পদার্থবিদ্যা – একাদশ শ্রেণি – অধ্যায়: ভৌতজগত ও পরিমাপ
পরিমাপের ত্রুটি কী?
ব্যবহারিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পরিমাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেকবার পরিমাপ করার সময়, পরিমাপ করার যন্ত্রের পরিমাপজনিত কিছু অনিশ্চয়তা থাকে, সেই অনিশ্চয়তাই হল পরিমাপের ত্রুটি। যে কোনো রাশি যদি পরিমাপ করা হয়, তার পরিমাপের ত্রুটি থাকবে।
অর্থাৎ, কোনো ভৌতরাশির পরিমাপ সম্পূর্ণ ত্রুটিহীন হতে পারে না।
যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপের ক্ষেত্রে যন্ত্রের সঠিকতা (accuracy) এবং যথার্থতা বা সুসংহতি (precision) সম্পর্কে জানা উচিত।
সঠিকতার ধারণা
পরিমাপের সঠিকতা বলতে বোঝায়, যন্ত্রের সাহায্যে কোনো ভৌতরাশি পরিমাপ করা হলে তার যে মান পাওয়া যায় সেটা আসল মানের কতটা কাছে আছে।
যেমন- যদি আমি মিটার স্কেল দিয়ে দৈর্ঘ্য মাপছি, যার প্রকৃত দৈর্ঘ্য 50 cm কিন্তু স্কেল দেখাচ্ছে 48 cm। সুতরাং, স্কেলটি সঠিক নয়। এক্ষেত্রে আসল মান 50 cm, পরিমাপ করা মান 48 cm, যেটা আসল মান (50 cm) এর যত কাছে থাকবে, মিটার স্কেলটি ততটাই সঠিক বলে ধরে নেওয়া হবে।
আরো পড়ো → সমদ্রুতিসম্পন্ন কণার বেগ | সমবেগে গতিশীল বস্তুর সরণ সময় লেখচিত্র
যথার্থতার ধারণা
যথার্থতা বলতে বোঝায়, আমরা কতটা যথার্থভাবে (up to what resolution) ভৌতরাশির পরিমাপ করছি।
যথার্থতা সম্পর্কে একটু উদাহরণ দিয়ে বলা যাক।
যেমন, একটি বস্তুর দৈর্ঘ্য 3.456 cm। একটি স্কেল যা দিয়ে ন্যূনতম 0.1 cm মাপা যায়, সেটা দিয়ে দৈর্ঘ্য মাপলে 3.5 cm দেখায়, এক্ষেত্রে স্কেলটি 0.1 cm পর্যন্তই যথার্থভাবে মাপতে পারে, তার বেশি মাপতে পারে না বলে আমরা বস্তুর আসল দৈর্ঘ্য জানতে পারব না। এবার যদি অন্য একটি স্কেল নিই, যা 0.01 cm ও মাপতে পারে তাহলে পরিমাপের পর মান পাব, 3.36 cm। এক্ষেত্রে মানটি আগের বারের থেকে বেশি যথার্থভাবে মাপতে পেরেছি কিন্তু পুরোপুরি সঠিক মান এখনও আমরা পাইনি।
এক্ষেত্রে, একটা জিনিস আমরা বলতেই পারি, প্রথম পরিমাপের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত মানটি দ্বিতীয় বারের চেয়ে বেশি সঠিক কিন্তু যথার্থ নয় (more accurate but less precise), দ্বিতীয় বারের মানটি কম সঠিক কিন্তু বেশি যথার্থ (less accurate but more precise), আরেকবার অন্য স্কেল দিয়ে পরিমাপ করে যদি মান পাই 3.448 cm। এই মানটি আগের মানগুলির চেয়ে বেশি যথার্থ ও বেশি সঠিক (more accurate & more precise)।
পরিমাপের ত্রুটির প্রকারভেদ
পরিমাপের ত্রুটি সাধারণত দুই ধরনের হয়।
(a) পদ্ধতিগত ত্রুটি (systematic error)
(b) অবিন্যস্ত ত্রুটি (random error)
পদ্ধতিগত ত্রুটি
এই ত্রুটি সাধারণত নির্দিষ্ট দিকের প্রতি ঝোঁকপূর্ণ হয় (tend to be in one direction);হয় ধনাত্মক বা ঋণাত্মক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ত্রুটি দূর করা বা এড়িয়ে চলা সম্ভব।
(i) যান্ত্রিক ত্রুটিঃ ত্রুটিপূর্ণ স্কেল যথা ভুল ডিজাইন বা ভুল ক্যালিব্রেশন (calibration) বা স্কেলের শূন্য ত্রুটি, যান্ত্রিক ত্রুটির মধ্যে পড়ে। যেমন- থার্মোমিটারে ক্যালিব্রেশনের সময় জলের স্ফুটনাঙ্ক 100℃ এর জায়গায় 102℃ এ লেখা, দৈর্ঘ্য মাপার ক্ষেত্রে মূল স্কেল ও ভার্নিয়ার স্কেলের শূন্য দাগ একই জায়গায় না থাকা ইত্যাদি।
(ii) পরীক্ষার পদ্ধতিগত ত্রুটিঃ (Imperfection in experimental procedure)
যেমন- আমরা জ্বর হলে দেহের তাপমাত্রা পরিমাপ করার সময়, থার্মোমিটার দিয়ে দেহের সঠিক তাপমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম তাপমাত্রা আমরা পাই কারণ বাইরের চারপাশের আর্দ্রতা, বাতাসের গতিপ্রকৃতি বা অন্যান্য পারিপার্শ্বিক কারণের জন্য আমরা একদম সঠিকভাবে তাপমাত্রা মাপতে পারি না।
(iii) ব্যক্তিনির্ভর ত্রুটিঃ এটা সাধারণত অসতর্কভাবে পাঠ নেওয়া, যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবস্থায়ন (proper arrangement of set up) না থাকলে, সঠিক সতর্ক ব্যবস্থা না মেনে পরিমাপ করা, পাঠ (readings) দেখবার সময় উল্লম্বভাবে না দেখে কাত হয়ে (parallax error) দেখা এগুলি ব্যক্তিনির্ভর ত্রুটির মধ্যে পড়ে।
একাদশ শ্রেণি থেকে Physics | Chemistry | Biology | Computer
অবিন্যস্ত ত্রুটি
বিভিন্ন ধরনের জানা বা অজানা কারণে এলোমেলোভাবে এই ধরনের ত্রুটি ঘটে থাকে। এই ধরনের ত্রুটি কখনোই পুরোপুরি দূর করা সম্ভবপর হয় না।
যেমন- তড়িৎবিজ্ঞানের কোনো পরীক্ষার সময় আমরা voltage উৎসের বা তড়িৎকোষের voltage এর ওঠানামা, বা পেন্ডুলামের পরীক্ষার সময় বাতাসের খুব হালকা গতি পরিবর্তন এগুলো হঠাৎ করেই ঘটে, তাই এগুলি অবিন্যস্ত ত্রুটির মধ্যে পড়ে।
এছাড়াও একই ব্যক্তি একই পরীক্ষা যদি একাধিকবার করে তাহলে সবসময় একই পাঠ (readings) পায় না, এই ভিন্ন পাঠের কারণেও কিন্তু এই অবিন্যস্ত ত্রুটি হতে পারে।
উপরে উল্লিখিত ত্রুটিগুলি ছাড়াও আরো যে সকল ত্রুটি দেখা যায় সেগুলি হল-
Least Count Error (লঘিষ্ঠ ধ্রুবক ত্রুটি):
কোনো পরিমাপ যন্ত্র যে ন্যূনতম মান পরিমাপ করতে পারে, তাকে Least count (লঘিষ্ঠ ধ্রুবক) বলে।
সমস্ত পরিমাপ করা মানই (ঐ যন্ত্রের দ্বারা) লঘিষ্ঠ মান পর্যন্তই যথার্থ। আমরা বেশি যথার্থ (higher precision) যন্ত্র বা পরীক্ষা পদ্ধতির উন্নতির দ্বারা এই Least count error অনেকটাই কমাতে পারি।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, একটি মিটার স্কেলের ন্যূনতম 1 mm মাপা যায়, কিন্তু ভার্নিয়ার ক্যালিপার্সের সাহায্যে 0.01 cm, স্ফেরোমিটারের সাহায্যে 0.001 cm পর্যন্তও মাপা যায়।
Least count error আসলে কোনো পরিমাপ যন্ত্রের reselection এর ত্রুটির সাথে সম্পর্কযুক্ত বিষয়।
একাদশ শ্রেণি থেকে → বাংলা | ইংরাজি
ত্রুটির গণনা
আমরা আগেই বলেছি যে একই পদ্ধতিতে বহুবার পরিমাপ করলে প্রত্যেকবার একই মান পাওয়া যায় না, এর প্রধান কারণ হল কোনো পরিমাপই সম্পূর্ণ ত্রুটিহীন ভাবে করা সম্ভব নয়।
সঠিক মানের ধারণা (Concept of Actual or true value)
ধরা যাক, কোনো একটি ভৌত রাশি একই পদ্ধতিতে বার পরিমাপ করে মানগুলি পাওয়া গেল। একই পরীক্ষা যখন বারবার করা হয়, ধরে নেওয়া হয় অবিন্যস্ত ত্রুটি কখনো ধনাত্মক আবার কখনও ঋণাত্মক হয় সেজন্য যদি খুব বড় হয়, তাহলে রাশির গড় মান, ভৌতরাশির সঠিক মান হিসাবে ধরা যেতে পারে।
অর্থাৎ সঠিক মান
যাইহোক, এই মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কিছু অনিশ্চয়তা কিন্তু এর পরেও রয়ে যায়।
পর্ব সমাপ্ত। আরো পড়ো → কার্য শক্তির উপপাদ্য
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখিকা পরিচিতিঃ
প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যাল এবং IIT খড়গপুরের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তনী স্বধীথি মাঝি। পদার্থবিদ্যা চর্চার পাশাপাশি ছবি আঁকা, গান গাওয়া এবং বই পড়ায় সমান উৎসাহী স্বধীথি।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা