গণিত – নবম শ্রেণি – বাস্তব সংখ্যা (প্রথম পর্ব)
‘বাস্তব সংখ্যা’ – শব্দটির মধ্যেই এর অর্থ লুকিয়ে রয়েছে। অর্থাৎ বাস্তবে যে ধরণের সংখ্যার অস্তিত্ব রয়েছে তাই হল বাস্তব সংখ্যা বা Real Numbers।
তোমাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন আসছে, যে বাস্তবে ঠিক কি কি ধরণের সংখ্যার অস্তিত্ব আছে?
খুব সহজভাবে সেগুলো তোমাদের বোঝানোর চেষ্টা করব, চলো দেখা যাক…
স্বাভাবিক সংখ্যা
মনে করো, তোমার বাবা বাজার থেকে কিছু জিনিস কিনে আনলেন। এখন সব জিনিসের দাম তো এক নয়, তুমি একটা খাতার পাতায় বাবার বাজার করা জিনিসগুলির দাম লিখে নিলে।
- নুনঃ 15 টাকা
- হলুদঃ 25 টাকা
- চাঃ 35 টাকা
- চালঃ 30 টাকা
এই 15, 25, 35, 30 এই ধরণের সংখ্যাগুলোকে বলা হয় স্বাভাবিক সংখ্যা বা Natural Numbers এবং এদেরকে সাধারণত ইংরাজির N দ্বারা সূচীত করা হয়।
তাহলে বোঝা গেল যে স্বাভাবিক সংখ্যাগুলি হলঃ 1,2,3, …… ইত্যাদি।
অখণ্ড সংখ্যা
এখন তোমরা লক্ষ্য করো, কোনো জিনিসের দাম কখন শূন্য হওয়া সম্ভব নয়, তবে ‘0’ কি স্বাভাবিক সংখ্যা নয়?
উত্তরটা হবে, না, শূন্য স্বাভাবিক সংখ্যা নয়। 0 হলো অখণ্ড সংখ্যা।
0, 1, 2, 3, ……… এই সমস্ত সংখ্যাগুলোকে বলা হয় অখণ্ড সংখ্যা বা Whole Numbers এবং এদের সূচীত করা হয় ‘W’ দিয়ে।
এখন তোমরা নিজেরা কয়েকটা বিষয় খেয়াল করো…
যদি দুটি বা তার অধিক অখণ্ড সংখ্যা যোগ অথবা গুণ করা হয়, তবে আমরা একটি অখণ্ড সংখ্যাই পাবো।
যেমনঃ- 0+5 = 5, 5+6 = 11 অথবা, 0×7 = 0, 2×4×2 = 16 ইত্যাদি।
কিন্তু,তোমরা লক্ষ্য করো, দুটি অখণ্ড সংখ্যা বিয়োগ করলে কিছু ক্ষেত্রে এমন কিছু সংখ্যা আমরা পাব যেগুলিকে আমরা অখণ্ড সংখ্যা বলে চিহ্নিত করতে পারবো না।
যেমনঃ- 0-10 = -10, 5-14 = -9 ইত্যাদি।
তাহলে এগুলো কি ধরণের সংখ্যা?
চলো, এর উত্তর খোঁজা যাক।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
পূর্ণ সংখ্যা
অখণ্ড সংখ্যা এবং -1,-2,-3,…….সংখ্যাগুলোকে একসাথে বলা হয় পূর্ণসংখ্যা বা Integers এবং এই সংখ্যাগুলিকে সাধারণত ‘Z’ দ্বারা সূচীত করা হয়।
‘0’ অপেক্ষা বড় পূর্ণসংখ্যাগুলিকে বলা হয় ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা এবং ছোট পূর্ণসংখ্যাগুলিকে বলা হয় ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা।
এখন ঠিক আগের মতই তোমরা খেয়াল করে দেখ, দুটি পূর্ণসংখ্যার যোগফল, বিয়োগফল এবং গুনফল সর্বদা একটি পূর্ণসংখ্যা…
কিন্তু,যদি আমি দুটি সংখ্যা ভাগ করি তবে?
তখন কিন্তু , এই ধরণের সংখ্যা পাব, যেগুলো পূর্ণসংখ্যার মধ্যে পড়ে না, এই সংখ্যাগুলিকে বলা হয় মূলদ সংখ্যা। এবার আমরা মূলদ সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেব।
মূলদ সংখ্যা
যে সকল সংখ্যাকে আকারে প্রকাশ করা যায়, যেখানে p ও q পূর্ণসংখ্যা এবং , সেগুলিকেই আমরা বলি মূলদ সংখ্যা বা Rational Numbers এবং এদের সূচিত করা হয় ‘Q’ দ্বারা।
তাহলে সকল পূর্ণসংখ্যাই কি মূলদ সংখ্যা?
উত্তরটা হবে হ্যাঁ, সকল পূর্ণসংখ্যাই মূলদ সংখ্যা কারণ আমরা যে কোনো পূর্ণসংখ্যাকে আকারে প্রকাশ করতে পারি, যেখানে ‘n’ একটি পূর্ণসংখ্যা।
মূলদ সংখ্যা সম্পর্কিত কিছু তথ্য-
(i) দুটি মূলদ সংখ্যার মাঝে একটি মূলদ সংখ্যা সর্বদা বর্তমান, উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যদি a ও b দুটি মুলদ সংখ্যা হয়, যেখানে তবে ও একটি মূলদ সংখ্যা হবে।
(ii) ওপরের তথ্যের অপর ভিত্তি করে আমরা এটাও বলতে পারি যে, দুটি মূলদ সংখ্যার মধ্যে ‘অসংখ্য’ মূলদ সংখ্যা অবস্থিত।
(iii) দুটি মূলদ সংখ্যা যোগ, বিয়োগ, গুণ বা ভাগ করলে আমরা সর্বদাই একটি মূলদ সংখ্যাই পাবো।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
অমূলদ সংখ্যা
এতক্ষণ আমরা যে সমস্ত সংখ্যা সম্পর্কে জানলাম, সেই সমস্ত সংখ্যা ছাড়াও কিছু সংখ্যার অস্তিত্ব আছে যেগুলিকে আকারে প্রকাশ করা যায় না, সেই সমস্ত সংখ্যাসমূহকে বলা হয় অমূলদ সংখ্যা বা Irrational Numbers।
অমূলদ সংখ্যা সম্পর্কিত কিছু তথ্য
(i) মূলদ সংখ্যার মতই এক্ষেত্রেও দুটি অমূলদ সংখ্যার মাঝে ‘অসংখ্য’ অমূলদ সংখ্যা অবস্থিত।
(ii) দুটি অমূলদ সংখ্যাকে যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ সর্বদা অমূলদ সংখ্যা নাও হতে পারে। যেমনঃ- ,
[গুণ ও ভাগের ক্ষেত্রে কি হবে তা নিজেরা খোঁজার চেষ্টা করো]।
যে কোনো দুটি বাস্তব সংখ্যা যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ(যেখানে ভাজক শূন্য নয়) করলে সর্বদা একটি বাস্তব সংখ্যা পাওয়া যায়…এসো একটি সহজ উদাহরণের মাধ্যমে দেখা যাক,
ধরা যাক, ও দুটি বাস্তব সংখ্যা। যেখানে, , , ও
অর্থাৎ দেখা গেল যে, প্রতিক্ষেত্রেই আমরা একটি করে বাস্তব সংখ্যা পেলাম।
বাস্তব সংখ্যা সম্পর্কিত কিছু নিয়মাবলী
ধরা যাক, x, y ও z তিনটি বাস্তব সংখ্যা তবে,
(i) (x+y)+z = x+(y+z) [যোগের সংযোগ নিয়ম]
(ii) x+y = y+x [যোগের বিনিময় নিয়ম]
(iii) x+0 = 0+x = x [0-কে যোগের একসম উপাদান (additive identity) বলে ]
(iv) x+(-x) = 0 = (-x)+x [(-x)-কে যোগের সাপেক্ষে x এর বিপরীত উপাদান (additive inverse) বলে]
(v) (x×y)×z = x×(y×z) [গুণের সংযোগ নিয়ম]
(vi) x×y = y×x [গুণের বিনিময় নিয়ম]
(vii) x×1 = 1×x = x [1-কে গুণের একসম উপাদান (multiplicative identity) বলে]
(vii) x × =1 = × x [-কে গুণের সাপেক্ষে এর বিপরীত উপাদান (multiplicative inverse) বলে]
(ix) x(y+z ) = xy+xz এবং (x+y)z = xz+yz [বিচ্ছেদ নিয়ম]
বাস্তব সংখ্যাকে দশমিক সংখ্যাতে বিস্তার
যে কোনো বাস্তব সংখ্যা অর্থাৎ মূলদ ও অমূলদ সংখ্যাকে দশমিকে বিস্তার করা যায়। যে কোনো মূলদ সংখ্যাকে বিস্তার করলে আমরা ‘সসীম দশমিক সংখ্যা’ অথবা ‘আবৃত দশমিক সংখ্যা’ পাবো এবং যে কোনো অমূলদ সংখ্যাকে বিস্তার করলে আমরা ‘অসীম অনাবৃত দশমিক সংখ্যা’ পাবো।
সসীম দশমিক সংখ্যা
কিছু মূলদ সংখ্যাকে বিস্তার করলে ভাগফল একটি দশমিক সংখ্যা হয় এবং ভাগশেষ শূন্য হয়, সেই সমস্ত সংখ্যাগুলি সসীম দশমিক সংখ্যা হিসাবে গণ্য করা হয়। এই সমস্ত মূলদ সংখ্যার হরের মৌলিক উৎপাদকে কেবলমাত্র 2 এবং 5 থাকে। যেমনঃ- , ইত্যাদি।
আবৃত দশমিক সংখ্যা
কিছু মূলদ সংখ্যাকে বিস্তার করলে ভাগশেষ শূন্য হয় না এবং দশমিকের পর সংখ্যাগুলির পুনরাবৃত্তি ঘটে, সেই সমস্ত সংখ্যাগুলিকে বলা হয় আবৃত দশমিক সংখ্যা। এদের হরের মৌলিক উৎপাদকে 2 এবং 5 ছাড়াও আরও সংখ্যা থাকে। যেমনঃ- , ইত্যাদি।
অসীম অনাবৃত দশমিক সংখ্যা
যে কোনো অমূলদ সংখ্যাকে বিস্তার করলে আমরা যে ধরণের সংখ্যা পাবো সেগুলির ক্ষেত্রে ভাগশেষ কখনই শূন্য নয় এবং এরা আবৃতও নয়। তাই এদের বলা হয় অসীম অনাবৃত দশমিক সংখ্যা। যেমনঃ- , ইত্যাদি।
পর্ব সমাপ্ত।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
IX_M_1