প্রিয় ছাত্র – ছাত্রীবৃন্দ,
যারা ২০২০ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চলেছে তাদের সকলকেই প্রথমে শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখি। প্রথম শ্রেণী থেকে এই দশম শ্রেণী পর্য্যন্ত আসার পথে তোমরা অসংখ্য পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছ । সুতরাং প্রাক্ পরীক্ষায় যে চাপ, সেই সম্পর্কে তোমরা যথেষ্টই ওয়াকিবহাল।
কিন্তু তবুও মাধ্যমিকটা যেন সত্যিই একটু অন্যরকম।
তাছাড়া পরীক্ষাটা দিতেও যেতে হবে অন্য স্কুলে, তাই পরিবেশ বা পরিস্থিতি দুটোই ভিন্ন। সুতরাং অতিরিক্ত চাপ কাটানোর জন্য কিছু বিশেষ পদ্ধতি তো অবলম্বন করতেই হয়।
প্রথমেই বলি, মনঃসংযোগ ও মানসিক শান্তি বজায় রাখাটা এ সময় ভীষণ জরুরী। আমরা এটা বলছি না যে সারাক্ষণ বই-মুখের সামনে ধরে বসে থাকতে হবে।
আসলে মাধ্যমিকের মত এরকম একটা বড় পরীক্ষার আগের মূহুর্তে দূরদর্শন দেখা, সিনেমা, খেলা ইত্যাদি দেখা বন্ধ রাখলেই বোধ হয় ভাল। কারণ যা আমরা দেখি পরবর্তীকালে তা নিয়ে আমাদের মনে কিছুটা ভাবনার মূহুর্ত তৈরী হয়, অনেকটা দিবা – স্বপ্নের মত।
প্রত্যেকেরই মনঃসংযোগ করার কিছু বিশেষ পদ্ধতি আছে যেমন গান শোনা, প্রানায়াম ইত্যাদি। তবে এগুলো ছাড়াও আমরা আরও একটা বিশেষ ব্যাপারের কথা বলব যেটা হল ঘুম। বলা হয় ঘুম স্মৃতির সংরক্ষনে সাহায্য করে। অনেককেই দেখা যায় পরীক্ষার আগে রাত জেগে পড়াশুনা করে। আমাদের মনে হয় এটা না করাই ভাল। পরীক্ষার আগে বা পরীক্ষার সময় স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী শরীরকে বিশ্রাম দিলেই বোধ হয় ভাল হয়।
অনেকে হয়তো প্রশ্ন করবে শেষ মূহুর্তে যেটা পড়লাম সেটাকে তৈরী করতে তো সময় লাগবে।
আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন আমাদের মাস্টারমশাইরাও আমাদের শিখিয়েছিলেন বড় পরীক্ষার অন্তত তিন – থেকে চার মাস আগে প্রয়োজনীয় সমস্ত পাঠ্য সম্পূর্ণ করা উচিত।
পরীক্ষার আগের কয়েকটা মাস কেবল অনুশীলন আর অনুশীলন। তাই আমরাও বলি তোমরা ইতিমধ্যেই নিশ্চই টেস্ট পেপার পেয়ে গেছ। তাই এখন টেস্ট পেপার ধরে সময় অনুসারে শুধু পেপার সলভ্ কর। অনেকে বলে টেস্ট পেপার দেখে কোন প্রশ্নটা বেশি বার দিয়েছে বা বাছাই কোন প্রশ্নের একটা সেট দেখে সাজেশন্ তৈরী করে নেব।
আমাদের মতে, সাজেশনের ধারণা একেবারে ভুল।
বিশেষত বিজ্ঞনের বিষয়গুলির জন্য সাজেশন এর ধারণা মোটেই ঠিক নয়। সত্যি কথা বলতে কি পরিশ্রমের কোন বিকল্প হয় না। তাই সাজেশন ভিত্তিক পড়াশোনা না করে পরিশ্রমের সহজ পথ বেছে নেওয়াই ভাল।
এত কথা বলার পরে কারোর মনে হতে পারে যে, আপনারা তো আর ছাত্র নন। তাই ছাত্রদের মত করে এত গুলো বিষয়ের চাপ নেওয়া যে কি কষ্ট তা বুঝবেন কি করে!
আমরা এখন বয়সে হয়তো তোমাদের থেকে বেশ খানিকটা বড় কিন্তু এই অবস্থায় আসার জন্য তোমাদেরই মত একটা সময় পার করে আসতে হয়েছে আমাদের; তাই এখনও পর্য্যন্ত আমরা যা বলেছি তা কিন্তু উপদেশ হিসাবে নয় আমাদের পূর্ব – অভিজ্ঞতাই শুনিয়েছি।
[আরো পড়ো – মধ্যমিকে কিভাবে নম্বর বাড়ানো যায়?]
আগামি কয়েকটা পর্বে আমরা প্রতিটা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো কিন্তু দুটি ভীষণ
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু সব পরীক্ষার জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ।
এক) হাতের লেখা –
পরীক্ষার খাতায় হাতের লেখা একেবারে ছবির মত সুন্দর করতে হবে এরকম কথা আমরা বলছি না, কিন্তু সেই লেখা যেন পড়া যায়। আমাদের অনেকের হাতের লেখাই সুন্দর নয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে হরফ্ গুলো পাঠ যোগ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়।
মনে রাখবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যেন তোমাদের কাছে পাঠানো পরীক্ষকের চিঠি আর উত্তরপত্র হল পরীক্ষককে লেখা তোমার চিঠি। তাই সেই চিঠিতে অপ্রাসঙ্গিক লেখা লিখে ভরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও যেন না থাকে।
দুই) পাতা নেওয়ার প্রবণতা –
মাধ্যমিকের সময় তোমাদের যে উত্তর পত্রটা দেওয়া হয় তা বহরে যথেষ্ট বড়। তাতে প্রায় ষোলটি লিখন যোগ্য পাতা থাকে (ইংরাজি বিষয়ের জন্য প্রযোজ্য নয়)। অনেকে মনে করে থাকে যে আমি যত বেশি পাতা নেব, আমার উত্তরপত্রটি তত বেশি মোটা হবে আর বেশি নম্বর পাব।
এই ধারণা সত্যিই ঠিক নয়। আগেই বলেছি আবারো বলছি অপ্রাসঙ্গিক কথা না লিখে উত্তরপত্রের আকৃতি বড় না করে যথাযোগ্য লেখাই ভাল ফল করতে সাহায্য করবে।
এবার উত্তর লেখা প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কথা আলোচনা করা যাকঃ
যারা মাধ্যমিকের খাতা দেখেন তারা কতগুলি ব্যাপারে অসুবিধার সম্মুখীন হন, যেমন
- MCQ ধরনের প্রশ্নের বেশির ভাগই তোমরা সঠিক বিকল্পের দাগ নম্বরটা দিয়ে ছেড়ে দাও। তোমাদের কাছে আমাদের অনুরোধ যে তোমারা বিকল্প দাগ নম্বরের সাথে পূর্ণ বাক্যে উত্তর লেখার চেষ্টা করো।
- কোন কোন বিষয়ের ক্ষেত্রে, বামস্তম্ভ ও ডান স্তম্ভ মিলিয়ে লিখতে বলা হয়। এক্ষেত্রে বাম স্তম্ভটির উত্তর পত্রে একই রেখে সেই অনুযায়ী ডান স্তম্ভের সঠিক উত্তর গুলোর উপস্থাপন করলে ভাল হয়।
- অনেকেই তোমরা খাতায় মার্জিন টেনে থাকো। কিন্তু মার্জিন টান বা না টানো বিশেষত গণিত, ভৌতবিজ্ঞান ইত্যাদি গাণিতিক প্রশ্ন সম্বলিত বিষয়ের ক্ষেত্রে রাফ করার জন্য খাতার ডানদিকে কিছুটা মার্জিন দিয়ে আলাদা করা প্রয়োজন।
- ভূগোল, জীবনবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে ম্যাপ বা উপযুক্ত চিত্রসহ উত্তরের উপস্থাপন ভৌতবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গাণিতিক সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা, বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার সম্মিত সমীকরণের উপস্থাপন এই সব ব্যাপারে কিছুটা জোর দিলে ভাল হয়।
যাই হোক, অনেক কথাই বললাম, আবার অনেক হয়তো বাকি থেকে গেল। তোমাদের সকলের পরীক্ষা ভালই হোক সেই শুভেচ্ছা আমরা আবারও জানালাম।
ভালোবাসা সহ,
JUMP ম্যাগাজিন