সেদিন রাস্তায় হঠাৎ শ্রীরূপার সাথে পলির দেখা হয়ে গেলো।
সোশ্যাল নেটওয়ার্ক-এর যুগে এককালের স্কুল জীবনের ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ থাকলেও; মুখোমুখি গল্প করার মজাই আলাদা। বলাই বাহুল্য যে গল্প জমে উঠতে তেমন সময়ই লাগলো না। এই কথা – সেই কথা হতে হতে নিজেদের ছেলে-মেয়ের কথা শুরু হল।
ঘটনাক্রমে শ্রীরুপার ছেলে রণ এবং পলির মেয়ে রিমা দুজনেই ক্লাস এইটে পড়াশোনা করছে। অভিভাবকদের মধ্যে দুজনের মা-ই ছেলেমেয়েদের নিয়ে সবথেকে বেশি মাথা ঘামান।
তাই পড়াশোনার প্রসঙ্গ উঠতে সময় লাগলো না মোটেই।
শ্রীরূপা – দেখতে দেখতে রণ আর রিমার ক্লাস এইট হয়ে গেল। দুজনেই যা দস্যি পড়তেই চায় না। ভবিষ্যতে যে কি করবে না!
পলি – ঠিক বলেছিস, দুই বছর পরে মাধ্যমিক দেবে অথচ সিরিয়ানেস ব্যাপারটাই নেই।
শ্রীরূপা – রণকে দু-জন মাস্টারের কাছে দিয়েছি। এক জন সায়েন্স গ্রুপটা দেখেন এবং একজন আর্টস গ্রুপটা দেখে দেন।
পলি – আমিও তাই করেছি। ইচ্ছা আছে নাইন থেকে রিমাকে একজন অঙ্কের আলাদা মাস্টার দেব।
অভিভাবকদের বলছি, শ্রীরূপা আর পলির মতো আপনারাও কি একই ভুল করেন?
আপনারাও কি ছেলে – মেয়েদের তথাকথিত সায়েন্স গ্রুপ ও আর্টস গ্রুপ পড়তে পাঠান? যদি এটা করে থাকেন তাহলে আপনি অন্যায় করছেন।
কারণ, মাধ্যমিক অবধি ছাত্র-ছাত্রীদের সাতটা বিষয় পড়ানো হয়। আর এই সাতটি বিষয় প্রতিটা বিষয়ের থেকে আলাদা, তাই প্রতিটি বিষয়ের পড়ানোর ধরণটাও সম্পূর্ণ আলদা হওয়া উচিৎ।
সব কটি বিষয় একাই পড়ান
আমরা এই সমস্যা প্রতিনিয়ত সামনে থেকে দেখছি। ধরা যাক, একজন শিক্ষক অঙ্কে গ্রাজুয়েশন অথবা পোস্ট গ্রাজুয়েশন করেছেন। ‘শ্রীরুপার ছেলে রণ’ তার কাছে ‘সায়েন্স গ্রুপ’ পড়তে গেল। এই বার ভেবে দেখুন সেই শিক্ষক যে আগ্রহ নিয়ে রণকে অঙ্ক শেখাবেন তিনি কি সেই আগ্রহ নিয়ে রণকে জীবন বিজ্ঞান বা রসায়ন শেখাবেন?
এই প্রশ্নের একটাই উত্তর – না। কারণ এটা অবাস্তব ও অসম্ভব।
[আরো পড়ুন – বিপদ!]
প্রতিটি বিষয় কি আলদা আলাদা ভাবে পড়া উচিৎ?
আসুন এর উত্তর খোঁজা যাক অন্য দুই বোর্ডের পড়াশোনার পদ্ধতির উপর। CBSE বোর্ডে সায়েন্স বলে একত্রিত ভাবে একটাই বিষয় দশম শ্রেণি অবধি পড়তে হয়। এই সায়েন্সের মধ্যে তিনটি বিষয় থাকে Physics, Chemistry আর Biology। স্কুল তো বটেই, এমনকি সব কোচিংগুলোতেই আলদাভাবে প্রতিটি বিষয় পড়ানো হয়। ICSE বোর্ডের ক্ষেত্রে তো তিনটি বিষয়কেই আলদা ভাবে দেখা হয়।
আলাদা ভাবে পড়লে কি সুবিধা পাওয়া যায়?
ইংরাজিতে একটা কথা আছে ‘Morning shows the day’ অর্থাৎ আপনার সারাদিন কেমন যাবে তা আপনার সকালই বলে দেবে।
এই কথাটি ভবিষ্যতের কেরিয়ারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অষ্টম শ্রেণীকে ভিত্তি করে নবম ও নবমকে ভিত্তি করে দশম শ্রেণির সিলেবাস তৈরি হয়। তাই বলা যায় নিচু ক্লাস থেকে ভিত তৈরি না হলে পরবর্তী সময়ে ভালো রেজাল্ট করা খুবই মুশকিল।
তাই আমদের বিনীত অনুরোধ সন্তানের পাঠ্য সাতটি বিষয়কেই সমান গুরুত্ব দিন। সায়েন্স – আর্টসের ফাঁদে আটকে ওর ভবিষ্যতের সাথে compromise করবেন না।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা