‘পটচিত্রের রহস্য’ একটি পুর্নাঙ্গ গল্প। গল্পটি কাল্পনিক হলেও এর বিষয়বস্তু ভারতবর্ষের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক চরিত্র – সম্রাট অশোক। আজ অন্তিম পর্ব।
[আরো পড়ুন – এই লেখার প্রথম পর্ব ]
এপ্রিল শেষ হতে চলল। দয়া নদীর ধারের মেলাও আজ শেষ। আজ আর সাধুবাবার চোখে ঘুম নেই। মাঝে মাঝে ধ্যানে বসছেন, উঠছেন, বাইরের দিকে দেখছেন। মনে সেই এক প্রশ্ন – ‘তবে কি দেখা হবে না?’ অবসন্ন শরীর। হঠাৎ কারো আগমনের শব্দে সাধুবাবা তড়াক করে উঠে বসলেন। অস্ফুট স্বরে বললেন – ‘দেবানাম পিয় পিয়দসী? এসেছো?

সাধুবাবার কাছে সম্রাটের বিনীত নিবেদন – “আজ চারিদিকে এত নৈরাজ্য। কিন্তু কেন? আজ কি ‘ধর্মমহামাত্ররা’ (যারা আমার সময়ে ধম্মনীতি কার্যকরী করত) নেই? প্রজাদের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্যই বা কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়? ‘মহারক্ষিত’-রাই বা কোথায় গেল, যাদেরকে আমি সিরিয়া, মিশর, ম্যাসিডোনিয়া, কাইরিন প্রভৃতি গ্রীক রাজ্যে ধর্ম প্রচারের জন্য পাঠিয়েছিলাম? ভারতের বাইরে ভারতের সংস্কৃতি কিভাবেই বা বিস্তার করা হয় এখন? বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে আমি দিগ্বিজয় ত্যাগ করলাম। সাম্য, মৈত্রী আর ভ্রাতৃভাব দিয়েই সকলের হৃদয় জয় করলাম। ধর্মমত খোদাই করে রেখে গেছি পর্বতের গুহায়, পর্বতের গায়ে এবং স্তম্ভে। ব্রাহ্মীলিপিতে খোদাই করা হয়েছিল সেই সময়ে। আপনারা কি আমার কিছুই অনুসরণ করেন নি?”

সাধুবাবা হাসলেন – “তোমার অশোকচক্র স্বাধীন ভারতের পতাকায় স্থান পেয়েছে। অশোকস্তম্ভের মর্যাদাও আমরা রেখেছি। তবে এত বড় দেশ ভারতবর্ষ, এত জনসংখ্যা, তাই সমস্যাও অনেক।”
সম্রাট অশোক জানালেন – দক্ষিণে বর্তমানের তামিলনাড়ু, কেরল বাদ দিয়ে সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশই আমার সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল। এখনকার আফগানিস্থান থেকে বাংলাদেশ সবই আমার রাজত্বের মধ্যে ছিল। আমার রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র। প্রাদেশিক রাজধানী ছিল তক্ষশীলা আর উজ্জয়িনীতে। সাম্রাজ্যের আভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতি দুটোই মজবুত করার দিকে সচেষ্ট ছিলাম।”
“কিন্তু সেসব শুধু দেখলেই যে হবে না, আজ মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির খুবই প্রয়োজন” – সম্রাট স্বগতোক্তি করলেন – “জানেন আমার ব্রাহ্মী – খরোষ্ঠী লিপিতে সে সব লেখা আছে।”

সাধুবাবা বললেন – “জানি সম্রাট – জেমস প্রিন্সেপ সেসব অর্থ আমাদের জন্য উদ্ধার করেছেন।”
চার
এদিকে ঘনশ্যাম উদভ্রান্তের মত এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে পথভ্রষ্ট হয়ে জঙ্গলের মধ্যে একটা পর্ণকুটীরের সামনে এসে কুটীরের ভেতর প্রবেশ করল। দেখতে পেল এক সাধু মেঝেতে পড়ে আছেন, কুটীরের বাইরে থেকে কানে এল কিছুক্ষণ আগের শোনা সেই ঘোড়ার খুরের শব্দ। কে যেন ঘোড়ায় চড়ে দূরে চলে যাচ্ছে।
সাধুবাবার মুখে জল দিলেও তার জ্ঞান না ফেরায় সে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। তার নিজের মনের অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। যাই হোক ভোর হতেই লোকজন ডেকে আনলো সে। সাধুবাবার নিথর দেহ তাদের হাতে তুলে দিয়ে নিজের তাঁবুতে ফিরে মনস্থির করল তাড়াতাড়ি রঘুরাজপুরে ফিরে যাবে। অবিক্রিত পটচিত্র কটি তুলে ব্যাগে পুরতে পুরতে মনে হল – এইতো, সবকটাই রয়েছে, হ্যাঁ, হ্যাঁ, এইতো সম্রাট অশোকের পটচিত্র। দরদর করে ঘামতে লাগলো ঘনশ্যাম।
[আরো পড়ুন – এই লেখার দ্বিতীয় পর্ব ]
শেষের কথা
পটচিত্র অঙ্কনে ঘনশ্যাম এত পটু ছিল যে মনে হোত চরিত্রেরা জীবন্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু ঘনশ্যাম কখনো ভাবে নি যে পটচিত্র থেকে চরিত্র বাস্তব হয়ে উঠবে। এটাকে কি বলা যাবে? কল্পনা? হ্যালুসিনেশন? এরপরে কি হল?
এরপর আর কি, পুরুষানুক্রমে সেই ঘটনার গল্প চলছে ঘনশ্যামের পরিবারে।