nitrogen-cycle
Madhyamik

নাইট্রোজেন চক্র

জীবন বিজ্ঞানদশম শ্রেণি – নাইট্রোজেন চক্র [Nitrogen cycle]

আমাদের চারপাশের জগৎকে অর্থাৎ জল, বায়ু, আলো, উদ্ভিদ, পশুপাখি এই সমস্তকিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ গড়ে ওঠে। এই পরিবেশের মধ্যেই মানুষ বসবাস করে। আমাদের চারপাশে বিভিন্ন রকমের সজীব এবং জড় উপাদান সহযোগে গঠিত হয় এই পরিবেশ।

পরিপোষক চক্র বা জৈব ভূরাসায়নিক চক্র

যে কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশ থেকে বিভিন্ন মৌল থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে এবং সেই সমস্ত জীবের রেচন পদার্থ হিসেবে অথবা তাদের মৃত্যুর পর মৃত জীবদেহ থেকে এই উপাদানগুলি আবার পরিবেশে ফিরে আসে। মৌলগুলোর এইরকম চক্রাকার আবর্তনকে বলা হয় পরিপোষক চক্র বা জৈব ভূরাসায়নিক চক্র।

এই চক্র পরিবেশের ভারসাম্য ও গতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

নাইট্রোজেনের উৎস

জীবদেহের বিভিন্ন প্রকার প্রোটিন জাতীয় যৌগের গঠনগত উপাদান হল নাইট্রোজেন। পরিবেশে নাইট্রোজেনের উৎস হল বাতাসের মুক্ত নাইট্রোজেন।

এছাড়াও মাটিতে নাইট্রেট, নাইট্রাইট ও অন্যান্য যৌগ রূপে নাইট্রোজেনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

নাইট্রোজেন চক্রের পর্যায়

নাইট্রোজেন চক্রে যে সমস্ত পর্যায়গুলি লক্ষ্য করা যায়, সেগুলি হল-

ক) নাইট্রোজেনের স্থিতিকরণ বা আবদ্ধকরণ বা সংবন্ধন (Nitrogen fixation)

বাতাসে থাকা মুক্ত নাইট্রোজেন যে পদ্ধতিতে নাইট্রোজেন জাতীয় যৌগরূপে মাটিতে আবদ্ধ হয়, সেই পদ্ধতিকে নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ বা আবদ্ধকরণ বলে।

i) প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ

সাধারণত বজ্রপাতের সময় আকাশে যে বিদ্যুৎস্ফূরণ ঘটে, তার মাধ্যমে বাতাসে থাকা নাইট্রোজেন অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন অক্সাইড যৌগ উৎপন্ন করে এবং মাটিতে মিশে যায়।

ii) জীবজ নাইট্রোজেন সংবন্ধন

এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন নাইট্রোজেন স্থিতিকারী অনুজীব দ্বারা বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেন মাটিতে আবদ্ধ হয়।

iii) শিল্পজাত নাইট্রোজেন সংবন্ধন

বিভিন্ন রকমের নাইট্রোজেনঘটিত সার (যেমন ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি ) জমিতে প্রয়োগ করলে তা মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও সার-কারখানা থেকে নিঃসৃত বর্জ্যের মধ্যেও প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন থাকে যেগুলি নদীর জলে মেশে।

) মাটির নাইট্রোজেনের জীবদেহে প্রবেশ

উন্নত উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে নাইট্রোজিনেজ নামক নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী উৎসেচক অনুপস্থিত থাকায়, তারা বাতাস থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন গ্ৰহণ করতে পারে না তাই উদ্ভিদরা মাটি থেকে নাইট্রোজেনঘটিত লবণ (নাইট্রেট) শোষণ করে, নিজেদের দেহের নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করে এই নাইট্রোজেন আবার উদ্ভিদ দেহে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন হিসাবে সঞ্চিত থাকে খাদ্যের মাধ্যমে তা প্রাণীদেহে প্রবেশ করে

গ) জীবদেহ থেকে নাইট্রোজেনের মাটিতে পুনরায় প্রবেশ

জীবদেহ থেকে মাটিতে নাইট্রোজেনের পুনঃপ্রবেশ দুটি উপায়ে সম্ভব।

অ্যামোনিফিকেশন

যে প্রক্রিয়ায় নানা রকমের নাইট্রোজেন ঘটিত জৈব যৌগ অর্থাৎ প্রোটিন বিভিন্ন অনুজীব দ্বারা বিয়োজিত হয়ে অ্যামোনিয়া উৎপন্ন করে, সেই পদ্ধতিকে অ্যামোনিফিকেশন বলে।

নাইট্রিফিকেশন

এই পদ্ধতিতে মাটিতে উপস্থিত অ্যামোনিয়া, অনুজীব দ্বারা প্রথমে নাইট্রাইট (NO2) এবং পরে নাইট্রেট (NO3) যৌগে পরিণত হয়। যে সমস্ত অণুজীব এই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে, তাদের বলা হয় নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া।

 ঘ) নাইট্রোজেনের মুক্তি

মাটিতে বসবাসকারী বেশকিছু অনুজীব দ্বারা মাটিতে আবদ্ধ নাইট্রোজেন যৌগ ভেঙে মুক্ত নাইট্রোজেনে পরিণত হয়, এই পদ্ধতিকে বলা হয় ডিনাইট্রিফিকেশন বা নাইট্রোজেন মোচন। যে সমস্ত ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে এই প্রক্রিয়াটি ঘটে, তাদের ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া বলে।


দশম শ্রেণির অন্যান্য বিভাগগুলি পড়ুন –ভৌতবিজ্ঞান | গণিত | জীবনবিজ্ঞান

নাইট্রোজেন চক্রের তাৎপর্য

এই চক্রের মাধ্যমে প্রকৃতিতে নাইট্রোজেনের ভারসাম্য বজায় থাকে।

জীবদেহে নাইট্রোজেনের প্রয়োজন অপরিহার্য। এই চক্রের সাহায্যে নাইট্রোজেন জীবদেহে প্রবেশ করে এবং পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে।

মানুষের ক্রিয়াকলাপ এবং নাইট্রোজেন চক্র

মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলে নাইট্রোজেন চক্র প্রভাবিত হয়। সেগুলি হল

নাইট্রোজেনযুক্ত সার প্রয়োগ

অধিক পরিমাণে নাইট্রোজেনযুক্ত সার প্রয়োগের ফলে জল, বায়ু ও মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শিম্বীগোত্রীয় উদ্ভিদের চাষ

আমরা জানি শিম্বীগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলে বসবাসকারী রাইজোবিয়াম নামক ব্যাকটেরিয়া বাতাস থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন শোষণ করতে পারে।

জীবাশ্ম জ্বালানি দহন

বিভিন্ন রকমের জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন কয়লা, তেল ইত্যাদি দহনের ফলে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রিক অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয় এবং যা বাতাসে মিশে বায়ুমন্ডলে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।

পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব

অতিরিক্ত নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে পরিবেশের উপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে সেগুলি হল –

  • নাইট্রাস অক্সাইডের (N2O) ঘনত্ব বৃদ্ধি
  • নাইট্রিক অক্সাইডের (NO) ঘনত্ব বৃদ্ধি
অধ্যায় সমাপ্ত! পরবর্তী পর্ব → পরিবেশ দূষণ

এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

X-Lsc-5a