শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: বিজ্ঞান । অধ্যায় – স্পর্শ ছাড়া ক্রিয়াশীল বল (প্রথম পর্ব)
অধ্যায়ের শুরুতেই আমরা জেনে নেব যে মহাকর্ষ বল কাকে বলে?
মহাবিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তুর মধ্যে একটি আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে। এই আকর্ষণ বলকে মহাকর্ষ বলা হয়।
বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন মহাকর্ষ সূত্র প্রতিষ্ঠা করেন।
মহাকর্ষ পদার্থের সাধারণ ধর্ম। সকল কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের এই ধর্ম আছে। ক্ষুদ্র বস্তু থেকে শুরু করে মহাকাশের গ্রহ নক্ষত্র –সকলের মধ্যেই এই মহাকর্ষ বল কাজ করে।
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র
বিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তুকণা পরস্পরকে তাদের সংযোজনকারী সরলরেখা বরাবর আকর্ষণ করে, এবং এই আকর্ষণের মান বস্তুকণা দুটির ভরের গুনফলের সমানুপাতী এবং তাদের মধ্যে দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতী।
ধরা যাক দুটি বস্তুকণার ভর ও এবং বস্তুকণা দুটির মধ্যে দূরত্ব । তাহলে বস্তুকণা দুটির মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বল
অথবা,
এই কে বলা হয় মহাকর্ষীয় ধ্রুবক। ব্রহ্মান্ডের সর্বত্র এর মান একই থাকে। বস্তুকণা দুটি কোন মাধ্যমে রয়েছে তার উপর এর মান নির্ভর করে না। এর মান অপরিবর্তনীয় হওয়ার কারণে একে সার্বজনীন মহাকর্ষীয় ধ্রুবক বলা হয়।
মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের একক সমূহ
CGS পদ্ধতিতে G এর একক ডাইন–সেন্টিমিটার2/গ্রাম2
SI পদ্ধতিতে G এর একক নিউটন–মিটার2/কেজি2
SI পদ্ধতিতে এর মান ।
অর্থাৎ দুটি 1 kg ভরের বস্তুকণা একে অন্যের থেকে 1 m দূরে থাকলে তারা পরস্পরকে বল দ্বারা আকর্ষণ করবে।
CGS পদ্ধতিতে এর মান ।
বড় কঠিন কঠিন কথা মনে হচ্ছে না!
আচ্ছা বেশ বাদ দাও এসব পদার্থবিদ্যার জটিল তত্ত্ব, চলে এসো খেলার মাঠে। শীতের দুপুরে ব্যাডমিন্টন খেলার অভিজ্ঞতা তোমাদের নিশ্চয়ই সকলের আছে। একবার একটু মনে করে বলতো উড়ে আসা ককের দিকে র্যাকেট তাক করতে গিয়ে ঠিক কতবার উলটে পড়ে গেছো!
বা, ধরো আরো একটু ছোটো বয়সে পাশের বাড়ির দাদুর বাগানে আম চুরি করতে গিয়ে কতবার গাছ থেকে সোজা মাটিতে আছাড় খেয়েছো! এর উত্তরটা হল বহুবার, তাইনা!
আচ্ছা কখনও কি মনে হয়েছে খেলার সময় বা আম চুরির সময় মাটিতেই পড়ে গেলে কেন?
কেন আকাশে উড়ে গেলেনা! মনে হয়েছে! বাহ!
তাহলে জেনে রাখো তোমাদের এই প্রশ্ন কিন্তু আজ থেকে বহু বছর আগেই আর এক জন ব্যাক্তির মাথায় এসেছিল, তিনি হলেন বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন। তারই তত্ত্বের সংক্ষিপ্ত রূপ উপরের ঐ গাণিতিক সূত্রাবলি।
একে কি বলে জানো? একে বলে অভিকর্ষ বল। যার সাহায্যে পৃথিবী তার কেন্দ্রের দিকে সকল বস্তুকে আকর্ষণ করে। ঠিক যেমনটা মহাবিশ্বের সকল বস্তু সকলকে করে।
পৃথিবী পৃষ্ঠ বা পৃষ্ঠের কাছাকাছি অবস্থিত কোন বস্তুর উপর পৃথিবীর আকর্ষণকে অভিকর্ষ বলা হয়। অভিকর্ষও প্রকৃতপক্ষে মহাকর্ষ বল। পৃথিবী ও তার আশেপাশে থাকা বস্তুর মধ্যে ক্রিয়াশীল মহাকর্ষ বলই অভিকর্ষ নামে পরিচিত।
এই অভিকর্ষ বল দ্বারা পৃথিবী সকল বস্তুকে তার কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে। এই অভিকর্ষ বলের কারণে আমরা কোন বস্তু হাত দিয়ে তুলে ধরলে হাতের উপর এক নিম্নমুখী টান অনুভব করি। অভিকর্ষ বলের প্রভাবেই গাছ থেকে ফল মাটিতে খসে পড়ে (মাঝে মাঝে ফল চুরি করতে গিয়ে পালাতে যাওয়া চোর ও), বৃষ্টির জল মাটিতে পড়ে। বিভিন্ন বস্তুর যে ওজন আমরা অনুভব করি, তার কারণ এই অভিকর্ষ বল। অভিকর্ষকে মহাকর্ষের একটি বিশেষ ক্ষেত্র বলে গণ্য করা হয়।
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রে দুটি বস্তুকণার মধ্যে আকর্ষণ বলের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায়, বস্তু যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন তার কিছু না কিছু আকার থাকবেই। বস্তু দুটির আকার আয়তন যতই বড় হোক না কেন, যদি তাদের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশী হয়, তাহলে বস্তু দুটিকে বিন্দু বস্তু বলে ধরা হয়।
বস্তু দুটির ভর যত বেশী হবে তাদের মধ্যে আকর্ষণ বলও তত বেশী হবে। আবার বস্তু দুটির মধ্যে দূরত্ব যত কম হবে আকর্ষণ বল তত বৃদ্ধি পাবে। বস্তু দুটির মধ্যে দূরত্ব যত বাড়বে, তাদের মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বলের পরিমাণ তত হ্রাস পাবে।
অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান
চলো এবারে মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ বল সংক্রান্ত কিছু গাণিতিক উদাহরণ দেখে নিই।
প্রথম উদাহরণ
5 kg ও 8 kg ভরের দুটি বস্তু পরস্পরের থেকে 10 cm দূরত্বে রাখা আছে। এদের মধ্যে আকর্ষণ বল কত?
cm m
আমরা জানি মহাকর্ষীয় ধ্রুবক
kg, kg
নিউটনের সূত্রানুসারে,
নিউটন
∴ ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বলের পরিমাণ নিউটন।
দ্বিতীয় উদাহরণ
800 kg ও 1500 kg ভরের দুটি গাড়ি একটি অন্যটির থেকে 3 m দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বলের পরিমাণ কত?
প্রথম গাড়ির ভর kg
দ্বিতীয় গাড়ির ভর kg
গাড়ি দুটির মধ্যে দূরত্ব m
আমরা জানি মহাকর্ষীয় ধ্রুবক
∴ নিউটনের সূত্রানুসারে,
নিউটন
≈ নিউটন (প্রায়)
∴ ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বলের পরিমাণ 0.00000889 নিউটন (প্রায়)।
প্রথম পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → অভিকর্ষ ও মহাকর্ষের প্রভাবে গতি
লেখিকা পরিচিতি
বিজ্ঞান স্নাতক এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষিতা নন্দিতা বসুর পেশা শিক্ষকতা। তিনি বই পড়তে বড় ভালোবাসেন। কাজের ফাঁকে, অবসরে, বাসে ট্রামে তো বটেই, শোনা যায় তিনি নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও বই পড়তে পারেন।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
VIII-WB-2a