শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: বাংলা। কি করে বুঝব (গদ্য)
লেখিকা পরিচিতি
বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য মহিলা সাহিত্যিক হলেন আশাপূর্ণা দেবী। ভাবতে অবাক লাগবে যে এই জনপ্রিয় সাহিত্যিক তথাকথিত ভাবে বিদ্যালয় ও কলেজে পড়ার সুযোগ পাননি। কিন্তু প্রায় সত্তর বছরের বেশি সময় ধরে তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন অসংখ্য মণি-মুক্ত।
কি করে বুঝবো গল্পের বিষয় সংক্ষেপ
গল্পের শুরুতেই লেখিকার হাত ধরে আমরা মোট চারটি চরিত্রের সাথে পরিচিতি হই। তারা হলেন বুকু, বেণুমাসী, ছেনুমাসী ও ডাম্বেল।
গল্পের মুখ্য চরিত্র তথা সমগ্র শিশুসমাজের প্রতিনিধি হল ‘বুকু’।
এক দুপুরে রোয়াকে খেলায় মগ্ন ছয় বছরের বুকুর সামনে উপস্থিত হয় তার মায়ের ‘পাতানো’ দুই স্থূলকায় মাসি ও তাদের একজনের পুত্র ‘ডাম্বেল’।
স্বভাবতই তাদের সে চিনতে পারে না। কিন্তু ‘দুষ্টু’ বুকু তার কারণ হিসাবে তাদের অতি স্থুল দেহকেই দর্শায়। যাই হোক, শিশুর বুদ্ধি উপেক্ষা করেই দুই ‘মাসী’ ও তাদের সাথে ডাম্বেলের পদার্পণ ঘটে বুকুদের বাড়িতে। কিছুটা বাধ্য হয়েই আগন্তুকদের অনুরোধে বুকু তার মাকে খবর দেয়।
এদিকে সেই ফাঁকা সময়কেই কাজে লাগিয়ে দুষ্টু ডাম্বেলও ঘরের বেশ কিছু জিনিষের ‘ভূগোল’ বদলে দেয়। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ঘরে মেজো কাকার বইসহ বিভিন্ন জিনিষের এলোমেলো অবস্থা দেখে বুকুর রাগ হয়। এবং এসব কর্ম যে ডাম্বেলের মোটা মাথার পরিচায়ক তা বলতেও সে বাকী রাখেনা।
এদিকে আগন্তুক অযাচিত মাসীদের আগমনে কিছুটা বিরক্ত বুকুর মা তাঁর বেণু ও ছেনু মাসীর সামনে খুশীর মোড়কে ভদ্রতা করেন। কিন্তু সারল্যে ভরা বুকু তার মায়ের রান্নাঘরে প্রকাশ করা বিরক্তি সকলের সামনে বলে দেয়। যা তার মাকে সবার সামনে লজ্জায় ফেলে। তার মা যতই বোঝাতে চায় যে বিকেল বেলাটা তার কাছে সম্পূর্ণভাবে অবসরযাপনের সময়, ততই যেন বুকুর সরল হৃদয়, সব মিথ্যের বাঁধ ভেঙে দিতে চায়। সেও তাই তাদের সকলের সামনে বিকেলে সবাই মিলে সিনেমা যাবার কথা প্রকাশ করে বসে।
“কাজ! সিনেমার, টিকিট কেনা রয়েছে না আমাদের? বাবা এলেই তো চলে যাব, তাড়াতাড়ি রুটি–টুটি সব করে নেবে না?”
পাছে বুকু আরো সত্যির জোয়ার ডাকে তাই বাধ্য হয়েই বুকুর মা ছেলেকে ধমক দিয়ে সেই ঘর থেকে বের করে দেন। এবং অনাহুত অতিথিদের সামনে তাদের ‘ডাম্বেলের’ অকারণ প্রশংসার বন্যা দিয়ে মাসিদের ক্ষোভ কমানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেন।
আরো পড়ুন → পূরক, সম্পূরক এবং সন্নিহিত কোণের ধারণা | অভিকর্ষ ও মহাকর্ষ
ঠিক এইখানে এসে গল্পের আরেকটি নতুন মোড় উন্মোচিত হয়।
বুকুর মায়ের ডাম্বেলের স্কুলে ভর্তির প্রশ্নে বেণুমাসীর মিথ্যা অজুহাতে ভরা প্রত্যুত্তর আসার আগেই ডাম্বেল সকলকে চমকে দিয়ে তাকে স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে,তার বাবার কৃপণতার কথা প্রকাশ করে। যা তার মা “বেণুমাসী’কে চরম অস্বস্তিতে ফেলে। বোনকে বাঁচাতে এবার ‘ছেনুর’ আবির্ভাব হয়। সেও ডাম্বেলের দুষ্টুমির বিরুদ্ধে বলা বুকুর কথা তার মায়ের সামনে বলে দেয়। তাতে যারপরনাই আবারও বুকুর মায়ের মাথা লজ্জায় নিচু হয়ে যায়। এই সকল কথার মাঝখানেই ডাম্বেল টেবিল ল্যাম্পের সলিল সমাধি ঘটায়। তিতিবিরক্ত বুকুর মা ভাঙা কাঁচ তুলতে তুলতে ছোট ছেলের দুষ্টুমিকে প্রশংসা করে ঘটনাকে লঘু করার এক বৃথা প্রয়াস করেন।
কাঁচ কুড়োতে বুকুর মা আরও বলেন,
“যে ছেলেরা ছোটো বেলায় দুরন্ত থাকে, তারাই নাকি বড় হয়ে মহাপুরুষ হয়।”
এরপর বেণুমাসী, ছেনুমাসীর সাথে বুকুর মায়ের মেয়েলি আলাপচারিতার মধ্যে রাজভোগ, সন্দেশ, শিঙাড়া, নিমকির আগমন ঘটে। কৃত্রিম ভদ্রতার প্রাথমিক পাঠ শেষ করেই ডাম্বেলসহ দুই মাসি তাদের রেকাবি ফাঁকা করে ফেলেন। এদিকে বুকুর মা যখন মাসীদের সাথে কথা বলছিলেন, সেই সময় বুকুর বাবা অফিস থেকে ফিরে আসেন। বুকুর বাবা অথিতিদের আসার কথা শুনে চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন, কারণ সেই দিন তাদের সিনেমা দেখতে যাবার কথা; এদিকে অতিথিরা উপস্থিত, তাদের ফেলে তো আর সিনেমা দেখতে যাওয়া যায় না!
তাই বুকুর মা তার ছেলের কাছে তার বাবা আসার খবর জানতে চাইলে তাঁর “সত্যবাদী” সরল ছেলে বাবার রাগে বিরক্তিতে মাসীদের উদ্দেশ্য বলা সকল কথাই সবার সম্মুখে প্রকাশ করে। সবার সামনে এই কথা শুনে বুকুর মা যেন রাগে, দুঃখে, অপমানে, লজ্জায় মাটিতে মিশে যায়। শুধু অনাহুত অতিথিদের যাবার প্রতীক্ষা, তারপরই ছেলেকে শাসনের পালা শুরুর সংকল্প করে ফেলেন তিনি। অবস্থা বেগতিক বুঝে মাসীরাও পাততাড়ি গোটায়। এই ফাঁকেই ডাম্বেলের প্রশ্নের উত্তরে বুকু সগর্বে তার স্কুল শিক্ষা শুরুর খবর প্রকাশ করে।
‘কোন স্কুল?’
‘আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’।
তবে এ হল বুকু। এখানেই কী সে থামে!
শেষ পাতে মুখশুদ্ধির মত সে সেই মাসীদের বাড়ি যাবার তাড়া দিতে শুরু করে। এমনকী এও জানায় তার তাড়া দেওয়ার প্রধান কারণ মাসিরা অর্ন্তধান করলে, তবেই বুকুর মা রান্নাবান্না ও তার সাথে সাথে এই অনাহতদের নিন্দা শুরু করতে সক্ষম হবেন।
অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান
অপমানিত অতিথিগণ যায়। এবং বুকুর মায়েরও যেন তার ‘সৎ’, ‘সত্যবাদী’ ছেলেকে তার এই গুণগুলির জন্য ‘শাস্তি’ দেওয়ার হিড়িক পড়ে। বেদম প্রহার চলতে থাকে, বুকুর বাবাও সব শুনে রাগে ফেটে পড়ে তার শাসন শুরু করেন।
এর মধ্যে ছোটো হতবাক বুকু বুঝতে পারে না যে তার মা – বাবা কেন রেগে গেছেন। তাই কাঁদতে কাঁদতে তার মাকে প্রশ্ন করে বসে, কেন তারা রেগে গেছেন, কারণ তার মা–ই তাকে শিখিয়েছেন সত্যি কথা বলতে কিছু গোপন না করতে!
কি করে বুঝবো গল্পটি ভালো ভাবে বুঝে নাও এই ভিডিও ক্লাস থেকে↓
কি করে বুঝব গল্পের সারসংক্ষেপ
এ গল্প লেখিকার কল্পনাপ্রসূত হলেও এ আসলে আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজের এক ক্ষুদ্র সংস্করণ। শিশুকাল থেকেই বিভিন্ন মনিষীদের বানী আউরাই আমরা, তাদের মধ্যে অন্যতম “সদা সত্য কথা বলা”। কিন্তু এই সমাজের সাথে এই অমর বানীর সম্পর্ক ক্রমশ বিলীন হয়ে আসছে। এই পাঠের মর্ম আমরা আর আমাদের মুখগহ্বর থেকে মস্তিষ্কে পৌছাতে দিই না। আর এর একমাত্র কারণ সমাজের স্বার্থপরতা ও ইঁদুর দৌড় প্রতিযোগিতার মানষিকতা।
কিন্তু শিশুরা তারা তো এখনও সমাজের বিষ মস্তিষ্কে আত্মস্থ করেনি। তারা তো তাদের পিতা, মাতা, শিক্ষক শিক্ষিকাদের বলা কথাগুলিকেই পালন করার চেষ্টা করে। যেমন এই গল্পের বুকু ও ডাম্বেল। কিন্তু তাদের এই নিষ্পাপ প্রয়াস তাদের “শিক্ষা তাদের”, কাছেই লজ্জার হয়ে যায়।
তাহলে! এই দোষ কি ঐ শিশুদের?
না তাদের নয়। আসলে দোষ তাদের গুরুজনদের দ্বিচারিতার। তারা সৎ শিক্ষা দেন ঠিকই কিন্তু সেই শিক্ষার প্রয়োগ নিজেদের কাজে ঘটান না।
তাই লেখিকার এই গল্প সমাজের বড়দের “দ্বিচারিতার ব্যধিকে” নগ্নভাবে ‘বুকু’ ও ‘ ডাম্বেলের’ মাধ্যমে সকলের সম্মুখে উপস্থাপন করেছে।
অধ্যায় সমাপ্ত। আরো পড়ো – গাছের কথা
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
VIII_beng_ki_kore_bujhbo