ভূগোল – একাদশ শ্রেনি – সম্পদের ধারণা
সাধারণভাবে আমরা সম্পদ বলতে কোনো বস্তুর কাজ করার ক্ষমতাকে বুঝি।
সম্পদ কথার অর্থ কি?
সম্পদ শব্দটি সৃষ্টি হয়েছে দুটি ইংরাজি শব্দ Re+Source থেকে। Re শব্দের অর্থ হল বারবার এবং Source শব্দের অর্থ হল উৎস। অর্থাৎ মানুষের চাহিদা যে যে উৎস থেকে বারেবারে পূরণ হয়,তাহাই সম্পদ বা Resource।
সম্পদ সম্বন্ধে আলোকপাত করতে গিয়ে নানান সংজ্ঞা বা মতামত উঠে আসে।
সম্পদের বিভিন্ন সংজ্ঞাসমূহ
বিশিষ্ট সম্পদ শাস্ত্রকার ও জার্মান অধ্যাপক( E.W.Zimmermann) ১৯৫১ সালে তাঁর “World Resources And Industries” নামক বইটিতে সম্পদ – এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন যে –
“সম্পদ কোনো বস্তু বা পদার্থকে বোঝায় না, কোনো বস্তু বা পদার্থ যে কাজ করে, অথবা,কোনো বস্তু বা পদার্থ যে কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে,অর্থাৎ তার সুপ্ত কার্যকরী ক্ষমতা হল সম্পদ। সম্পদ – মানুষের অভাবমোচন করে, মানুষকে নির্দিষ্ট লক্ষপূরণের সাহায্য করে এবং মানুষের চাহিদা মেটায়।”
এই সংজ্ঞা থেকে বোঝা যায় সম্পদ হল মানুষের চাহিদা পূরণের একটি উপায় যা মানুষের লক্ষ্যপূরণ বা অভাবমোচনের কাজ করে।
এনসাইক্লোপিডিয়া অব সোশ্যাল সায়েন্স-এ সম্পদ সম্বন্ধে বলা হয়েছে- “সম্পদ হল মানুষের পরিবেশের সেই সমস্ত বিষয়, যেগুলি মানুষের চাহিদা পূরণ করে ও সামাজিক উদ্দেশ্য সাধন করে, অথবা যেগুলির চাহিদা পূরণ ও উদ্দেশ্য সাধনের সম্ভাবনা রয়েছে”।
একাদশ শ্রেনি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল
সম্পদের প্রকৃতি বিশ্লেষণ
i)কার্যকারিতা- কোনো বস্তু বা পদার্থের যে কাজ করার ক্ষমতা থাকে, তাকে ঐ বস্তুর কার্যকারিতা বলে।যা মানুষের চাহিদা বা অভাব পূরণ করে। যেমন- সূর্যালোক একটি সম্পদ যা থেকে আমরা শক্তি পাই।
ii) উপোযোগিতা- সম্পদের আর একটি মহৎ গুণ হল উপোযোগিতা। যা মানুষের উপকার করে। যেমন- জলের উপযোগিতার মাধ্যমে মানুষ তৃষ্ণা মেটাতে পারে।
iii) বস্তু ও অবস্তু- সম্পদের দুটি চরিত্র। একটি বস্তুগত যা স্পর্শ করা যায় যেমন-সমুদ্রের মাছ ও অপরটি অবস্তুগত সম্পদ হল যা স্পর্শ করা যায় না যেমন (জ্ঞান, গুণ, শিক্ষা) প্রভৃতি।
iv) পুনঃব্যবহারযোগ্য- কিছু সম্পদ একাধিকবার ব্যবহার করা যায়। যা মানুষের সৃজনশীলতায় সাহায্য করে। যেমন- নদীর জল।
v) গ্রাহ্যতা- সম্পদের একটি বিশেষ ক্ষমতা হল এটি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য। তবে কিছু বিশেষ সম্পদ আছে যা সকলের কাছে সর্বদা গ্রহণযোগ্য হয় না। যেমন- পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীদের প্রধান খাদ্যশস্য ধান কিন্তু পাঞ্জাবের অধিবাসীদের প্রধান খাদ্যশস্য গম।
vi) পরিবর্তনশীলতা- কিছু নিরপেক্ষ বস্তু আছে যা পরবর্তীকালে সম্পদে পরিণত হতে পারে। সমুদ্রের গভীরে সঞ্চিত নিরপেক্ষ সামগ্রী ভবিষ্যৎ এ সম্পদে পরিণত হতে পারে।
vii)পরিবেশবান্ধব- বেশ কিছু সম্পদ আছে যা পরিবেশের ক্ষতি না করে মানুষের উপকার করে। যেমন- সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি প্রভৃতি।
একাদশ শ্রেনি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer
সম্পদের শ্রেনীবিভাগ ও তাদের সংক্ষিপ্ত ধারণা
সম্পদ সৃষ্টির উপাদানগুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা
প্রকৃতি, মানুষ, সংস্কৃতি একত্রিত অবস্থায় এই তিন শক্তি সুষম সম্পদ তৈরি করতে সক্ষম ভূমিকা পালন করে। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে যেমন কয়লা যতক্ষন মাটির নীচে থাকে তা হল প্রকৃতিগত বস্তু কিন্তু যখন তা মানুষের দ্বারা উত্তোলন করে যা মানুষের কাজে আসে তখন তা সম্পদ হিসাবে গণ্য করা হয়।
i) প্রকৃতি- প্রকৃতি হল সম্পদ সৃষ্টির মূল উপাদান। zimmermann এর মতে- “প্রকৃতির সাহায্য , নির্দেশ ও সম্মতি নিয়েই সম্পদ সৃষ্টি হয়”।
যার পরিপূরক হিসাবে থাকে মানুষ ও সংস্কৃতি।প্রকৃতি হল সম্পদের ভান্ডার।জল বায়ু সূর্য হল প্রকৃতির সম্পদ যা প্রবাহমান সম্পদের উৎস। এছাড়াও কয়লা খনিজদ্রব্য প্রভৃতি হল প্রকৃতিগত গচ্ছিত সম্পদের উদাহরণ।
ii) মানুষ- মানুষ হল সম্পদ সৃষ্টির আর এক অন্যতম উপাদান। মানুষের যথোপযুক্ত সম্পদের ব্যবহার-ই সম্পদ সৃষ্টির সহজ উপায়। মানুষ নিজের শ্রম ও বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে প্রকৃতির বস্তুকে সম্পদে পরিণত করে। মানুষ নিজ প্রয়োজনে সম্পদ সৃষ্টিও করে আবার ভোগও করে আবার ধ্বংস ও করে।
অর্থাৎ মানুষ সম্পদ সৃষ্টির ও ভোগ করার সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্পদকে ধ্বংস করে ফেলে সেই অর্থে মানুষকে সম্পদের ধ্বংসকারীও বলা হয়। তাই বলা যায় মানুষ সম্পদের সৃষ্টিকারী, ভোগকারী এবং ধ্বংসকারী। সব সম্পদ মানুষ এখনও ব্যবহার করে উঠতে পারেনি, তাই সেই সমস্ত সম্পদ পৃথিবীর বুকে নিরপেক্ষ সামগ্রী রূপে পরে রয়েছে।
iii) সংস্কৃতি- মানুষের গুণই হল সংস্কৃতি। Zimmermann মতে- সংস্কৃতি বলতে- শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান,অভিজ্ঞতা,ধর্ম,মার্জিত ব্যবহার,আদিম প্রবৃত্তির দমন,যুদ্ধের পরিবর্তে সহযোগিতা,বন্য আইনের বদলে ন্যায় ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা প্রভৃতিকে বোঝায়।
মানুষের মতোই সম্পদ সৃষ্টির আর এক অস্ত্র হল সংস্কৃতি। প্রকৃতিগত বস্তুকে মানুষ তার সংস্কৃতি দ্বারা সম্পদে পরিনত করে চলেছে।সংস্কৃতির মধ্যে অন্যতম হল শিক্ষা, স্বাস্থ্য ,সভ্যতা, জ্ঞান প্রভৃতি। সংস্কৃতির সাহায্যেই মানুষ নিরপেক্ষ সামগ্রীকে সম্পদে পরিণত করতে পারে। জ্ঞান হলো মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। সংস্কৃতি কখনো কখনো নিজে সম্পদ হিসাবে কাজ করে আবার কখনো সম্পদের উপাদান হিসাবে কাজ করে। তাই সংস্কৃতিও হল সম্পদ সৃষ্টিকারী উপাদান।
তাই বলা যায় প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত সম্পদ মানুষ তার জ্ঞান নামক সংস্কৃতির দ্বারা পরিবর্তন ঘটিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে। এইভাবে প্রকৃতি, মানুষ ও সংস্কৃতি সম্পদ সৃষ্টি করে।
আঞ্চলিক ও বস্তুগত সম্পদের ধারনা এবং অলীকপুঞ্জের ধারণা
আঞ্চলিক সম্পদ ভৌগলিক এলাকা বা কোন নির্দিষ্ট এলাকার উপর ভিত্তি করে যে সমস্ত সম্পদ সীমাবদ্ধ তাকে আঞ্চলিক সম্পদ বলে।
উদাহরণ:- কয়লা ,লোহা,তামা, সোনা প্রভৃতি।
আঞ্চলিক সম্পদের বৈশিষ্ট্য
i) আঞ্চলিক সম্পদ সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ভৌগলিক অবস্থানের উপর।
ii) এই ধরনের সম্পদ সীমাবদ্ধ হয়।
বস্তুগত সম্পদ
যে সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ কে স্পর্শ করা যায় এবং যে সমস্ত সম্পদের অস্তিত্ব আছে তাকে বস্তুগত সম্পদ বলে।
উদাহরণ- জল, কয়লা,মৃত্তিকা প্রভৃতি।
একাদশ শ্রেনি থেকে → বাংলা | ইংরাজি
বস্তুগত সম্পদের বৈশিষ্ট্য
i) এই সমস্ত সম্পদ স্পর্শযোগ্য।
ii) বস্তুগত সম্পদ সবই প্রকৃতিগত।
অলীকপুঞ্জ সম্পদ কাকে বলে?
যে সমস্ত সম্পদ স্পর্শযোগ্য নয়, এবং মানুষ ও মানুষের সংস্কৃতিকে কাজে লাগিয়ে যে সম্পদ গড়ে ওঠে তাকে অলীকপুঞ্জ বলা হয়।
অলীকপুঞ্জর উদাহরণ
জ্ঞান, শিক্ষা,স্বাস্থ্য, কর্মকুশলতা প্রভৃতি।
অলীকপুঞ্জর বৈশিষ্ট্য
i) অলীকপুঞ্জ স্পর্শযোগ্য নয়।
ii) অলীকপুঞ্জ সম্পূর্নভাবেই মানবীয়।
পর্ব সমাপ্ত।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখিকা পরিচিতি
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী মোনালিসা মাইতি। পড়াশোনার পাশাপাশি বই পড়তে এবং গান গাইতে ভালোবাসেন মোনালিসা ।