varter-procholito-o-oprocholito-sokti
WB-Class-9

ভারতে বিভিন্ন প্রকার প্রচলিত এবং অপ্রচলিত শক্তির বন্টন

শ্রেণিঃ নবম | বিষয়: ভূগোল । অধ্যায় – ভারতের সম্পদ (পঞ্চম পর্ব)

আগের পর্বে আমরা ভারতের শক্তি সম্পদ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এই পর্বে আমরা ভারতের বিভিন্ন প্রচলিত এবং অপ্রচলিত শক্তির বণ্টন নিয়ে আলোচনা করবো।

ভারতের বিভিন্ন প্রচলিত শক্তি

তাপবিদ্যুৎ শক্তি

কয়লা খনিজ তেল প্রাকৃতিক গ্যাস পুড়িয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তাকে তাপ বিদ্যুৎ বলা হয়।

ভারতের শক্তি মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী তাপ বিদ্যুৎ শক্তি 59.1% শতাংশ আসে কয়লা থেকে, 7.6% প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে এবং 0.3% আসে খনিজ তেল থেকে। ভারতের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার 67% আসে তাপ বিদ্যুৎ শক্তি থেকে। 

ভারতের প্রধান প্রধান তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গুলি হল- 

পূর্ব ভারতের প্রধান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

  • পশ্চিমবঙ্গের মেজিয়া, ফারাক্কা,বক্রেশ্বর, দুর্গাপুর, কোলাঘাট
  • বিহারের কাহালগাঁও ,বারাউনি
  • ঝাড়খণ্ডের চন্দ্রপুরা,পত্রাতু কোডারমা
  • ওড়িশার তালচের প্রভৃতি
পাঞ্জাবের ভাতিন্ডায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র [চিত্রসৌজন্য – Wiki]

উত্তর ভারতের প্রধান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

  • পাঞ্জাবের ভাতিন্ডা, রূপনগর
  • হরিয়ানার পানিপথ, ফরীদাবাদ, যমুনানগর
  • উত্তরপ্রদেশের রিহান্দ, শিংরাউলী, দাদরি

পশ্চিম ও মধ্য ভারতের প্রধান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

  • মহারাষ্ট্রের ট্রমবে, ভুসাওয়াল, চন্দ্রপুর, অমরাবতী
  • গুজরাটের ওয়ানাকবরি, গান্ধীনগর, সুরাট
  • মধ্যপ্রদেশের সাতপুরা ,বিন্ধ্যাচল
  • ছত্রিশগড়ের কোবরা, সিপাত প্রভৃতি।

দক্ষিণ ভারতের প্রধান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

  • তেলেঙ্গানার রামাগুনডাম, কোটাগুডেম
  • কর্ণাটক রাইচুর
  • তামিলনাড়ুর এন্নর, তুতিকোরিন, নেভেলি ইত্যাদি।

জলবিদ্যুৎ শক্তি

প্রবাহমান জলধারার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে টারবাইনের চাকা ঘুরিয়ে ডায়নামোর সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করাকে বলা হয় জলবিদ্যুৎ।

জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ হলো বন্ধুর কঠিন শিলা যুক্ত ভূমিরূপ, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, নিয়মিত জলের যোগান, বনভূমি, উন্নত প্রযুক্তি, মূলধন, চাহিদা, দক্ষ শ্রমিক ও উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা।

ভারতের একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র

ভারতের প্রধান জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ

উত্তর ভারতের প্রধান জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র

  • জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের নথপা, ঝকরি, সালাল , উরি
  • হিমাচল প্রদেশের দেহার
  • উত্তরাখণ্ডের তেহরি, রামগঙ্গা
  • পাঞ্জাবের রঞ্জিত সাগর, ভাকরা

পূর্ব ভারতের প্রধান জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র

  • ওড়িশার হিরাকুদ
  • পশ্চিমবঙ্গের ম্যাসাঞ্জোর
  •  ঝাড়খণ্ডের তিলাইয়া, পাঞ্চেত প্রভৃতি

পশ্চিম ভারতের প্রধান জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র

  • মহারাষ্ট্রের কয়না
  •  গুজরাটের সর্দার সরোবর
  •  মধ্যপ্রদেশের ইন্দিরাসাগর প্রভৃতি

দক্ষিণ ভারতের প্রধান জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র

  • কর্নাটকের সরাবতী, কালিনদী
  • তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীশৈলম, নাগার্জুন সাগর
  •  তামিলনাড়ুর পাইকারা আর মেত্তুর
  • কেরালের ইদুক্কি, সবরীগিরি

উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র

  • মনিপুরের লোকটাক
  • মেঘালয়ের উমিয়াম উমট্রু
  • অরুণাচল প্রদেশের রঙ্গা নদী প্রভৃতি

[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – ভৌত বিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – জীবন বিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – গণিত ]

পারমাণবিক শক্তি

পদার্থের পরমাণুর মধ্যে অবস্থিত নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটিয়ে যে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে পারমাণবিক শক্তি বলা হয়।

ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, লিথিয়াম, প্লুটোনিয়াম, পোলোনিয়াম প্রভৃতি তেজস্ক্রিয় খনিজের পরমাণু বিভাজন মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে শক্তি উৎপাদন করা হয়। তবে এই শক্তি উৎপাদন করতে প্রচুর জল এর প্রয়োজন হয়। এই শক্তি তৈরিতে পারমাণবিক চুল্লিতে পরমাণুর বিভাজন ঘটানো হয়। এখানে কেন্দ্রীয় তাপ উৎপাদন ব্যবস্থা ও জ্বালানি শীতল করার ব্যবস্থা থাকে। এই চুল্লিতে থেকে যে তাপ নির্গত হয় তা বাষ্প সৃষ্টিতে ব্যবহার করা হয় এবং এই বাষ্পের বেগ থেকে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা হয়।

মহারাষ্ট্রের তারাপুর

ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র

ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গুলি হল মহারাষ্ট্রের তারাপুর (এটি ভারতের প্রথম পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র); তামিলনাড়ুর কুদানকুলাম, কলপক্কম; রাজস্থানের রাওয়াতভাতা; কর্নাটকের কইগা; গুজরাটের কাকরাপাড়; উত্তরপ্রদেশের নারোরা।

পরিকাঠামোগত পরিবেশগত ও জমি সংক্রান্ত বাধার কারণে ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছে। 1969 সালে থেকে ভারতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলেও এর প্রকৃত উন্নতি 1990 এর পর থেকে শুরু হয়। এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গুলো থেকে প্রায় 35007 গিগাওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায় যা ভারতের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের 2.1%। 2016 সালে ভারতে 22 টি পরমাণু চুল্লি ও 7 টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।

ভারতের বিভিন্ন অপ্রচলিত শক্তি

সৌরশক্তি

ফটোভোল্টিক সেল বা সৌর কোষের মাধ্যমে সূর্য রশ্মিকে কাজে লাগিয়ে যখন বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তখন তাকে সৌরশক্তি বলা হয়।

বর্তমানে দৈনন্দিন জীবনে ও শিল্প কারখানায় সৌর শক্তির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে

সোলার প্যানেলের সাহায্যে সৌরবিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

সৌর শক্তি উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিভিন্ন কাজে লাগানো হয়। যেমন –

  •  গ্রামাঞ্চলের রাস্তার আলো জ্বালাতে|
  •  ছোট পাম্প, টিভি-রেডিও, টেলিফোন ও রান্না করতেও সৌরশক্তি কাজে লাগানো হয়|
  • বিশেষভাবে তৈরি সৌর কুকার যন্ত্রে সূর্যের তাপ ধরে রেখে বা প্রতিফলনের সাহায্যে তার তীব্রতা বাড়িয়ে রান্না করা হয়|
  • শীতপ্রধান দেশে ঘর গরম ও জল গরম করতে সৌর হিটার ব্যবহার করা হয়|
  • সোলার ড্রায়ার ব্যবহার করে ফসলের আদ্রতা দূর করা এবং সংরক্ষণ করা হয়|

ভারতের প্রধান সৌরশক্তি উৎপাদন কেন্দ্র গুলি হল –

রাজ্য শক্তি উৎপাদনের পরিমাণ উৎপাদন অঞ্চল
গুজরাট 49.90% পাটান, বিটা, মিঠাপুর, রাজকোট, সুরেন্দ্রনগর
রাজস্থান 38.89% ফালোরি ,পোখরান ,যোধপুর
মধ্যপ্রদেশ 9.15% নিমাচ
তেলেঙ্গানা 3.18% নিজামাবাদ, জুরালা
মহারাষ্ট্র 1.38% কাটল,মুলশি, ওসমানাবাদ
তামিলনাড়ু 1.14% কোয়েম্বাটুর, মায়িলাদুঠুরাই, শিব গঙ্গা
ওড়িশা 0.99% পাটাপুর ,খুরদা, গঞ্জাম ,কটক ,কানিহা ,টাঙ্গী, রেঙ্গালি
উত্তর প্রদেশ 0.91% বরাবানকি
কর্ণাটক 0.69% বেলগাম, কোলার
পশ্চিমবঙ্গ 0.15% জমুরিয়া

বায়ু শক্তি

বায়ুপ্রবাহের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বায়ু প্রবাহ পথে উইন্ডমিলের মাধ্যমে যে শক্তি উৎপাদন করা হয় তাকে বায়ুশক্তি বলা হয়।

বায়ু শক্তি উৎপাদনের জন্য একটি ধাতব খুঁটির উপরে ধাতব ব্লেড লাগানো থাকে যা বায়ুপ্রবাহের সাথে সাথে ঘুরতে থাকে। এই ঘূর্ণায়মান পাখার সাথে ডায়নামো যুক্ত থাকে, বায়ুর বলে পাখা ঘোরার সাথে সাথে ডায়নামো চললে বিদ্যুৎ শক্তির উৎপাদন হয়।

বায়ুকল

জল সেচ, ধান ভাঙ্গা, গম ভাঙ্গা, খড় কাটা ও লবণাক্ত জলের অপসারণ ইত্যাদি কাজে বায়ু শক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

ভারতে বায়ু শক্তি উৎপাদন ধীরে ধীরে বাড়ছে, প্রসঙ্গত বায়ু শক্তি উৎপাদনে ভারত পৃথিবীতে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে।

তামিলনাড়ুর উপকূল, গুজরাটের কচ্ছ, সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে ভারতের সব থেকে বেশি বায়ু শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে অবস্থিত মুপ্পানডাল ভারতের বৃহত্তম বায়ু শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র, এর উৎপাদন ক্ষমতা 1500 মেগাওয়াট। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ প্রান্তে সুন্দরবনের সাগরদ্বীপের কাছে হাওয়া কল বসানো হয়েছে। গুজরাটের লাম্বাতে 15 মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বায়ুশক্তি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। রাজস্থানের চিতোরগড়ের দেওঘর গ্রামে ও জয়সলমীরের কাছে বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

ভূতাপ শক্তি

ভূ-অভ্যন্তরের তাপকে কাজে লাগিয়ে শক্তি উৎপাদন করাকে ভূতাপ শক্তি বলা হয়। এটি একটি অচিরাচরিত শক্তি যা পরিবেশ দূষণ ঘটায় না।

ভূতাপ শক্তি বিদ্যুৎ উৎপাদনে, ফসলকে ঝারাই মাড়াই করতে, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো ভূতাপ শক্তি উৎপাদনে ভারত সেইভাবে উন্নতি লাভ করতে পারেনি। ভারত খুব স্বল্প পরিমাণ ভূতাপ শক্তি উৎপাদন করে।


[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – বাংলা | নবম শ্রেণি – ইতিহাস | নবম শ্রেণি – ভূগোল]

কিন্তু ভারতে প্রায় 300 উষ্ণ প্রস্রবণ আছে সুতরাং ভবিষ্যতে ভারতের ভূতাপ শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের কিছু সম্ভাবনাময় ভূতাপ শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র গুলি হল হিমাচল প্রদেশের পার্বতী উপত্যকার মণিকরণ, ছত্রিশগড়ের তাতাপানি, লাদাখের পুগা উপত্যকা ও গুজরাটের কাম্বে ইত্যাদি।

আরো পড়ো → ভারতের শক্তি সম্পদের ধারণা

লেখিকা পরিচিতি

প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তনী শ্রেয়সী বিশ্বাস। পড়াশোনা এবং লেখালিখির পাশাপাশি, ছবি আঁকা এবং বাগান পরিচর্যাতেও শ্রেয়সী সমান উৎসাহী।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

IX_Geo_7e