আমরা ছোটবেলায় বিভিন্ন গাণিতিক পদ্ধতিকে চিহ্নের সাহায্যে প্রকাশ করতে শিখি।
যেমন দুইয়ের সাথে তিন যোগ কথাটিকে আমরা লিখি 2 + 3 করে। আবার বিশেষ রকমের যোগ (যেমন ঋণাত্মক সংখ্যার যোগ) কে আমরা বিয়োগ বলে থাকি। যেমন তিনের সাথে ঋণাত্মক দুই (-2) এর যোগ কে আমরা তিন থেকে দুই বিয়োগ করাও বলতে পারি। সেটিকে প্রকাশ করতে আমরা লিখি 3+(-2) বা 3-2।
ঠিক তেমনি গুণ মানে একই সংখ্যাকে সেই সংখ্যার সঙ্গে বারবার যোগ করা, মানে যত গুণ করতে হবে ততবার যোগ করা। বিশ্বাস হচ্ছে না? একটা উদাহরণ দেখা যাক, যেমন 4×3 মানে 4+4+4 তিনবার যোগ। ঠিক তেমনি ভাগ মানে কোনো সংখ্যাকে ভাজকের বিপরীত সংখ্যা দিয়ে গুণ। যেমন মানে বা
কিন্তু বারবার এই যোগের মাধ্যমে হিসেব করা বিরক্তিকর ও সময়সাপেক্ষ। তার জন্যই আমরা নামতা ও বিভাজ্যতার সাহায্য নিয়ে গুণ ও ভাগ করে থাকি।
শুধু তাই নয় ছোটবেলায় আমরা বিভাজ্যতার নানান নিয়ম জেনেছি, কিন্তু বিভাজ্যতার বীজগাণিতিক ব্যাখ্যা জানা আছে কি? এই প্রবন্ধে বিভাজ্যতা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
শূন্য (০) দ্বারা ভাগ:
কোনো সংখ্যাকে শূন্য দ্বারা ভাগ করা যায় কি?
না!!! যে মান আসবে তা অনির্ণেয়।
কিন্তু আগেই বলেছি ভাগ মানে সেই সংখ্যার বিপরীত সংখ্যা দিয়ে গুণ। সুতরাং যদি কোনো সংখ্যাকে শূন্যের কাছাকাছি কোনো অতিক্ষুদ্র সংখ্যা দিয়ে ভাগ করতে বলা হয়, তাহলে ওই সংখ্যাকে অতি বৃহৎ একটি সংখ্যা দিয়ে গুণ করতে হবে, যার ফল অত্যন্ত বৃহৎ হবে। এভাবে আমরা যত ক্ষুদ্রতর সংখ্যা দিয়ে ভাগ করবো, ভাগফল ততই বৃহত্তর হবে, অর্থাৎ শূন্যের দিকে ভাজক পৌঁছালে ভাগফলও অসীমের দিকে পৌঁছাবে।
সব গুলিয়ে গেল তো? এবারে ব্যাপারটা দেখে নেওয়া যাক।
এইরকমভাবে ভাজকের ক্ষুদ্রতর ম্যান ভাগফলকে বৃহত্তর করতেই থাকবে। কিন্তু এখানে লক্ষ্যণীয় সমস্ত বৃহত্তম সংখ্যা কিন্তু আলাদা আলাদা হবে। যেমন 2 কে ০.০০০০০০০০০০1 দিয়ে ভাগ করে পেলাম 2০০০০০০০০০০০ কিন্তু এখানে যদি 7 কে ০.০০০০০০০০০০1 দিয়ে ভাগ করতাম, তবে 7০০০০০০০০০০০ উত্তর পেতাম।
[আরো পড়ুন – শূন্যের ইতিহাস]
এক (১) দ্বারা ভাগ: যেকোনো স্বাভাবিক সংখ্যা
যেকোনো সংখ্যাকে তত সংখ্যক 1 এর যোগফল হিসেবে লেখা যায়। আবার একই সংখ্যাকে বারবার যোগকে ওই সংখ্যা দ্বারা গুণ বোঝায়। সুতরাং বারবার এক যোগ করা মানে 1 দিয়ে ওই সংখ্যার গুণ, সুতরাং সংখ্যাটি 1 এর গুণিতক হবেই। সুতরাং সংখ্যাটি এক দ্বারা ভাজ্য।
ধরি সংখ্যাটি 4।
এখন 4= 1+1+1+1 লেখা যেতে পারে। গুণের নিয়ম অনুসারে 1+1+1+1 = 4×1 হিসেবে লেখা যায়, অর্থাৎ 4 = 4 × 1। অর্থাৎ 4 সংখ্যাটি 1 এর গুণিতক বা 1 সংখ্যাটি 4 এর একটি উৎপাদক। সুতরাং 4 কে 1 দিয়ে ভাগ করা যাবে।
এখন সংখ্যাটি ধরি a।
এবার a = 1+1+1+1….a বার লেখা যেতে পারে। গুণের নিয়ম অনুসারে 1+1+1+1….a বার= a×1 হিসেবে লেখা যায়। অর্থাৎ a = a × 1, তাহলে a সংখ্যাটি 1 এর গুণিতক বা 1 সংখ্যাটি a এর একটি উৎপাদক। সুতরাং a কে 1 দিয়ে ভাগ করা যাবে।
2 দ্বারা ভাগ: যেকোনো জোড় সংখ্যা
সংখ্যাশ্রেণীকে আমরা যদি ভালো করে লক্ষ্য করি তবে দেখবো স্বাভাবিক সংখ্যা গুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা, বিজোড় ও জোড়।
জোড় হলো সেই সংখ্যা যেই সংখ্যা থেকে একটা একটা করে সংখ্যা সরাতে থাকলে এমন একটা সময় আসবে যখন দেখবো যতগুলো সংখ্যা আমরা শ্রেণীটি থেকে সরিয়েছি, ততগুলো সংখ্যাই বাকি পড়ে আছে, অর্থাৎ প্রথম সংখ্যাটি বর্তমান সংখ্যার দু গুণ ছিল।
মানে প্রথম সংখ্যাটি 2 এর গুণিতক, সুতরাং 2 দ্বারা বিভাজ্য। সুতরাং আমরা বলতে পারি জোড় সংখ্যা হলেই তা 2 দ্বারা বিভাজ্য।
প্রথম 10 টি স্বাভাবিক সংখ্যা হলো 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9 ও 10। এদের প্রত্যেকটির শেষ সংখ্যা আলাদা। 10 এর উপরে যেকোনো সংখ্যার শেষ অঙ্কটি 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9 ও 0 এই দশটি সংখ্যারই কেউ হবে। এবার দেখি এদের মধ্যে কে জোড় আর কে বিজোড়।
- 1 থেকে 1 সরালে 0 পড়ে থাকে: অসমান = বিজোড়।
- 2 থেকে 1 সরালে 1 পড়ে থাকে: সমান = জোড়।
- 3 থেকে 1 সরালে 2 পড়ে থাকে, 2 সরালে 1 পড়ে থাকে: অসমান = বিজোড়।
- 4 থেকে 2 সরালে 2 পড়ে থাকে: সমান = জোড়।
- 5 থেকে 2 সরালে 3 পড়ে থাকে, 3 সরালে 2 পড়ে থাকে: অসমান = বিজোড়।
- 6 থেকে 3 সরালে 3 পড়ে থাকে: সমান = জোড়।
- 7 থেকে 3 সরালে 4 পড়ে থাকে, 4 সরালে 3 পড়ে থাকে: অসমান = বিজোড়।
- 8 থেকে 4 সরালে 4 পড়ে থাকে: সমান = জোড়।
- 9 থেকে 4 সরালে 5 পড়ে থাকে, 5 সরালে 4 পড়ে থাকে: অসমান = বিজোড়।
- 10 থেকে 5 সরালে 5 পড়ে থাকে: সমান = জোড়।
অর্থাৎ 2, 4, 6, 8 আর 10 জোড়, এবং 1, 3, 5, 7 আর 9 বিজোড়। এবার 10 এর থেকে বড় কোনো সংখ্যাকেই 10 এর গুণিতক ও এদের যেকোনো সংখ্যার যোগফল হিসেবে লেখা যায়।
যেমন 362880 = 3×100000 +6×10000 + 2× 1000 +8 x 1000 + 8×10 +0।
একে 2 দিয়ে ভাগ করলে আলাদা আলাদা ভাবে 10 ও 0 দুই দ্বারা বিভাজ্য। অর্থাৎ 362880 সংখ্যাটি 2 দ্বারা বিভাজ্য।
যদি সংখ্যাটি abc হয় তবে স্থানের নিয়মানুসারে abc = 100a +10b + c = 10x 10a +10b + c হিসেবে লেখা যেতে পারে। আগেই বলেছি 10, 2 দ্বারা বিভাজ্য। সুতরাং 100a +10b সংখ্যাটি 2 দ্বারা বিভাজ্য। সুতরাং c = (2, 4, 6, 8 বা 0) জোড় হলে সংখ্যাটি 2 দ্বারা বিভাজ্য হবে, নচেৎ হবে না।
3 দ্বারা ভাগ : সংখ্যার মুখ্য মানগুলির যোগফল 3 দ্বারা বিভাজ্য
একটি সংখ্যা ধরি 362880।
সংখ্যাটির মুখ্য মান 3, 6, 2, 8, 8 ও 0।
এদেরকে যোগ করে পাই 3+6+2+8+8+0 = 27।
আবার 27 সংখ্যাটির মুখ্য মান 2 ও 7। তাদের যোগফল 2+7 = 9 = 3+3+3 = 3×3।
অর্থাৎ 9, 3 এর গুণিতক। অর্থাৎ 27, 3 দ্বারা বিভাজ্য, অর্থাৎ 362880 ও 3 দ্বারা বিভাজ্য।
বীজগাণিতিক ভাবে দেখতে গেলে ধরি সংখ্যাটি abc। এখন abc কে স্থানাঙ্ক মান দিয়ে লেখা যায় abc = 100a +10b +c = 99a +9b + (a +b +c) = 9 x (11a +b) + (a +b +c)।
এখন 9 x (11a +b) অংশটি যেহেতু 9 এর গুণিতক, সুতরাং এটি 3 এর গুণিতকও বটে। সুতরাং (a +b +c) 3 এর গুণিতক হলেই আলাদা আলাদা ভাবে (a +b +c) ও 9 x (11a +b) তিন দ্বারা বিভাজ্য। সুতরাং abc, 3 দ্বারা বিভাজ্য।
আরো পড়ুন
কিছু বোঝা গেল? নাকি সব গুলিয়ে গেল?
গণিত ব্যাপারটা ভারী মজার, বুঝলে খুব সহজ আর না বুঝলে …। ব্যাপারটা না বুঝে থাকলে আরো একবার প্রবন্ধটা প্রথম থেকে পড়ে নাও আর খাতা কলম নিয়ে উদাহরণগুলো নিজে কষে দেখ।
দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা