ভৌতবিজ্ঞান – নবম শ্রেনি – অধ্যায়: পদার্থঃ গঠন ও ধর্ম (ষষ্ঠ পর্ব)
আমারা আগের পর্বগুলিতে পদার্থের নানান ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই পর্বে আমরা স্থিতিস্থাপকতা সম্পর্কে আলোচনা করবো।
স্থিতিস্থাপকতা
‘স্থিতিস্থাপকতা’ শব্দটার মধ্যেই এর সংজ্ঞাটি লুকিয়ে আছে।
আমরা যদি স্থিতিস্থাপক শব্দটিকে ভেঙ্গে দেখি তবে যা দাঁড়ায় তা হল স্থিতিস্থাপনা করে যে।
সুতরাং সংজ্ঞা হিসাবে আমরা বলতে পারি, পদার্থের যে ধর্মের জন্য পদার্থের উপর বাহ্যিক কোন বল প্রযুক্ত হলেও বস্তু তার নিজের আকৃতি পরিবর্ত্তনে বাধা দেয় তাকেই বা সেই ধর্মকেই বলে স্থিতিস্থাপকতা।
এক্ষেত্রে বস্তুর আকৃতি বলতে আমরা যা বুঝি তা হল দৈর্ঘ্য, ক্ষেত্রফল বা আয়তন। সাধারণ ভাবে বস্তু যদি দন্ডাকার হয় তবে তার দৈর্ঘ্য পরিবর্ত্তনই স্থিতিস্থাপকতার জন্য গণ্য হবে অনুরূপে চ্যাপ্টা কোন বস্তুর ক্ষেত্রে ক্ষেত্রফল এবং ঘনবস্তুর ক্ষেত্রে আয়তন গণ্য হবে।
আমরা স্থিতিস্থাপকতা পরিমাণ করে থাকি স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কের সাহায্যে।
স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক
এটি হল পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত। এখন পীড়ন বলতে আমরা বুঝি কোন বস্তুর উপর একক ক্ষেত্রফলে প্রযুক্ত বলকে।
অদ্ভুদভাবে, দেখা যাচ্ছে যে চাপ ও পীড়নের উভয়েই রাশিমালা একই।
যাইহোক, অপরদিকে বিকৃতি তিন প্রকারের হয়ে থাকে।
অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি
প্রতি একক দৈর্ঘ্য যে পরিমাণ দৈর্ঘ্যের পরিবর্ত্তন হয়। ধরা যাক কোন একটি দন্ডের দৈর্ঘ্য l0। পীড়ন বলের প্রভাবে এর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়াল l
সুতরাং দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির পরিমাণ = (l – l0)
সুতরাং অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি =
ক্ষেত্রফল বিকৃতি বা পার্শ্বীয় বিকৃতি
এটি হল প্রতি একক দৈর্ঘ্য ক্ষেত্রফলের পরিবর্ত্তন।
অর্থাৎ গাণিতিক ভাবে
এক্ষেত্রে প্রাথমিক ক্ষেত্রফল ধরা হয়েছে A0 এবং বর্দ্ধিত ক্ষেত্রফল = A
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
আয়তন বিকৃতি
আয়তন বিকৃতি হল প্রতি একক আয়তনে আয়তনের পরিবর্ত্তন।
সুতরাং গানিতিক ভাবে বলা যায়
এক্ষেত্রে প্রকৃত আয়তন ধরা হয়েছে V0 এবং বর্দ্ধিত আয়তন = V
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিকৃতি গুলি কিন্তু একই প্রকার রাশির অনুপাত সুতরাং বলা যায় যে বিকৃতি একটি এককহীন রাশি বা কেবল সংখ্যা মাত্র।
যাইহোক আমরা আগেই জেনেছি যে স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কই আমাদের স্থিতিস্থাপকতার জন্য মূল পরিমেয় বিষয়।
সুতরাং বিভিন্ন প্রকার বিকৃতির উপর নির্ভর করে বস্তুর স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কও তিন প্রকারের হয়।
ইয়ং গুণাঙ্ক
কোন দন্ডাকার বস্তুর উপর প্রযুক্ত অনুদৈর্ঘ্য পীড়ন এবং তার ফলে সৃষ্ট অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতির অনুপাতকেই ইয়ং গুণাঙ্ক বলে একে Y দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
ইয়ং গুণাঙ্কের মাত্রা
বা, Y = ভর x দৈর্ঘ্য -1 x সময় -2
সুতরাং ইয়ং গুণাঙ্কের C.G.S. একক হল গ্রাম সেমি -1সেকেন্ড -2বা ডাইন/সেমি 2 এবং S.I. একক হল কিলোগ্রাম মিটার -1সেকেন্ড -2বা নিউটন/মিটার2
এক্ষেত্রে একটা বিষয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ন যেগটা হল যেহেতু পার্শ্বীয় বিকৃতি বা আয়তন বিকৃতি এগুলি সবকটিই এককহীন বা মাত্রাহীন ফলে আমরা পরবর্ত্তী যে গুণাঙ্ক গুলি প্রসঙ্গে আলোচনা করব তারাও উপরোক্ত একক বিশিষ্টই হবে।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবন বিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
আয়তন বিকৃতি গুণাঙ্ক
ইংরাজীতে একে বলে Bulk Modulous। আয়তন পীড়ন ও আয়তন বিকৃতির অনুপাতকেই বলে আয়তন বিকৃতি গুণাঙ্ক। সাধারণভাবে একে K দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
পয়সন অনুপাত
পয়সন অনুপাত আসলে দুই প্রকার বিকৃতির অনুপাত। একে σ (সিগমা) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
বস্তুত আমরা আগেই জেনেছি যে বিকৃতি এককহীন রাশি সুতরাং উভয় প্রকার বিকৃতির অনুপাত σ (সিগমা) ও একক হীন রাশি হবে।
দৃঢ়তা গুণাঙ্ক
আমরা দেখছি যে পাশের বস্তুটিকে মোচড় দেওয়া হয়েছে ফলে বস্তুর A প্রান্ত একই অবস্থায় থাকলেও B অবস্থানটি বেঁকে গেছে। ফলে এই অবস্থায় বস্তুর দৈর্ঘ্য বা আয়তন একই থাকলেও যে বিকৃতি ঘটেছে তা হল কৌনিক বিকৃতি।
হুকের সূত্র
স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে পীড়ন বিকৃতির সাথে সমানুপাতিক অর্থাৎ পীড়ন ∝ বিকৃতি।
বা, পীড়ন = N বিকৃতি
এই N হল ধ্রুবক, সাধারন ভাবে পীড়ন ও বিকৃতি উভয়ের প্রকার ভেদের উপর নির্ভর করে (আয়তন পীড়ন – বিকৃতি কিংবা অনুদৈর্ঘ্য পীড়ন – বিকৃতি) N = Y, (ইয়ং গুণাঙ্ক) K (আয়তন বিকৃতি গুণাঙ্ক) ইত্যাদি হতে পারে।
নিচে পীড়ন ও বিকৃতির লেখচিত্রটি দেখানো হল↓
এখন প্রশ্ন হল এই স্থিতিস্থাপক সীমা বলতে কি বোঝায়?
আমরা কোন একটি লোহার তারকে যদি ভাঙতে চাই তবে সেটিকে বারবার মোচড় দিয়ে থাকি। প্রাথমিক অবস্থায় একদিকে মোচড় দেওয়ার জন্য বল প্রয়োগ করার পর ঠিক বিপরীত দিকে মোচড় দিতে হলে বল প্রয়োগ করার যে পরিমাণ, তা মোচড় দেওয়ার সংখ্যা যত বাড়তে থাকে ততই কমতে থাকে এবং একটা সময় আসে যখন আর সামান্য বল প্রয়োগ করলেই তারটি ভেঙ্গে যায়।
সুতরাং এক কথায় বলা যায়। পীড়ন বলের যে নির্দিষ্ট মান পর্য্যন্ত কোন বস্তুর স্থায়ী বিকৃতি ঘটে না তাকেই স্থিতিস্থাপক সীমা বলে। স্থিতিস্থাপক সীমার মান বস্তু বা পদার্থ ভেদে পরিবর্ত্তিত হতে পারে।
পরিশেষে আবারও বলতে চাই যে স্থিতিস্থাপকতা আর নমনীয়তা এক বিষয় নয়।
আমরা রাবারের কোন বস্তুকে সহজেই বাঁকাতে পারি, এবং কথ্য ভাষায় রাবারের বস্তুকেই কোন দৃঢ় বস্তু অপেক্ষা বেশি স্থিতিস্থাপক বলে থাকি। কিন্তু বাস্তবে স্থিতিস্থাপকতার সংজ্ঞাতেই বলা হয়েছে যে, যদি বস্তু অধিক স্থিতিথাপক হয় তবে তা নিজের আকৃতি স্থিতিস্থাপক হয় তবে তা নিজের আকৃতি পরিবর্ত্তন সহজে করতে চাইবে না। সুতরাং ধাতু নির্মিত কোন বস্তুই রাবার নির্মিত কোন বস্তু অপেক্ষা বেশি স্থিতিস্থাপক।
সমাপ্ত। পরবর্তী অধ্যায় – বল ও গতি
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – সাপ্তাহিক ইমেইল আপডেট
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
IX-PSc-3f