শ্রেণি- দশম | বিষয় – ভৌতবিজ্ঞান | অধ্যায় – তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া (প্রথম পর্ব)
মূল আলোচনায় আসার আগে আমরা জেনে নেব তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ কাকে বলে?
যে সকল বিশুদ্ধ যৌগিক পদার্থ গলিত বা ধ্রুবীয় দ্রবণে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে, এবং সঠিক অবস্থায় তড়িৎদ্বারে আধান মুক্ত হয়ে নতুন বিশুদ্ধ পদার্থ তৈরী করে তাকে তড়িৎবিশ্লেষ্য বা Electrolyte বলে।
অবিশুদ্ধ পদার্থও তড়িৎবিশ্লেষ্য হিসেবে পরিগণিত হতে পারে, তবে সেটিকে অনেক তড়িৎবিশ্লেষ্যর মিশ্রণ হিসেবে ধরা যায়।
পদার্থের রাসায়নিক বন্ধন অধ্যায়ে আমরা বিভিন্ন রাসায়নিক বন্ধনের কথা পড়েছি। আমরা জেনেছি আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধনের দ্বারা যৌগ গঠিত হয়।
এই সকল যৌগকে সাধারণত: ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়
- আয়নীয় যৌগ
- ধ্রুবীয় সমযোজী যৌগ
- অধ্রুবীয় সমযোজী যৌগ
এদের মধ্যে আয়নীয় যৌগ ও ধ্রুবীয় সমযোজী যৌগকে আয়নে বিশ্লিষ্ট করা যায়।
আয়নীয় যৌগ বিশ্লিষ্ট হয় গলিত অবস্থায় বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায়। ধ্রুবীয় সমযোজী যৌগ আয়ন তৈরী করে কেবলমাত্র জলে দ্রবীভূত অবস্থায়। এই মুক্ত আয়নগুলি বিদ্যুৎশক্তি পরিবহণ করে।
অসমযোজ্যতায় যৌগ গঠন হলেও উৎপন্ন যৌগে তাকে আলাদা করে চেনা যায় না, সেটি সমযোজী বন্ধনের মতোই ব্যবহার করে, এবং আয়নীয় যৌগের মতো আধানের পুনর্বিন্যাস করে।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
একটা উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারটা বোঝা যাক, NH4Cl যৌগটি তৈরী হয়েছে NH3 ও HCl-এর মধ্যে অসমযোজ্যতার দ্বারা। এখানে NH3 এর নিঃসঙ্গ ইলেক্ট্রন জোড় HCl-এর H+কে অসমযোজ্যতায় আবদ্ধ করে NH4+ আয়নে পরিণত করে এবং সেটি Cl– আয়নের সাথে তড়িৎযোজী বা আয়নীয় বন্ধন করে। এখানে NH4+-এর চারটি N-H বন্ধনীই সদৃশ হয়, কোনটি অসমযোজ্যতায় আবদ্ধ তা আলাদা করে চেনা যায় না, তাই এখানে চারটি N-H বন্ধনীই সমযোজী।
আরো উল্লেখ করা যায় যে NH3 বা HCl-এ কোনো আধান না থাকলেও NH4Cl-এ NH4+ আয়নে ও Cl– আয়নের মধ্যে আধানের পুনর্বিন্যাস ঘটেছে। এবং তার ফলেই এখানে আয়নীয় বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ এখান থেকে এটা প্রমাণ করা যায় অসমযোজী যৌগ থাকলেও এবং সেটি অসমযোজী বন্ধন দ্বারা তৈরী হলেও যৌগটিতে শেষ অবধি অসমযোজী বন্ধন থাকে না।
ধাতব বন্ধনের ফলে মৌল ও সংকর ধাতুর সৃষ্টি হয়। ধ্রুবীয় সমযোজী বা আয়নীয় যৌগের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন উপায়ে, মুক্ত ইলেক্ট্রন দ্বারা এরা তড়িৎ পরিবহণ করে।
আয়নীয় যৌগ ও ধ্রুবীয় সমযোজী যৌগকে মূলতঃ চারটি নতুন শ্রেণীতে পুনর্বিন্যাস করা যায়
এরা হলো,
১. লবণ – যেমন NaCl, Fe(NO3)2, Ag2SO4,NH4I, CH3COOK, (CH3)2NH2Br, C6H5N2+Cl–
২. ক্ষার ও ক্ষারক – যেমন NaOH, FeO, Ag2O, NH4OH, KOH, (CH3)2NH2OH
৩. অ্যাসিড বা অম্ল – যেমন HCl, HNO3, H2SO4, HI, CH3COOH, HBr
৪. দ্রাবক – যেমন NH3, H2O, C2H5OH,
এদের মধ্যে প্রথমদুটি আয়নীয় যৌগ এবং শেষ দুটি ধ্রুবীয় সমযোজী যৌগ।
বিশুদ্ধ অবস্থায় লবণ ও ক্ষারককে গলিত করে আয়ন তৈরী করা যায়, আবার ধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রবীভূত করেও আইন তৈরী করা যায়। অ্যাসিডকে কেবলমাত্র ধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থাতেই আয়ন তৈরী করতে দেখা যায়। আগের তিনটি পদার্থের মধ্যে যেকোনো একটির সামান্য উপস্থিতিতেই ধ্রুবীয় দ্রাবক তড়িৎ পরিবহণ করে এবং আয়নিত হয়।
একটা উদাহরণের মাধ্যমে দেখা যাক।
১. গলিত অবস্থায় NaCl = Na+ + Cl– ধ্রুবীয় দ্রাবক জলে দ্রবীভূত অবস্থায় Fe(NO3)2 + H2O = Fe2+ + 2NO3–
২. গলিত অবস্থায় NaOH = Na+ + OH– ধ্রুবীয় দ্রাবক জলে দ্রবীভূত অবস্থায় NH4OH + H2O = NH4+ + OH–
৩. ধ্রুবীয় দ্রাবক জলে দ্রবীভূত অবস্থায় H2SO4 + 2H2O = 2H3O+ + SO42-
৪. ধ্রুবীয় দ্রাবকে অনুঘটক হিসেবে অ্যাসিড বা ক্ষারক বা লবণের উপস্থিতিতে 2H2O (HCl অনুঘটক) = H3O+ + OH–
মনে রাখতে হবে যে সমযোজী মৌল, বিশুদ্ধ ধ্রুবীয় সমযোজী যৌগ ও ত্রুটিহীন কঠিন তড়িৎযোজী যৌগ কোনো অবস্থাতেই তড়িৎ পরিবহণ করে না।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
তড়িৎবিশ্লেষণ (Electrolysis) কাকে বলে?
তড়িৎশক্তির একমুখী (Direct Current) তড়িৎচালনার উৎস, তড়িৎবিশ্লেষক পাত্র ও দুটি ধাতব তড়িৎদ্বারের সাহায্যে তড়িৎবিশ্লেষ্যর দ্রবণ বা গলিত দশার মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ পাঠিয়ে ধাতব দণ্ডের ওপর তড়িৎবিশ্লেষ্যর গঠনকারী উপাদানকে মুক্ত করে তড়িৎশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে তড়িৎবিশ্লেষণ বলে।
এই বিক্রিয়া কেবলমাত্র DC তড়িৎ পরিচালনার মাধ্যমেই করা যায়। DC এর উৎসের দুটি প্রান্ত থাকে, ধনাত্মক ও ঋণাত্মক। এই উৎসকে আমরা সাধারণ ভাবে battery নামে চিনি।
Battery-র ধনাত্মকপ্রান্তে একটি ধাতব দণ্ড লাগানো হয়। একে অ্যানোড (Anode) বলে। Battery-র অপর ঋণাত্মক প্রান্ত অপর ধাতব দণ্ডে লাগানো হয়।
এখন এই দণ্ডকে ক্যাথোড (Cathode) বলে।
যে পাত্রে তড়িৎবিশ্লেষ্যটি রাখা হয় সেটিকে তড়িৎবিশ্লেষক পাত্র বা Voltameter বলে। কখনো কখনো পাত্রটিও একটি তড়িৎদ্বার হিসেবে কাজ করে।
এই সম্পূর্ণ সংগঠনকে তড়িদবিশ্লেষণ কোষ বা Electrolytic Cell বলে।
পরবর্তী পর্ব পড়ো →তড়িৎবিশ্লেষণ প্রক্রিয়া।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X-Psc-8-3_A