ভৌতবিজ্ঞান – দশম শ্রেণি – অধ্যায়: আলো (তৃতীয় পর্ব)
আগের পর্বদুটিতে আমরা লেন্সের ধারণা এবং লেন্সের ফোকাস নিয়ে আলোচনা করেছি।
এই পর্বে লেন্সের সামনে কোন বস্তু রাখার ফলে কিভাবে তার প্রতিবিম্ব গঠন হয় তা নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।
মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে আমরা রশ্মি চিত্র অঙ্কন প্রনালী ভালো ভাবে শিখে নেব।
জরুরী বিষয়ঃ যে এইভাবে রশ্মি চিত্র অঙ্কনের ক্ষেত্রে পেন্সিল কম্পাস ও স্কেল ব্যবহার আবশ্যিক যাতে লেন্সের উভয় পার্শ্বে ফোকাস দূরত্ব (f) বক্রতা ব্যাসার্ধের (R) ঠিক অর্ধেক হয়।
এরপর বস্তুর শীর্ষদেশ থেকে আনুভূমিক অক্ষের সমান্তরাল একটি আলোক রশ্মি অঙ্কন করা হয় যা প্রতিসরণের পর সর্বদাই ফোকাস বিন্দু দিয়ে যাবে বা যাচ্ছে বলে মনে হবে। বস্তুর শীর্ষদেশ থেকে আরও একটি আলোক রশ্মি অঙ্কিত হবে যা লেন্সের আলোক কেন্দ্র দিয়ে যাবে এবং প্রতিসরণের পর গতিপথের কোন পরিবর্তন হবে না।
[আরো পড়ুন – লেন্সের ধারণা]
এখন, উপরোক্ত দুটি আলোক রশ্মি লেন্সের মাধ্যমে প্রতিসরণের পর যে বিন্দুতে ছেদ করবে সেই ছেদবিন্দু থেকে আনুভূমিক অক্ষের উপর লম্ব অঙ্কন করলেই প্রতিবিম্বটি পাওয়া যাবে।
মনে রাখতে হবেঃ লেন্সের উল্লম্ব অক্ষ থেকে আনুভূমিক অক্ষ বরাবর বস্তু অবধি দৈর্ঘ্যকে বলে বস্তু দৈর্ঘ্য (u) এবং একইভাবে উল্লম্ব অক্ষ থেকে আনুভূমিক অক্ষ বরাবর প্রতিবিম্ব অবধি দৈর্ঘ্য হল প্রতিবিম্ব দৈর্ঘ্য (v)। যে কোন লেন্সের ক্ষেত্রেই u, v এবং ফোকাস দৈর্ঘ্য f এর সঙ্গে একটি সরল সম্পর্ক আছে।
সম্পর্কটি হল
এই সম্পর্ক অনুসারে বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে অর্থাৎ u, v এবং f এর মধ্যে যে কোন দুটি প্রদত্ত হলে তৃতীয়টি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমরা উপরোক্ত সম্পর্কটি ব্যবহার করে থাকি।
তবে সম্পর্কটিতে u, v বা f এর মান বসানোর সময় একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে u, v বা f যদি লেন্সের উলম্ব অক্ষের বাম দিকে থাকে তবে তা ঋণাত্মক চিহ্ন বিশিষ্ট হবে এবং যদি উক্ত দৈর্ঘ্যগুলি উলম্ব অক্ষের ডানদিকে থাকে তবে উহারা ধনাত্মক চিহ্ন বিশিষ্ট হবে।
প্রতিবিম্বের কথা তো আমরা জানলাম, কিন্তু এখন প্রশ্ন হল গঠিত প্রতিবিম্বের প্রকৃতি সদ্ না অসদ্?
লেন্সের মাধ্যমে প্রতিসরণের ফলে গঠিত বস্তুর প্রতিবিম্ব সদ্ না অসদ্ তা বুঝতে গেলে দেখতে হবে, যে প্রতিসরণের পর আলোকরশ্মিগুলি সত্যিই তাদের ছেদ করছে না তাদের কাল্পনিক ভাবে বর্ধিত করে ছেদ করানো হচ্ছে।
যদি আলোক রশ্মিগুলি প্রকৃত অর্থেই প্রতিসরণের পর ছেদ করে তবে বলা হবে সদ্ বিম্ব গঠিত হচ্ছে অর্থাৎ এই প্রকার প্রতিবিম্বকে পর্দায় ফেলতে আমরা সক্ষম হব এবং এর বাস্তব অস্তিত্ব থাকবে।
এখন প্রতিসরণের পর আলোকরশ্মিগুলি কাল্পনিকভাবে বর্ধিত করে চ্ছেদ করানো হলে (যেমন ঘটেছে ‘ট২’ এ) ছেদ বিন্দুতে গঠিত প্রতিবিম্ব অসদ্ হয়। অর্থাৎ এই প্রকার প্রতিবিম্বের বাস্তব অস্তিত্ব নেই বা তাকে ফেলা যায় না।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
রৈখিক বিবর্ধণ
লেন্সের মাধ্যমে কোন বস্তু থেকে আগত আলোকরশ্মি প্রতিসরণের পর যে প্রতিবিম্ব গঠন করে তা বস্তুর সমান আকৃতি বিশিষ্ট নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতিবিম্বের ও বস্তুর উচ্চতর অনুপাত রৈখিক বিবর্ধণ বলা হয়ে থাকে। (চিত্র ‘ট ১’ অণুযায়ী)
উপরোক্ত সম্পর্কটি আমরা, বস্তু দৈর্ঘ্য (u) ও প্রতিবিম্ব দৈর্ঘ্য (v) এর সাপেক্ষে প্রকাশ করতে পারি।
উত্তল লেন্স দ্বারা অসদ্ প্রতিবিম্ব গঠন
উত্তল লেন্স দ্বারা অসদ্ প্রতিবিম্ব গঠনের জন্য প্রথমেই বলে রাখা ভাল যে বস্তুকে লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্যের মধ্যে রাখতে হবে।
এখন আমরা রশ্মিচিত্র অঙ্কন প্রণালী পূর্বেই আলোচনা করেছি সেই অনুসারে বস্তুর শীর্ষ, ‘P’ বিন্দু থেকে আনুভূমিক অক্ষের সমান্তরাল ভাবে নির্গত আলোক রশ্মি ফোকাস বিন্দু দিয়ে নিঃসৃত হয়েছে এবং একই বিন্দু থেকে লেন্সের আলোককেন্দ্রাভিমূখী রশ্মিটি চ্যূতিহীন ভাবে নির্গত হয়েছে। বাস্তবে প্রতিসৃত রশ্মি গুলি, পিছন দিকে বর্ধিত করলে দেখা যায় তারা P’ বিন্দুতে মিলিত হচ্ছে। এই P’ বিন্দু থেকে লেন্সের আনুভূমিক অক্ষের উপর অঙ্কিত লম্ব হল P’Q’, সুতরাং P’Q’ হল বস্তু PQ এর প্রতিবিম্ব। চিত্রানুসারে প্রতিবিম্বটি বস্তু অপেক্ষা বড় এবং সমশীর্ষ। সর্বোপরি যেহেতু প্রতিসৃত রশ্মি গুলি বাস্তবে মিলিত হয়ে প্রতিবিম্বটি গঠন করছে না, তাই প্রতিবিম্বটি অসদ্।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
উত্তল লেন্স দ্বারা বস্তুর সদ্ প্রতিবিম্ব গঠন
উত্তল লেন্সের সাহায্যে কোন বস্তুর সদ্ প্রতিবিম্ব গঠনের ক্ষেত্রে বস্তুর অবস্থান হতে হবে লেন্সের যেকোন বিন্দু ও বক্রতা কেন্দ্রের মাঝে।
এক্ষেত্রেও রশ্মি চিত্র অংকনের প্রণালী অনুযায়ী আনুভূমিক অক্ষের সমান্তরাল রশ্মি ফোকাস বিন্দু দিয়ে নির্গত হয়েছে এবং অপর একটি রশ্মি বিনা চ্যুতিতে আলোক কেন্দ্রে ‘O’ এর মধ্যে দিয়ে নির্গত হয়েছে এবং প্রতিসরণের পর রশ্মি দুটি ‘P’ বিন্দুতে ছেদ করেছে। ‘P’ বিন্দু থেকে আনুভূমিক অক্ষের উপর অঙ্কিত লম্ব P’Q’ হল বস্তু ‘PQ’ এর প্রতিবিম্ব।
উৎপন্ন প্রতিবিম্বটি চিত্রে দেখলেই বোঝা যায় যে তা বিপরীত শীর্ষ, এবং উল্লেখ্য যে এক্ষেত্রে প্রতিবিম্বটি প্রতিসৃত রশ্মি গুলির বাস্তবে মিলিত হওয়ার ফলেই গঠিত হয়েছে। একারণে উৎপন্ন প্রতিবিম্ব সদ্।
তবে এক্ষেত্রে সাধারণত বিবর্ধত অর্থ্যাৎ বস্তু অপেক্ষা বড় প্রতিবিম্ব গঠিত হয় না ।
[আরো পড়ুন – চার্লসের সূত্র]
লেন্সের ক্ষমতা
কোন লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্যের অনোন্যককে বলে ঐ লেন্সের ক্ষমতা পাওয়ার (P)।
সুতরাং লেন্সের ক্ষমতা (P) = = 1 / ফোকাস দৈর্ঘ্য
তবে উল্লেখ্য যে, উত্তল লেন্সের ক্ষেত্রে লেন্সের পাওয়ার ধনাত্মক এবং অবতল লেন্সের ক্ষেত্রে ঋণাত্মক ধরা হয়ে থাকে। সাধারণ ভাবে লেন্সের ক্ষমতা ডায়াপ্টার এককে প্রকাশ করা হয়।
সমাপ্ত। পরবর্তী পর্বে আমরা আলোর বিচ্ছুরণ নিয়ে আলোচনা করেছি।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X-PSc-5-c