গণিত – নবম শ্রেনি – লাভ ও ক্ষতি (দ্বিতীয় পর্ব)
এই পর্বে আমরা ধার্যমূল্য এবং ছাড়ের ধারণা করবো। এর আগের পর্বে আমরা লাভ ও ক্ষতির ধারণা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই পর্বটি পড়ার আগে, অবশ্যই আগের পর্বটা পড়ে নিতে হবে।
পূবালীর কথা
নবম শ্রেণির ছাত্রী পূবালীর কথা তোমাদের মনে আছে তো?
পূবালীর তৈরি রাখী বন্ধুদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। পূবালীর এক বান্ধবীর কাকার ষ্টেশনরির দোকান আছে, ওর বান্ধবীর কাছে পূবালীর তৈরি রাখী দেখে দারুণ পছন্দ হয় ঐ কাকার। কাকা পূবালীর সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেন, আমি তোমার থেকে কুড়িটা রাখী কিনতে চাই কিন্তু আমি তোমাকে 50 টাকার বদলে রাখী প্রতি 40 টাকা দেব। পূবালী তো অনন্দের সাথে রাজি হয়ে যায়।
পূবালী আবার হিসাব করতে বসে যে কাকা-কে 50 টাকার বদলে 40 টাকায় একটি রাখী বিক্রয় করছে। সুতরাং ও রাখী প্রতি 10 টাকা ছাড় দিচ্ছে আবার রাখী প্রতি তার লাভ হচ্ছে 10 টাকা (যেহেতু প্রতিটি রাখীর উৎপাদন মুল্য 30 টাকা)। তাহলে এক্ষেত্রে 50 টাকা বদলে যাচ্ছে ধার্যমুল্যে আর 40 টাকা হচ্ছে বিক্রয়মুল্য।
পূবালী এটা বুঝতে পারে যে এই অতিরিক্ত 20টি রাখী বিক্রি করে তার 200 টাকা লাভ হবে। মনে – মনে রাখী এটাও হিসাব করে নেয় তারমানে মাটন বিরিয়ানির সাথে এবার চিকেন চাপের খরচ ও উঠে যাবে!
আচ্ছা, পূবালী রাখী বিক্রি করার জন্য কত শতাংশ ছাড় দিয়েছিল?
এটা বোঝার জন্য আমাদের ধার্যমূল্য এবং ছাড়ের ধারণা বুঝে নিতে হবে।
ধার্যমূল্য কাকে বলে?
বাজার থেকে আমরা যখন কোন প্যাকেট-জাত জিনিস কিনি, তখন লক্ষ্য করলে দেখা যায় তার গায়ে MRP লিখে পাশে দাম লেখা আছে। এই MRP কথার অর্থ হল maximum retail price অর্থাৎ ঐ বস্তুটি বিক্রি করার সর্বাধিক মুল্য বা ধার্যমূল্য।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে পূবালীর রাখীর ধার্যমূল্য হল 50 টাকা।
ছাড় কাকে বলে?
সাধারণত আমরা বাজার থেকে এই ধরনের দ্রব্য কেনার ক্ষেত্রে ঐ বস্তুর MRP বা ধার্যমূল্যের থেকে কম দামে কিনি। ধার্যমূল্যের থেকে আমরা বস্তুটি কেনার সময় যতটা দাম কম দিই, তাকে ছাড় বলা হয়।
উদাহরণ, হিসাবে বলা যায় যে পূবালী তার রাখীতে 10 টাকা ছাড় দিয়েছিল।
লাভ ও ছাড়ের পারস্পরিক সম্পর্ক
এই সম্পর্কটি বুঝে নেবার আগে নীচের রেখাচিত্রটি একবার দেখা যাক।
আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি যে কত টাকা ছাড় দেওয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে ধার্যমূল্যের উপর নির্ভরশীল, তাই ছাড়ের শতকরা হিসাব ধার্যমূল্যের উপর করা হয়।
(চতুর্থ সূত্র)
উদাহরণ হিসাবে আমরা বলতে পারি যে – পূবালীর রাখীর ধার্যমূল্য ছিল 50 টাকা আর ছাড় ছিল 10 টাকা। সুতরাং শতকরা ছাড় হল –
বিশেষ দ্রষ্টব্য
ছাড়ের গাণিতিক সমস্যার সমাধান করার সময় ছাত্রছাত্রীরা একটি বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হয়। তা হল, শতকরা লাভ বা ক্ষতি নির্ণয় হয়।
সবসময় মনে রাখতে হবে লাভ বা ক্ষতি নির্ণীত হয় ক্রয়মূল্য এবং বিক্রয় মূল্যের উপর ভিত্তি করে। এতে ধার্যমূল্যের কোন ভুমিকা থাকে না। সুতরাং এক্ষেত্রেও শতকরা লাভের গাণিতিক সুত্র একই থাকবে।
যেমন উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, কাকাকে 10 টাকা ছাড় দেওয়ার পরে রাখী প্রতি বিক্রয়মূল্য ছিল 40 টাকা, সুতরাং এখানে তার লাভ হয়েছে 10 টাকা।
সুতরাং শতকরা লাভ হল –
একটা গাণিতিক উদাহরণের সাহায্যে ছাড়ের ধারণা আরো পোক্ত করা যাক।
গাণিতিক উদাহরণ – ১
এক পুস্তক প্রকাশক 2000 কপি বই ছাপার জন্য 3,875 টাকার কাগজ কিনতে, 3,315 টাকা ছাপতে এবং 810 টাকা বাঁধানোর জন্য খরচ করেন। তিনি পুস্তক বিক্রেতাদের 20% ছাড় দিয়ে 20% লাভে বিক্রি করেন। প্রতিটি বইয়ের ধার্যমূল্য কত?
[সমস্যাটি পড়ে আমরা বুঝতে পারলাম যে আমাদের প্রতিটি বইয়ের ধার্যমূল্য বের করতে হবে। প্রথম লাইনে বলা হয়েছে প্রকাশকের বই প্রস্ততের খরচ। সুতরাং, খরচগুলি যোগ করে নিলে আমরা বইয়ের উৎপাদন মূল্য বের করে নিতে পারবো]
2000 কপি বইয়ের উৎপাদন মুল্য = 3,875 + 3,315 + 810 = 8,000 টাকা।
সুতরাং, একটি বইয়ের উৎপাদন মূল্য = 4 টাকা
[দ্বিতীয় লাইনে বলা হয়েছে যে তিনি 20% লাভ করেছেন। সুতরাং আমরা প্রতিটি বইয়ের বিক্রয়মূল্য বের করে নিতে পারবো]
তার বই প্রতি লাভ = টাকা
∴ বইয়ের বিক্রয়মূল্য =
[দ্বিতীয় লাইনে আরো বলা হয়েছে যে তিনি 20% ছাড় দিয়েছেন। সুতরাং আমরা ধার্যমূল্য x ধরে সমীকরণ গঠন করে নিতে পারবো]
ধরি প্রতিটি বইয়ের ধার্যমূল্য x টাকা।
∴ ছাড়ের পরিমাণ = টাকা
প্রশ্নানুসার, শতকরা ছাড় হল 20%।
∴
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒ টাকা
সুতরাং, প্রতিটি বইয়ের ধার্যমূল্য হল 6 টাকা। (উত্তর)
নবম শ্রেণির অন্যান্য বিভাগগুলি দেখুন –
- নবম শ্রেণি – বাংলা
- নবম শ্রেণি – ইতিহাস
- নবম শ্রেণি – ভূগোল
- নবম শ্রেণি – ভৌত বিজ্ঞান
- নবম শ্রেণি – জীবন বিজ্ঞান
- নবম শ্রেণি – গণিত
সমতুল্য ছাড় কাকে বলে?
যখন কোন বস্তুর ধার্যমূল্যের উপর একাধিকবার ছাড় দেওয়া হয় তখন তাকে সমতুল্য ছাড় বলা হয়।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়। পূবালী রাখীর উপর টাকা ছাড় দেবার পরে কোন কারণে আরো 2 টাকা ছাড় দিলো। এই ক্ষেত্রে মোট ছাড়ের পরিমাণ হল 12 টাকা। এটিকে সমতুল্য ছাড় বলা হয়।
আমরা একটি গাণিতিক সমস্যার সাহায্যে এই ব্যাপারটি আরো ভালো ভাবে বুঝে নিতে পারি।
গাণিতিক উদাহরণ – ২
একটি দ্রব্য পরপর 20% ও 10% ছাড়ে বিক্রয় করা হলে সমতুল্য ছাড় কত হবে?
[প্রশ্ন পড়ে বুঝতে পারছি যে কোন দ্রব্যে ধার্যমূল্যের উপরে পরপর 20% এবং 10% ছাড় দেওয়া হয়েছে।]
ধরি, কোন বস্তুর ধার্যমূল্য 100 টাকা।
সুতরাং, প্রথম বার ছাড়ের পরিমাণ হল 20 টাকা।
এরপর আবার 10% ছাড় দেওয়া হয়েছে।
সুতরাং, দ্বিতীয় ছাড়ের পরিমাণ হল 8 টাকা।
আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় ছাড়ের পরিমান যোগ করে পাই 28টাকা।
[এবার আমরা মোট শতকরা ছাড় বা সমতুল্য ছাড়ে খুব সহজেই বার করে নিতে পারবো।]
সমতুল্য ছাড় =
অধ্যায় সমাপ্ত।