ইতিহাস– নবম শ্রেণি – বিশ শতকে ইউরোপ (পঞ্চম পর্ব)
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী মহামন্দা বিশ্বজুড়ে গভীর সংকটের সৃষ্টি করেছিল। এই সংকটের সূত্র ধরেই ইউরোপের ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থান হয়। আজকের পর্বে আমরা ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থান নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইতালি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইতালিতে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংকট দেখা যায়।
ক) কৃষি ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে, দেশে খাদ্যাভাব দেখা যায় এবং মুদ্রাস্ফিতির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম মারাত্মক আকার ধারণ করে।
খ) যেহেতু বলসেভিক নিয়ন্ত্রিত রাশিয়া মহামন্দার প্রভাব থেকে বেঁচে গিয়েছিল তাই ইতালিতে দেশে সাম্যবাদী এবং সমাজবাদীদের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে। শ্রমিকরা দ্রব্যমূল্য হ্রাস, কাজের সময় কমানো ইত্যাদি দাবী নিয়ে ধর্মঘট শুরু করে। হিংসাত্মক আন্দোলন প্রায় নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়। এর ফলে দেশের সাধারণ নাগরিক সমাজবাদীদের বিরুদ্ধে অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠে।
গ) দেশে রাজনৈতিক স্থিতাবস্থার অভাব দেখা যায়। ১৯১৯ থেকে ১৯২২ এই তিনটি বছরের মধ্যে 6টি সরকার গঠিত হয়। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ইতালিতে বেনিতো মুসোলিনি নামে এক একনায়ক নেতার আবির্ভাব হয়।
বেনিতো মুসোলিনি
ইতালির ইতিহাসে এই কুখ্যাত মানুষটির জন্ম ইতালির এক দরিদ্র পরিবারে। তাঁর বাবা ছিলেন সমাজতান্ত্রিক এক নেতা, মূলত বাবার হাত ধরেই মুসোলিনির রাজনৈতিক দিক্ষা হয়েছিল। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে মুসোলিনিকে তাঁর কার্যকলাপের জন্য সরকারীভাবে বন্দী করা হয়, এরপর ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মুক্তির পর, সমাজতান্ত্রিক দলের মুখপত্র ‘অভান্তি’ পত্রিকার সম্পাদক পদে নিয়োজিত হন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সমাজবাদীরা নিরপেক্ষ থাকার পক্ষে মত দেন কিন্তু মুসোলিনি এই বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করার জন্য দল থেকে বহিষ্কৃত হন।
ফ্যাসিস্ট দল গঠন
বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালির অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অস্তিরতা ইতালির সাধারণ মানুষদের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর বিতশ্রদ্ধ করে দেয়। এই সময় ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে ১১৮ জন কর্মচ্যুত সৈনিক এবং দেশপ্রেমিকদের সঙ্গে নিয়ে ফ্যাসিস্ট দল গড়ে তোলেন। প্রাচীন রোমের প্রতীক ‘Fasces’ বা দড়িবাঁধা কাষ্ঠদণ্ড ছিল এই দলের প্রতীক।
ফ্যাসিবাদ কি?
ফ্যাসিবাদ হল একপ্রকার রাজনৈতিক মতাদর্শ, যার মূল ভিত্তি জাতীয়তাবাদ হলেও, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র একটি বিশেষ অগনতান্ত্রিক দল দ্বারা পরিচালিত হয়। এই মত অনুসারে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে, রাষ্ট্রই সব, রাষ্ট্রের বাইরে ব্যাক্তির কোন মূল্য নেই। রাষ্ট্রের শৃঙ্খলারক্ষা হল সকল নাগরিকের কর্তব্য এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের অর্থ হল রাষ্ট্রদ্রোহিতা। ফ্যাসিবাদে স্বাধীন মতপ্রকাশের কোনো অবকাশ থাকে না। সংবাদপত্রের ক্ষমতা হরণ করা হয়।
ইতালির ফ্যাসিস্ট দল
মুসোলিনির নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট দল ধীরে ধীরে একটি সেনাদলে পরিণত হয়। তাদের পোশাকের রঙ কালো ছিল বলে তাদের ‘ব্ল্যাক শার্ট’ বলা হত। মুসোলিনির দলের লক্ষ্য ছিল…
ক) রাস্ট্রের মর্যাদা বৃদ্ধি করা
খ) বলিষ্ঠ বিদেশনীতির মাধ্যমে ইতালিকে বিশ্বের অন্যতম শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবন বিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
গ) কমিউনিস্ট এবং সমাজবাদী প্রভাব থেকে ইতালিকে রক্ষা করা।
ঘ) ব্যাক্তিগত ধন – সম্পত্তি রক্ষা করা।
ইতালিতে ক্রমশই ফ্যাসিস্ট দলের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ইতালির বিভিন্ন শহরে এর সংগঠন ছড়িয়ে পড়ে।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
ফ্যাসিস্ট দলের ক্ষমতালাভ
১৯২২ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে মুসোলিনির দল ৩৫টি আসন লাভ করে। এরফলে তাদের জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পায়। এরপর ১৯২২ সালেই মুসোলিনি তাঁর ‘ব্ল্যাক শার্ট’ বাহিনীর মাধ্যমে রোম দখল করার অভিপ্রায় গ্রহণ করলে প্রধানমন্ত্রী লুইজি ফ্যাক্টর পদত্যাগ করেন এরপর রাজা দ্বিতীয় ভিক্টর ইমানুয়েল-এর আহ্বানে মুসোলিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ লাভ করেন।
ইতালিতে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা
দেশের প্রধানশাসক পদে অভিষেক লাভের পরেই তিনি একনায়ক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনে উদ্যোগী হন। তিনি বিরোধী দলগুলির উপর নানান বিদ্বেষমূলক পদক্ষেপ নিয়ে, বিরোধী নেতাদের কারারুদ্ধ করেন। এরপর ১৯২৪ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে, বলপ্রয়োগ এবং কারচুপির মধ্যমে তিনি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের নতুন সংবিধানে, ইতালিতে ফ্যাসিস্ট দল ভিন্ন অন্য সকল দল নিষিদ্ধ করা হয় এবং মুসোলিনি ইল দ্যুচে বা একনায়ক উপাধি গ্রহণ করেন।
পরবর্তীতে বিশ্বের এই অন্যতম শক্তিশালী একনায়ক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ হয়েছিলেন।
পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → জার্মানিতে নাৎসিবাদের উত্থান
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই পর্বটি ভালো লাগলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
IX-His-5-5