শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: বাংলা । অধ্যায় – বনভোজনের ব্যাপার
বনভোজনের ব্যাপার গল্পের লেখক পরিচিতি
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্য জগতের এক অন্যতম নাম। তিনি একজন বিখ্যাত ছোটগল্পকার। তাঁর রচিত গল্পগ্রন্থগুলির মধ্যে দুঃশাসন, বীতংস, ভোগবতী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে একথা স্বীকার করতেই হয়, তাঁর সাহিত্য সৃষ্টি ‘টেনিদা’ চরিত্রের জন্য আজও অবিস্মরণীয়।
বনভোজনের ব্যাপার গল্পের আলোচনা দেখে নাও এই ভিডিও থেকে ↓
বনভোজনের ব্যাপার গল্পের বিষয়সংক্ষেপ
টেনিদা, হাবুল, প্যালা, ক্যাবলা এই চারজন এই গল্পের মূল চরিত্র। যাদের সর্দার বা দলপতি হল টেনি। যাকে ‘সম্মান’ দিয়ে সকলে ‘দা’ অর্থাৎ ‘টেনিদা’ বলে ডাকে। গল্প শুরু হচ্ছে এক বনভোজন বা পিকনিকের আলোচনা দিয়ে। যেখানে পিকনিকের স্থান নির্বাচিত হয়ে গেলেও খাবার এখনো কি খাওয়া হবে। তা ঠিক করা যাচ্ছেনা। এর কারণ টেনিদা!
কারণ পেটুক টেনিদার চাই মুর্গ মসল্লম থেকে সামি কাবাব, চাউ, বিরিয়ানি সব। প্যালা, হাবুলের পছন্দের খাবারকে, এক কথায় পাত্তা না দিয়েই টেনিদার চাই, বাংলা থেকে শুরু করে ভারতের প্রায় সব সেরা খাবার।
কিন্তু, চাঁদা উঠেছে চারজনে মিলে মোট দশ টাকা ছ আনা!
তবে উপায়? উপায় হিসেবে একপ্রকার বাধ্য হয়েই খাবারের লিস্টটাকে কাটছাঁট করতে হল।
রাজহাঁসের ডিম দিয়ে খিচুড়ি,
আলুভাজা,
পোনামাছের কালিয়া,
আমের আচার,
রসগোল্লা, লেডিকেনি।
এখন এদের মধ্যে প্যালার ঘাড়েই দায়িত্ব চাপে রাজহাঁসের ডিম জোগাড় করার।
বেচারা প্যালা তার পরিচিত ডেঁপো ছেলে ভন্টাকে ধরল। তাদের বাড়িতে বেশ কয়েকটা রাজহাঁস আছে। নিশ্চয়ই তারা ডিমও পাড়ে। রীতিমত 2 আনার পাঁঠার ঘুগনি, ডজনখানেক ফুলুরি ‘ঘুষ’ দিয়ে তবে ভন্টাকে রাজি করানো গেল।
কিন্তু শর্ত একটাই, প্যালাকেই দুপুর বেলা চুপিচুপি গিয়ে রাজহাঁসের বাক্স থেকে ডিম বের করে আনতে হবে।
বুকে সাহস নিয়ে তো প্যালা হাজির। একটা বাক্স তার ভিতর সার সার খুপরি। আর সেটা দুটো রাজহাঁস পাহারা দিচ্ছে। সে এগোতেই হাঁস দুটো যেন ক্ষেপে উঠল। যাইহোক, ভন্টা সাহস দেওয়ায় ঐ পচা গন্ধে কোনরকমে যেই না হাত ঢোকাল, ওমনি রাজহাঁস তার রাজকীয় কামড় বসিয়ে দিল প্যলার আঙ্গুলে। এদিকে হাঁস আর প্যালার চিৎকারে, ঘুম ভাঙল ভন্টার মায়ের। ডিম তাই আর পাওয়া হল না। বাধ্য হয়েই ভোরের ট্রেন ধরার আগে মাদ্রাজি ডিম কিনতে হল প্যালাকে।
কিন্তু বেচারা ডিম জোগাড় করতে না পারার অপরাধে ডিমের ডালনা থেকে বাদ গেল প্যালার নাম।
এদিকে টেনিদার মুখ তো থামার নয়। পৌছতে দেরি হবে বুঝে লেডিকেনির হাঁড়ি বের করার ফরমাশ পড়ল। প্রায় চোখের পলকেই কাউকে এতটুকু ভাগ না দিয়েই শেষ হল হাঁড়ি।
রেলগাড়ি তো শেষমেশ পৌঁছল তার গন্তব্যে। কিন্তু সেখান থেকেও তো বেশ অনেকটাই ক্যাবলার মামারবাড়ি। এদিকে বৃষ্টিতে রাস্তা কাদায় কাদা।
আর কি! শুরু হল আছাড় খাওয়ার অভিযান।
হাবুল প্রথমে ডিম নিয়ে উলটে ডিমের শেষকৃত্য ঘটিয়ে দিল, তারপর একে একে প্যলা তার আচারের বোঁচকা সমেত কাদায় গড়াগড়ি দেবার খানিক পরেই সকলের দলপতি “টেনিদা” রসগোল্লার হাঁড়ি সমেত কাদায় ধপাস! সকলের সাধের অনেক খাবারই কাদাতেই মিশে গেল।
কি করা যায় এসবের শোক নিয়েই চারজন হেঁটে চলল গন্তব্যে।
বাগানবাড়ি পৌঁছেই শুরু হল টেনিদার হুকুম। ক্যাবলা আর প্যালার দায়িত্ব পড়ল কাঠ কুটো জোগাড়ের। ওদিকে হাবুলের দায়িত্ব উনুনের ইট জোগাড় করার। আর দলপতি টেনিদা নিল সবচেয়ে শক্ত কাজ, খাবার-দাবার পাহারা দেওয়ার কাজ।
এখন খাবার তো বানাতেই হবে, প্রথমেই টেনিদা প্যালার নাম ঘোষণা করল মাছের কালিয়া বানানোর জন্য।
সে বেচারা আনকোরা হাতে মাছে হলুদ, নুন মাখিয়ে যেই না কাঁচা তেলে ছেড়েছে ওমনি সেই মাছের পিস সব একেবারে তালগোল পাকিয়ে পুরো হালুয়ার অবস্থা। ব্যাস আর পায় কে টেনিদার কানমলার হাত থেকে বাঁচতে প্যালা দে দৌড়। আর কি! পিছন পিছন হাবুল, ক্যাবলাও এসে হাজির।
এমন সময় যখন সবাই হরিমটর চিবানোর কথা ভাবছে, ঠিক তখনই হাবুল আবিস্কার করল পাকা পাকা জলপাই। বনভোজনে এসে এমন টক মিঠে জলপাই উফফ প্রাণ বাঁচল সবার।
অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | ভূগোল
কিন্তু ঐদিকে আরেক কাণ্ড, বেশ খানিকক্ষণ কেটে যাবার পর সকলের হুঁশ হল টেনিদার কথা। তারা টেনিদার কাছে গিয়ে দেখল, সে এক ভারি মজার দৃশ্য। টেনিদা গাছে হেলান দিয়ে ঘুমোচ্ছে আর পিছনে বসে একটা বাঁদর টেনিদার পিঠ চুলকোচ্ছে, আশেপাশে প্রায় অনেকগুলো বাঁদর আলু, চাল, ডাল মনের আনন্দে সাবাড় করছে। এই দৃশ্য দেখে সকলে চিৎকার জুড়তেই বাঁদরগুলো সব খাবারের পোঁটলা সমেত গাছের মাথায়। উফফ সেকি দৃশ্য। গাছে গাছে বাঁদর লাফাচ্ছে, আর ভেংচি কেটে ওদের দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছে।
আর সেই শোকে টেনিদাসহ সবাই মুহ্যমান!
কিন্তু খিদে কি আর এতো কিছু বোঝে! সেতো বেড়েই চলেছে।
শেষে প্যালাই সমাধান দেয়। বনের পাকা জলপাই। ব্যাস আর কি! বনভোজনে বনের পাকা জলপাই! এর চেয়ে ভাল কি হয়। এরপর সকলে আনন্দে জলপাই খেতে ছোটে।
বনভোজনের ব্যাপার গল্পের সারসংক্ষেপ
গল্পটি আদ্যপান্ত একটা মজার গল্প। ভারত স্বাধীনতা লাভের পর ষাটের বা সত্তরের দশকের সেই পুরনো কলকাতার কিছু দুষ্টু-পেটুক ছেলের রোজকার জীবনকেই যেন তুলে ধরা হয়েছে এই গল্পে।
দলপতি টেনিদা বড়ই খাদ্যপ্রিয়। তাই সে খাবারের ভাগ করতে এক্কেবারে নারাজ। এদিকে বাকি চরিত্ররা টেনিদাকে ঘিরে রয়েছে। মারপিট, মনখারাপ, অভিমান সবকিছুর মধ্যেই চারজনেরই তাদের নিজেদের প্রতি নিখাদ ভালবাসার প্রকাশ পেয়েছে। তাই বকা খেয়েও প্যালা যায় রাজহাঁসের ডিম আনতে। আর সেখানে গিয়ে রক্তপাত ঘটলেও সে দমেনা।
অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – গণিত | বিজ্ঞান | ইতিহাস
তার বন্ধুদের আর দলপতি টেনিদার কথা ভেবেই নিজের পয়সা খরচা করেই মাদ্রাজি ডিম জোগাড় করে। নিখাদ ভাল বন্ধুত্ব আর তাদের খুনসুটির মধ্যে দিয়েই লেখক একটি সময়কে ফ্রেমবন্দী করেছেন। যে সময়ে সারল্য ছিল সবার চালিকাশক্তি। মানুষের চাহিদাও ছিল সামান্য। সামান্য ধার করে চাঁদা তুলে করা বনভোজনও হয়ে উঠত বিরাট আনন্দের।
শেষে দেখা যায়, সব পরিকল্পনা চৌপাট হয়ে যাবার পরেও সকলে মিলে বনের পাকা জলপাই খেয়ে যেভাবে শিশুর মত উচ্ছসিত হচ্ছে, তা সত্যি বর্তমান যুগের অসংখ্য চাহিদার ভিড়ে অবসাদগ্রস্ত মানুষের কাছে এক দৃষ্টান্ত।
সমাপ্ত।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখিকা পরিচিতিঃ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত প্রত্যুষা মুখোপাধ্যায়। বিভিন্ন বিষয় চর্চার পাশাপাশি নাচ,গান, নাটকেও প্রত্যুষা সমান উৎসাহী।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করতে ভুলো না।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
VIII_Beng_Bonbhojoner_Byapar