ভূগোল – দশম শ্রেণি – আঞ্চলিক ভূগোল (দশম পর্ব)
আগের পর্বে আমরা ভারতের বহুমুখী নদী পরিকল্পনা ও জল সংরক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করেছি এই পর্বে আমরা ভারতের জলবায়ু সম্পর্কে জেনে নেবো।
ভারতের জলবায়ুর বৈচিত্র্য
ভারতবর্ষ সামগ্রিকভাবে ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ুর অন্তর্গত হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের জলবায়ু দেখা যায়।
যেমন – উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে পার্বত্য নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু, উপকূল অঞ্চলে সামুদ্রিক জলবায়ু, মধ্য ভারতে মহাদেশীয় জলবায়ু, ও পশ্চিম ভারতের মরু জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়।
ঋতু বৈচিত্র্য
ভারতবর্ষের গ্রীষ্ম ও শীত এই দুটি প্রধান ঋতু বর্তমান কিন্তু এছাড়াও বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত ও বসন্তকাল স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
মৌসুমী বায়ুর প্রাধান্য
মৌসুমী বায়ুর আগমন অবস্থান ও প্রত্যাবর্তন ভারতের তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, তথা সামগ্রিক জলবায়ুকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে থাকে।
বৃষ্টিপাতের অসম বন্টন
মৌসুমী বায়ুর স্থায়িত্ব ও আচরণ সব বছরে সমান হয় না, ফলে বৃষ্টিপাতের বৈষম্য দেখা দেয়।
উত্তর ভারতে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেখানে 300 থেকে 350 সেন্টিমিটার (মৌসিনরামে 1350 সেমি) সেখানে উত্তর-পশ্চিম ভারতে মাত্র 25 থেকে 50 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
স্থানীয় উষ্ণতার তারতম্য
ভারতের জলবায়ুতে উষ্ণতার তারতম্য দেখা যায়।
যেমন – উত্তর-পশ্চিম রাজ্যগুলিতে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা চরমে পৌঁছায় আবার শীতকালে শৈত্য প্রবাহ দেখা যায়।
কিন্তু সামুদ্রিক প্রভাবযুক্ত রাজ্যগুলিতে তাপমাত্রার বিশেষ হেরফের দেখা যায়না। সমভাবাপন্ন জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়।
স্থানীয় বায়ুর আধিক্য
শীতকালে পশ্চিমীঝঞ্ঝা ও গ্রীষ্মকালে লু, আঁধি, কালবৈশাখী প্রভৃতি স্থানীয় বায়ুর উপস্থিতি ভারতের জলবায়ুতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক সমূহ
ভারতবর্ষ একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ জলবায়ু সম্পন্ন দেশ।
জলবায়ুর এই বৈচিত্র্য সমস্ত বিষয়ে দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় সেগুলি হল-
● ভারতের অবস্থান ও অক্ষাংশগত বিস্তৃতি
কর্কটক্রান্তি রেখা (23 ½° উত্তর) ভারতের প্রায় মাঝ বরাবর প্রসারিত হওয়ায়, ভারতের দক্ষিণভাগ ক্রান্তীয় মন্ডল এবং উত্তর ভাগ উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের অন্তর্গত। ভারতের উপদ্বীপীয় অবস্থানের জন্য ভারতের দক্ষিণাংশের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন হয়ে থাকে।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবন বিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
● ভারতের জলবায়ুর উপর হিমালয় পর্বতের অবস্থান জনিত প্রভাব
ভারতের উত্তরভাগ জুড়ে রয়েছে হিমালয় পর্বত যা মধ্য এশিয়ার তীব্র শীতল বায়ুকে ভারতে প্রবেশ করতে বাধা দান করে। আবার বর্ষা ঋতুতে মৌসুমী বায়ু হিমালয় পর্বতে বাধা পেয়ে প্রচুর পরিমাণে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়। অধিক উচ্চতায় অবস্থানের জন্য হিমালয় পর্বতের জলবায়ু শীতল প্রকৃতির হয়ে থাকে।
● ভারতের জলবায়ুর উপর ভারতের ভূপ্রকৃতির প্রভাব
অধিক উচ্চতার জন্য হিমালয় পর্বতে সাধারণ উচ্চতার সাথে তাপ হ্রাসের নিয়ম অনুসারে সারাবছর কম উষ্ণতা যুক্ত হয়ে থাকে। শীতকালে হিমালয় অঞ্চলের তুষারপাত হয়। কিন্তু সিন্ধু ও গঙ্গা সমভূমিতে উচ্চতা কম থাকার দরুন উষ্ণতা বেশি থাকে।
● ভারতের জলবায়ুর উপর সমুদ্র সান্নিধ্যতার প্রভাব
ভারতবর্ষ তিন দিক থেকে সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত। এই অবস্থানের জন্য ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলে জলবায়ু সমভাবাপন্ন হয়। কিন্তু এই অঞ্চলগুলিতে সামুদ্রিক ঘূর্ণবাতের প্রভাব বেশি হয়। আবার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের অংশটি সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থান করার জন্য এই অঞ্চলের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন হয়ে থাকে।
● ভারতের জলবায়ুর উপর মৌসুমী বায়ুর প্রভাব
ভারতের জলবায়ুর সর্বাপেক্ষা প্রধান নিয়ন্ত্রক হল মৌসুমী বায়ুর উপস্থিতি। উষ্ণতার তারতম্য ও বৃষ্টিপাতের স্থায়িত্ব, পরিমাণ ও বন্টন মৌসুমী বায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
● ভারতের জলবায়ুর উপর জেট বায়ুর প্রভাব
মে মাসের শেষের দিকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ু দক্ষিণ ভারতের উপর অবস্থান করে এবং ভারত মহাসাগর থেকে মৌসুমী বায়ুকে টেনে আনতে সাহায্য করে।
● ভারতের জলবায়ুর উপর ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও পশ্চিমীঝঞ্ঝার প্রভাব
মৌসুমী বায়ু যখন বর্ষা ঋতুতে গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে অবস্থান করে, তখন উত্তরের সমভূমি অঞ্চল বরাবর পূর্ব-পশ্চিমে ও উত্তর-দক্ষিণে একাধিক নিম্নচাপ অক্ষ অবস্থান করে।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
এর ফলে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিশেষত উপকূলীয় রাজ্য ও উত্তরের সমভূমিতে প্রচুর ঘূর্ণিঝড়ের আবির্ভাব হয়। এই ঘূর্ণিঝড়ের আবির্ভাব ও নিম্নচাপ অক্ষের অবস্থানের কারণে ভারতবর্ষ জুড়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
আবার শীতকালে পশ্চিমী জেট বায়ু হিমালয়ের দক্ষিণাংশে অবস্থান করায় ভূমধ্যসাগর থেকে আগত পশ্চিমা বায়ু পশ্চিমদিক থেকে কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে প্রবেশ করে এবং গাঙ্গেয় উপত্যকার উপর দিয়ে অগ্রসর হয়ে সর্বশেষে পশ্চিমবঙ্গে প্রসারিত হয়। এর ফলে কাশ্মীর, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া ও সাথে বৃষ্টিপাত হয়।
এই সময় হিমালয়ের পাদদেশে অঞ্চলেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। একেই পশ্চিমীঝঞ্ঝা নামে অভিহিত করা হয়।
● ভারতের জলবায়ুর উপর এল নিনো ও লা নিনার প্রভাব
এল নিনোর আবির্ভাব কালে আমাদের দেশে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কমে যায় এবং বৃষ্টিপাতের বন্টন এর তারতম্যের যায়। এর ফলে ভারতের পশ্চিমে রাজ্যগুলিতে খরা পরিস্থিতি তৈরী হয়।
ভারতের জলবায়ু অধ্যায়ের আলোচনা ভালো ভাবে বুঝে নিতে এই ভিডিওটি দেখে নাও↓
আবার এল নিনোর বিপরীত অবস্থা লা নিনার প্রভাবে ভারতে মৌসুমী জলবায়ুর স্বাভাবিক থাকে এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কখনো এত বেশি হয় যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → মৌসুমী বায়ু ও ভারতের ঋতু বৈচিত্র্য
লেখিকা পরিচিতি
প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তনী শ্রেয়সী বিশ্বাস। পড়াশোনা এবং লেখালিখির পাশাপাশি, ছবি আঁকা এবং বাগান পরিচর্যাতেও শ্রেয়সী সমান উৎসাহী।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X-Geo-5-a-10