HS-chemistry-preparation-jump-magazine
পরীক্ষা প্রস্তুতি

উচ্চ মাধ্যমিক প্রস্তুতি : রসায়ন প্রথম পর্ব

কিভাবে উচ্চমাধ্যমিকে 90 শতাংশর থেকে বেশি নাম্বার পাওয়া যায়?

উচ্চমাধ্যমিকের প্রস্তুতির কথা উঠলে প্রথমেই আমাদের যেদিকে তাকাতে হবে সেটা হল প্রশ্নপত্রের গঠন। যেকোনো বিষয়েরই প্রথমে দেখতে হবে প্রশ্নপত্রে নম্বরের বিভাজন কিভাবে হয়। পুরোনো বছরের প্রশ্নপত্র ঘাঁটলেই এর উত্তর মেলে।

উচ্চমাধ্যমিক কাউন্সিলের নির্দেশানুসারে প্রশ্নপত্রে নম্বরের বিভাজন-

14টি মাল্টিপল চয়েস প্রশ্ন (বহুবিকল্প প্রশ্ন): 14 × 1= 14
4টি অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (নৈর্ব্যক্তিক): 4 × 1 = 4
5টি অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ) : 5 × 2 = 10
9টি বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন: 9 × 3 = 27
3টি লেখনী বা বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন: 3 × 5= 15
সব মিলিয়ে 70 নম্বরের পরীক্ষা

মোট 3 ঘন্টা সময়ের মধ্যে এই 70 নম্বরের প্রশ্নপত্র সমাধান করতে হয়। লক্ষ্য হওয়া উচিৎ, যাতে এই প্রশ্নপত্র 2.5 ঘন্টায় (আড়াই ঘন্টায়) ভালোভাবে শেষ হয়। এর জন্য প্রতিদিন ঘড়ি ধরে বাড়িতে লেখা প্র্যাকটিস করতে হবে।

এখন দেখা যাক কোন নম্বরের জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং কতটা সময় লেখার সময় আমরা ব্যয় করতে পারি।

প্রথমের বহুবিকল্প বা মাল্টিপল চয়েস প্রশ্ন (MCQ)। এগুলিতে সঠিক উত্তর তোমার সামনেই থাকে, শুধু চিনে নিয়ে উত্তর করতে হয়। এর জন্য স্মৃতির ওপর জোর খাটাতে হয় না, বিষয় সম্বন্ধে স্পষ্ট পরিচিতিই যথেষ্ট। এর মুশকিল হচ্ছে ধরো তুমি 1000টা প্রশ্ন দেখে গেলেও, পরীক্ষায় 1001 নম্বর থেকে প্রশ্ন দিতে পারে। তাই এই বিভাগে সাজেশন না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু যে প্রচুর অভ্যাস করবে, তার কাছে অপরিচিত প্রশ্নের বিকল্পগুলি বিশ্লেষণ করা আয়ত্ত হয়ে যাবে।

কারণ এর একটি স্বাভাবিক নিয়ম আছে

উত্তর জানলে সরাসরি দাগ দেওয়া যায়,আর না জানলে একটু বিশ্লেষণী শক্তিই যথেষ্ট। চোখে দেখেই দুটি বিকল্প যুক্তি দিয়ে বাদ দেওয়া সম্ভব, যারা মোটেই হতে পারে না। বাকি দুটির মধ্যে একটি সঠিকের খুব কাছাকাছি কিন্তু সঠিক নয়, অপরটি সঠিক। শেষ উত্তরে পৌঁছাতে বেসিক জ্ঞান থাকা বাধ্যতামূলক। যে অধ্যায় থেকে প্রশ্নটা এসেছে, তার কনসেপ্ট স্বচ্ছ থাকলেই অন্তিম নির্ণয় নেওয়া সহজ হয়ে যাবে।

এর জন্য মোট 15 মিনিটের বেশি সময় ধার্য্য করা উচিত নয়।

তারপর আসছে অবজেক্টিভ বা নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নোত্তর।

এই প্রশ্নগুলিই 90% এর সাথে 80% এর পার্থক্য গড়ে দেয়। মাত্র 4 নম্বর আছে বলে অনেকেই এতে গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু এর থেকে ছাঁকা 4 নম্বর তুলতে পারলেই অনেকটা নিশ্চিন্ত হয় যায়।

কিন্তু প্রস্তুতি নেবে কিভাবে?

এর জন্য খুঁটিয়ে পড়া ছাড়া কোনো উপায় নেই প্রশ্ন যেকোনো জায়গা থেকে আসতে পারে। সংজ্ঞা, উদাহরণ, নাম এধরণের প্রশ্নই বেশি আসে। আগের প্রশ্নের মতোই সাজেশন এখানে খুব একটা খাটবে না, প্রচুর প্র্যাকটিস অভিজ্ঞতা দেবে অজানা প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার। জানলে পারা যাবে এমন প্রশ্ন সাধারণত বাজে প্রশ্ন হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের যন্ত্রনা দেয়। যাদের কনসেপ্ট স্বচ্ছ তারাও এই বিভাগে মুশকিলে পড়তে পারে। বই ও টেস্ট পেপার থেকে এই ধরণের প্রশ্ন অনুশীলনে 90% সুফল মিলবে। কঠিন প্রশ্নপত্রে এই বিভাগই মাথা ব্যাথার কারণ হবে, সেকারণে, প্র্যাক্টিস অবশ্যক।

এই বিভাগের জন্য ৫ মিনিট সময় ধার্য্য করো।

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন বা SAQ

দুই নম্বরের অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য সর্বাধিক 50 শব্দের মধ্যে উত্তর লিখতে হয়, মূলত গাণিতিক সূত্র ও তার প্রমাণ, যুক্তিভিত্তিক প্রশ্ন বা সরল উদাহরণ বা উপাদান থেকে প্রশ্ন আসে। এখানে বেশি প্রশ্নের সম্ভাবনা কম। গোটা সিলেবাসে সীমিত প্রশ্নই এ ধরণের প্রশ্নের সাথে খাপ খায়। কিন্তু এখানে যুক্তিবাদ ও গণিতের পারদর্শিতার সাথে সাথে সূত্র, সংজ্ঞা, উদাহরণ, সবেরই প্রয়োজন। এটিকে মিক্সড ব্যাগ বলা চলে। যখন আমরা বিষয়ের ভাগের ভিত্তিতে প্রশ্নের তখন এই প্রশ্ন সম্বন্ধে ধারণা আরো স্পষ্ট হবে।

এই বিভাগের জন্য পরীক্ষায় ২০ মিনিট যাবে বলে ধরে চলতে পারো।

তাহলে আমাদের হাতের 180 মিনিটের মধ্যে 150 মিনিটকে লেখার জন্য ব্যয় করবো উদ্দেশ্যে চলেছি। তার মধ্যে 15+5+20 মোট 40 মিনিট অতিবাহিত। মোট উত্তর প্রদান হয়ে গেছে 14+4+10 = 28 নম্বরের। হাতে রয়েছে 110 মিনিট এবং 42 নম্বর। অর্থাৎ নম্বর পিছু আড়াই মিনিটের কিছু বেশি। মোট প্রশ্ন লিখতে হবে 12টি, 9টি তিন ও 3টি পাঁচ নম্বরের। প্রথমে 5 নম্বরের প্রশ্নের কথায় আসি, তারপর যা সময় থাকবে সেটিকে 3 নম্বরের প্রশ্নের জন্য বিভাজিত করে দেওয়া যাবে।

5 নম্বরের মধ্যে 3টি প্রশ্ন থাকে। একটি ভৌত, একটি অজৈব ও একটি জৈব রসায়ন থেকে।

যেকটি প্রশ্নের বিকল্প থাকে, কিন্তু সেই অধ্যায় থেকেই। সুতরাং কোনো অধ্যায় ছাড়া যাবে না, কিন্তু এই প্রশ্ন অপেক্ষাকৃত সহজ হয়। কারণ যত বড় নাম্বারের প্রশ্ন হয়, প্রশ্নের জন্য অধ্যায়ে বিকল্প কমে যায় প্রশ্নরচয়িতার কাছে। তার ফলে সহজেই অনুমান করা সম্ভব। এই 5 নম্বরকে 3+2 নম্বরের দুটি প্রশ্নে ভাগ করে দেওয়া হয়।

ভৌত রসায়নের প্রশ্নে সাধারণত একটি অংক ও সেই অধ্যায় থেকে যুক্তিমূলক প্রশ্ন থাকে। অজৈব রসায়নে পর্যবেক্ষণমূলক বা কারণমূলক প্রশ্নের ঝোঁকটাই বেশি। কিন্তু ধাতুবিদ্যা থেকে প্রশ্ন আসলে সেখানে পদ্ধতিগত প্রশ্ন আসতে পারে। জৈব রসায়নে টিকা, কনভার্সন ও শনাক্তকরণ প্রশ্নোত্তরের সংখ্যা বেশি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে এটাই নিয়ম। যেকোনো ধরণের পরিবর্তনের জন্য তৈরী থাকা উচিত।

এর জন্য ৩০ মিনিট দিলে সুষ্ঠুভাবে লেখা যায়।

সব শেষে পড়ে থাকে 3 নম্বরের 9টি প্রশ্ন।

এখানে, প্রয়োগমূলক রসায়নের 3 টি অধ্যায় থেকে 1 টি প্রশ্ন, আর বাকি তিনটি বিভাগ থেকে (ভৌত, অজৈব, জৈব) মিলিয়ে 8টি প্রশ্ন থাকে। কোন বিভাগ থেকে কত থাকবে সেটি নির্ভর করে আগের 1 ও 2 নম্বরের প্রশ্নের {মোট (4 × 1)+(5 × 2)=14} মধ্যে কোন বিভাগ থেকে কত এসেছে তার উপর । মোটামুটি 3+2+3 ভাবেই এই 8টি প্রশ্ন বিন্যস্ত থাকে। সুতরাং শেষ তিনটি অধ্যায় এখানে গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োগমূলক রসায়ন থেকে জ্ঞানধর্মী প্রশ্নই বেশি আসে। এর বিস্তারিত আমরা পরে দেখে নেবো। বাকি অংশ থেকে গাণিতিক প্রশ্ন, কারণ ও পর্যবেক্ষণ ধর্মী প্রশ্ন, বিশেষত জৈব রসায়নে কনভার্সন ও শনাক্তকরণ ধর্মী প্রশ্নই এখানে প্রবল।

প্রতিটি প্রশ্নে ধার্য্য করো 7 থেকে 10 মিনিট। প্রয়োগমূলক প্রশ্নে সময় লাগবে কম, বাকি প্রশ্নে বেশি।

পরবর্তী পর্বে আমরা আলোচনা করবো প্রতিটা বিভাগ থেকে কি কি ধরণের প্রশ্ন হয় এবং সেগুলিকে লিখতে গেলে কি ধরণের জ্ঞান বা কনসেপ্ট দরকার।

[পরবর্তী পর্ব পড়ুন]


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –