ভূগোল – নবম শ্রেণি – অধ্যায়: পৃথিবীর গতিসমূহ (প্রথম পর্ব)|
এর আগের আলোচনা থেকে আমরা জেনেছি যে পৃথিবীর আকৃতি আসলে পৃথিবীরই মতো।
এই আকৃতিকে আমরা বলি ‘geoid’ এখন এই পৃথিবীর আকৃতি প্রমাণ করতে গিয়ে আমরা প্রমাণ হিসেবে অথবা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বলেছিলাম যে প্রতিনিয়ত দিন ও রাত্রি পর্যায়ক্রমে সংঘটিত হয়। অর্থাৎ পৃথিবীর একটি অংশ সূর্যের সামনে আসে সেই দিক হয় দিন আর অপরদিক যেদিকে সূর্যের আলো পৌছতে পারে না সেইদিকে হয় রাত্রি।
এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে পৃথিবীর ক্রমাগত লাট্টুর মতো ঘুরছে। আবার আরেকটি ঘটনাও আমরা বুঝি যে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় হয় গ্রীষ্মকাল আর আরেকটি নির্দিষ্ট সময় হয় শীতকাল, অর্থাৎ ঋতুপরিবর্তন হয়। কিন্তু কেন?
প্রতিনিয়ত ঘটে চলা দিনরাত্রির পরিবর্তন এবং ঋতুপরিবর্তন এই দুটি ঘটনাকে যদি আমরা বিশেষভাবে লক্ষ্য করি তাহলে আমরা সহজেই বুঝতে পারবো যে পৃথিবীর দুই ধরনের গতি রয়েছে।
এই দুই গতিকে বলে – (i) আহ্নিক গতি (ii) বার্ষিক গতি। এই দুই ধরনের গতি কিরূপ এবং কেমন তাই নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো।
আহ্নিক গতি
এই আহ্নিক গতি জানার আগে আমাদের আরো কয়েকটা তথ্য জানতে হবে। আসলে পৃথিবীর অক্ষ পুরোপুরি সোজা নয়।
পৃথিবী আসলে নিজের অক্ষের সাথে এবং আর কক্ষপথের সঙ্গে তলে বেঁকে আবর্তন করছে। এইভাবে যদি বেঁকে আবর্তন না করত তাহলে এর উপরের ও নীচের দিক অর্থাৎ, মেরুঅঞ্চল সারাবছরই অন্ধকারে থাকতো, কখনই আলো পেতনা।
তাহলে আহ্নিক গতির সংজ্ঞা হিসাবে বলা যায় যে
পৃথিবী তার নিজের অক্ষের উপর লাট্টুর মতো পাক খেতে খেতে পশ্চিম থেকে পূর্বদিক 23 ঘন্টা 56 মিঃ 4 সেঃ ধরে প্রতিনিয়ত ঘুরে চলেছে। এই গতিটি হল আহ্নিক গতি।
পৃথিবীর নিরক্ষরেখার কাছে পরিধি হল 40,075km অর্থাৎ প্রতিদিন নিজের অক্ষের উপর আবর্তন করতে করতে এই দূরত্ব পৃথিবী অতিক্রম করছে। এবং নিরক্ষরেখার কাছে এই গতিবেগ হল 1670km/ঘণ্টা।
পৃথিবীর গতিসমুহ অধ্যায়ের আলোচনা। ↓
কিন্তু এই গতিকে আহ্নিক গতি বলে কেন?
এই আহ্নিক শব্দটি এসেছে অক্ষ থেকে। পৃথিবী তার অক্ষের উপর আবর্তন করে, তাই এই গতিকে বলে আহ্নিক গতি।
বার্ষিক গতি
পৃথিবী একটি নির্দিষ্ট গতিতে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ক্রমাগত পাক খেতে খেতে তার কক্ষপথ ধরে সূর্যের চারিদিকে আবর্তন করছে। এইভাবে একটি পূর্ণ আবর্তন সম্পন্ন করতে পৃথিবীর সময় লাগে 365 দিন 5 ঘণ্টা 48 মিনিট 46সেকেন্ড বা 365 দিন। এইরূপ গতিকে বলা হয় পৃথিবীর বার্ষিক গতি।
অনুসুর এবং অপসুর অবস্থান
পৃথিবীর কক্ষপথটি হল উপবৃত্তাকার, তাই পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে কাছে আসে আবার কখনো দূরে চলে যায়। এর মধ্যে 3rd January সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্ব সব থেকে নিকটতম হয়, একে বলা হয় অনুসুর অবস্থান।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
এই সময় পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব হয় 14 কোটি 70 লক্ষ km। একে ইংরাজিতে বলা হয় perihelion; Greek শব্দ ‘peri’ মানে হল কাছে এবং ‘hellion’ মানে হল সূর্য।
একই রকমভাবে পৃথিবী তার উপবৃত্তাকার কক্ষপথ ধরে 4th July সূর্য থেকে সর্বাধিক দূরত্বে চলে যায়, এই অবস্থানকে বলা হয় অপসুর অবস্থান।
এই সময় সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব হয় 15 কোটি 20 লক্ষ km। ইংরাজিতে একে Aphelion বলা হয়; ‘ape’ শব্দের অর্থ দূরে এবং ‘helion’ শব্দের অর্থ সূর্য।
পৃথিবীর গতিবেগ
পৃথিবীর গতিবেগ মোটামুটি 10700 km/hr বা 30 km/sec সঠিক গতির ক্ষেত্রে। সুতরাং এর থেকে বলা যায় যে পৃথিবীর কক্ষপথের পরিধি হল 929,616,000 km এর চেয়ে কিছু বেশি।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
পৃথিবীর হেলে থাকার সঙ্গে কি বার্ষিক গতির কোন সম্পর্ক আছে?
এর আগেই আমরা আলোচনা করেছি যে পৃথিবীর নিজের অক্ষের সাথে এবং কক্ষপথের সাথে কোণে হেলে আবর্তন করছে। এই হেলে থাকার ফলে আমাদের পৃথিবীপৃষ্ঠে বেশ কিছু সুবিধা হয়েছে। এইভাবে হেলে ঘূর্ণনের জন্য বার্ষিক গতির ঘুর্ণনের সময় একবার উত্তর গোলার্ধ সরাসরি সূর্যের সামনে আসে, আবার কখনো দক্ষিন গোলার্ধ সরাসরি সূর্যের সামনে আসে।
পর্ব সমাপ্ত।
পরবর্তী পর্বে আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলাফলগুলি নিয়ে আলোচনা করেছি।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
IX-Geo-2a