abrton-gotir-folafol
WB-Class-9

পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলাফল

ভূগোলনবম শ্রেণি – অধ্যায়: পৃথিবীর গতিসমূহ (দ্বিতীয় পর্ব)|

আগের পর্বে আমরা পৃথিবীর আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। এই পর্বে আমরা এর ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করবো।

পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলাফল

দিন ও রাত্রিঃ  পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে যে দিন ও রাত হয় সেটা তো আমরা সহজেই বুঝতে পারছি। পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে ঘুরতে ঘুরতে যে স্থানটি সূর্যের সামনে আসে সেখানে হয় দিন এবং এর ঠিক বিপরীত দিকে সূর্যের আলো পৃথিবীর গোলাকৃতি কক্ষে পৌছতে পারে না, তাই সেই স্থানটিতে হয় রাত্রি। যদি পৃথিবীর আহ্নিক গতি না থাকতো তাহলে একটা গোলার্ধে সর্বদা দিন আর অপর গোলার্ধে সর্বদা রাত হত।

কোরিওলিস ফোর্স এবং ফেরেলের সুত্র (Ferels’ law)

এই দুটো নতুন জিনিস এবার আমরা জানতে পারবো। আমরা ছোটবেলা থেকেই লাট্টুর সঙ্গে পরিচিত। এই লাট্টু ঘোরার সময় আমরা দেখেছি যে উপরের ও নীচের অংশটি স্থির কিন্তু মাঝখানটি তীব্রভাবে ঘুরছে।

পৃথিবীর ক্ষেত্রেও তাই, অর্থাৎ উপর ও নীচের মেরু তলটি স্থির থাকে এবং মাঝখানে অর্থাৎ নিরক্ষরেখা বরাবর তীব্রভাবে ঘুরতে থাকে। এই নিরক্ষরেখার কাছে অতিরিক্ত তীব্র গতির জন্য যে শক্তি মর্ধ্যবর্তী স্থানে তৈরি হয় তাকে বলে কোরিওলিস ফোর্স।


নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলিগণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই কোরিওলিস ফোর্স থাকার জন্য ওই স্থানে অর্থাৎ নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে যখন কোন বায়ু বা সমুদ্রস্রোত উত্তর থেকে দক্ষিণ গোলার্ধে বা দক্ষিণ থেকে উত্তর গোলার্ধে প্রবেশ করে তখন তার দিক পরিবর্তিত হয়ে যায়। এই বায়ুর দিক কিভাবে পরিবর্তন হয় সেটি সর্বপ্রথম ব্যাখ্যা করেছিলেন বিজ্ঞানী ফেরেল। তাই একে ফেরেলের সূত্র বলে।


পৃথিবীর গতিসমুহ অধ্যায়ের আলোচনা। ↓


এই সূত্র অনুযায়ী দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে উত্তর গোলার্ধে প্রবেশের সময় বায়ু ডানদিকে বেঁকে যায় আবার দক্ষিণ গোলার্ধে প্রবেশের ক্ষেত্রে ঠিক বিপরীত অবস্থা হয় অর্থাৎ বামদিকে বেঁকে যায়।


আরো পড়ুন – প্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর আকৃতি

জোয়ার ও ভাঁটার সৃষ্টিঃ আহ্নিক গতির ফলে জোয়ার ভাঁটার সৃষ্টি হয় এবং দিনে দুবার জোয়ার ও দুবার ভাঁটা হয়। আহ্নিক গতির জন্য পৃথিবীর মর্ধ্যবর্তী স্থানে যে স্রোত তৈরি হয় তাকে বলে centrifugal force.

পৃথিবী প্রতিনিয়ত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে তাই আমরা দেখি যে প্রতিনিয়ত সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে আবার পশ্চিম দিকে অস্ত যায় একে বলে সূর্যের আপাত দৈনিক গতি বা রবিমার্গ।

এবার আমরা বার্ষিক গতির ফলাফলগুলি নিয়ে আলোচনা করবো।

ঋতু পরিবর্তনঃ পৃথিবী যেহেতু নিজের অক্ষ ও কক্ষপথের সাথে হেলে অবস্থান করে তাই যখন উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে তখন দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্য থেকে অনেকটাই দূরে অবস্থান করে। উত্তর গোলার্ধে যখন গ্রীষ্মকাল তখন দক্ষিণ গোলার্ধে হয় শীতকাল। আবার আমরা এর বিপরীত অবস্থানও দেখতে পাই অর্থাৎ যখন দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের সামনে আসে তখন সেখানে হয় গ্রীষ্মকাল অপরদিকে উত্তর গোলার্ধে তখন সূর্য থেকে অনেকটাই দূরে থাকে তাই সেখানে তখন হয় শীতকাল। তখন উত্তর গোলার্ধে বিপরীত ঋতু দেখা যায়।

এভাবে ঋতু পরিবর্তনের ফলে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয় 0° – 23 \frac{1}{2}°  উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের মধ্যে। এই সূর্যকিরণ লম্বভাবে পড়ে 22nd June কর্কটক্রান্তিরেখার উপরে [23 \frac{1}{2}° উত্তর অক্ষাংশে] ঐ দিন হয় কর্কটসংক্রান্তি আবার পৃথিবীর বার্ষিক গতির সাথে পরিবর্তিত হতে হতে সূর্যকিরণ লম্বভাবে পড়ে 0° বা নিরক্ষরেখার উপর 23 শে সেপ্টেম্বর এবং এরপর দক্ষিণায়নের সময় সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে মকরক্রান্তি রেখার [অর্থাৎ 23 \frac{1}{2}° দক্ষিণ অক্ষাংশে] উপর 22nd December, ঐ দিন দক্ষিণ গোলার্ধে হয় মকরসংক্রান্তি। এরপর সূর্যরশ্মি পুনরায় লম্বভাবে পড়ে নিরক্ষরেখার উপর [অর্থাৎ 0°তে] 21st March।

difference-of-day-and-nightjpg

দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্যের পার্থক্য

পৃথিবীর অক্ষতলের সাথে কৌণিক অবস্থানের জন্য দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য সর্বদা সমান থাকে না । কখনও কম আবার কখনও বেশি হয়। অর্থাৎ যখন যে গোলার্ধের কাছে সূর্যের অবস্থান সেই গোলার্ধের দিনের দৈর্ঘ্য বেশি হয় আর সেখানে তখন গ্রীষ্মকাল থাকে। এবং বিপরীত গোলার্ধে সূর্যের সাথে কৌণিক দূরত্ব বেশি হওয়ায় সেখানে রাতের দৈর্ঘ্য বড় হয় ও সেখানে  শীতকাল বিরাজ করে।

din-ratrir-doirghyer-parthokyo

কর্কটসংক্রান্তি (Summer Solstice)- 21st June সূর্য সাধারণত সরাসরি রশ্মি দেয় 23 \frac{1}{2} °উত্তর অক্ষরেখার উপর। পৃথিবী তার নিজের অক্ষের সাথে 23 \frac{1}{2}° কোণে হেলে থাকে। বার্ষিক গতির ফলে কখনও 23 \frac{1}{2}° দক্ষিণ অক্ষাংশে আপতিত হয়, কখনও 0° তে আপতিত হয় আবার কখনও 23 \frac{1}{2}° দঃ অক্ষাংশের উপর আপতিত হয়। 21st June এ সরাসরি সূর্যরশ্মি পতিত হয় 23 \frac{1}{2}° উত্তর অক্ষাংশের উপর। ওই সময় উত্তর গোলার্ধে হয় গ্রীষ্মকাল ও দিনের দৈর্ঘ্য হয় প্রায় 14 ঘণ্টা এবং রাত্রির দৈর্ঘ্য হয় 10 ঘণ্টা। এরপর ধীরে ধীরে সূর্যের আবার দক্ষিণায়ণ শুরু হয়।

জলবিষুব (Autumnal Equinox)- সূর্যের এইভাবে দক্ষিণায়ণের ফলে 23rd Sept এ 0° এর উপর সূর্যরশ্মি লম্বভাবে আপতিত হয়। এরফলে এই সময় 12 ঘণ্টা দিন ও 12 ঘণ্টা রাত হয়। অর্থাৎ সারা পৃথিবীতে এই সময় দিন ও রাতের পরিসর সমান হয় এবং এই সময় সমগ্র পৃথিবীতেই একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় থাকে। তাই একে জল বিষুব বলা হয়।

মকরসংক্রান্তি (Winter Solstice) – সূর্যের দক্ষিণায়ণের পর 22nd December সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে 23 \frac{1}{2}°দক্ষিণ অক্ষরেখার উপর সরাসরি পতিত হয়। এই সময় দক্ষিণ গোলার্ধে হয় গ্রীষ্মকাল ও উত্তর গোলার্ধে হয় শীতকাল। দক্ষিণ গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য হয় 14 ঘণ্টা এবং রাতের দৈর্ঘ্য হয় মাত্র 10 ঘণ্টা। উত্তর গোলার্ধে এর  বিপরীত অবস্থা বিরাজ করে।


নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

বসন্তকালীন বিষুব বা মহাবিষুব (Spring Equinox)- December-এর পর সূর্যের পুনরায় উত্তরায়ণ  হয় অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলতে শুরু করে। এইভাবে পরিবর্তিত হওয়ার সময় 0° এর উপর 21st March সূর্য রশ্মি লম্বভাবে  আপতিত হয়। ফলে পুনরায় সেই 23rd Sep এর মত অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই সময়ে যেহেতু উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল বিরাজ করে তাই একে বসন্তকালীন বিষুব বা Spring Equinox বলা হয়।

কর্কটসংক্রান্তি ও মকরসংক্রান্তির মধ্যে পার্থক্য

বিষয় কর্কটসংক্রান্তি মকরসংক্রান্তি
তারিখ 21শে জুন 22শে ডিসেম্বর
সূর্যকিরণ যেভাবে আপতিত হয় উত্তর গোলার্ধে কর্কটক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে আপতিত হয়। দক্ষিণ গোলার্ধে মকরক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে আপতিত হয়।
ফলাফল এই দিনে উত্তর গোলার্ধে দিন দীর্ঘতম (দক্ষিণ গোলার্ধে ক্ষুদ্রতম) অর্থাৎ 14 ঘণ্টা দিন এবং রাতের দৈর্ঘ্য 10 ঘণ্টার হয়। এই দিন দক্ষিণ গোলার্ধে দিন দীর্ঘতম (উত্তর গোলার্ধে দিন ক্ষুদ্রতম) অর্থাৎ দিন 14 ঘণ্টার এবং রাত 10 ঘণ্টার হয়।
পরবর্তী পর্ব → অক্ষাংশ ও অক্ষরেখা


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

IX-Geo-2.2

Sayantani Bhaduri
কলকাতার জুলিয়ান ডে বিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষিকা সায়ন্তনীর ছোটবেলা থেকেই ভূগোলের সাথে আত্মিক যোগাযোগ। পড়াশোনার পাশাপাশি নতুন নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো ও পাহাড় চড়ার আনন্দ উপভোগ করতে খুব ভালোবাসেন সায়ন্তনী।