জীবনবিজ্ঞান – দশম শ্রেণি – বংশগতি (তৃতীয় পর্ব)
আগের পর্বে আমরা মেন্ডেলের এক সংকর জনন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, এই পর্বে আমরা মেন্ডেলের দ্বি সংকর জনন নিয়ে আলোচনা করবো।
দ্বিসংকর জনন কাকে বলে?
দু জোড়া বিপরীত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন একই প্রজাতিভুক্ত দুটি জীবের মধ্যে সংকরায়ন ঘটানোকে দ্বিসংকর জনন বলে।
মেন্ডেল সম্পাদিত দ্বিসংকর জনন
বিজ্ঞানী মেন্ডেল বিশুদ্ধ হলুদ ও গোলাকার বীজ সমন্বিত মটর গাছের সঙ্গে বিশুদ্ধ সবুজ ও কুঞ্চিত বীজের সমন্বিত মটর গাছের ইতর পরাগ যোগ ঘটিয়ে ছিলেন। এখানে হলুদ ও গোলাকার বীজ হলো প্রকট বৈশিষ্ট্য। বিশুদ্ধ হলুদ ও গোলাকার বীজের জন্য জিন সমন্বিত অ্যালীল গুলি (মেন্ডেল বর্ণিত ফ্যাক্টরগুলি) হল YYRR আর বিশুদ্ধ সবুজ ও কুঞ্চিত বীজের জন্য জিন সমন্বিত অ্যালীলগুলি হল yyrr।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
P জনুতে বিশুদ্ধ হলুদ ও গোলাকার বীজ সমন্বিত মটর গাছের সঙ্গে বিশুদ্ধ সবুজ ও কুঞ্চিত বীজের সমন্বিত মটর গাছের ইতর পরাগ যোগ ঘটানো হল। প্রথম অপত্য জনুতে (F1) প্রাপ্ত সব অপত্য গুলিই বাহ্যিক ভাবে হলুদ ও গোলাকার বীজ সমন্বিত মটর গাছ (YyRr)। এর থেকে YR,Yr, yR,yr এই চারপ্রকার গ্যামেট উৎপন্ন হয়।
নিচে মেন্ডেল সম্পাদিত দ্বিসংকর জনন দেখানো হলঃ
দ্বিসংকর জনন থেকে প্রাপ্ত ফিনোটাইপিক অনুপাত ও জিনোটাপিক অনুপাতঃ
ফিনোটাইপিক অনুপাত
হলুদ ও গোলাকার বীজ : হলুদ ও কুঞ্চিত বীজ : সবুজ ও গোলাকার বীজ : সবুজ ও কুঞ্চিত বীজ
= 9 : 3 : 3 : 1
জিনোটাপিক অনুপাত
[বিশুদ্ধ হলুদ ও গোলাকার বীজ : বিশুদ্ধ হলুদ ও সংকর ও গোলাকার বীজ : সংকর হলুদ ও বিশুদ্ধ গোলাকার বীজ : সংকর হলুদ ও সংকর গোলাকার বীজ] : { বিশুদ্ধ হলুদ ও বিশুদ্ধ কুঞ্চিত বীজ : সংকর হলুদ ও বিশুদ্ধ কুঞ্চিত বীজ} : (বিশুদ্ধ সবুজ ও বিশুদ্ধ গোলাকার বীজ : বিশুদ্ধ সবুজ ও সংকর গোলাকার বীজ) : বিশুদ্ধ সবুজ ও বিশুদ্ধ কুঞ্চিত বীজ
= [1 : 2 : 2 : 4] : {1 : 2} : (1 : 2) : 1
দ্বি সংকর জননের পরীক্ষা থেকে উদ্ভূত মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্র
দুই বা ততোধিক বিপরীত বৈশিষ্ট্য যুক্ত জীবের সংকরায়নের ফলে বিপরীত বৈশিষ্ট্যগুলি জনিতৃ জনু থেকে অপত্য জনুতে সঞ্চারিত হবার সময়ে একত্রিত হলেও গ্যামেট গঠনকালে এরা যে শুধু পৃথক হয় তাই নয়, পরবর্তী জনুতে যাবার সময় প্রত্যেক বৈশিষ্ট্য স্বাধীন ভাবে যেকোন বিপরীত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্ভাব্য সকল প্রকার সমন্বয়ে সঞ্চারিত হতে পারে।
JUMP ম্যাগাজিনে প্রকাশিত লেখাগুলির বিনামূল্যে WhatsApp আপডেট পান।?
মেন্ডেলের তত্ত্বের বিচ্যুতিঃ
অসম্পূর্ন প্রকটতা ও সহ প্রকটতা
যখন দুটি বিপরীত বৈশিষ্ট্য যুক্ত দুটি বিশুদ্ধ (একটি প্রকট ও অপরটি প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য যুক্ত) জীবের মধ্যে সংকরায়ন ঘটানো হলে, প্রথম অপত্য জনুতে জনিতৃ জীবের কোন বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত না হয়ে একটি অন্য মিশ্র বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয় তখন তাকে অসম্পূর্ণ প্রকটতা বলে।
উদাহরণঃ
সন্ধ্যামালতী (Mirabilis jalapa) উদ্ভিদের বিশুদ্ধ লাল (RR) ও বিশুদ্ধ সাদা (rr) বর্ণের ফুল বিশিষ্ট উদ্ভিদের মধ্যে ইতর পরাগযোগ ঘটানো হয়। তবে প্রথম ফিলিয়াল জনুতে লাল বা সাদা কোন বর্ণের ফুল বিশিষ্ট উদ্ভিদ পাওয়া যায় না। সব গোলাপী বর্ণের সন্ধ্যামালতী ফুল উৎপন্ন হয়। তবে দ্বিতীয় ফিলিয়াল জনুতে জনিতৃ বর্ণের, বর্ণ বিশিষ্ট ফুল দেখতে পাওয়া যায়।
আরো পড়ো → অভিব্যক্তি ও অভিযোজন কাকে বলে?
দ্বিতীয় ফিলিয়াল জনুতে 1:2:1 (RR: 2Rr :rr)এই অনুপাতে অর্থাৎ শতকরা 25 ভাগ লাল বর্ণের ফুল : শতকরা 50 ভাগ গোলাপি বর্ণের ফুল: শতকরা 25 ভাগ সাদা বর্ণের ফুল পাওয়া যায়।
অসম্পূর্ণ প্রকটতার ক্ষেত্রে ফিনোটাইপিক ও জিনোটাইপিক অনুপাত একই হয়।
অসম্পূর্ণ প্রকটতার পরীক্ষাটি নিচে দেখানো হলঃ
- বিশুদ্ধ লালবর্ণের ফুলের অ্যালিল RR
- বিশুদ্ধ সাদা বর্ণের ফুলের অ্যালিল rr
সুতরাং দেখা যাচ্ছে এর জিনোটাইপিক অনুপাত ও ফিনোটাইপিক অনুপাত একই 1:2:1
সহ প্রকটতা কাকে বলে?
যখন কোন সংকর জীবে দুটি বৈশিষ্ট্যই বাহ্যিকভাবে প্রকাশিত হয়,অর্থাৎ দুটি বিপরীত বৈশিষ্ট্যই সমভাবে প্রকাশিত হয়। তাকে সহ প্রকটতা বলে। উদাহরণ মানুষের রক্তের MN ও ABO ব্লাড গ্রুপ।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবন বিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান |
টেস্ট ক্রস কি?
কোন অজানা, জিনোটাইপ যুক্ত জীবের জিনোটাইপ জানার জন্য বিশুদ্ধ প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য যুক্ত একই প্রজাতি ভুক্ত কোন জীবের নিষেক ঘটানো হয় তাকে টেস্টক্রস বলে।
যেমন বাহ্যিক বা ফিনোটাইপিক্যালি লম্বা মটর গাছটি সংকর (Tt) না বিশুদ্ধ (TT) তা জানার জন্য বিশুদ্ধ প্রচ্ছন্ন (tt) মটর গাছ দ্বারা তার সংকরায়ন করা হয়।
যদি এই রকম সংকরায়নের ফলে উৎপন্ন মটর গাছগুলি সব লম্বা হয় তবে নির্নেয় মটর গাছটির জিনোটাইপ বিশুদ্ধ লম্বা।
আবার যদি দুরকম মটর গাছ লম্বা ও বেঁটে (1:1) অনুপাতে পাওয়া যায় তবে নির্ণেয় জীবটির ফিনোটাইপ সংকর।
নিচে ক্রস করে দেখানো হল –
ব্যাকক্রস কি?
F1 প্রজন্মের প্রকট বৈশিষ্ট্য যুক্ত জীবের সঙ্গে জনিতৃ জনুর যে কোন বৈশিষ্ট্য যুক্ত জীবের সংকরায়ন ঘটানো হয়।
F1 জনুর অপত্যের জিনোটাইপ জানার জন্য একে ব্যাক ক্রস বলে।
সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারন
পিতার সেক্স নির্ধারনকারী ক্রোমোজোম হল XY, মাতার XX
আমরা জানি আমাদের 23 জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে 22 জোড়া অটোজোম এবং একজোড়া সেক্স ক্রোমোজোম। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সেক্স ক্রোমোজোম XY এবং মহিলাদের XX।
এই দুটি সেক্স ক্রোমোজোম দ্বারা কীভাবে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারিত হয় তা আমরা ক্রসের সাহায্যে দেখাবো।
দেখা যাচ্ছে যে যদি মাতার X ক্রোমোজোমের সঙ্গে পিতার Y ক্রোমোজোমের মিলন হয় তবে পুত্র সন্তান হয় এবং যদি মাতার X ক্রোমোজোমের সঙ্গে পিতার X ক্রোমোজোমের মিলন হয় তবে কন্যা সন্তান হয় । 50% পুত্র এবং 50% কন্যা হওয়ার সম্ভাবনা প্রতি ক্ষেত্রে থাকে, ‘Y’ জিনের উপস্থিতিই নির্ধারন করে সন্তান পুত্র হবে না কন্যা হবে, সুতরাং ‘Y’ই হলো লিঙ্গ নির্ধারনকারী জিন। ‘
Y’ সুতরাং কন্যা সন্তান জন্মানোর জন্য মা কখনই দায়ী নয়।
তৃতীয় পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব পড়ুন → জিনঘটিত কয়েকটি রোগ
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X-LSc-3C