শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: ইতিহাস । অধ্যায় – আঞ্চলিক শক্তির উত্থান (দ্বিতীয় অধ্যায়)
আগের পর্বে তোমাদের বলেছিলাম বাংলা ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সম্পর্ক ঠিক কেমন ছিল।
এও জানিয়েছিলাম, কি ভাবে ইংরেজরা দখল করে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যাকে। আজ বলব ঠিক কি কৌশলে ইংরেজরা একটু একটু করে সমগ্র দেশকে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে এসেছিল।
1764 সালে বক্সারের যুদ্ধের পর কোম্পানি গোটা ভারতবর্ষে দেশীয় রাজ্যগুলি দখলের উদ্যোগ নেয়।
বিভিন্ন রাজ্যের প্রশাসনিক কাজে কড়া নজর রাখতে কোম্পানি একজন ইংরেজ প্রতিনিধিকে বিভিন্ন প্রদেশে নিযুক্ত করত, এদের “রেসিডেন্ট” বলা হত।
এই রেসিডেন্টরা দেশীয় রাজ্যগুলিকে ইংরেজ শাসনে অন্তর্ভুক্তিতে বিরাট ভূমিকা পালন করেছিল।
লর্ড কর্ণওয়ালিশের আমলে এই রেসিডেন্টদের প্রভাব কিছুটা কমলেও, পরবর্তী সময়ে আবারও এদের আগ্রাসন বেড়ে যায়।
অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | ভূগোল
লর্ড ওয়েলেসলির আমলে ‘অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি’ রেসিডেন্টদের সাহায্যে এই রাজ্য দখলকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। পরবর্তীকালে লর্ড ডালহৌসির সময়ে যে ‘স্বত্ত্ব বিলোপ নীতি’ গৃহীত হয়েছিল, তা রাজ্য দখলের প্রক্রিয়াকে প্রত্যক্ষ ও সরল করেছিল।
কি সব নীতির নাম নিচ্ছি, নিশ্চয়ই বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে, আচ্ছা চলো বিষয়টা আরো সহজে বুঝিয়ে বলি।
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি
এটি একটি অদ্ভুত নীতি। যার প্রয়োগে সেইসময়কার বহু রাজ্যই ব্রিটিশদের অধীনস্থ হয়ে পড়ে।
ভারতবর্ষে সেই সময় বহু দেশীয় রাজ্য ছিল। তোমাদের আগেই বলেছি বাংলা জয়ের পর ব্রিটিশরা ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলো দখলের উদ্যোগ নেয়। আর তাতে কাজে লাগায় ভারতের বিশৃঙ্খল রাজনীতিকে।
গোটা দেশের অসংখ্য ক্ষুদ্র, বৃহৎ রাজ্য একে অপরের সাথে বিবাদে মেতে রাজনৈতিক ক্ষমতা, রাজ্যের পরিধি, সম্পদ বৃদ্ধিতে সেই সময় ব্যস্ত ছিল। অন্যদিকে দিল্লির মসনদে তখন অদক্ষ মুঘল শাসকদের শাসন। এই সুযোগে ব্রিটিশরা রাজ্যগুলোর পারস্পরিক বিবাদকে উস্কে দেয়। অনেক রাজাই তখন মিত্র জ্ঞানে ব্রিটিশদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। আবার যারা তাদের প্রস্তাব মেনে নেয়না তাদেরকে কোম্পানির সাথে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়। অর্থাৎ, যাই কর ব্রিটিশদের প্রস্তাব মানতেই হবে। এইভাবেই লর্ড ওয়েলেসলি তাঁর ‘অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি’-এর মাধ্যমে সারা ভারতকে ব্রিটিশ শক্তির অন্তর্গত করার প্রচেষ্টা করেছিলেন।
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির শর্ত
• এই মিত্ৰতা চুক্তিতে যে সমস্ত দেশীয় রাজ্যগুলি স্বাক্ষর করবে তাদের রাজ্যে একজন করে ব্রিটিশ প্রতিনিধি বা রেসিডেন্টসহ একদল ব্রিটিশ সেনা রাখতে হবে। এমনকি সেইসব দেশীয় রাজ্যকেই তাদের নিজেদের রাজ্যে নিযুক্ত করা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ব্যয়ভার চালাতে হবে।
• ব্রিটিশ ছাড়া অন্য কোনো ইউরোপীয়কে মিত্র দেশীয় রাজ্যগুলি তাদের রাজ্যে কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত করতে পারবে না । এমনকি নিয়োগ হওয়া অব্রিটিশ ইউরোপের কর্মচারীদেরকে বরখাস্ত করতে হবে।
• ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকেই ভারতের সর্বোত্তম শক্তি হিসেবে সকল দেশীয় মিত্র রাজ্যগুলিকে মান্যতা দেবে এবং মিত্রতা চুক্তিতে যে সব দেশীয় রাজ্যগুলি আবদ্ধ হবে তাদের মধ্যে কোনো বিবাদ বা সমস্যা বাঁধলে তা ব্রিটিশ সরকারই মেটাবে ও সেই সমাধান অন্যান্য সকল মিত্ররাজ্যকে মানতে হবে।
• মিত্র দেশীয় রাজ্যগুলির বিশেষত বিদেশনীতি কোম্পানির দ্বারাই পরিচালিত হবে। ইংরেজ কোম্পানির অনুমতি না নিয়ে তারা অন্য কোনো শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবেনা এমনকি কোনো দেশীয় রাজ্যের সঙ্গে কোনোরূপ চুক্তি স্বাক্ষর বা মিত্রতায় আবদ্ধ তারা হতে পারবে না।
অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – গণিত | বিজ্ঞান | ইতিহাস
এইভাবে সুচতুর কৌশলে তারা এই নীতির প্রয়োগ করে একের পর এক রাজ্য দখল করে।
যে সমস্ত রাজ্য তারা এই উপায়ে দখল করেছিল তাদের নাম, সময়, শাসকের নাম নীচে দেওয়া হলঃ
এছাড়াও উত্তর ভারতের অযোধ্যা ও পাঞ্জাবেও কোম্পানি কৌশল প্রয়োগ করে নিজস্ব প্রতিনিধি বা রেসিডেন্ট নিয়োগ করেছিল।
স্বত্ব বিলোপ নীতি
এই নীতি প্রণয়ন করেন লর্ড ডালহৌসী (1848-1856 খ্রিঃ)। এই নীতি বলা যায় অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির যোগ্য উত্তরসূরি। যে সমস্ত দেশীয় রাজাদের নিজস্ব পুত্র সন্তান ছিলনা, উত্তরাধিকার নেই এই অজুহাতে তাদের রাজ্য অধিগ্রহণ করাই ছিল এই নীতির মূল উদ্দেশ্য।
এইভাবে ডালহৌসি একে একে সাতারা, ঝাঁসি, সম্বলপুর হস্তগত করেন। পরবর্তীকালে অপশাসনের অজুহাতে অযোধ্যাও অধিগ্রহণ কড়া হয়।
অধ্যায় সমাপ্ত।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখিকা পরিচিতিঃ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত প্রত্যুষা মুখোপাধ্যায়। বিভিন্ন বিষয় চর্চার পাশাপাশি নাচ,গান, নাটকেও প্রত্যুষা সমান উৎসাহী।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করতে ভুলো না।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
VIII_His_2c