পদার্থবিদ্যা – একাদশ শ্রেণি – সৃতিবিজ্ঞান (Kinematics)
কোন বস্তু সমবেগে গতিশীল হলে তার সরণ, সময় লেখচিত্র কি রূপ হবে?
সমবেগে গতিশীল কোনো বস্তুর ত্বরণ সর্বদাই শূন্য হয়।
এক্ষেত্রে, সরণ (s) = বেগ (v) × সময় (t)
বেগ যেহেতু সমান, এটা একটা ধ্রুবক রাশি হিসাবে ধরে নিতে পারি।
এবার একটি দ্বিমাত্রিক লেখচিত্রে সরণ রাশিকে y অক্ষ বরাবর ও সময় রাশিকে x অক্ষ বরাবর নিলে একটি সরলরেখা পাওয়া যায়।
যার নতি সর্বদাই ধ্রুবক হয়, এবং ধ্রুবক রাশিটিই বেগের মান প্রকাশ করে।
নতি = tan θ
প্রারম্ভিক সরণ শূন্য বলে ধরা হয় যখন t = 0
t = 0 তে প্রারম্ভিক সরণ শূন্য হয় তাই
লেখচিত্রটি কেন্দ্রবিন্দু (O) দিয়ে যায়। তবে সরল রেখার নতির মান একই থাকে সর্বদা।
এক্ষেত্রে যে কোনো সমান সময়ের অবকাশে কণাটির সরণ সর্বদা একই হয়।
এক্ষেত্রে, সরণ সময় লেখচিত্র OP সরলরেখা দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
লেখচিত্রের যে কোনো বিন্দু P, কোনো প্রদত্ত সময় (OQ) এ কণার সরণের মান OR নির্দেশ করে।
সময় অক্ষের সাথে OP সরলরেখার নতি ঐ বিন্দুতে বস্তুটির বেগকে নির্দেশ করে।
OP সরলরেখার নতি = tan θ =সরন\সময়= গতিবেগ
অর্থাৎ আমরা সহজেই দেখতে পেলাম, সরণ–সময় লেখচিত্রের নতিই হবে বস্তুটির গতিবেগের পরিমাপ এবং সরলরেখাটি সমবেগবিশিষ্ট বস্তুর গতির প্রকৃতিকে নির্দেশ করে।
লেখচিত্রের সাহায্যে গতির ব্যাখ্যা
দূরত্ব–সময় এবং সরণ–সময় লেখচিত্র
x অক্ষ বরাবর সময় (t) কে এবং y অক্ষ বরাবর অতিক্রান্ত দূরত্ব বা সরণ (s) কে প্রকাশ করা হয়। y অক্ষ বরাবর বস্তুটির অতিক্রান্ত দূরত্ব প্রকাশ করলে তাকে দূরত্ব–সময় লেখচিত্র, আবার একইভাবে y অক্ষ বরাবর বস্তুটির অতিক্রান্ত দূরত্বের পরিবর্তে সরণ প্রকাশ করলে তাকে সরণ–সময় লেখচিত্র পাওয়া যায়।
একাদশ শ্রেনি থেকে → বাংলা | ইংরাজি
তবে এই লেখচিত্রের সাহায্যে সময়ের সাথে সাথে বস্তুটি কীভাবে চলছে (অর্থাৎ তার সরণ, অতিক্রান্ত দূরত্ব, সমবেগে না অসমবেগে চলছে) তার একটা ধারণা পাওয়া যায়।
যেমন একটা বই টেবিলের ওপর স্থির হয়ে রয়েছে, তার সরণ বা অতিক্রান্ত দূরত্ব সবসময় শূন্যই হয়।
অর্থাৎ এক্ষেত্রে সরণ–সময় বা দূরত্ব–সময় লেখচিত্রটি সময় অক্ষ বরাবর একটি সরলরেখা হবে।
চিত্র 1: স্থির বস্তুর ক্ষেত্রে লেখচিত্র (OP) সরলরেখা।
সমবেগে গতিশীল কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে সরণ–সময় লেখচিত্র আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।
অসমবেগে গতিশীল কোনো বস্তু সমত্বরণে আবার অসমত্বরণেও চলতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই সরণ–সময় লেখচিত্রটি সরলরেখা না হয়ে বক্ররেখা হবে।
গতির সমীকরণ অনুযায়ী আমরা জানি,
যদি একটি বস্তু প্রাথমিক বা প্রারম্ভিক বেগ u নিয়ে যাত্রা শুরু করে a সমত্বরণে চলার পর চূড়ান্ত গতিবেগ বা অন্তিম বেগ v হয় এবং t সময়ে অতিক্রান্ত দূরত্ব হয় s তখন গতির সমীকরণ হয়,
—(1)
—(2)
—(3)
সমত্বরণে গতিশীল বস্তুকণার ক্ষেত্রে, সময়–সরণ লেখচিত্রটি (2) নং সমীকরণ দ্বারা প্রকাশ করা হয়, যা একটি অধিবৃত্ত (parabola) র সমীকরণ। (চিত্র 2)
ধরা যাক, বস্তুটি বেগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে ত্বরণে সময় ধরে চলে, আবার ত্বরণ পরিবর্তন করে , সমত্বরণে সময় চলে। অর্থাৎ মোট সময় অবকাশে বস্তুটি অসমত্বরণে চলে।
এখন, ধরি, সময়ে দূরত্ব যায়,
সময় পর বেগ
আবার সময়ে অতিক্রান্ত দূরত্ব
এক্ষেত্রে, সময় অতিক্রম করার ঠিক পরে বেগ হয় , যা সময় অবকাশের প্রাথমিক বেগ।
মোট অতিক্রান্ত দূরত্ব [যা লেখচিত্রে OAB বক্ররেখা নির্দেশ করছে] চিত্র 3।
ঐ সময়ের ব্যবধানে কণাটির গড় বেগ (v)
যা AB জ্যা এর নতিকে প্রকাশ করে।
এবার সময়ের ব্যবধান ∆t । যদি খুব ছোট হয় অর্থাৎ ∆t → 0 তখন B বিন্দুটি A বিন্দুর খুব কাছে চলে আসে তখন AB জ্যা এর নতি A বিন্দুতে স্পর্শকের নতিকে প্রকাশ করে।
এখানে 4 নং চিত্রটি একটি অসমবেগে গতিশীল একটি বস্তুকণার জন্য আঁকা হয়েছে, এটা খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে।
একাদশ শ্রেনি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল
যখন ∆t → 0 তখন A বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শকের নতি ঐ নির্দিষ্ট মুহূর্তে কণাটির তাৎক্ষণিক বেগ নির্দেশ করে।
সমবেগে গতিশীল কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক বেগ সর্বদাই সমান হয়। তাই একটি সরলরেখা পাওয়া যায়, আবার অসমবেগে গতিশীল বস্তুর ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক বেগ সর্বদাই ভিন্ন, তাই লেখচিত্রের ভিন্ন বিন্দুতে স্পর্শকের মানও ভিন্ন।
বেগ–সময় লেখচিত্র
x অক্ষ বরাবর সময় (t) এবং y অক্ষ বরাবর বস্তুকণার বেগ (v) কে প্রকাশ করে এই লেখচিত্র পাওয়া যায়।
সমবেগে গতিশীল কোনো কণার ক্ষেত্রে বেগ–সময় লেখচিত্র একটি সরলরেখা (AB) হয়, যা সময় অক্ষের সমান্তরাল হয়।
লেখচিত্রের উপর যে কোনো একটি বিন্দু ঐ বিন্দুতে বস্তুটির বেগের মান নির্দেশ করে। (যেমন চিত্র 5)
v সমবেগে কোনো বস্তু t সময়ে s দূরত্ব অতিক্রম করলে AB সরলরেখা বেগের মান নির্দেশ করে।
এক্ষেত্রে,
= OABC আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল
অর্থাৎ ‘s’ হল গতি নির্দেশক রেখা ও সময় অক্ষের মর্ধ্যবর্তী ক্ষেত্রফল।
সমত্বরণে গতিশীল বস্তুর ক্ষেত্রে বেগ–সময় লেখচিত্র একটি সরলরেখা হয়।
ধরা যাক, বস্তুটি u প্রাথমিক বেগে যাত্রা শুরু করে a সমত্বরণে t সময় যাবার পর v বেগ পেল।
∴ v = u + at
6 নং লেখচিত্রে B বিন্দুটি OC সময়ে কণার বেগের মান প্রকাশ করে।
যদি প্রাথমিক বেগ শূন্য হয়, অর্থাৎ u = 0
v = at
অর্থাৎ A বিন্দু O বিন্দুর উপর সমাপতিত হয়। অর্থাৎ বেগ সময় লেখচিত্র ‘O’ বিন্দুগামী হয়। এখানে AB সরলরেখার নতিই বস্তুকণার ত্বরণের পরিমাণ নির্দেশ করে।
একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer
AB সরলরেখার নতি
অসমত্বরণে চলমান কোনো বস্তুকণার বেগ–সময় লেখচিত্র একটি বক্ররেখা হয়। (চিত্র 7 এ AB জ্যা)
সরণ সময় লেখচিত্রের আলোচনার মতোই এখানেও বলা যায় যে, সময়ের ব্যবধানে AB জ্যা এর নতি গড় ত্বরণের মান নির্দেশ করে। তাৎক্ষণিক ত্বরণ জানার জন্য খুব কম সময়ের অবকাশে বেগের পরিবর্তন মাপতে হবে, কোনো বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শকের নতিই ঐ মুহূর্তে কণাটির তাৎক্ষণিক ত্বরণকে বোঝায়।
কলনবিদ্যার সাহায্যে এটাও দেখানো যায় যে, অসমত্বরণে গতিশীল কোনো কণার ক্ষেত্রে যে কোনো সময়ের অবকাশে কণার সরণ ঐ বক্ররেখা ও সময় অক্ষের মর্ধ্যবর্তী ক্ষেত্রফলের সমান হয়।
অর্থাৎ
উদাহরণ ব্যাখ্যা
একটি অট্টালিকার শীর্ষ থেকে একটি বলকে নীচের দিকে ফেলা হল এবং আরেকটি বল অনুভূমিক দিকে ছোঁড়া হল, কোন্ বলটি আগে মাটিতে পড়বে?
কোনো বস্তু উঁচু জায়গা থেকে পড়লে কত সময় লাগবে, সেটা বের করার জন্য আমাদের শুধুমাত্র উল্লম্ব গতির কথা নিয়ে আলোচনা করলেই হবে, অনুভূমিক গতির কোনো প্রয়োজন পড়ে না।
দ্বিতীয় বলটিকে অনুভূমিক দিকে ছোঁড়া হল, ফলে উল্লম্বদিকে বেগ শূন্য হয়, যদি অট্টালিকার উচ্চতা h হয়, তাহলে বলটির উচ্চতা h থেকে পড়তে সময় লাগলে,
∴
এবার প্রথম বলের ক্ষেত্রে, বলটি স্থির অবস্থা থেকে ফেলা হলে বেগের উল্লম্ব উপাংশ শূন্য হয়, এক্ষেত্রেও তাই বলটি উচ্চতা থেকে সময়ে নীচে পড়লে,
⇒
অর্থাৎ উভয়ক্ষেত্রেই বল দুটি একই সময়ে মাটিতে পড়বে।
যদি, প্রথম বলটি স্থির অবস্থায় না থেকে বেগের উল্লম্ব উপাংশ থাকে, তবে উচ্চতা অতিক্রম করতে সময় লাগলে,
[সময় ঋণাত্মক হতে পারে না তাই ঋণাত্মক মান নেওয়া হল না]
এর মানের উপর নির্ভর করে বের করা যায়।
কিন্তু প্রথম বলের উল্লম্ব বেগ শূন্য হলে দুটি বলই একই সময়ে ভূমি স্পর্শ করবে, তবে একই বিন্দুতে ভূমি স্পর্শ করবে না।
দ্বিতীয় বলটির অনুভূমিক বেগ থাকার জন্য কিছু অনুভূমিক সরণ হবে।
যদি, অনুভূমিক দিকে বেগ u হয়, তবে অনুভূমিক সরণ
সমাপ্ত।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখিকা পরিচিতি
প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয় এবং IIT খড়গপুরের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তনী স্বধীতি মাঝি। পদার্থবিদ্যা চর্চার পাশাপাশি ছবি আঁকা, গান গাওয়া এবং বই পড়ায় সমান উৎসাহী স্বধীতি।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা