ouponibeshik-bharoter-shilpo-banijyo
WB-Class-8

ঔপনিবেশিক অর্থনীতির চরিত্র | শিল্প ও বাণিজ্য | অষ্টম শ্রেণি চতুর্থ অধ্যায় – দ্বিতীয় পর্ব

শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: ইতিহাস । অধ্যায় – ঔপনিবেশিক অর্থনীতির চরিত্র (চতুর্থ অধ্যায়)


আগের পর্বে আমরা আলোচনা করেছিলাম, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কি ভাবে ঔপনিবেশিক রাজস্ব ব্যবস্থাকে দক্ষ হাতে গড়ে তুলেছিল। আজকের পর্বে আমরা জানব সেই সময় ভারতে শিল্প ও বাণিজ্যের কি অবস্থা ঘটেছিল।

কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তিকে দৃঢ় করার জন্য রাজস্ব ব্যবস্থাকে দক্ষভাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল। এরজন্য প্রয়োজন ছিল কৃষি ব্যবস্থার বাণিজ্যিকীকরণ। আর্থিক মুনাফা বৃদ্ধি ও ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের উন্নতির জন্য ব্রিটিশ শাসকরা খাদ্য শস্যের তুলনায় বাণিজ্যিক শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্ব আরোপ করেছিল। পাট, চা, তুলো ইত্যাদি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য তারা দরিদ্র,অসহায় কৃষক শ্রেণীর উপর অকথ্য অত্যাচার চালাত।
এই সব অর্থকরী ফসলের সাথে এরপর যুক্ত হয় নীল চাষ। 1788 সালে প্রথম কোম্পানি ১০ জন নীলকরকে অগ্রিম টাকা দিয়েছিলেন। এরপর সেই নীলকররা বাংলায় এসে কৃষকদের নীলচাষ করাতে শুরু করে। মূলত ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবে বস্ত্র শিল্পে এই নীলের ব্যবহার করা হত।

বাংলায় নীলচাষ

বাংলার অধিকাংশ কৃষকরাই এই নীলচাষ করতে রাজি না হলে, তাদেরকে বলপূর্বক অগ্রিম টাকা (দাদন) নিতে বাধ্য করিয়ে নীল চাষ করতে বাধ্য করা হত।
বহু বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ এই সময় বাংলার বেশ কিছু অঞ্চলে হয়েছিল। এদের মধ্যে 1859-1860 তে বাংলার নদীয়ায় বিখ্যাত নীলবিদ্রোহ শুরু হয়।
কৃষি ব্যবস্থায় মুনাফা বা উৎপাদন বাড়াতে গেলে যে পরিমাণ বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়, তা ব্রিটিশরা করেনি। 1905 খ্রিঃ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা খরচ করেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। কিন্তু সেইখানে, ভারতের মূল অর্থনীতির ভিত্তি, কৃষিখাতে সেচ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য খরচ করেছিল মাত্র ৫০ কোটি টাকা।

তাহলে ভারতীয়রা কি পেলো!

অর্থকরী ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, শিল্প বিপ্লবে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সংগ্রহ, ব্রিটিশ শাসকদের আয় বৃদ্ধি ইত্যাদি হলেও, কৃষিজ পণ্যের বাণিজ্যিকিকরণে কৃষকদের জন্য বরাদ্দ ছিল শুধুই অত্যাচার।

তাঁত শিল্প

শিল্প-বাণিজ্য শুল্কনীতি

পলাশীর যুদ্ধের আগে পর্যন্ত ব্রিটিশরা বাণিজ্যিক সংস্থা হিসাবেই নিযুক্ত ছিল। দামি ধাতু, বস্ত্র, মশলা ইত্যাদি দ্রব্য মূলত আমদানি রপ্তানি করা হত। ভারতীয় শিল্প হিসাবে বাংলার তাঁতসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্পের সেই সময় প্রচলন ছিল।

পলাশীর যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অর্থনীতির বেহাল চিত্র

কিন্তু পলাশীর যুদ্ধের পরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্রমে বাণিজ্যিক সংস্থা থেকে শাসকে পরিণত হতে শুরু করে। সাম্রাজ্য বিস্তার ও ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে। তাই তারা ভারতের দেশীয় অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ বিনষ্ট করতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে। ব্রিটেনের শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ভারত বর্ষ থেকে নিয়মিত পাঠানো শুরু হয়। ভারতীয় দ্রব্যের যে বিরাট বাজার ছিল ইংল্যান্ডে তা নষ্ট করার জন্য চড়া হারে ব্রিটেনে আমদানি শুল্ক আরোপিত হয়। অথচ বিদেশি দ্রব্য খুবই সামান্য দামে বিনা শুল্কে ভারতের বাজারে বিক্রি হত। এমনকি দেশীয় বাজারে কাঁচা সুতো সহ বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বিপুল হারে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এইভাবে দেশীয় শিল্পগুলিকে প্রায় ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল।


অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান | ভূগোল

1813 সালের মধ্যেই ভারতীয় পণ্য একাধিক বিদেশি বাজার হারায়। এমনকি দরিদ্র্য ভারতবাসীরাও চড়া হারে শুল্ক সহ ভারতীয় দ্রব্য কিনতে না পেরে বাধ্য হয় কম দামি দেশি দ্রব্য কিনতে। ক্রমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একচেটিয়া বাজারে পরিণত হয়।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এই কাজে ব্রিটিশদের বিশেষ সহায়তা করেছিল। রেলপথের বিস্তার শহর গ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিদেশি দ্রব্যকে খুব সহজেই পৌঁছে দিতে পেরেছিল। কিন্তু ভারতীয়দের ক্ষেত্রে সেখানেও জুটেছিল বৈষম্য। দেশীয় যে কোনো দ্রব্য রেলপথে পাঠাতে গেলে প্রচুর টাকা শুল্ক দিতে হত, ফলে দ্রব্যটির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যেত।

ক্রমাগত ব্রিটিশদের কাছে ভারতীয় শিল্প মাথা নত করতে শুরু করলেও উনবিংশ শতকের মধ্যভাগ থেকে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের উদ্যোগে কিছু শিল্প গড়ে উঠতে শুরু করে। যেমন 1853 খ্রিঃ বোম্বাইতে সুতির কাপড় তৈরির কারখানা চালু হয়।

1855 খ্রিঃ হুগলীর রিষড়ায় প্রথম পাটের কারখানা চালু হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে চর্ম, লৌহ-ইস্পাত, চিনি ইত্যাদি বিভিন্ন শিল্প গড়ে উঠতে শুরু করে। এছাড়াও বিনিয়োগে ঋণ প্রদানে বৈষম্য দূর করতে কিছু ভারতীয়ের উদ্যোগে ব্যাঙ্কিং ও বিমা পরিষেবা পরবর্তীকালে শুরু হয়।

পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব →ঔপনিবেশিক ভারতের পরিবহণ ব্যবস্থা


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতিঃ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত প্রত্যুষা মুখোপাধ্যায়। বিভিন্ন বিষয় চর্চার পাশাপাশি নাচ,গান, নাটকেও প্রত্যুষা সমান উৎসাহী।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করতে ভুলো না।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

VIII_His_4b