দশম শ্রেণি | বিষয়: ভূগোল । অধ্যায়:বহির্জাত প্রক্রিয়া ও সৃষ্ট ভূমিরূপ (পর্ব -6)
আমরা এর আগে নদী এবং হিমবাহ সম্পর্কে জেনেছি, এই পর্বে আমরা বায়ুর কাজ সম্পর্কে জানবো।
তবে বায়ুর কাজ সঠিকভাবে বুঝতে গেলে আমাদের আগে বালি বা বালুকণা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে হবে।
বালি বা বালুকণার সাথে আমরা সবাই পূর্ব পরিচিত। মূলত বাড়ি তৈরির সময় বালির ব্যবহার আমরা সবাই দেখেছি। এই বালি সৃষ্টি হয় কিভাবে?
বালুকণা সৃষ্টির ধারণা
বালি বা বালুকণা হল সূক্ষ্ম শিলা চূর্ণ, খনিজ ও জৈব পদার্থের সংমিশ্রণ। বালুকনার আকৃতি সাধারণত 0.6 থেকে 2.0 মিমি হয়। অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারছি যে বালি বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে। আমাদের মধ্যে যদি কারুর মরুভূমিতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়ে থাকে, তাহলে লক্ষ্য করবো, যে বালি আমাদের বাড়ি তৈরির কাজে লাগে, তার থেকে ঐ মরুভূমির বালি আকারে অনেক সুক্ষ। এই সুক্ষ হওয়ার কারণ ক্ষয় বা আবহবিকার।
বালুকণা গঠনকারী পদার্থের মধ্যে সবথেকে বেশি পরিমাণ থাকে কোয়ার্টজ নামক এক প্রকার খনিজ। এই কোয়ার্টজ আবহবিকার বা বায়ুর ক্ষয়কে বাধা দেয়। অন্যদিকে বালির মধ্যে কিছু পরিমাণ ফেল্ডসপার ও ভারী খনিজ উপস্থিত থাকে, যা ক্রমশ আবহবিকার প্রাপ্ত হয়।
মরু অঞ্চলে বালুকণা সৃষ্টির কারণ হলো শিলার যান্ত্রিক আবহবিকার। সুদীর্ঘকাল যাবৎ মরু অঞ্চলের প্রচন্ড উষ্ণতা, দিন রাতের উষ্ণতার তারতম্য ও প্রবল বাতাসের দ্বারা বাহিত বড় দানার বালির আঘাত শিলাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারে পরিণত করে।
আর আমরা বাড়ি তৈরির জন্য যে বালি দেখতে পাই তা মূলত আসে নদী (পলল ব্যাজনি, পেডিমেন্ট ইত্যাদি) থেকে আবার উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রের তট থেকেও বালি ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বালি আলগা পদার্থ থেকে সৃষ্টি হয়।
এবার তোমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে মরু ও উপকূল অঞ্চলে কেন বালির সৃষ্টি হয়? আমরা এর কারণগুলি নিচে আলোচনা করবো।
শুষ্ক ও উষ্ণ বায়ু: মরু অঞ্চলে বায়ু অত্যন্ত শুষ্ক হওয়ার বালুকণা খুব হালকা হয় ও বায়ু প্রবাহের সাথে অনেক দূর অব্দি বিস্তৃত হতে পারে।
বাধাহীন বায়ু প্রবাহ: সুবিস্তীর্ণ উন্মুক্ত উপকূল ও করি অঞ্চলে বায়ু বাধাহীন ভাবে প্রবাহিত হয় ও বালুকণা অনেক দূর অব্দি প্রবাহিত হয়।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
প্রবল বাতাস: উন্মুক্ত ভূমির ফলে সৃষ্টি প্রবল বাধাহীন ঝড়ো বাতাসের দ্বারা বাহিত বালি কোন প্রবল বেগে শিলার উপর আঘাত করে শিলার ক্ষয় করে। এবং সেই ক্ষয়জাত পদার্থ অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
উদ্ভিদ শূন্যতা: বালুকণা ও ধূলিকণাকে মাটিতে আটকে রাখার ও বায়ু প্রবাহকে প্রতিহত করার মতো উদ্ভিদের অনুপস্থিতি মরু অঞ্চলে বালুকণা সহজেই অনেক দূর পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে।
পৃথিবীর প্রধান প্রধান মরুভূমি
অবস্থান অনুযায়ী মরুভূমিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
উষ্ণ মরুভূমি (উষ্ণ উপক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত) যেমন সাহারা মরুভূমি , কালাহারি মরুভূমি , থর মরুভূমি , সোনেরান মরুভূমি, অস্ট্রেলিয়া মরুভূমি।
শীতল মরুভূমি (নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে অবস্থিত) যেমন গোবি মরুভূমি, প্যাটাগোনিয়া মরুভূমি, আটাকামা মরুভূমি এবং গ্রেট বেসিন মরুভূমি।
আশা করছি আমাদের বালি সৃষ্টি সম্পর্কে ধারণা হয়েছে। এবার আমরা বায়ুর কাজ সম্পর্কে আলোচনা করবো।
বায়ুর কাজের ধারণা অধ্যায়ের আলোচনা দেখে নাও এই ভিডিও থেকে
বায়ুর কাজ
নদীর মতো, বায়ুর দ্বারা তিনটি কাজ সম্ভব। সেগুলি হল ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয়।
বায়ুর ক্ষয় কাজ
বায়ুর ক্ষয় কাজ মূলত তিনটি প্রক্রিয়া দ্বারা সম্পন্ন হয় সেগুলি হলো,
অবঘর্ষ প্রক্রিয়া
বায়ুপ্রবাহের সাথে বালির দানা উড়ে আসে, এই বালির আঘাতে শিলা পৃষ্ঠ ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায়। শিলার এইভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হবার প্রক্রিয়াকে অবঘর্ষ বলা হয়।
ঘর্ষণ প্রক্রিয়া
শিলা খণ্ড ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে বালিতে রূপান্তরিত হয়। আবার এই বৃহৎ বালুকণা পরস্পরের সাথে ঘর্ষণের ফলে আরো ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়; এই প্রক্রিয়াকে ঘর্ষণ প্রক্রিয়া বলা হয়।
অবনমন বা অপসারণ প্রক্রিয়া
বায়ুপ্রবাহের সাথে ভূমির উপরে অবস্থিত কোনো আলগা বালি, পলি বা অন্যান্য পদার্থ অপসারিত হবার প্রক্রিয়াকে অবনমন বা অপসারণ প্রক্রিয়া বলা হয়।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
বায়ুর বহন কার্য
বায়ুর ক্ষয় কাজের মত বহন বহন কার্যও তিনটি প্রক্রিয়া দ্বারা সম্পন্ন হয়। –
ভাসমান প্রক্রিয়া:
এই প্রক্রিয়ায় ক্ষয় জাত অতি সূক্ষ্ম ধুলো বা বালু কণা বাতাসের সাথে ভাসমান অবস্থায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়।
লম্ফ দান প্রক্রিয়া:
অপেক্ষাকৃত বড় মোটা দানার বালু কনা বা পাথরের টুকরো বাতাসের প্রভাবে ভূমির উপরে লাফাতে লাফাতে সামনের দিকে এগিয়ে চলে; এই প্রক্রিয়াকে লম্ফ দান প্রক্রিয়া বলা হয়।
গড়ানো প্রক্রিয়া:
অপেক্ষাকৃত বড়ো দানার বালি বায়ুপ্রাবাহের ফলে লম্ফ দানের পরিবর্তে গড়িয়ে গড়িয়ে স্থানান্তরিত হয়। একে গড়ানো প্রক্রিয়া বলা হয়।
বায়ুর সঞ্চয় কাজ
সঞ্চয় কাজ বাতাসের গতি ও পদার্থের আকৃতির উপর গভীর ভাবে নির্ভরশীল। সেই কারণে অপেক্ষাকৃত বড় দানার পদার্থ গুলো উৎস স্থলের কাছে ও সূক্ষ্ম দানার ক্ষয়জাত পদার্থ উৎস থেকে অনেক দূর অব্দি সঞ্চিত হতে পারে।
আগামী পর্বে বায়ুর কাজ নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ষষ্ঠ পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ
লেখিকা পরিচিতি
প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তনী শ্রেয়সী বিশ্বাস। পড়াশোনা এবং লেখালিখির পাশাপাশি, ছবি আঁকা এবং বাগান পরিচর্যাতেও শ্রেয়সী সমান উৎসাহী।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা