nepolioner-rashia-attack_final
WB-Class-9

নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণ এবং পতন

ইতিহাসনবম শ্রেণি – বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ (পঞ্চম পর্ব)

রাশিয়া ছিল সেই সময়ের ইউরোপের একটি অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র।

নেপোলিয়ন শাসিত ফ্রান্সের শত্রু তালিকায় প্রথমদিকে রাশিয়ার নাম ছিল না। এমনকি রাশিয়া এবং ফ্রান্সের মাঝে নেপোলিয়ন অনেকগুলি বন্ধুরাষ্ট্র তৈরি করে রেখেছিলেন, যাতে রাশিয়া কোনভাবেই সরাসরি ফ্রান্স আক্রমণ না করতে পারে।

নেপোলিয়ন যখন তাঁর সামরিক শক্তির দ্বারা ইউরোপের অন্যতম দুই শক্তি অষ্ট্রিয়া এবং প্রাশিয়ার শক্তি খর্ব করছেন এবং ক্রমাগত ফ্রান্সের সীমানা বাড়িয়ে চলেছেন, সেই সময় রাশিয়ার সাথে তাঁর একটি মৈত্রী স্থাপিত হয়; এটি টিলসিটের সন্ধি নামে খ্যাত।

টিলসিটের সন্ধি(১৮০৭)

এই সন্ধি সাক্ষরিত হয়েছিল ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ন এবং রাশিয়ার জার (রাজা) প্রথম আলেকজান্ডার-এর মধ্যে। এই সন্ধির প্রধানত দুটি শর্ত ছিল।

রাশিয়ার স্বার্থ – ফ্রান্সের সেনা রাশিয়াকে তুরস্ক সাম্রাজ্য (এটি অটোমান সাম্রাজ্য নামেও পরিচিত) দখল করতে সাহায্য করবে।

ফ্রান্সের স্বার্থ – রাশিয়া মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থায় যোগ দেবে।

নেমান নদীর মধ্যে দুই রাষ্ট্রনায়ক টিলসিটের সন্ধি সাক্ষর করেছিলেন [চিত্র সৌজন্য – Wiki]
এই সন্ধির ফলে রাশিয়া এবং ফ্রান্সের মধ্যে বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়, রাশিয়া ‘মহাদেশীয় অবরোধ’ ব্যবস্থায় যোগ দেয়। কিন্তু তুরস্ক দখলের ব্যপারে রাশিয়াকে হতাশ হতে হয়, কারণ সন্ধি হবার পরেও নেপোলিয়নের তরফে তুরস্ক দখলে সাহায্যের কোন মনোভাব দেখা যায় না।

ফ্রান্সের রাশিয়ার সঙ্গে বিরোধিতার অন্যতম কারণ ছিল এই সন্ধির ব্যর্থতা।

এছাড়াও আরো দুটি কারণ লক্ষ্যণীয় –

গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়ারশ – নেপোলিয়ন জার্মানির পুনর্গঠনের সময় প্রাশিয়ার অধিকৃত পোল্যান্ডের অংশ এবং অস্ট্রিয়ার গ্যালিসিয়া নিয়ে ‘গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়ারশ’ নামে একটি রাষ্ট্র তৈরি করেন। উল্লেখ্য যে পূর্বতন পোল্যান্ড রাষ্ট্রের অনেকটা অংশ রাশিয়ার অন্তর্গত ছিল। ‘গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়ারশ’ যদি পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত পোল্যান্ডের দাবী জানায়, এই শঙ্কায় রাশিয়ার জার নেপোলিয়নের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি চান যে নেপোলিয়ন পোল্যান্ডকে কখনই একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হতে দেবেন না। কিন্তু নেপোলিয়ন এই প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকার করেন, ফলে জার ফ্রান্সের কূটনৈতিক মনোভাব সম্পর্কে সন্দিগ্ধ হন।


নেপলিয়নের রাশিয়া অভিযান ভিডিও ক্লাস ↓

মহাদেশীয় ব্যবস্থা – রাশিয়া, টিলসিটের সন্ধির ফলে ফ্রান্স প্রণোদিত মহাদেশীয় ব্যবস্থায় যোগ দেয়। কিন্তু ইউরোপের বাজারে ব্রিটিশ পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা ছিল এবং রাশিয়া থেকেও ব্রিটেনে কাঁচামাল রপ্তানি হত। মহাদেশীয় ব্যবস্থার জেরে রাশিয়ার বাজারে যেমন পণ্যের দাম বেড়ে যায় ঠিক তেমনভাবে অভিজাত ব্যাবসায়ীরাও ক্ষুব্ধ হন। অবশেষে ১৮১০ খ্রিষ্টাব্দে জার রাশিয়াকে মহাদেশীয় ব্যবস্থার থেকে বিচ্ছিন্ন করেন এবং বন্দরগুলি ব্রিটিশদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।

নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণ

বলাই বাহুল্য যে নেপোলিয়ন এই ঘটনার ফলে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হন এবং অপমানের বদলা হিসাবে রাশিয়া আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। নেপোলিয়ন রাশিয়া আক্রমণের জন্য ফ্রান্স তথা বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল সৈন্যের ব্যবস্থা করেন।

Crossing_the_Neman_in_Russia_1812_by_Clark
নেপোলিয়নের গ্র্যান্ড আর্মি নেমান নদী পার করে মস্কোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে [চিত্র সৌজন্য – wiki]
১৮১২ খ্রিষ্টাব্দে ২৬শে জুন প্রায় ৬ লাখ ৭৫ হাজার সেনা দিয়ে নির্মিত নেপোলিয়নের ‘গ্র্যান্ড আর্মি’ টিলসিট থেকে মস্কোর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। প্রসঙ্গত নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণকারী বাহিনী আকারে বিশাল হলেও, এদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল বিভিন্ন দেশ থেকে ভাড়া করা সৈন্য ফলে তাদের মধ্যে দেশাত্মবোধ একেবারেই ছিল না।

নেপোলিয়নের গ্র্যান্ড আর্মির তুলনায় রাশিয়ার সেনার সংখ্যা ছিল অনেকটাই কম। ফলে তারা প্রথম থেকে মুখোমুখি সংঘর্ষে না জড়িয়ে মস্কোর দিকে পিছু হটতে থাকে। এই পিছু হটার সময়ে পথের সমস্ত জনপদ, রাস্তা, সেতু, ফসল নষ্ট করে,এমনকি তারা পানীয় জলেও বিষ মিশিয়ে দেয়। এর উদ্দেশ্য ছিল নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীকে খাবার, থাকার জায়গা এবং পানীয় জলের অভাবে দুর্বল করে তোলা। এই যুদ্ধ নীতি ‘পোড়ামাটির নীতি’ হিসাবে খ্যাত।

স্মালেনক্স (Smolensk) এর যুদ্ধে ফ্রান্স বাহিনীর জয়ের পরে রূপ বাহিনী স্মালেনক্স শহরকে জ্বালিয়ে দেয়। [চিত্র সৌজন্য – wiki]

বোরোডিনোর যুদ্ধ

ক্রমশ পিছু হটে অবশেষে  ৭ই সেপ্টেম্বর রুশ বাহিনী মস্কো থেকে মাত্র ৭৫ মাইল দূরে বোরোডিনো নামক স্থানে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়। এই ব্যাপক রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধে ফরাসী সেনা জয়লাভ করলেও, তাদের সেনা ও রুশদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এই যুদ্ধে হেরে রুশ বাহিনী মস্কোর পেছনে চলে যায়।

বোরোডিনোর যুদ্ধ
বোরোডিনোর যুদ্ধ [চিত্র সৌজন্য – wiki]

প্রসঙ্গত এই রুশ – ফ্রান্স যুদ্ধের পটভূমিতেই বিখ্যাত রুশ লেখক লিও টলসটয় তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ওয়্যার অ্যান্ড পিস’ রচনা করেছিলেন যার রচিত ইলিয়াস গল্পটি তোমাদের পাঠ্য।

মস্কো বিজয়

আরো এক সপ্তাহ পরে কার্যত জনশূন্য মস্কো শহর (রাশিয়ার রাজধানী) নেপোলিয়ন দখল করেন।

নেপোলিয়নের মস্কোতে প্রবেশ [চিত্র সৌজন্য – wiki]
রুশরা মস্কো শহর ছাড়ার আগে গোটা শহরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল, ফলে নেপোলিয়নের বাহিনীর বাসস্থানের অভাব ঘটে। শুধু তাই নয় এই বছর প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে শীতের আগমন ঘটে, ব্যাপক ঠাণ্ডায় প্রচুর সেনাও মারা যায়।

প্রত্যাবর্তন

এই অবস্থাতেও নেপোলিয়ন জারের সন্ধির জন্য পাঁচ সপ্তাহ অপেক্ষা করেন। কিন্তু জারের তরফে সন্ধির কোন লক্ষণ না দেখে মস্কো ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। 

দিশাহীন নেপোলিয়ন
মস্কোতে দিশাহীন নেপোলিয়ন [চিত্র সৌজন্য – wiki]
এদিকে প্রত্যাবর্তনের সময়ে প্রবল ঠাণ্ডা, খাদ্যে ও পানীয়ের অভাব, অজানা জ্বর এবং রুশ সেনার আক্রমণে নেপোলিয়নের সেনা প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। প্রায় সাত লাখ সেনা সমৃদ্ধ বিপুল গ্র্যান্ড আর্মি মাত্র তিরিশ হাজার সেনা সমেত দেশে ফিরে আসে।

নেপোলিয়নের প্রত্যাবর্তন
নেপোলিয়নের প্রত্যাবর্তন [চিত্র সৌজন্য -wiki]
ইতিমধ্যে স্পেনের যুদ্ধে নেপোলিয়ন বাহিনী পরাজিত হয় এবং রাশিয়ার বিশাল বিপর্যয় নেপোলিয়নের দম্ভকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়।

রাশিয়া অভিযানের ব্যর্থতার কারণ

নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযান ব্যর্থ হবার একাধিক কারণ ছিল।

প্রথমত, তাঁর বাহিনী ছিল ভাড়া করা অনভিজ্ঞ সেনায় সমৃদ্ধ। ফলে তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মনোভাবের লেশ মাত্র ছিল না।

দ্বিতীয়ত – অযাচিত ভাবে শত্রুর সংখ্যা বৃদ্ধি করা। নেপোলিয়ন রাশিয়া আক্রমণের সময়ে ব্রিটিশ, স্পেন, পর্তুগাল ইত্যাদি দেশের সাথে ক্রমাগত সংঘর্ষ চলছিল। আপাত দৃষ্টিতে রাশিয়ার সাথে সেই সময়ে তাঁর যুদ্ধগত বিবাদ ছিলনা। ফলে অন্যান্য অমীমাংসিত যুদ্ধগুলিতে মনোনিবেশ করলে তাঁর পক্ষে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হতে পারত।

রুশ বাহিনীর কঠিন লড়াই
রুশ বাহিনীর কঠিন লড়াই

তৃতীয়ত – রুশ বাহিনীর কঠিন লড়াই। রুশ বাহিনীর তুলনায় নেপোলিয়নের বাহিনী সংখ্যায় বিপুল হলেও, অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে রুশ বাহিনী অনেকটাই এগিয়েছিল। বিশেষত রুশ সেনাপতি কুটলভের (Kutuzov) পোড়ামাটির নীতি এবং জারের অনমনীয় মনোভাব, নেপোলিয়নকে প্রত্যাবর্তনের জন্য বাধ্য করে।

চতুর্থত – প্রতিকূল আবহাওয়া। অবিশ্বাস্য ভাবে সেই বছর প্রায় ছয় সপ্তাহ আগেই রাশিয়ায় শীত প্রবেশ করে। রাশিয়ার প্রবল শৈত্য মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা এবং প্রস্তুতি কোনটাই নেপোলিয়নের বাহিনীর ছিল না। ফলে অযাচিত ভাবে বহু সেনার মৃত্যু হয়।

নেপোলিয়নের পতন

রাশিয়া অভিযানের ব্যর্থতার নেপোলিয়নের অপরাজেয় ভাবমূর্তিকে ধ্বংস করে এবং তাঁর বিরোধী দেশগুলিকে একত্রিত হবার আহ্বান জানায়।

ইতিমধ্যে জার্মানির জাগরণ শুরু হলে (চতুর্থ পর্বে আলোচিত হয়েছে) লিপজিগের যুদ্ধেও নেপোলিয়নের পরাজয় ঘটে। একঘরে নেপোলিয়নকে বিজয়ী মিত্র শক্তি একটি সম্মানজনক প্রস্তাব দেয় (ফ্রাঙ্ক ফোর্ট প্রস্তাব)।

  • নেপোলিয়ন শুধুমাত্র ফ্রান্সের রাজা হিসাবে স্বীকৃত হবেন।
  • ফ্রান্স তার প্রাকৃতিক সীমা বজায় রাখতে পারবে। অর্থাৎ জার্মানির দিকে রাইন নদী অবধি, ইতালির দিকে আল্পস পাহাড় অবধি এবং স্পেনের দিকে পিরেনিজ পর্বতমালা অবধি হবে ফ্রান্সের সীমারেখা।

নেপোলিয়ন এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করেন এবং মিত্র শক্তির সাথে তাঁর যুদ্ধ শুরু হয়।

প্রাথমিক ভাবে যুদ্ধে তাঁর জয় হলেও ধীরে ধীরে চাপের মুখে তিনি হার স্বীকার করতে বাধ্য হন। দীর্ঘ যুদ্ধের ফলে তার রনক্লান্ত সেনাবাহিনী এবং ফ্রান্সের বিরক্ত জনগনের অসহযোগিতা মুখে তিনি ‘ফন্টেন ব্লু’ চুক্তি  (Fontainebleau) স্বাক্ষরে বাধ্য হন।

ফন্টেন ব্লু চুক্তি সাক্ষর করে নেপোলিয়ন ফন্টেন ব্লু দুর্গ থেকে নেমে আসছেন (এটি একটি নাটকের দৃশ্য)

এর ফলে তাঁকে ফ্রান্সের সিংহাসন ত্যাগ করতে হয়। এলবা নামক একটি ছোট দ্বীপে তাঁকে চলে যেতে হয়। বুঁরবো রাজবংশের প্রতিনিধি অষ্টাদশ লুই ফ্রান্সের সিংহাসন লাভ করেন।

বিপ্লবীমনস্ক ফ্রান্সবাসীর পক্ষে পুনরায় রাজতন্ত্র মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলনা। ফলে দেশের মধ্যে অন্তর্দ্বন্ধ বাড়তে থাকে।

এর সুযোগ নিয়ে মাত্র দশ মাস পরে তিনি ফ্রান্সের শাসনভার আবার অধিকার করেন।

ক্ষমতালাভের পরেই তিনি সেনাবাহিনী গড়ে তোলায় মননিবেশ করেন। ইতিমধ্যে নেপোলিয়নের পুনঃউত্থান মিত্রশক্তি জোটকে আবার সক্রিয় করে।

ওয়াটারলুর যুদ্ধে নেপোলিয়নের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে।

অতঃপর বেলজিয়ামের ওয়াটারলুর যুদ্ধে (১৮১৫) ইংরেজ সেনাপতি ডিউক অব ওয়েলিংটনের সেনা এবং প্রাশিয়ার সেনার হাতে তাঁর চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে। নেপোলিয়নের এই অল্পদিনের শাসনকালকে একশত দিনের রাজত্ব বলা হয়।


নবম শ্রেণির অন্যান্য বিভাগগুলির অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা –


এরপর নেপোলিয়নকে ‘সেন্ট হেলেনা’ নামক একটি ছোট দ্বীপে নির্বাসিত করা হয়। সমস্ত পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন এবং নির্বান্ধব অবস্থায় ১৮২১ সালের ৫ই মে তাঁর মৃত্যু হয়।

সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নিঃসঙ্গ, একাকী নেপোলিয়ন।

এইভাবে বিশ্ব ইতিহাসের এক অমর সেনানায়ক চরিত্রের অবসান ঘটে।

Napoleon_a_Cherbourg_bordercropped

দ্বিতীয় অধ্যায় সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → ভিয়েনা সম্মেলন


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

IX-His-2e