এই প্রবন্ধটি JUMP ম্যাগাজিন আয়োজিত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে।
এই দুর্গাপুজো কোন সাধারণ উৎসব নয় এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির প্রচুর আবেগ ও ভালোবাসা। দুর্গাপুজো বাঙালির কোন পুজো নয়, এটা যেন ঘরের মেয়ের ঘরে ফেরার পালা।
বাঙালিরা সারা বছর অপেক্ষা করে এই পাঁচ দিনের জন্য।
বঙ্গে দুর্গাপূজাকে বাঙালির শ্রেষ্ট উৎসব বলে মনে করা হয়। বঙ্গের মানুষ মনে করেন এই কয়দিন নাকি মা দুর্গা তাঁর ‘সন্তান’ নিয়ে বাপের বাড়ি আসেন; বাংলাটা নাকি মায়ের বাপের দেশ।
এই নিয়ে অনেক লোকগানও প্রচলিত
“গৌরি এই দেখে যা লো
ভবের ভবানী আমার ভবন
করল আলো
গৌরী এল দেখে যা লো”
পুরাণের কথা
মার্কণ্ডেয় পুরাণে বর্ণিত আছে – ব্রম্ভার বরে বলিয়ান মহিষাসুরকে বধের জন্য দেবতাদের তেজ থেকে দেবী দুর্গার সৃষ্টি হয় ও তিনি মহিষাসুরকে বধ করে মহিষাসুর মর্দিনী নামে জগতে পরিচিত হন।
দেবি দুর্গার নামটি হবার পেছনে কারণ হল পুরাকালে ব্রম্ভার বরে বলীয়মান ‘দুর্গমাসূর’-কে বধ। দেবী প্রথমে শাকম্ভরী ও শতাক্ষী-র পরে দুর্গা রূপে ‘দুর্গমাসূর’ কে বধ করেন বলেই তিনি দেবী দুর্গা।
প্রথমত দেবীর রূপ বর্ণনাতে মহাদেবী নিজে ‘সত্ত্ব’ ‘রজ’ এবং ‘তম’ এই তিনটি গুণকে অবদর্শিত করে নিজে ত্রিগুণাতীত বা ত্রিগুণময়ী বলে পরিব্যাপ্ত।
সত্ত্বগুণে – মায়ের ঘোড়া মুখ শ্বেত বর্ণের সিংহ, রজঃগুণে – সিংহের প্রসারিত লালায়িত জিহ্বা ও রক্তমাখা দাঁত, তমগুণে – মহিষাসুর হল তমোগুণের প্রতীক।
ভগবতী, মহামায়া সত্ত্বগুণ দ্বারা রজঃ ও তমো গুণকে অবদর্শিত করে তিনি তিন গুণকে নিজ পদতলে রেখে তার উপর দন্ডায়মান, তাই তিনি ত্রিগুণাতিতা বা ত্রিগুণময়ী।
দেবীর দশহাত দশ দিকের ধারকের প্রতীক, দেবী লক্ষী ও সরস্বতী যথাক্রমে ধন ও জ্ঞানের প্রতীক, বিঘ্ননাশা ও জনগণের পালক বলে তিনি গণেশ এবং সেনাপতিরূপে রক্ষা করার জন্য কার্ত্তিক।
সর্ব্বতো ভাবে দেখতে গেলে দেবী দুর্গা একটা রাষ্ট্র।
মাথার উপর শিব, তিনি রাষ্ট্রপতি। নির্গুণ ব্রম্ভ দেবী, নিজে দেশ প্রধান। দেশ চালাতে গেলে অর্থের প্রয়োজন তাই দেবী লক্ষ্মী। সরস্বতী বিদ্যার অধিকারিণী এবং গণেশ বিঘ্ননাশা এবং জনগণের পালক এবং সবশেষে কার্ত্তিক দেশের রক্ষাকর্তা।
কিংবদন্তী অনুসারে বঙ্গদেশে প্রথম দুর্গাপুজো প্রচলন করেন রাজা কংসনারায়ণ। এই বঙ্গে দুর্গাপুজোকে নিয়ে বলা হয় –
“দাঁ বাড়িতে সাজে গোজে
শোভাবাজারে খায়
সাবর্ণ চৌধুরীর বাড়ি হয়ে
গঙ্গার ঘাটে যায়।”
সেই অর্থে দাঁ বাড়ি সাজ, শোভাবাজারের রাজবাড়ির ভোগ ও সাবর্ণ রায়চৌধুরীর বাড়ির উমা বিদায়পর্ব নাকি দেখার মত।
সাধারণত মোঘল আমল থেকেই বঙ্গে দেবী দুর্গার পুজার প্রচলন ১৬৫০ সাল থেকে সাধারণত বঙ্গের জমিদার বাড়িগুলোতে দুর্গাপুজো হয়।
আর বর্তমানে সেই পুজো জমিদার বাড়ির গণ্ডি অতিক্রম করে সার্ব্বজনীন হয়ে এবং তার থেকেও বড় কথা বাঙালির শ্রেষ্ট উৎসবে পরিণত হয়েছে।
বঙ্গদেশে প্রধানত মহালয়া থেকে দুরগাপুজোর সূচনা হয়ে যায়। মহালয়াতে পিতৃপক্ষের শেষ হয় এবং দেবী পক্ষের সূচনা হয়।
ষষ্ঠীর সারা সন্ধ্যাতে বোধন, সপ্তমীর সকালে নবপত্রিকা স্নান ও পাত্রীপ্রবেশের মাধ্যমে পুজার সূচনা, অষ্টমীতে মহাপূজা – অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিটে সন্ধি পুজো ও বলিদান এবং নবমীতে হোম ও দশমীতে উমা বিদায়, মিষ্টিমুখ সহ শেষ হয় দেবী পূজা।
এবছরের দুর্গাপুজোটা হবে একটু আলাদা
কারণ করোনা বিপর্যয়ের কারণে গোটা পৃথিবী আজ বিপর্যস্ত। দুর্গাপুজোর হবে সবকিছু নিয়ম – রীতি, আচার – অনুষ্ঠান পালন করে, তবে প্রতিবছরে পুজোর যে হই – হুল্লোড় থাকে, সেটা থাকবে না। আমরা বাঙালিরা এই পুজোর সময় জামাকাপড় কেনাকাটা থেকে শুরু করে, ঠাকুর দেখা, রাত জেগে প্যান্ডেলে – প্যান্ডেলে ঘোরা, বাইরে খাওয়া – দাওয়া যা করে থাকি – এগুলো শুধু নেই।
তাহলে কি আমরা আনন্দ করবো না – করব, মাস্ক এবং স্যানিটাইজার রেখে এবং দূরত্ববিধি বজায় রেখে আমরা আনন্দ করবো। আমরা বাড়িতে আনন্দ করবো। আমরা যে যার নিজের পাড়ায় পুজোতে খুব বেশি করে সময় কাটাবো। বাড়িতে পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেব। এই সব কিছুর মধ্যেই চলবে জমিয়ে খাওয়া – দাওয়া। এবারে আমরা হেঁটে নয়, নেটে ঠাকুর দেখবো। আমরা বাঙালিরা বাড়িতে বসেই আগমনীর ঘরে আসার আনন্দ করবো।
সর্বশেষ একটা প্রার্থনাই মায়ের উদ্দেশ্যে জানাই যে বর্তমান বছরে সকলকে এই করোনা নামক বিপদ থেকে উদ্ধার করে জগতকে শান্তি প্রদান করুন মা।
লেখিকা পরিচিতি
স্নেহা দাস একজন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। বর্তমানে সে অগ্রসেন বালিকা শিক্ষা সদনে পড়াশোনা করছে । এই প্রবন্ধটি JUMP ম্যাগাজিন আয়োজিত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা