editorial_jump_16-06-19 copy
Editorial (সম্পাদকীয়)

ভেবে দেখুন একবার!

ভাবছেন কি ভেবে দেখবেন?

আসুন কয়েকটি তথ্য দেখা যাক। কয়েকদিন আগে ‘প্রথম’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 14 -18 বছর বয়সী পড়ুয়াদের উপর সমীক্ষা চালায়। তার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য

  • 14 – 18 বছর বয়সী পড়ুয়াদের মধ্যে 25% সাধারণ পাঠ্যসূচি পড়তে অক্ষম।
  • মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের 48% শতাংশ ছাত্রছাত্রী সাধারণ ঐকিক নিয়মের অঙ্ক করতে পারে না।

এতো গেল জাতীয় সমীক্ষার কথা। এবার আসা যাক আমাদের পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিক পরীক্ষার কথায়। 2019 সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রী সংখ্যা 8 লক্ষ্য 76 হাজার 694 জন আর তাদের মধ্যে 60% এর চেয়ে কম নম্বর পাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা 7 লক্ষ্য 59 হাজার 411 জন।

অর্থাৎ, 86% মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর মাত্র 60% এর নিচে।

ei_somay
মাধ্যমিক ২০১৯-এ প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা বিন্যাস [সৌজন্যে – এই সময় দৈনিক]

এটা কি অশনি সঙ্কেত?

হ্যাঁ, অন্তত আমাদের তাই ধারণা। কারণ, আজকে যারা মাধ্যমিক অথবা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কালকে তারাই আমাদের দেশের তরুণ নাগরিক হয়ে উঠবেন। নিজেদের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে সমাজ তথা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন উন্নতির শীর্ষে।

একথা নতুন নয় যে কাজের বা চাকরীর বাজার ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। ভালো কাজের সুযোগ কমছে বই বাড়ছে না। তার উপর অটোমেশনের হাতছানি দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে, যা বাস্তবায়িত হলে আগামী দিনে সাধারণ কাজ পাওয়াও জটিল হয়ে উঠবে।

তাই এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজের সেরাটা না দিলে ভবিষ্যতে যে সমস্যায় পড়তে হতে পারে একথা অনুমান করা কঠিন নয়।


[আরো পড়ুন – কিভাবে মনোযোগ বাড়ানো যাবে?]

এই সমস্যার কারণ কি?

কারণ একধিক, তবে মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা যায় – না বুঝে পড়ার অভ্যাসকে। একটু ব্যাখ্যা করা যাক।

ধরা যাক, একটি বাচ্চা সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। সে সবে ঐকিক নিয়মের অঙ্ক করতে শিখছে। কিন্তু কিছুতেই ব্যপারটা তার কাছে সহজ হচ্ছে না।

সে তার শিক্ষককে ভয়ে প্রশ্ন করতে পারে না, পাছে তিনি সকলের সামনে বকা দেন। তাই সে একটা ‘shortcut’ শিখে নিল। কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্ক সে মুখস্থ করে নিল আর স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় তা দারুণভাবে উগরে দিল। বছর শেষে ভালো নম্বরও পেল। ছাত্রও খুশি তার তার অভিভাবকও খুশি। ছাত্র ‘ঐকিক নিয়ম’ বিদায় হয়েছে, বাঁচা গেছে ভেবে হাঁফ ছেড়ে বাচলো।

কিন্তু তার বিপদ এখানেই শেষ নয়। কারণ নবম অষ্টম শ্রেণীতে উঠে সে দেখলো এবার তার জন্য অপেক্ষা করে আছে সময় ও কাজের অঙ্ক, যেগুলি ভালো ভাবে করতে গেলে ‘ঐকিক নিয়মের সাধারণ নিয়ম’ জানতেই হবে। এবার সে নিরুপায়। হয় তাকে সপ্তম শ্রেণির ঐকিক নিয়ম আবার বুঝতে হবে, অথবা আবার মুখস্থ করতে হবে।

দুঃখের বিষয়, এই অবস্থায় বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই  মুখস্থ করার পথটাই বেছে নেয়।

তাহলে উপায়?

অন্যতম উপায় অভিভাবকদের সচেতনতা। এটা নিশ্চয় সঠিক যে সব অভিভাবকদের পক্ষে ছাত্রছাত্রীদের পুরো পড়াশোনা দেখা সম্ভব নয়। আমরা তা বলছিও না।

কিন্তু অভিভাবকেরা বাচ্চাদের পাশে দাঁড়াতেই পারেন। কিভাবে করবেন ভাবছেন? একটা ছোট তালিকা আপনার জন্য।

  • স্কুলে কি পড়াশোনা হচ্ছে নিয়মিত খোঁজ রাখুন।
  • যদি বাচ্চা আলাদা করে কোচিং নেয় তাহলে শিক্ষকের সাথে মাসে অন্তত একবার কথা বলুন ও বাচ্চার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান।
  • প্রতিদিন বাচ্চার সাথে গল্প করুন, বোঝার চেষ্টা করুন পড়াশোনা অথবা অন্য কোন বিষয়ে সে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা।
  • সর্বোপরি, সব পড়া বুঝতে পারছে কিনা তা নিজের মত করে বুঝতে চেষ্টা করুন
  • যদি পড়া বুঝতে অসুবিধা হয় সেক্ষেত্রে সধারণ মানের জনপ্রিয় শিক্ষকের কাছে না গিয়ে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের সন্ধান করুন

মনে রাখবেন, একজন ভালো ছাত্র বা ছাত্রী একটি সন্মিলিত প্রচেষ্টার ফলাফল। যেখানে ছাত্র / ছাত্রীর কঠোর পরিশ্রমের সাথে থাকে অভিভাবকদের ত্যাগ এবং শিক্ষকদের নিরন্তর প্রচেষ্টা।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –