ভারতের সনাতন ঐতিহ্যের প্রতি গভীর আস্থা ভারতবাসীকে যেন বিদ্যুৎপৃষ্টের ন্যায় লুপ্ত চেতনা ফিরিয়ে দিয়েছিল।
এই আলোচনা দেখে নাও নীচের ভিডিও থেকে↓
গোরা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গোরা’ উপন্যাসটি জাতীয়তাবাদ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাঁধার উত্তর দেয়। গোরা এই উপন্যাসের নামচরিত্র। ব্রাহ্মবিবাহের পটভূমিকায় হিন্দুসমাজের টানাপোড়েনের মধ্যে উপন্যাসের বিষয়বস্তু আবর্তিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ এই কাহিনীতে গোরার বিবর্তন দেখিয়েছেন। একদা হিন্দুসমাজের স্বঘোষিত রক্ষক গোরা যখন জানতে পারে যে তার ধমনীতে আইরিশম্যানের রক্ত বইছে তখন তার জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হয়।
গোরার জবানিতে – “আমি একেবারে ছাড়া পেয়ে হঠাৎ একটা বৃহৎ সত্যের মধ্যে এসে পড়েছি। সমস্ত ভারতবর্ষের ভালোমন্দ, সুখ-দুঃখ, জ্ঞান-অজ্ঞান একেবারেই আমার বুকের কাছে এসে পৌঁছেছে।”
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
ভারতীয় সমাজের জাতপাতের মত সংস্কারের মূলে কুঠারাঘাত করে গোরা উপন্যাসটি যেন আধুনিক জাতীয়তাবাদের দীক্ষা দেয় –
“আমি আজ ভারতবর্ষীয়। আমার মধ্যে হিন্দু মুসলমান খ্রিষ্টান কোনো সমাজের কোনো বিরোধ নেই। আজ এই ভারতবর্ষের সকলের জাতি আমার জাত, সকলের অন্নই আমার অন্ন।”
ঊনবিংশ শতকের টালমাটাল প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথের এই উদার জাতীয়তাবাদের আদর্শের এক গভীর ব্যঞ্জনা রয়েছে।
চিত্রশিল্প
ভারতমাতা
স্বদেশী যুগে জাতিধর্ম নির্বিশেষে ভারতীয়দের স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে জোড়াসাঁকোর প্রখ্যাত ঠাকুর পরিবার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাখিবন্ধনের কথা সকলেরই জানা। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের বছরেই রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিখ্যাত ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি অঙ্কন করেন।
তাঁর জীবনস্মৃতি গ্রন্থের ‘আপন কথা’য় এই ঘটনার উল্লেখ আছে। এই ছবিতে ভারতের মাতৃরুপী দেবীমূর্তিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কাশ্মীরে এই মায়ের মাথা, কন্যাকুমারীতে মায়ের পায়ের পাতা। মা সন্ন্যাসিনীর পোশাক পরিহিতা গৈরিকবসনা। চার হাতে শ্বেতবস্ত্র, বেদ, জপমালা ও ধানের শিষ নিয়ে যেন সর্বজয়ী মাতৃমূর্তির স্নেহময়ী রূপ প্রস্ফুটিত।
বুঝতেই পারছ, বঙ্কিমি সাহিত্যে যে মাতৃরূপকল্প দেখা যায় ত এখানেও বিদ্যমান। আসলে দেশকে মা জ্ঞানে পূজা করার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের রূপকারেরা দেশবাসীর কাছে বিমূর্ত জাতীয়তাবাদের একটি মূর্ত রূপকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র
জাতীয়তাবোধের বিকাশে অবনীন্দ্রনাথের অগ্রজ গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্রের দুনিয়ায় একজন প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। তাছাড়া ফাইন আর্টস নিয়েও তিনি কাজ করেছেন।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরই ‘Indian Society of Oriental Arts’ এর প্রতিষ্ঠাতা।
রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে প্রবাসী ও মডার্ন রিভিউ পত্রিকায় তাঁর বহু ব্যঙ্গচিত্র ছাপা হয়েছিল। গগনেন্দ্রনাথের ব্যঙ্গচিত্রে সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির বিভিন্ন স্খলনগুলিকে কটাক্ষ করা হয়েছে। তাঁর কোনো ছবিতে দেখা যায়, ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থাকে একটি ফ্যাক্টরির সঙ্গে তুলনা, কোনোটিতে আবার দেখা যায় নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণের নিষিদ্ধ খাদ্য ভক্ষণের দৃশ্য।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, তাঁর ব্যঙ্গশিল্পী সত্তার পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক সত্তারও হদিস পাওয়া যায়। অনুশীলন সমিতির সাথে পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকার জন্য তিনি পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টের সন্দেহভাজন হন।
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড নিয়েও তাঁর ব্যঙ্গচিত্র রয়েছে। যদিও আমাদের দুর্ভাগ্য, বর্তমানে তা নষ্ট হয় গেছে। ব্যঙ্গচিত্রকে রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করার পাশাপাশি দেশীয় সমাজের ত্রুটিগুলোও সর্বসমক্ষে উন্মোচিত করে গগনেন্দ্রনাথ প্রকৃত অর্থে প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদের পথই প্রশস্ত করেছিলেন।
পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → বাংলার ছাপাখানা
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখক পরিচিতি
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এম ফিল পাঠরত রাতুল বিশ্বাস। ইতিহাসচর্চার পাশাপাশি লেখা-লিখিতেও সমান উৎসাহী রাতুল।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X_hist_4c