gacher-kotha
WB-Class-8

গাছের কথা – জগদীশচন্দ্র বসু

শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: বাংলা। গাছের কথা (প্রবন্ধ)


লেখক পরিচিতি

জগদীশচন্দ্র বসু এই প্রাতঃস্মরণীয় নামটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত।

বাঙালি বিজ্ঞান সাধকদের মধ্যে অগ্রগণ্য জগদীশচন্দ্র বসুকে ভারতীয় উপমহাদেশের বিজ্ঞান চর্চার জনক বলে অভিহিত করা হয়। তিনিই প্রথম মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তির উপর সফল গবেষণা করেন, এর ফলশ্রুতিতেই তৈরি হয় রেডিও। কিন্তু ব্রিটিশ শাসিত পরাধীন ভারতের নাগরিক শ্রী বসু তাঁর এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের পেটেন্ট করাননি। ফলত ইতলির বৈজ্ঞানিক মার্কনি এই খ্যাতি লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর আবিষ্কৃত ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে উদ্ভিদের জীবনচক্র প্রমাণ করেন।

পদার্থবিদ এবং জীববিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর বাংলা সাহিত্যেও সমান আগ্রহ এবং ব্যুৎপত্তি ছিল। তাঁর রচিত রচনা বা প্রবন্ধগুলি অব্যক্ত নামে একটি গ্রন্থে সংকলিত করা হয়। বর্তমান আলোচ্য ‘গাছের কথা’ প্রবন্ধটিও এই গ্রন্থ থেকেই নেওয়া হয়েছে।


গাছের কথা প্রবন্ধের সামগ্রিক আলোচনা দেখে নাও এই ভিডিও থেকে ↓


‘গাছের কথা’ প্রবন্ধের বিষয়বস্তু

লেখক শ্রী জগদীশচন্দ্র বসু আমাদের তাঁর ‘গাছের কথা’ প্রবন্ধে উদ্ভিদ জগতের কয়েকটি ঘটনার সাথে আমাদের পরিচয় করিয়েছেন।

পরিবেশে আমাদের অন্যতম সাথী গাছ। গাছ আমাদের মত কথা বলতে পারে না বা আমাদের মত হেঁটে চলে বেড়াতে পারে না। কিন্তু গাছেদেরও একটা জীবন আছে, তারা আহার করে (খাবার খায়), বেড়ে ওঠে, এমনকি প্রয়োজনমত নিজের দিক পরিবর্তন করে নেয়। খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, মানুষের সাথে উদ্ভিদের জীবনচক্রের ব্যাপক মিল। মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীরা যে ভাবে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে, উদ্ভিদরাও তার ব্যাতিক্রম নয়।

তাই লেখক বলেছেন – ‘গাছের জীবন মানুষের জীবনের ছায়ামাত্র’ ।

একটি মৃত ডাল এবং একটি জীবন্ত ডালের মধ্যে পার্থক্য হল জীবনের। গাছ বেঁছে থাকলে বাড়তে থাকে। অর্থাৎ তার গতি আছে, এই গতি হয়তো চট করে বোঝা যায় না, কিন্তু ভালো ভাবে লক্ষ্য করলে এই বৃদ্ধি (চলন) সহজেই লক্ষ্য করা যায়।

পাখির ডিম যেমন সঠিক পরিমাণে উত্তাপ পেলে, ডিম ফুটে পাখির ছানার জন্ম হয়। ঠিক তেমনভাবে আদর্শ মাটি, তাপ এবং জল পেলেই সুপ্ত বীজ থেকে উদ্ভিদের জন্ম হয়।

লেখক সুপ্ত বীজকে একটি বৃক্ষশিশুর সাথে তুলনা করেছেন।

যেন বীজের মাথায় একটি কঠিন ঢাকনা দেওয়া আছে, তার মধ্যে নিরুপদ্রপে শিশুরূপী বৃক্ষ নিরাপদে বিশ্রাম নিচ্ছে। বীজের আকার দেখে কিন্তু বোঝা যায় না যে বড় হয়ে সে কতো বড় হবে? বট গাছের বীজ, সরিষা (চলতি কথায় সরষে) গাছের বীজের থেকে আকারে ছোট হয়, কিন্তু সেই বট গাছ বড় হয়ে, হয়ে ওঠে মহিরুহ।

আমরা চাষের মাঠে কৃষকদের বীজ ছড়াতে দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু বনে – জঙ্গলে গাছের বীজ ছড়ায় কে?

নানা উপায়ে এই বীজ জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়ে। কখনো হয়তো পাখীরা ফল খেয়ে তার বীজ দূরে নিয়ে যায় আবার কখনো বা বাতাসের প্রাবল্যে বীজ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। লেখক এখানে ছোট বেলায় তার শিমূল বীজ ধরার জন্য দৌড়াদৌড়ি করার কথা উল্লেখ করেছেন।

শিমূল তুলো [Image by Atikur.khokon, licensed under CC BY-SA 4.0 ]

আচ্ছা, সব বীজই অঙ্কুরিত হয় বা জন্ম নেয়?

না। কারণ বীজ অঙ্কুরিত হবার জন্য সঠিক মাটি, উত্তাপ এবং জলের প্রয়োজন হয়। তাই অনেকক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে বীজ এমন স্থানে পড়ল যেখানে তার অঙ্কুরিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে একটি বীজ কিন্তু অনেকদিন অবধি সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে; লেখক এই প্রসঙ্গে বলেছেন –

‘যেখানেই বীজ পড়ুক না কেন, বৃক্ষশিশু অনেকদিন পর্যন্ত নিরাপদে ঘুমাইয়া থাকে। বাড়িবার উপযুক্ত স্থানে যতদিন না পড়ে, ততদিন বাইরের কঠিন ঢাকনা গাছের শিশুটিকে নানা বিপদ হইতে রক্ষা করে।’

এর একটা উদাহরণ আমরা কল্পনা করতে পারি।

প্রকৃতিতে নানান সময়ে নানান গাছের বীজ পাকে। যেমন বৈশাখ মাসে আম, লিচু ইত্যাদি ফল পাকে। আবার ধান, যব ইত্যাদি উদ্ভিদের বীজ আশ্বিন – কার্তিক মাসে পাকে। সাধারণত, আশ্বিন মাসের শেষে বড় ঝড় হয়। মনে করা যাক, একটি বীজ এই প্রবল ঝড়ে উড়ে গেল।

“একটি বীজ সমস্ত দিনরাত্রি মাটিতে লুটাইতে লুটাইতে একখানা ভাঙা ইট কিংবা মাটির ডেলার নিচে আশ্রয় নিল।”

এবার কিছুসময় পরে ঐ বীজটি ধুলো ও মাটিতে চাপা পড়ে গেল। এইভাবে বীজটি হয়তো আমাদের লোক চক্ষুর আড়ালে চলে গেল। কিন্তু তা বিধাতা বা প্রকৃতির দৃষ্টির আড়ালে গেল না। মাতৃসম পৃথিবী তাকে যত্ন করে রক্ষা করল। ঐ বীজ বা বৃক্ষশিশুটি পৃথিবী মায়ের কোলে, মাটির তলায় ঢাকা থেকে বাইরের শীত এবং ঝড় থেকে রক্ষা পেল। এরপর হয়তো কোনদিন তার প্রয়োজনীয় উত্তাপ এবং জল পেলে বৃক্ষশিশুটি জেগে উঠবে। সে হয়ে উঠবে একটি বিশাল বৃক্ষ।


অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান

‘গাছের কথা’ প্রবন্ধের মূলবক্তব্য

মানুষ ছোট থেকে বড় হয়। এই পথচলা বা জীবনচক্রের মধ্যে দিয়ে সে অনেকগুলি ধাপ অতিক্রম করে। এদের মধ্যে কিছু কঠিন আবার কিছু সরল বাঁধা পেরিয়ে একসময় মানুষের মৃত্যু হয়।

জীবকুলের অন্যতম সদস্য উদ্ভিদ-ও এই চক্রের ব্যাতিক্রম নয়।

লেখক যে সময় এই লেখাটি লিখছেন, সেই সময় বাংলার ছাত্র – ছাত্রীদের কাছে বিজ্ঞান ততটা পরিচিত হয়ে ওঠেনি। লেখক শ্রী জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর এই প্রবন্ধের মাধ্যমে ছোট ছেলে মেয়েদের কাছে গাছেদের জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

তিনি নানান বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে আমাদের সামনে উদ্ভিদ জগতের একটি চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন, মানুষের মত গাছেদেরও নানান জীবন সংগ্রাম আছে, তাদের মধ্যেও বন্ধুত্ব – আত্মত্যাগ আছে।

শ্রী জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর পরীক্ষার মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষকে শিখিয়েছেন যে ‘গাছের প্রাণ আছে’। আর এই প্রবন্ধে তিনি আমাদের বুঝিয়েছেন ‘গাছের জীবন মানুষের জীবনের ছায়ামাত্র’।

সমাপ্ত। আরো পড়ো → নাটোরের কথা গল্পের বিষয়সংক্ষেপ

এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –