south-america
WB-Class-8

দক্ষিণ আমেরিকা

শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: ভূগোল । অধ্যায় – দক্ষিণ আমেরিকা

আগের পর্বে আমরা জেনেছি উত্তর আমেরিকা সম্পর্কে। এই পর্বে আমরা দক্ষিণ আমেরিকা সম্পর্কে আলোচনা করবো।

পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত ত্রিভুজাকৃতি এই মহাদেশ পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম মহাদেশ। আয়তনে মহাদেশটি ভারতের প্রায় পাঁচগুণ বড়। মহাদেশটি উত্তরে 12°28′ উত্তর অক্ষাংশ থেকে দক্ষিণে 55°59′ দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। আর পূর্বে 34°50′ পশ্চিম দ্রাঘিমা থেকে পশ্চিমে 81°20′ পশ্চিম দ্রাঘিমায় অবস্থিত।

মহাদেশটির উত্তর ও পূর্বদিকে আটলান্টিক মহাসাগর, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর এবং দক্ষিণে কুমেরু মহাসাগর অবস্থিত। উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত পানামা খাল উত্তর আমেরিকা মহাদেশের থেকে আলাদা করেছে।

দক্ষিণ আমেরিকার প্রাকৃতিক পরিবেশ

ভূপ্রাকৃতিক গঠনের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করলে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়।

ক) পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চল

মহাদেশের পশ্চিমে আন্দিজ পর্বতমালা অবস্থিত। উত্তরে ক্যারিবিয়ান সাগর থেকে দক্ষিণে হর্ন অন্তরীপ পর্যন্ত এই পার্বত্য অঞ্চলটি বিস্তৃত।

আন্দিজ পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালা।

অ্যাকোনকাগুয়া (6950 মিটার) হল আন্দিজ পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। বেশকিছু অংশে পর্বতবেষ্টিত মালভূমি আছে। যেমন- বলিভিয়া, ইকুয়েডর, টিটিকাকা, পেরু মালভূমি।

টিটিকাকা হ্রদ পৃথিবীর উচ্চতম হ্রদ যেটি মালভূমিতে অবস্থিত।

খ) পশ্চিমের সংকীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল

আন্দিজ পর্বতমালা এবং পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসগরের মাঝের সংকীর্ণ অংশ এটি। সমগ্র পশ্চিম উপকূল জুড়ে মহাদেশটির উত্তর থেকে দক্ষিণে এই উপকূল অঞ্চলটি গড়ে উঠেছে। প্রায় 1180 কিমি অংশে দীর্ঘ আটাকামা মরুভূমি অবস্থিত। এই মরুভূমি অঞ্চলটি পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক ও খরাপ্রবণ অঞ্চল।

গ) পূর্বের উচ্চভূমি অঞ্চল

দক্ষিণ আমেরিকার পূর্বদিকে দুটি উচ্চভূমি অঞ্চল আছে। দুটি উচ্চভূমই বহু প্রাচীন ভূখণ্ডের অংশ। এই দুটি উচ্চভূমি আমাজন নদী দ্বারা বিভক্ত।

ক) আমাজন নদীর উত্তর দিকে গায়না উচ্চভূমি অবস্থিত। পৃথিবীর উচ্ছতম জলপ্রপাত অ্যাঞ্জেল এই গায়না উচ্চভূমিতেই সৃষ্টি হয়েছে।
খ) আমাজন নদীর দক্ষিণ দিকে ব্রাজিল উচ্চভূমি অবস্থিত। ব্রাজিল উচ্চভূমি ও আন্দিজ পর্বতের মাঝে ম্যাটোগ্রাসো মালভূমি অবস্থিত।

ঘ) মধ্যভাগের বিশাল সমভূমি অঞ্চল

পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চল এবং পূর্বের উচ্চভূমির মাঝে এই বিশাল সমভূমি অঞ্চল অবস্থিত। অরিনোকো, আমাজন ও লা-প্লাটা নদীর সম্মিলিত অববাহিকা হলেই সমভূমি অঞ্চল।

আমাজন নদীর অববাহিকায় সৃষ্ট এই সেল্ভা সমভূমিতে পৃথিবীর বৃহত্তম চিরহরিৎ অরণ্যে সৃষ্টি হয়েছে এর নাম সেল্ভা অরণ্য।

ল্যানোস ও পম্পাস সমভূমি হল প্রকৃতপক্ষে তৃণভূমি অঞ্চল।

দক্ষিণ আমেরিকার নদনদী

• দক্ষিণ আমেরিকার অধিকাংশ নদী দীর্ঘ এবং আয়তনে বিশাল।
• নদীগুলি বৃষ্টির জল ও বরফগলা জলে পুষ্ট তাই চিরপ্রবাহী।
• অধিকাংশ নদীই আন্দিজ পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
• অরিনোকো নদীর মোহনায় বদ্বীপ সৃষ্টি হয়েছে।

দক্ষিণ আমেরিকার জলবায়ু

দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশটির উত্তরের কিছু অংশ উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। ফলে মহাদেশটির উত্তর ও দক্ষিণ অংশে বিপরীত ধরণের ঋতু দেখা যায়। যেমন – উত্তর গোলার্ধে যখন গ্রীষ্মকাল। দক্ষিণ গোলার্ধে তখন শীতকাল।

মহাদেশটির জলবায়ুর বৈচিত্র্যের অন্যান্য কারণ

ক) অক্ষাংশগত অবস্থান
মহাদেশের উত্তরদিকে নিরক্ষরেখা আর মধ্যভাগে মকরসংক্রান্তি রেখা বিস্তৃত। অক্ষাংশগত অবস্থানের হিসাবে মহাদেশটি বিভিন্ন জলবায়ুতে বিভক্ত।

খ) সমুদ্র থেকে দূরত্ব
মহাদেশটির উত্তরদিক প্রশস্ত এবং দক্ষিণ অংশ অত্যন্ত সংকীর্ণ। এই কারনে মহাদেশের উত্তরে অভ্যন্তরভাগে সমুদ্রের প্রভাব পরে না।

গ) ভূমির উচ্চতা
প্রশান্ত মহাসাগরীয় আর্দ্র পশ্চিমা বায়ু আন্দিজ পর্বতে বাধা পায় বলে, মহাদেশের দক্ষিণে প্রবেশ করতে পারেনা, ফলে এখানে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।

ঘ) সমুদ্রস্রোত
একই অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও উষ্ণ ব্রাজিল স্রোতের জন্য মহাদেশের পূর্বদিকে জলবায়ু উষ্ণ হয়, শীতল পেরু স্রোতের জন্য পশ্চিম দিকের জলবায়ু শীতল হয়।

ঙ) বায়ুপ্রবাহ
এই মহাদেশের পশ্চিমপ্রান্তে আটাকামা মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণপূর্ব আয়ন বায়ু আন্দিজ পর্বতে বাধা পায় বলে এই পর্বতের পশ্চিম ঢাল বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

দক্ষিণ আমেরিকার বনভূমি

ক) আমাজন অববাহিকা (সেল্ভা অরণ্য)

নিরক্ষরেখা উভয় পাশে আমাজন নদী অববাহিকায় অদিকাংশ স্থান জুড়ে চিরহরিৎ বনভূমির সৃষ্টি হয়েছে। একে ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যও বলে। প্রায় 5 কোটি বর্গ কিমি অঞ্চল জুড়ে এই বনভূমি বিস্তৃত। আমাজনের বনভূমি পৃথিবীর নিবিড়তম ও বৃহত্তম ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য। এখানকার বার্ষিক গড় উষ্ণতা 25°-27° সে, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 250-300 সেমি। ব্রাজিল, পেরু, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়া, গায়নার অংশ জুড়ে এই অরণ্য বিস্তৃত। পৃথিবীর অন্যতম জীববৈচিত্র্যযুক্ত অঞ্চল এটি।

পৃথিবীর মোট অক্সিজনের 20% জোগান দেয় এই চিরহরিৎ নিরক্ষীয় অরণ্য।

খ) পম্পাস অঞ্চল

পম্পাস একটি স্পেনিয় শব্দ, যার অর্থ বিস্তীর্ণ সমতলক্ষেত্র। এই তৃণভূমি অঞ্চল আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের দক্ষিণ পশ্চিমে লা-প্লাটা নদীর অববাহিকা অঞ্চলে অবস্থিত। সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানকার জলবায়ু বেস আরামদায়ক। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাঝারিরকমের হওয়ায় এখানে তৃণভূমির সৃষ্টি হয়েছে। পম্পাস অঞ্চল পশুপালনের জন্য উপযোগী। এই অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে মাংস এবং দুধের জম্য এখানকার অধিবাসীরা পশুপালন করে থাকে।

মাংস রপ্তানিতে পম্পাস অঞ্চল ওঠা আর্জেন্টিনা পৃথিবীতে প্রথম স্থান অধিকার করে।

পর্ব সমাপ্ত।

লেখিকা পরিচিতিঃ

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের ছাত্রী শ্রীপর্ণা পাল। পড়াশোনার পাশাপাশি, গান গাইতে এবং ভ্রমণে শ্রীপর্ণা সমান উৎসাহী।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করতে ভুলো না।



এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

VIII_Geo_10a