শ্রেণিঃ নবম | বিষয়: ভূগোল । অধ্যায় – ভারতের সম্পদ (তৃতীয়পর্ব)
খনিজ তেলের ইংরেজি প্রতিশব্দ petroleum শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘Petro’ যার অর্থ শিলা ও ‘Oleum’ যার অর্থ তেল।
অর্থাৎ বলা যায় যে, শিলাস্তরের যে তেল সঞ্চিত থাকে তাকেই খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম বলা হয়।
ভারতের খনিজ তেল ভিডিও আলোচনা↓
আমরা প্রথমে আলোচনা করে নেব যে খনিজ তেলের কি কি কাজে ব্যবহার করা হয়।
খনিজ তেলের ব্যবহার ও গুরুত্ব
পরিবহনের কাজে
খনিজ তেল থেকে প্রাপ্ত পেট্রোল ও ডিজেল বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি, মোটরসাইকেলের, রেলইঞ্জিন, জাহাজ স্টিমারের জ্বালানি রূপে ব্যবহৃত হয়।
তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদনে
খনিজ তেল থেকে প্রাপ্ত ডিজেল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার হয়।
আলো জ্বালাতে
যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি সেখানে আলো জ্বালাতে এবং শীতকালে ঘর গরম রাখতে খনিজ তেলের উপজাত পদার্থ কেরোসিন এর সাহায্যে আলো জ্বালানো হয়।
যন্ত্রপাতি সচল রাখতে
যন্ত্রপাতির ঘর্ষণজনিত ক্ষয়ক্ষতি রোধ করতে এবং যন্ত্রপাতিকে সচল রাখতে খনিজ তেল জাত লুব্রিকেটিং অয়েল ব্যবহৃত হয়।
রাস্তা তৈরির কাজে
খনিজ তেলের উপজাত পদার্থ পিচ দিয়ে পাকা রাস্তা তৈরি হয়।
সামরিক প্রয়োজনে
যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ, ট্যাংক প্রভৃতি চালাতে খনিজ তেল জাতীয় পদার্থের প্রয়োজন হয়।
শিল্পের কাঁচামাল রূপে
খনিজ তেলের বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য যেমন ন্যাপথা পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের প্রধান কাঁচামাল রূপে ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য ব্যবহারে
খনিজ তেলের উপজাত দ্রব্য মোম দিয়ে মোমবাতি প্রস্তুত করতে এবং ভ্যাসলিন ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়।
আমরা বুঝতেই পারছি যে আধুনিক জীবনে খনিজ তেল একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ভারতবর্ষের বিভিন্ন অংশ থেকে খনিজ তেল উত্তোলন করা হয়। আমরা এবার সেই অঞ্চলগুলি সম্পর্কে কিছু ধারণা নেবার চেষ্টা করবো।
[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – বাংলা | নবম শ্রেণি – ইতিহাস | নবম শ্রেণি – ভূগোল]
ভারতের খনিজ তেল উত্তোলন অঞ্চল
ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা বা অসম উপত্যকা
এই খনিজ তেলের ভান্ডারটি প্রায় 1300 কিমি স্থান জুড়ে উত্তর-পূর্বে আসামের দীহং উপত্যকা থেকে পূর্বে সুরমা উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত। ইন্ডিয়ান ব্যুরো অফ মাইনস এর তথ্য অনুযায়ী 2013 – 14 সালে এই অঞ্চল থেকে প্রায় 47.10 লক্ষ টন খনিজ তেল উত্তোলন হয়েছিল।
এখানকার প্রধান প্রধান খনিজ তেল উত্তোলন কেন্দ্র গুলি হল ডিগবয় (ভারত ভারতের প্রাচীনতম তৈলখনি), নাহারকাটিয়া, মোরান, হুগ্রিজন, পাথারিয়া, রুদ্রসাগর, শিবসাগর, লাকুয়া, বদরপুর ইত্যাদি।
গুজরাটের উপকূল
এই অঞ্চলের প্রধান খনিজ তেল উত্তোলন কেন্দ্র গুলি হল আঙ্কলেস্বর জেলার অঙ্কলেস্বর, সুরাটের কোসম্বা, গান্ধিনগরের কলোল, মাহেশানা জেলার মা, বালোল, সানথাল; আমেদাবাদের সানন্দ, ঢোলকা ইত্যাদি। 2013- 14 সালে এই অঞ্চল থেকে প্রায় 50.61 লক্ষ টন খনিজ তেল উত্তোলন হয়েছিল।
রাজস্থান
রাজস্থানের বারমের জেলার মঙ্গলা, ভাগ্যম, ঐশ্বর্য হলো এখানকার প্রধান খনিজ তেল উত্তোলন কেন্দ্র। ইন্ডিয়ান ব্যুরো অফ মাইনস এর তথ্য অনুযায়ী 2013-14 সালে এই অঞ্চল থেকে প্রায় 91.80 লক্ষ টন খনিজ তেল উত্তোলন হয়েছিল।
অরুণাচল প্রদেশ
এই রাজ্যের খারসাং এ খনিজ তেল উত্তোলন করা হয়। ইন্ডিয়ান ব্যুরো অফ মাইনস এর তথ্য অনুযায়ী 2013-14 সালে এই অঞ্চল থেকে প্রায় 1.11 লক্ষ টন খনিজ তেল উত্তোলন হয়েছিল।
পশ্চিম উপকূলের সমুদ্রগর্ভে তৈলখনি
আরব সাগরে অবস্থিত প্রায় 2 হাজার বর্গকিলোমিটার বিশিষ্ট বোম্বে হাই ভারতের সবথেকে বড় খনিজ তেল উত্তোলন কেন্দ্র। ইন্ডিয়ান ব্যুরো অফ মাইনস এর তথ্য অনুযায়ী 2013-14 সালে এই অঞ্চল থেকে প্রায় 1.56 কোটি টন খনিজ তেল উত্তোলন হয়েছিল।
মুম্বাইয়ের 95 থেকে 100 কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে আরব সাগরের অবস্থিত পান্না-মুক্ত তৈল ক্ষেত্র থেকে দৈনিক 19000 ব্যারেল খনিজ তেল তোলা হয়।
পূর্ব উপকূলের সমুদ্রগর্ভে তৈলখনি
পূর্ব উপকূলে কৃষ্ণা গোদাবরী অববাহিকা অঞ্চলে অবস্থিত রাভা হল এই অঞ্চলের প্রধান তেল উত্তোলন কেন্দ্র। ইন্ডিয়ান ব্যুরো অফ মাইনস এর তথ্য অনুযায়ী 2011-12 সালে এই অঞ্চল থেকে প্রায় 552 হাজার টন খনিজ তেল উত্তোলন হয়েছিল।
তামিলনাড়ু
এই রাজ্যের কাবেরী অববাহিকায় নরিমানব ও কোভিলপ্পাল হল খনিজ তেল উত্তোলন কেন্দ্র।
ভারতের অন্যান্য খনিজ তেল সম্ভাবনাময় অঞ্চল গুলি হল তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও দরিয়া অঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চল, হিমাচল প্রদেশের কাংড়া উপত্যকা ও গুজরাট উপকূল।
[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – ভৌতবিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – জীবনবিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – গণিত ]
ভারতের খনিজ তেলের সঞ্চয় ও বাণিজ্য
ভারতে চাহিদার তুলনায় খনিজ তেল উৎপাদন অনেক কম।
ইন্ডিয়ান ব্যুরো অফ মাইনস এর 2015 সালের হিসাব অনুসারে অনুযায়ী ভারতে মোট অপরিশোধিত তেলের আনুমানিক সঞ্চয়ের পরিমাণ হল 76.35 কোটি টন। ভারত ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, কুয়েত, ভেনিজুয়েলা, নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে খনিজ তেল আমদানি করে।
তৃতীয় পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব – শক্তি সম্পদের ধারণা
লেখিকা পরিচিতি
প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তনী শ্রেয়সী বিশ্বাস। পড়াশোনা এবং লেখালিখির পাশাপাশি, ছবি আঁকা এবং বাগান পরিচর্যাতেও শ্রেয়সী সমান উৎসাহী।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
IX_Geo_7c