ইতিহাস– নবম শ্রেণি – বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ
ট্রাফালগারের যুদ্ধ
নেপোলিয়ন তাঁর জীবনকালে অসংখ্য যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছিলেন। এদের মধ্যে ট্রাফালগারের যুদ্ধ একটি অতি পরিচিত নাম। কারণ এই যুদ্ধে নেপোলিয়নের হারের ফলে গোটা ইউরোপ এক অদ্ভুৎ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল।
তাঁর সম্রাট পদ লাভের ঠিক পরেই নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডের নেতৃত্বাধীন তৃতীয় শক্তি জোটের (ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং সুইডেন) সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু ইংরেজ সেনাপতি হোরেশিও নেলসন (২১ অক্টোবর, ১৮০৫) অসম্ভব দক্ষতায় ফ্রান্স এবং স্পেনের নৌবাহিনীকে ধ্বংস করেন। এর ফলে নেপোলিয়নের এই যুদ্ধে পরাজয় ঘটে।
শুধু তাই নয়, এই যুদ্ধে পরাজয়ের সাথে সাথেই তিনি চিরদিনের মতো ‘ইংলিশ চ্যানেলের’ উপর নিয়ন্ত্রণ হারান। এখান থেকেই তিনি মহাদেশীয় ব্যাবস্থার কথা পরিকল্পনা করেন।
মহাদেশীয় ব্যাবস্থা (Continental System)
ইউরোপের অন্যতম শক্তি ইংল্যান্ডকে নেপোলিয়ন কোনদিনই সেভাবে কব্জা করে উঠতে পারেননি। ট্রাফালগারের যুদ্ধের পরে নেপোলিয়নের ইংল্যান্ড দমনের স্বপ্নভঙ্গ হয়। তিনি যুদ্ধে পরাজিত না করতে পারলেও, ইংরেজদের অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল করার প্রচেষ্টা শুরু করেন।
সেই সময়ে ইংল্যান্ডের প্রধান আয় হত বাণিজ্যের মাধ্যমে এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্রিটিশ পণ্যের ভালোই চাহিদা ছিল। এই বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন একটি অর্থনৈতিক অবরোধদের নীতি গ্রহণ করেন (বার্লিন ডিক্রি – ১৮০৬)। এই আইনের মাধ্যমে তিনি ইউরোপের সমস্ত বন্দরে ব্রিটিশ জাহাজ প্রবেশ এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতে ব্রিটিশ পণ্য প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশরাও একটি ‘অর্ডারস ইন কাউন্সিলের’ মাধ্যমে ব্রিটিশ এবং ব্রিটিশ মিত্রদেশগুলিতে ফ্রান্স এবং ফ্রান্সের মিত্রদেশের জাহাজ প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন এবং প্রয়োজনে অনধিকার প্রবেশকারী জাহাজের মাল বাজেয়াপ্ত করার কথা ঘোষণা করে।
এর প্রত্যুত্তরে ক্ষিপ্ত নেপোলিয়ন, মিলান ডিক্রির (১৮০৭) সাহায্যে ঘোষণা করেন যে বাজেয়াপ্ত ‘ব্রিটিশ পণ্য’ আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলা হবে।
নেপোলিয়নের ব্রিটিশ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পঙ্গু করার এই নীতিগুলি ‘মহাদেশীয় ব্যবস্থা’ বা ‘কন্টিনেন্টাল সিস্টেম’ নামে পরিচিতি।
[আরো পড়ুন – কোড নেপোলিয়ন]
মহাদেশীয় ব্যাবস্থার ত্রুটি
ব্রিটিশ অর্থনীতিকে পর্যুদস্ত করার নীতি পরোক্ষে ফ্রান্সের এবং ফ্রান্সের বন্ধুরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে পর্যুদস্ত করে তোলে। ইউরোপের বাজারে ব্রিটিশ পণ্য ছিল অদ্বিতীয়; দাম এবং গুণমানে সেরা। এমনকি ফ্রান্সের বাজারেও ব্রিটিশ পণ্যের দখল ছিল চোখে পড়ার মতো। ব্রিটিশ পণ্য বাজারে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলে বাজারে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি হয়, মূল্যবৃদ্ধি দেখা যায় এবং চোরাচালান শুরু হয়।
সামগ্রিক ভাবে এই ভ্রান্ত নীতির ফলে নেপোলিয়নের পতন ত্বরান্বিত হয়ে ওঠে।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা